লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
জাবেদ মোর্শেদ
মোট লেখা:১৩
লেখা সম্পর্কিত
ঈদ কেনাকাটায় ব্যাংক কার্ডবিষয়ক সতর্কতা
সামনেই ঈদ। কিছুদিন পরই শুরু হবে পুরোদমে কেনাকাটা। আর কেনাকাটা মানেই তো টাকা পয়সার লেনদেন। ঈদের মধ্যে ভিড়ের কারণে অনেকেই অর্থ নিয়ে চলাফেরা করতে চান না। এ ছাড়া ছিনতাই, অপহরণ বা পকেটমারের ঘটনাও অনেক বেড়ে যায় ঈদকে সামনে রেখে। এসব সমস্যা এড়াতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। নানা ধরনের কার্ডের ব্যবহারে ভিন্নতা থাকলেও সাধারণ নিয়মগুলো প্রায় একই। নানা ধরনের ব্যাংক কার্ডের বদৌলতে চেক হাতে বারবার দৌড়াতে হয় না ব্যাংকে। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে যেমন প্রয়োজন মিটছে নিমেষে, তেমনি কার্ড ঘষে দোকানে বসেই করা যাচ্ছে পণ্যের মূল্য পরিশোধ। কিন্তু কার্ড ব্যবহারে আপনি যথেষ্ট সচেতন তো? নানা ধরনের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের যথাযথ ব্যবহার, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে জেনে রাখুন কার্ডের নানা খুঁটিনাটি।
যান্ত্রিক গোলযোগ
ঈদের মৌসুমে শেষ মুহূর্তে টাকা তুলতে গিয়ে বুথে আটকে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এতে ব্যাংকে জানিয়েও তাৎক্ষণিক সমাধান মেলে না। কার্ড পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় দুই সপ্তাহ। মেশিনের ত্রুটির কারণে টাকা কিংবা কার্ড কোনোটিই বের হয় না অনেক সময়। এ ধরনের ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে। আবার অনেক সময় কার্ড বের হলেও টাকা আসে না। অথচ অ্যাকাউন্ট থেকে ঠিকই টাকা কেটে যায়।
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে বুথ থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে সিটি ব্যাংক লিমিটেডের কার্ড বিভাগের প্রধান মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাধারণত তিনবার ভুল পিন নম্বর দিলে কিংবা বিশ সেকেন্ডের মধ্যে মেশিন থেকে কার্ডটি গ্রহণ না করলে তা আটকে যেতে পারে। এ ধরনের হলে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জানাতে হবে। মেশিন থেকে টাকা না পেলেও অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেয়া টাকা ফেরত পাওয়া সম্পর্কে তিনি জানান, সম্পূর্ণভাবে টাকা না বের হলে কার্ডধারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেশিনের নির্ধারিত স্থানসহ দুই ধাপে খতিয়ে দেখা হয় বিষয়টি। এ জন্য ন্যূনতম তিন কার্যদিবস সময় লাগে। এক ব্যাংকের কার্ড অন্য ব্যাংকের বুথে ব্যবহার করা হয়ে থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে।
কার্ড ছিনতাই
ঈদকে সামনে রেখে কার্ড ছিনতাইকারী চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রেডিট কার্ড ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে পুলিশের কিছু অসৎ সদস্যের যোগসাজশ রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। যে কারণে ভুক্তভোগী অনেকেই হয়রানির ভয়ে থানায় যেতে চায় না। রাজধানীতে প্রায়ই এটিএম কিংবা ক্রেডিট কার্ড ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও তার বেশিরভাগই পুলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ হয় না হয়রানির ভয়ে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত আটটি গ্রম্নপ এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত। র্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে অনায়াসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে করে যাত্রী পরিবহনের কৌশল অবলম্বন করে। তারপর সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে পিন নম্বর আদায় করে। পরে ছিনতাইকারী চক্রের কোনো সদস্য ব্যাংকের বুথ থেকে তুলে নেয় সঞ্চয়কৃত অর্থ। ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে ছদ্মবেশ ধরা হয়। যাতে বুথের গোপন ক্যামেরায় নিজের পরিচয় গোপন রাখা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সাথে সাথে নিজেদেরও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সময়ে অপ্রয়োজনে সাথে কার্ড না রাখাই ভালো। রাখতে হলে একাধিক কার্ড কোনো অবস্থাতেই নয়। আর কোনো ঘটনা ঘটে গেলে তা অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।
কার্ড দিয়ে কেনাকাটার সময় সতর্কতা
ব্যস্ততার কারণে পণ্যের দামের সাথে কার্ড থেকে টাকা কাটার গরমিল চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে না তো! বিশেষত ঈদের কেনাকাটার সময়। কার্ড দেয়ার পর টাকার রসিদটি ভালোভাবে দেখে তারপর স্বাক্ষর করুন। একবার চোখ বুলিয়ে নিন পণ্যের তালিকায়। কার্ড ব্যবহারের চার্জ বাবদ বাড়তি টাকা কাটা হচ্ছে কি না, সেটাও জেনে নিন।
ঈদের কেনাকাটা সাধারণত অনেক রাত পর্যন্ত চলে। পাশাপাশি অনেক দোকানে একই কার্ড বারবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সংযমী হওয়া ভালো। আশপাশের পরিবেশ, লোক সমাগম, ভিড়ের ব্যাপারটিও মাথায় রাখা জরুরি। অনেক সময় ছোটখাটো দোকানে কার্ডে টাকা শোধের ব্যবস্থা না থাকায় অন্য কোথাও থেকে মূল্য পরিশোধের কথা বলে কার্ড চাইতে পারেন কোনো দোকানি। এসব ক্ষেত্রে দরকার বাড়তি সতর্কতা। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হলে কার্ড কারও হাতে না দিয়ে নিজেই সাথে গিয়ে কার্ড ব্যবহার করুন।
কার্ডের যত কোড
আপনার কার্ডের গোপন নম্বরটি (পিন নম্বর) যেনো গোপনই থাকে। কোথাও লিখে না রেখে মুখস্থ রাখুন। আর কোথাও লিখতে হলে তার আগে-পরে অন্য কিছু যুক্ত করে এমনভাবে লিখুন, যাতে এটা যে কার্ডের কোড, তা যেনো অন্য কেউ বুঝতে না পারে। আর তা অবশ্যই কার্ডের সাথে রাখবেন না। ভুলে যাওয়ার ভয়ে কখনই কার্ডের গায়ে বা কার্ড কভারে কোড লিখে রাখবেন না। মোবাইলের ফোনবুকে বা নোটবুকে না লিখে প্রয়োজনে অন্যত্র অন্যভাবে সংরক্ষণে রাখুন। আপনার ব্যাংকিং কার্ডটি যে ধরনেরই হোক না কেনো, কার্ডের গায়ে কার্ড নম্বর, সিকিউরিটি কোড, মেয়াদোত্তীর্ণের সাল, কলসেন্টারের নম্বর উল্লেখ থাকেই। এগুলো বিভিন্ন সময় প্রয়োজন হয়। তাই সুবিধাজনক জায়গায় এসবও লিখে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই কাউকে নিজের কার্ডের তথ্যাদি দেবেন না। এমনকি ফোন করে কেউ জানতে চাইলেও না। মনে রাখবেন, আর যা-ই হোক, ব্যাংক থেকে কখনই আপনার গোপন নম্বর জানতে চাইবে না।
কার্ড যখন অন্যের হাতে
ছিনতাইকারীর কবলে পড়েই হোক বা অন্য কোনোভাবে আপনার কার্ড হাতছাড়া হয়ে অন্যের হাতে চলে গেলে সাথে সাথেই ব্যাংকে জানিয়ে দিন। ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় যেহেতু কোনো গোপন নম্বর লাগে না, তাই যেকেউ হয়তো তা ব্যবহার করে ফেলতে পারে। প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যাংকে জানিয়ে রাখুন। কেনাকাটার ব্যস্ততায় কার্ড হারানো, চুরি বা ছিনতাই অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তাই এ ধরনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কলসেন্টারে জানালে তাৎক্ষণিকই কার্ডটি বস্নক করে দেয়া হয়। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আছে। অস্বাভাবিকভাবে বা বেশি পরিমাণে (এক লাখের বেশি) টাকা তুললে গ্রাহককে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
কার্ড রাখুন সযত্নে
সব সময় কাছে কার্ড না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। একাধিক কার্ড একসাথে রাখলেও থাকে বাড়তি ঝুঁকি। কেনাকাটা বা টাকা তোলার আগে প্রয়োজন বুঝে কার্ড নিয়ে বের হোন। নিজের মানিব্যাগ, ভ্যানেটি ব্যাগ বা পার্সে কার্ড নেয়া যেতে পারে। তবে সব সময় মানিব্যাগে কার্ড রাখলে অল্প দিনেই তা ভেঙে যেতে পারে। অনেক সময় সিকিউরিটি কোডটিও মুছে যায়। যতটা সম্ভব কার্ড কভার বা কার্ড হোল্ডার ব্যবহার করুন। পরিত্যক্ত বা বাতিল কোনো কার্ড থাকলে তা জমিয়ে না রেখে কেটে নষ্ট করে ফেলুন
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com