• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গ্লোবাল সেন্সর ও ইউবিকুইটাস কমপিউটিং
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গ্লোবাল সেন্সর ও ইউবিকুইটাস কমপিউটিং
ইউবিকুইটাস কমপিউটিং আমাদের জীবনকে কতটুকু বদলাতে পারবে। তবে এটুকু নিশ্চিত- ইউবিকুইটাস কমপিউটিং যুগের ইলেকট্রনিক সেন্সরে পরিপূর্ণ দুনিয়ায় এক ধরনের নতুন পরিবেশের সৃষ্টি হবে, যেখানে আমূল পরিবর্তন আসবে আমাদের দেখা, শোনা, চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপনে। ইলেকট্রনিক সেন্সর এমবেডেড নেটওয়ার্ক পরিবেশ কাজ করবে মানুষের নার্ভাস সিস্টেম তথা সণায়ুতন্ত্রের সম্প্রসারণ হিসেবে। তখন আমরা পেতে পারি পরিধানযোগ্য কমপিউটার ডিভাইস, যা ভর্তি থাকবে কৃত্রিম সেন্সরে।

আধুনিক দুনিয়া ভরে গেছে নেটওয়ার্ক-কানেকটেড ইলেকট্রনিক সেন্সর দিয়ে। কিন্তু এগুলো যেসব ডাটা তৈরি করে, এর বেশিরভাগই আমাদের কাছে অদৃশ্য। এসব ডাটা সংরক্ষণ বা সাইলো করা হয় সুনির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহারের জন্য। আমরা যদি এসব সাইলো সরিয়ে কোনো নেটওয়ার্ক-কানেকটেড ডিভাইসে ব্যবহারের জন্য সেন্সর ডাটা সক্রিয় করে তুলি, তবেই শুরু হবে সত্যিকারের ইউবিকুইটাস কমপিউটিং তথা সর্বব্যাপী কমপিউটিংয়ের যুগ। আমরা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানি না, এই ইউবিকুইটাস কমপিউটিং আমাদের জীবনকে কতটুকু বদলাতে পারবে। তবে এটুকু নিশ্চিত- ইউবিকুইটাস কমপিউটিং যুগের ইলেকট্রনিক সেন্সরে পরিপূর্ণ দুনিয়ায় এক ধরনের নতুন পরিবেশের সৃষ্টি হবে, যেখানে আমূল পরিবর্তন আসবে আমাদের দেখা, শোনা, চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপনে। ইলেকট্রনিক সেন্সর এমবেডেড নেটওয়ার্ক পরিবেশ কাজ করবে মানুষের নার্ভাস সিস্টেম তথা স্নায়ুতন্ত্রের সম্প্রসারণ হিসেবে। তখন আমরা পেতে পারি পরিধানযোগ্য কমপিউটার ডিভাইস, যা ভর্তি থাকবে কৃত্রিম সেন্সরে। ফলে কার্যত তা হবে সেন্সরি প্রসথেটিকস। সেন্সর আর কমপিউটার মিলে সম্ভব করে তুলবে দূরবর্তী এনভায়রনমেন্টে ভার্চু্যয়ালি ট্র্যাভেলকে এবং রিয়েল টাইমে সেখানে উপস্থিত থাকাকে। তখন এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও শারীরিক উপস্থিতির ধারণার ওপরও।

একটি মজার পরীক্ষায় নামুন

এই মুহূর্তে গুনতে চেষ্টা করুন আপনার চারপাশে কতগুলো ইলেকট্রনিক সেন্সর রয়েছে। আপনার কমপিউটারে রয়েছে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। এই ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনে রয়েছে সেন্সর। আপনার স্মার্টফোনে আছে বেশ কয়েকটি জিপিএস সেন্সর ও গাইরোস্কোপ। আপনার ফিটনেস ট্র্যাকারে আছে কিছু অ্যাকসেলারোমিটার। আপনি যদি একটি আধুনিক অফিস ভবনে কাজ করেন কিংবা নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা কোনো ভবনে বসবাস করেন, তাহলে অব্যাহতভাবে আপনি থাকবেন সেন্সরের আবহে। এসব সেন্সর পরিমাপ করছে তাপ, আর্দ্রতা ও গতি। আপনি কোনো ভবনে ঢোকার সময় হয়তো দেখে থাকবেন- বড় কাচের দরজা প্রয়োজনের সময় আপনা-আপনি খুলছে ও বন্ধ হচ্ছে, সেটিও করছে এই সেন্সর। লিফটের দরজা যেমনটি চাইছেন, তেমনটি খুলছে বা বন্ধ হচ্ছে এই সেন্সর দিয়েই।

সেন্সরের ব্যবহার এখন প্রচুর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো মেনে চলছে মুর’স ল। এগুলো ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে, হচ্ছে সস্তাতর ও আরও ক্ষমতাধর। উল্লেখ্য, মুর’স ল হচ্ছে কমপিউটার প্রযুক্তিবিষয়ক একটি পর্যক্ষেণ তত্ত্ব। এতে বলা হয়, কমপিউটার হার্ডওয়্যারের ইতিহাসে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটে ট্র্যানজিস্টরের সংখ্যা মোটামুটি দুই বছরে দিগুণে পৌঁছে। ইন্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন ই. মুরের নামানুসারে এর নম দেয়া হয় মুর’স ল। তিনি ১৯৬৫ সালে তার এক প্রবন্ধে এই প্রবণতার কথা বর্ণনা করেন। তার এই তত্ত্ব পরবর্তী সময়ে সঠিক প্রমাণিত হয়। অনেক ডিজিটাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কর্মক্ষমতা গভীরভাবে মুরের এ আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট। এই আইনে উল্লিখিত দুই বছর কালের বদলে কেউ কেউ ১৮ মাসের কালের কথা উল্লেখ করে থাকেন। কারণ, ইন্টেলের নির্বাহী ডেভিড হাউস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, চিপের পারফরম্যান্স প্রতি ১৮ মাসে দ্বিগুণ হবে।

কয়েক দশক আগে গাইরোস্কোপ ও অ্যাকসেলারোমিটারগুলো ছিল স্থুলকায় এবং খুবই দামী। আগে এগুলোর অ্যাপ্লিকেশন সীমিত ছিল মহাকাশ যানে ও মিসাইল গাইডেন্সে। এগুলো এখন সব ধরনের স্মার্টফোনে ব্যবহার হয়। হয়তো শুনে থাকবেন, এরই মধ্যে নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির বিস্ফোরণ ঘটেছে। মাইক্রোইলেকট্রনিক ডিজাইন এবং জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের অগ্রগতির সুবাদে একটি মাইক্রোচিপে এখন খরচ হয় এক ডলারেরও কম। একটি মাইক্রোচিপ এখন বেশ কয়েকটি সেন্সরের লিঙ্ক গড়ে তুলতে পারে একটি কম বিদ্যুৎশক্তির ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের সাথে। এই বিপুল পরিমাণ সেন্সরের নেটওয়ার্ক যে পরিমাণ তথ্য সৃষ্টি করে, তা হতবুদ্ধিকর- উপলব্ধিও করা কঠিন। এরপরও এর বেশিরভাগ ডাটা আমাদের কাছে অদৃশ্য। আজকের দিনে সেন্সর ডাটা সংরক্ষণ তথা সাইলো করা হয়। ব্যবহারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এসব ডাটায় একটি মাত্র ডিভাইস দিয়ে অ্যাক্সেস করা যায়।

এসব সাইলো এলিমিনেট করলে কমপিউটিং ও কমিউনিকেশনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। একবার যদি প্রটোকলগুলো হাতের কাছে পেয়ে যাই, তবে এই ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশনগুলো ডাটা বিনিময়ে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিযোগীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তখন যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনে যেকোনো কিছুতেই সেন্সর ব্যবহার করা যাবে। এমনটি যখন ঘটবে, তখন আমরা পা ফেলব ইউবিকুইটাস কমপিউটিংয়ের যুগে।

অনেকের সন্দেহ ইউবিকুইটাস কমপিউটিংয়ে উত্তরণের পর চাহিদার কারণেই এর দাম বেড়ে যাবে। এর বদলে তথ্যাবিজ্ঞজন ও গবেষকেরা মনে করেন- এটি হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নতুন এক পর্যায়, অনেকটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সূচনার মতো। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে- যেমন গুগল ম্যাপস ও টুইটার। আর এগুলোকে ঘিরে ব্যাপক এন্টারপ্রাইজের আবির্ভাব ঘটছে। কিন্তু একবার যদি সব ধরনের ডিভাইসে সেন্সর ডাটা বিনামূল্যে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়, তখন এ ক্ষেত্রে উদ্ভাবনার বিস্ফোরণ ঘটবে। বিলিয়ন ডলারের টেক-কোম্পানির পরবর্তী ঢেউটি সৃষ্টি হবে কনটেন্ট অ্যাগ্রিগেটদের কাছ থেকে। এই কনটেন্ট অ্যাগ্রিগেটরেরা আমাদের চারপাশে সেন্সর ইনফরমেশন সংগ্রহ করবে নতুন প্রজন্মের অ্যাপ্লিকেশনে। উল্লেখ্য, কনটেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হচ্ছে (ন) সেই ব্যক্তি বা সংগঠন, যে পুনরায় ব্যবহার বা পুনরায় বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন সোর্স থেকে ওয়েব কনটেন্ট (এবং/অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন) সংগ্রহ করে (ন)।

ইন্টারনেট আমাদের পৃথিবীটাকে কতটুকু বদলে দেবে, ৩০ বছর আগে এর ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল খুবই মুশকিল। একইভাবে আজকের দিনে ভবিষ্যদ্বাণী করা তেমনই মুশকিল, আগামী দিনে ইউবিকুইটাস কমপিউটিং পৃথিবীকে কতটুকু বদলাতে পারবে। সৌভাগ্য, মিডিয়া থিওরি এখানে গাইড হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯৬০-এর দশকে মিডিয়া থিওরিস্ট মার্শাল ম্যাকলুহান ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পর্কে, অর্থাৎ মূলত টেলিভিশন সম্পর্কে বলেছিলেন- মিডিয়া হয়ে উঠছে মানুষের সম্প্রসারিত নার্ভাস সিস্টেম বা সণায়ুতন্ত্র। আজকে যখন সবখানে সেন্সরে সংগ্রহ করা তথ্যও নতুন নতুন উপায়ে মানুষের উপলব্ধিতে গ্রথিত করা যাচ্ছে, তখন ম্যাকলুহান আমাদের মাঝে থাকলে বলতে পারতেন সেন্সর কোথায় গিয়ে থামবে।

ইউবিকুইটাস কমপিউটিং

ইউবিকুইটাস কমপিউটিং (ইউবিকম্প) হচ্ছে কমপিউটার প্রকৌশল ও কমপিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি ধারণা, যেখানে কমপিউটিং চলে সব জায়গায় ও সব সময়ে। ডেস্কটপ কমপিউটিং থেকে ব্যতিক্রমী হয়ে ইউবিকম্প চলে যেকোনো ডিভাইসে, যেকোনো স্থানে এবং যেকোনো ফরম্যাটে। একজন ব্যবহারকারীর ইন্টারেক্ট বা মিথষ্ক্রিয়া কয়েক কমপিউটারের সাথে। এ কমপিউটার হতে পারে নানা ধরনের- যার মধ্যে আছে ল্যাপটপ কমপিউটার, ট্যাবলেট ও প্রতিদিনের ব্যবহারের নানা বস্ত্তর টার্মিনাল, যেমন- এক জোড়া চশমা। ইউবিকম্পকে সাপোর্ট দেয়ার প্রযুক্তির মধ্যে আছে ইন্টারনেট, অ্যাডভান্সড মিডলওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, মোবাইল কোড, সেন্সর, মাইক্রোপ্রসেসর, নতুন আই/ও এবং ইউজার ইন্টারফেস, নেটওয়ার্ক, মোবাইল প্রটোকল, লোকেশন ও পজিশনিং এবং কিছু নতুন ম্যাটেরিয়াল।

ইউবিকম্প নামের এই নতুন প্যারাডাইসকে (উদাহরণ বা নমুনা) বর্ণনা করা হয় আরও কিছু নামে- পারভেসিভ কমপিউটিং, অ্যামভায়েন্ট ইন্টেলিজেন্স বা এভরিওয়্যার- যথাক্রমে বাংলায় বলা যায় পরিব্যাপক কমপিউটিং, চারদিকে বিরাজমান বুদ্ধিমত্তা বা সর্বওয়্যার। প্রতিটি পদবাচ্য জোর দেয় সামান্য বিষয়ের ওপর। যখন প্রাথমিকভাবে আমরা সংশ্লিষ্ট বস্ত্তকে বিবেচনায় আনি, তখন এটি পরিচিত ফিজিক্যাল কমপিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস, হ্যাপটিক কমপিউটিং এবং থিংস দেট থিঙ্ক নামেও। ইউবিকুইটাস কমপিউটিং ও এর সংশ্লিষ্ট পদবাচ্যগুলোর একেকটি একক সংজ্ঞা দেয়ার বদলে ইউবিকম্পের জন্য এর প্রপারটিজের ট্যাক্সোনমির তথা শ্রেণিকরণের সূত্রাবলির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের ও আবেশের ইউবিকুইটাস সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশন বর্ণনা করা যাবে। ইউবিকম্প সংশ্লিষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার বিষয়। এসব গবেষণার বিষয়ের মধ্যে আছে ডিস্ট্রিবিউটেড কমপিউটিং, মোবাইল কমপিউটিং, লোকেশন কমপিউটিং, মোবাইল নেটওয়ার্কিং, কনটেক্সট-অ্যাওয়ার কমপিউটিং, সেন্সর নেটওয়ার্ক, হিউম্যান-কমপিউটার ইন্টারেকশন ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

ইতিহাসের পাতায় ইউবিকম্প

মার্ক উইসার ‘ইউবিকুইটাস কমপিউটিং’ শব্দযুগল প্রথম ব্যবহার বা চালু করেন ১৯৮৮ সালে। তখন তিনি ছিলেন জেরক্স প্যালো অ্যাল্টো রিসার্চ সেন্টারের (পিএআরসি) প্রধান প্রযুক্তিবিদ। মার্ক উইসার একা কিংবা পিএআরসি’র ডিরেক্টর ও প্রধান বিজ্ঞানী জন সিলি ব্রাউনকে সাথে নিয়ে এ বিষয়ে প্রথম দিকের বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লেখেন। এই ইউবিকুইটাস কমপিউটিংয়ের স্বপ্নের কথা সিকি শতাব্দী আগে ১৯৯১ সালে মার্ক উইসার ‘সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকানস’ সাময়িকীর মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছিলেন। দেখুন : কমপিউটার ফর দ্য টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি, সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকানস, সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সংখ্যা।

প্রতিদিনের পরিবেশে প্রসেসিং পাওয়ার সম্প্রসারণ করতে হলে প্রয়োজন হবে এর নিজস্ব চৌহদ্দির বাইরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ফেনোমেনা বা অনুমাননির্ভর প্রপঞ্চগুলোকেও জানা-বোঝার। এ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েই উইসার প্রভাবিত হয়েছিলেন কমপিউটার বিজ্ঞানের বাইরের অনেক বিষয়ের মাধ্যমে, যার মধ্যে দর্শন, ইন্দ্রীয়গোচরযোগ্য বস্ত্তবিদ্যা, প্রত্নতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, উত্তর-আধুনিকতা, বৈজ্ঞানিক সমাজবিদ্যা ও নারীবাদী সমালোচনার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডি হোপার প্রস্তাব ও প্রদর্শন করেন ‘টেলিপোর্টিং’ ধারণা, যেখানে অ্যাপ্লিকেশন অনুসরণ করে এর ব্যবহারকারীকে। ব্যবহারকারী যেখানেই যান না কেনো, অ্যাপ্লিকেশনও সেখানে যাবে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্ডি হোপারের অধীনে গবেষণা করার সময় রয় ওয়ানন্ট কাজ করেন ‘অ্যাকটিভ ব্যাজ’ সিস্টেমের ওপর। এই অ্যাকটিভ ব্যাজ হচ্ছে একটি অ্যাডভান্সড লোকেশন কমপিউটিং সিস্টেম, যেখানে পারসোনাল মোবিলিটি একীভূত করা হয়েছে কমপিউটিংয়ের সাথে। বর্তমানে গুগলে কর্মরত বিল শ্চিলিটও এ বিষয়ের ওপর প্রথমদিকের বেশ কিছু কাজ করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে সান্তা ক্রুজে আয়োজিত প্রথম দিকের মোবাইল কমপিউটিং ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলেন। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কেন সাকামুরা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন টোকিওর ইউবিকুইটাস নেটওয়ার্কিং ল্যাবরেটরি (ইউএনএল) ও একই সাথে টি-ইঞ্জিন ফোরামের। সাকামুরার ইউবিকুইটাস নেটওয়ার্কিং স্পেসিফিকেশন ও টি-ইঞ্জিন ফোরামের যৌথ লক্ষ্য প্রতিদিনের সব ডিভাইসকে সম্প্রচারের তথ্য গ্রহণে সক্ষম করে তোলা। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গবেষণা পরিচালনা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মিডিয়া ল্যাবের ‘থিংস দেট থিঙ্ক’ এবং প্রজেক্ট অক্সিজেন নামে পরিচিত কিএসএআইএল উদ্যোগ। অন্য আরও প্রধান অবদায়কের মধ্যে আছে- ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউবিকম্প ল্যাব, জর্জিয়া টেকের কলেজ অব কমপিউটিং, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিপল অ্যাওয়ার কমপিউটিং ল্যাব, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারেকটিভ টেলিকমিউনিকেশন প্রোগ্রাম, ইউসি ইরভিনের ইনফরমেটিকস ডিপার্টমেন্ট, মাইক্রোসফট রিসার্চ, ইন্টেল রিসার্চ এবং ইকুয়েটর।

সেন্সর ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজ করা

আমরা পৃথিবীটাকে উপলব্ধি করি আমাদের ইন্দ্রীয়গুলো ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ডিজিটাল ডাটা হজম করি মোবাইল ডিভাইসের ছোট্ট দ্বিমাত্রিক পর্দায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমরা এক ধরনের ইনফরমেশন বটলনেক তথা তথ্যজগতের এক সঙ্কীর্ণ গলিপথে আটকা পড়ে গেছি। পৃথিবীতে অনবরত তথ্যের বিস্ফোরণ ঘটে চলছে। কিন্তু এই বিশাল তথ্যজগতে আমরা উপস্থিত থাকতে পারছি না। এরপরও এই তথ্যের প্রাচুর্যের মাঝে আমরা আশার আলো দেখতে পাই, যদি আমরা এই তথ্যের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে পারি। সে জন্যই এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের একদল গবেষক বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন সেন্সর নেটওয়ার্কের সংগ্রহ করা ইনফরমেশন মানুষের উপলব্ধিযোগ্য ভাষায় ট্রান্সলেট করার জন্য। ঠিক নেটস্কেপের মতো ব্রাউজার এই গবেষকদের ইন্টারনেটে থাকা বেশিরভাগ ইনফরমেশনে যেভাবে অ্যাক্সেস সুবিধা দেয়, একইভাবে সফটওয়্যার ব্রাউজার সেন্সর ডাটার বন্যায় প্রবেশ করার জন্য তাদের সুযোগ করে দেবে- তেমনটিই ঘটতে যাচ্ছে। সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান সাময়িকীর গত জুলাই ২০১৪ সংখ্যায় যৌথভাবে এক নিবন্ধ লিখে এ কথাই জানিয়েছেন এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের পিএইচডির ছাত্র গারসন দুবলন ও মিডিয়া ল্যাবের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক জোসেফ এ. প্যারাডিসো। ওপরে উল্লিখিত ধরনের সফটওয়্যার ব্রাউজার ডেভেলপ করার জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা টুল হচ্ছে ভিডিও গেম ইঞ্জিন। এই একই ইঞ্জিন লাখ লাখ ভিডিও গেম প্লেয়ার পরস্পরের সাথে নিয়ত পরিবর্তনশীল ত্রিমাত্রিক পরিবেশে প্রাণবন্তভাবে ইন্টারেক্ট করে। ‘ইউনিটি ৩’ গেম ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করে এমআইটি মিডিয়াল্যাব ডোপেলপ করে DoppelLab নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন, যা সেন্সরের সংগৃহীত ডাটার স্রোত নিয়ে নিতে পারে। ভবনের একটি আর্কিটেকচারাল কমপিউটার-এইডেড ডিজাইন (সিএডি) মডেলের ওপর প্রলেপ দিয়ে এই ডাটা উপস্থাপন করে গ্রাফিক আকারে। যেমন- মিডিয়াল্যাবে ডোপেলল্যাব সেন্সর থেকে ডাটা সংগ্রহ করে গোটা ভবনের মাধ্যমে এবং রিয়েল টাইমে রেজাল্ট ডিসপ্লে করে একটি কমপিউটার স্ক্রিনে। একজন ইউজার স্ক্রিনে তাকিয়ে প্রতিটি কক্ষের তাপমাত্রা দেখতে পারেন। কিংবা দেখতে পারেন ভবনের কোন এলাকা দিয়ে কে হেঁটে যাচ্ছেন। এমনকি জানতে পারবেন পিংপং টেবিলে বল কখন কোথায় অবস্থান করে। ডোপেলল্যাব ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজ করার বাইরে আরও বেশি কিছু করতে পারে। এটি গোটা ভবনের এখানে-সেখানে সৃষ্ট শব্দ মাইক্রোফোনে সংগ্রহ করে তা ব্যবহারের পর একটি ভার্চু্যয়াল সোনিক এনভায়রনমেন্ট তথা শাব্দিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাইভেসি নিশ্চিত করতে অডিও স্ট্রিম তথা শব্দস্রোত সঞ্চালিত হওয়ার আগেই তা আচ্ছন্ন করে দেয়া হয় অরিজিনেটিং সেন্সর ডিভাইসে। ডোপেলল্যাব অতীতে রেকর্ড করা ডাটা উপভোগকে সম্ভব করে তুলেছে। ডোপেলল্যাবের মতো সেন্সর ব্রাউজারগুলোর আশু বাণিজ্যিক প্রয়োগ রয়েছে। যেমন- বড় ধরনের সেন্সর-সজ্জিত ভবনের জন্য ভার্চু্যয়াল-কন্ট্রোল প্যানেল। অতীতে একজন বিল্ডিং ম্যানেজার যদি ভবনের তাপ সমস্যার সমাধান করতে চাইতেন, তখন তাকে স্প্রেডশিট ও গ্রাফ ব্যবহার করতে হতো, তাপের পরিমাপ ক্যাটালগিং করতে হতো, খুঁজতে হতো প্যাটার্ন, যা সোর্স নির্দেশ করবে। কিন্তু ডোপেলল্যাব ব্যবহার করে ওই ব্যক্তি জানতে পারেন প্রতিটি কক্ষের ও মেঝের বিদ্যমান ও কাঙিক্ষত তাপমাত্রা। তা ছাড়া পস্ন্যানারেরা, ডিজাইনেরা ও ভবনে থাকা লোকজন একইভাবে দেখতে পারবেন কীভাবে অবকাঠামোটি ব্যবহার হচ্ছে। মানুষ কখন কোথায় জড় হচ্ছে। ভবনে কী ও কোনো পরিবর্তন আনছে। মানুষ ভবনের কোথায় কীভাবে মিথষ্ক্রিয়া করছে, কীভাবে কী কাজ করছে। তবে মিডিয়া ল্যাবের গবেষকেরা বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় রেখে ডোপেলল্যাব তৈরি করেননি। এরা তা করেছেন আরও বড় ধরনের ও আরও বেশি কৌতুহল মেটাতে- ‘প্রেজেন্সের’ মৌলিক অর্থের ওপর ইউবিকুইটাস কমপিউটিংয়ের প্রভাব উদঘাটন করতে।

ইন্দ্রিয়গুলোর আরও ক্ষমতায়ন

এটি নিশ্চিত বলা যায়, কমপিউটিংয়ের পরবর্তী উত্তাল তরঙ্গে পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলো প্রাধানললল্য বিস্তার করবে। গবেষকেরা এই বিষয়টিকে দেখছেন সেন্সর ডাটার সাথে আরও অনেক বেশি সহজে ইন্টারেক্ট করার একটি সুযোগ হিসেবে। কার্যত পরিধানযোগ্য কমপিউটার হয়ে উঠতে পারে সেন্সরি প্রসথেসিস, অর্থাৎ সেন্সরসমৃদ্ধ একটি প্রত্যঙ্গ বা দেহাংশ। গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন সহায়ক ডিভাইস হিসেবে শরীরে ওয়ারেবল সেন্সর ও অ্যাকচ্যুয়েটর ব্যবহার নিয়ে। মানুষ সেন্সরি সাবস্টিটিউশন প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যক্তির ইন্দ্রিয়ের বদলে সেন্সর থেকে সিগন্যাল ম্যাপিং করে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, neu-responsibility - নতুন সতেজতা মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা- আমাদের বিদ্যমান সেন্সরি চ্যানেল দিয়ে পাঠানো ‘এক্সট্রা সেন্সরি’ সতেজতা উপলব্ধির সুযোগ এনে দেবে। এরপরও সেন্সর নেটওয়ার্ক ডাটা ও মানুষের সেন্সরি অভিজ্ঞতার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়ে গেছে।

গবেষকদের বিশ্বাস, সেন্সরি প্রসথেসিসের সম্ভাবনা উদঘাটন করার একটি চাবিকাঠি হবে পরিধানকারীর তা অর্জনে মনোযোগী হওয়া। আজকের দিনের হাইয়েস্ট-টেক ওয়ারেবলগুলো, যেমন- গুগল গস্নাস আমাদের কাঁধের ওপর একটি তৃতীয় পক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে চায়, যা পরিধানকারীকে সংশ্লিষ্ট কনটেক্সচ্যুয়াল ইনফরমেশন সাজেস্ট করে। এই সাজেশন্স আসে অজানা উৎপত্তিস্থল থেকে। কখনও তা আসে সমস্যাকরভাবে, এমনকি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা গবেষকদের সেন্সরি নেটওয়ার্কের বেলায় কখনও ঘটবে না। গবেষকদের সেন্সরি সিস্টেম আমাদের সুযোগ দেবে গতিশীলভাবে টিউন ইন ও টিউন আউট করার। গবেষকেরা পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এটুকু জানতে, পরিধানযোগ্য কমপিউটার মস্তিষ্কের অন্তর্নিহিত সক্ষমতায় পৌঁছতে পারে কি না। এমআইটি মিডিয়াল্যাবের গবেষকদের প্রথম পরীক্ষা নির্ধারণ করবে একটি ওয়ারেবল ডিভাইস কি তুলে আনতে পারবে, একটি অডিও সোর্সসেট থেকে কোন সোর্সটি শ্রোতা শুনছেন। গবেষকেরা চাইবেন এই ইনফরমেশন ব্যবহার করে ডিভাইস পরিধানকারীকে লাইভ মাইক্রোফোনে ও ট্রিডমার্শের হাইড্রোফোনে সরাসরি টিউন ইন করায় সক্ষম করে তুলতে, ঠিক যেমনিভাবে টিউন ইন করা হয় অন্যান্য স্বাভাবিক শব্দের উৎসের বেলায়। কল্পনা করুন, ঝর্ণাধারার কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পানির নিচের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, দেখতে পারছেন গাছ-গাছালি, আর শুনতে পারছেন মাথার উপরের পলস্নববিতানের পাখির কলকাকলি। এর ফলে সেন্সরি সিস্টেম ও নেটওয়ার্কড সেন্সর ডাটার সাথে ফ্লুইড কানেকশনের সূচনা ঘটবে। সম্ভবত তখন এমন একটি সময় আসবে, যখন সেন্সরি ও নিউরাল ইমপ্লান্ট বা সংযোজন করেই এই কানেকশন গড়ে তোলা যাবে। গবেষকদের আশা, এসব ডিভাইস এবং এগুলো থেকে পাওয়া ইনফরমেশন আমাদের বিদ্যমান সেন্সরি সিস্টেমকে সরিয়ে দেয়ার বদলে বরং এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গি করে থাকবে।

ইউবিকম্পের ভবিষ্যৎ

প্রেজেন্সের পুনর্সংজ্ঞায়ন
যখন সেন্সর ও কমপিউটার দূরবর্তী এনভায়রনমেন্টে ভার্চু্যয়ালি পরিভ্রমণ সম্ভব করে তোলে এবং রিয়েল টাইমে ‘সেখানে’ ও ‘এখন’ ‘হওয়া/থাকা’-কে সম্ভব করে তোলে, তখন প্রেজেন্স (বর্তমানতা, উপস্থিতি, বিদ্যমানতা, প্রত্যক্ষতা) নতুন নতুন অর্থ ধারণ করতে শুরু করে। মিডিয়াল্যাবের গবেষকেরা বলেন, ডোপেলল্যাব ও টিডমার্শ ফার্মসের লিভিং অবজারবেটরি প্রকল্পে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রেজেন্সের সেই নতুন অর্থ বা ধারণার উদঘাটন। ডোপেলল্যাব ও লিভিং অবজারবেটরি প্রকল্পের লক্ষ্য ফিজিক্যাল ও ভার্চু্যয়াল ভিজিটরদেরকে একটি পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক পরিবেশে নিমগ্ন রাখা। ২০১০ সাল থেকে প্রাইভেট ও পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলো দক্ষেণ ম্যাসাচুসেটসের ২৫০ একরের ক্র্যানবেরির (সুস্বাদু ছোট্ট লাল ফলবিশেষ, যা জেলি ও সস তৈরিতে ব্যবহার হয়) জলা-জমিগুলোকে পরিবর্তন করে আসছে একটি সুরক্ষেত উপকূলীয় ওয়েটল্যান্ড সিস্টেমে। এই জলাভূমিগুলোকে সম্মিলিতভাবে বলা হয় টিডমার্শ ফার্মস। এর যৌথ মালিকদের একজন হচ্ছেন এ গবেষকদের এক নারী সহকর্মী, যার নাম গ্লোরিয়ানা ডেভেনপোর্ট। এই মহিলা তার কর্মজীবন গড়ে তুলেছেন মিডিয়াল্যাবে, ডকুমেন্টারির ভবিষ্যৎ বিষয়ের ওপর। ডেভেনপোর্ট দেখেন সেন্সরসমৃদ্ধ এনভায়রনমেন্ট নিজেই এর ডকুমেন্টারি তৈরি করছেন। এই ধারণা তাকে বিস্মিত করে। তার সহায়তা নিয়ে গবেষকেরা তৈরি করছেন কতগুলা সেন্সর নেটওয়ার্ক, যা ডকুমেন্ট করে ইকোলজি তথা বাস্তববিদ্যা বা পরিবেশ দূষণসংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো। এসব সেন্সর নেটওয়ার্কের তৈরি ডাটা মানুষ ব্যবহার করতে পারে। গবেষকেরা টিডমার্শ ফার্মসে স্থাপন করেছেন শত শত ওয়্যারলেস সেন্সর। এসব সেন্সর পরিমাপ করে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, জলীয়তা, আলো, গতি, বায়ুপ্রবহ, শব্দ, গাছের পতন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিকের মাত্রা।

কার্যকর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পগুলোকে এসব সেন্সর সক্ষম করে তুলবে তাদের ব্যাটারির ওপর বছরের পর বছর নির্ভর করতে। কিছু কিছু সেন্সর হবে সোলার সেলসমৃদ্ধ। এর ফলে মৃদু বায়ুর, আশপাশের পাখির কুঞ্জন, বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দ, গাছের পাতা পড়ার শব্দ ইত্যাদি শব্দের অডিও স্ট্রিমের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। মিডিয়াল্যাবের এই গবেষকদের সহকর্মী ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্সট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ভূবিজ্ঞানীরা টিডমার্শে স্থাপন করছেন খুবই উন্নত মানের ইকোলজিক্যাল সেন্সর। এসব সেন্সরের মধ্যে আছে সাবমার্সিবল ফাইবার অপটিক টেম্পারেচার গজ ও এমনসব যন্ত্র, যা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে। এসব ডাটা প্রবাহিত করা হবে একটি ডাটাবেজে গবেষকদের সার্ভারে, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে ইউজারেরা খুঁজতে ও ব্যবহার করতে পারবেন।

এসবের মধ্যে কিছু অ্যাপ্লিকেশন বাস্তববিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে মার্শে বা জলাভূমিতে সংগৃহীত ডাটা দেখার কাজে। অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলো ডিজাইন করা হবে সাধারণ মানুষের জন্য। যেমন- মিডিয়াল্যাবের গবেষকেরা ডোপেলল্যাবের মতো একটি ব্রাউজার তৈরি করছেন, যা ব্যবহার করা যাবে ইন্টারনেট কানেকশনসমৃদ্ধ যেকোনো কমপিউটার থেকে টিডমার্শে ভার্চু্যয়ালি ভিজিট করার কাজে। এ ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট হচ্ছে- এই জলাভূমির একটি ডিজিটাল টপোগ্রাফি তথা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিবরণ উপস্থাপন, যা পরিপূর্ণ থাকবে ভার্চুয়াল গাছ-গাছালি দিয়ে। গেম ইঞ্জিন সংযোজন করবে মার্শের সেন্সরগুলোর সংগৃহীত নয়েজ ও ডাটা। কয়েকটি মাইক্রোফোনের সাউন্ড ইউজারের ভার্চু্যয়াল অবস্থান অনুযায়ী ব্ল্যান্ডেড (মিশ্রণ) ও ক্রস-ফেডেড (কমানো) করা হয়। এর ফলে আপনি জলাভূমির ওপর দিয়ে ভার্চু্যয়ালি শূন্যে উঠতে পারবেন এবং কাছের এলাকায় একসাথে ঘটে চলা সবকিছু শুনতে পারবেন অথবা পানির নিচে সাঁতার কাটতে পারবেন এবং শুনতে পারবেন হাইড্রোফোনে সংগৃহীত শব্দ। অকুস্থল থেকে রিয়েল টাইমে সংগৃহীত ভার্চুয়াল উইন্ড ডাটা প্রবাহিত হবে ডিজিটাল গাছে।

লিভিং অবজারবেটরি একটি ডেমনস্ট্রেশন প্রজেক্ট ও প্র্যাকটিক্যাল প্রটোটাইপের চেয়েও বেশি কিছু। তবে বাস্তব জগতের অ্যাপ্লিকেশন কল্পনা করা সহজ। কৃষকেরা একই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারতেন সেন্সরচালিত জমিতে ও জমির আশপাশের আর্দ্রতার প্রবাহ চিহ্নিত করা, কীটনাশক, সার মনিটরিংয়ের কাজে। মহানগর এজেন্সিগুলো এটি ব্যবহার করতে পারত নগরীতে চলা ঝড়ের ও বন্যার অগ্রসর পরিস্থিতি মনিটর করে বিপন্ন লোকদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে। এসব সেন্সর নেটওয়ার্ক আমাদের প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করার বিষয়টি কষ্টকল্প নয়। এর মাধ্যমে একদিন আমরা রেসেত্মারাঁয় যাওয়ার আগে জেনে নিতে পারব এর পরিবেশ, জনাকীর্ণ ও গোলমেলে অবস্থায় আছে কি না। চূড়ান্ত পর্যায়ে এ ধরনের রিমোট প্রেজেন্স সুযোগ করে টেলিপোর্টেশনের মতো পরবর্তী সেরা সুযোগটি কাজে লাগাতে। এমআইটি মিডিয়াল্যাবের গবেষকেরা কোনো কোনো সময় ডোপেলল্যাব ব্যবহার করেন সফরে থাকার সময় মিডিয়াল্যাবের সাথে সংযোগ গড়ে তুলতে। কারণ, গুঞ্জনধ্বনি শুনে ও কর্মকা- দেখে এরা নিজেদের বাড়ির কাছেই আছেন, অনেকটা এমনই অনুভব করতে পারেন। একইভাবে ট্র্যাভেলারেরাও কোনো সড়কপথে চলার সময়েও তাদের নিজেদের বাড়িতে প্রক্ষেপণ করতে পারেন, পরিবারের লোকদের সাথে সময় কাটাতে। এভাবেই ইউবিকম্প আমাদের সামনে হাজির করছে প্রেজেন্স বা উপস্থিতির নতুন নতুন সংজ্ঞা।

ইউবিকুইটাস শব্দের অর্থ ‘একই সময়ে সবখানে হাজির থাকা- এক্সিস্টিং অর বিং এভরিহয়ার অ্যাট দ্য সেইম টাইম’। ইউবিকুইটাস কমপিউটিং হচ্ছে এমন একটি ধারণা, যেখানে টেকনোলজি সবসময় সবখানে থাকে, তবে কার্যত তথা ভার্চু্যয়ালি এর উপস্থিতিটা হবে আমাদের কাছে অদৃশ্য। এ ক্ষেত্রে কমপিউটার একটি আলাদা বস্ত্ত না হয়ে, তা এমবেডেড থাকবে আমাদের এনভায়রনমেন্টে, বিল্টইন থাকবে আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহারের বস্ত্ততে। ইউবিকম্পের ভবিষ্যৎ দুনিয়ায় কমপিউটার হবে খুবই ছোট ও পরিব্যাপক। ফলে আমাদের প্রায় প্রতিটি বস্ত্ততে এমবেডেড থাকবে কমপিউটার। দেখা যাবে ঘরের মেঝে লাগানো রয়েছে কমপিউটার সেন্সর, যা মনিটর করবে আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। কমপিউটার থাকবে আপনার গাড়িতে, গাড়ি চালিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় আপনাকে সহায়তা দিতে। কমপিউটার তদারকি করবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কাজ, সবখানে সবসময়। ইউবিকুইটাস কমপিউটিংয়ের প্রমোটরেরা আশা করছেন, এনভায়রনমেন্টে ও প্রতিদিনের বস্ত্ততে কমপিউটেশন এমবেডেড করার ফলে মানুষ আজকের চেয়ে আরও ভালোভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে, ইনফরমেশন ও ইন্টারনেটের সাথে যখন-তখন আরও স্বাভাবিকভাবে ইন্টারেক্ট করতে পারবে। ইউবিকম্প সম্পর্কে আগ্রহীরা এমন পরিধানযোগ্য কমপিউটিংয়ের কল্পনা করছেন, যেখানে কমপিউটার সেন্সর বসানো থাকবে ঘড়িতে, হ্যাটে, বেল্টে, জুতায় ও এমনি সব ব্যবহার সামগ্রীততে। এমনকি মানবদেহেও। চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের জন্যও। তবে ইউবিকুইটাস আপনাকে যেভাবে সবসময় নজরধারিতে রাখবে, এর ফলে প্রাইভেসি নিয়েও আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলবে।

ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস