• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্টফোনের তথ্যের নিরাপত্তা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:২৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
স্মার্টফোন
তথ্যসূত্র:
সিকিউরিটি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্টফোনের তথ্যের নিরাপত্তা
এখন আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি দিয়ে কল করা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের কাজ করে থাকি। দিনে দিনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ছবি তোলা, ভিডিও দেখার হার বাড়ছে। অনেকে তার হাতে থাকা ছোট ডিভাইসটি দিয়ে ফাইল তৈরি, সম্পাদনাসহ অনেক ধরনের কাজ করছেন। মোটকথা এসব মোবাইল ফোনকে আমরা স্মার্টফোন বলছি। এখনকার একেকটি ফোনকে ছোটখাটো কমপিউটার বললেও ভুল বলা হবে না।

ব্যবহারের সুবিধা ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে দিনে দিনে তা ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে। একটি গবেষণা প্রবন্ধে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের মধ্যে স্মার্টফোন আমাদের প্রচলিত কমপিউটারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। এটা শুধু এ কারণে নয় যে স্মার্টফোন ছোট এবং সহজে হারিয়ে যেতে পারে বরং দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোনেও দ্রুত ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের বিস্তার ঘটছে। ইদানীং এক গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কাজে একই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাই এর মধ্যে থাকা তথ্যের নিরাপত্তা বিধান করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আশার কথা, আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিতে তথ্যের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এ লেখায় এরকম বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

০১. স্ক্রিন লক : যদি আপনার ফোনটিতে কিছু সময়ের জন্য কাজ না করেন অথবা এটি চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায়, তাহলে আপনি নিশ্চয় চাইবেন যাতে কেউ সহজে আপনার তথ্য দেখতে না পারেন বা নিতে না পারে। একটি পিন কোডের মাধ্যমে এই নিরাপত্তা সুবিধা নিতে পারেন। ইচ্ছে করলে স্ক্রিন লকের মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারেন।

কিভাবে আপনার স্ক্রিন লক করবেন

উল্লেখ্য, ডিভাইস স্পেসিফিকেশন অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সনের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে।

অ্যান্ড্রয়িড : অ্যান্ড্রয়িডের ক্ষেত্রে আপনাকে অ্যাক্সেস করতে হবে Settings>Location security>Set up screen lock.

টাইমআউট ডিলে Settings>Display-এর মধ্যে কনফিগার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়িড প্লাটফর্মে connect-the-dots swipe পাটার্ন ব্যবহার করে আপনার ফোনটি লক করতে পারেন।

ব্ল্যাকবেরি : পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য আপনাকে যেতে হবে

Options>Security Options>General Settings>Password-এ।

আইফোন : পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য যেতে হবে

Settings>General>Passcode lock-এ।

উইন্ডোজ ফোন ৭ : পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য যেতে হবে

Settings>Lock Wallpaper-এ।

০২. রিমোট লক, লোকেট ও ওয়াপআউট : ধরুন, আপনার ফোনটি ভুলে কোনো জায়গায় ফেলে এসেছেন। আপনি মনে করতে পারছেন না কোথায় আছে। এমন অবস্থায় আপনি ইচ্ছে করলে রিমোটলি ফোনটি লক করতে পারবেন, লোকেট করতে পারবেন এবং ইচ্ছে করলে ফোনে থাকা কনটেন্ট ওয়াপআউট করতে পারবেন। লোকেট মানে এই নয় যে, ফোনটি বসার ঘরে নাকি বেডরুমে আছে এটা বের করতে পারবেন। বরং এটি দিয়ে আপনি বের করতে পারবেন ফোনটি বাসায় নাকি অফিসে ফেলে এসেছেন। ওয়াপআউট বা কনটেন্ট মুছে ফেলার বিষয়টি হলো, যদি আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন ফোনটি চুরি হয়ে গেছে এবং ফোনে অনেক গোপনীয় ও ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে, যা আপনি চান না অন্য কেউ জানুক, তাহলে আপনি এই ফিচারের মাধ্যমে আপনার ফোনে থাকা সব তথ্য মুছে দিতে পারেন।

যেভাবে করবেন

অ্যান্ড্রয়িড : কোনো বিল্টইন সুবিধা না থাকলেও বিভিন্ন থার্ড পার্টি অ্যাপস দিয়ে এই কাজটি করতে পারবেন। এমন একটি অ্যাপ হলো Where's my Droid.

ব্ল্যাকবেরি : আপনি অ্যাপ স্টোর থেকে বিনামূল্যে BlackBerry Protect প্রজেক্ট ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

আইফোন : আইফোনের ক্ষেত্রে মোবাইলমি (MobileMe) অ্যাপ্লিকেশনটি এনাবলড করে নিতে হবে, তারপর মোবাইলমি ব্যবহার করে অ্যাপলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আইফোনটিকে ট্র্যাক করা যাবে কিংবা সব তথ্য রিমোটলি মুছে ফেলা যাবে। ফাইন্ড মাই ফোন (Find My Phone) অ্যাপ্লিকেশনটিও অ্যাপল স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে।

উইন্ডোজ ফোন ৭ : আপনাকে প্রথমে যেতে হবে Settings>Find my phone->turn on the remote locate/lock/wipe-এ। এখন windowsphone.live.com থেকে মোবাইলটি মনিটর করতে পারবেন।

০৩. নিয়মিত ব্যাকআপ বা সিনক করা : তথ্যের গুরুত্ব দিনকে দিন হার্ডওয়্যারের মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে। আপনার ফোনটি চুরি হয়ে গেলেও খুব সহজেই আপনার ফোনে থাকা তথ্যগুলো পেতে পারেন, যদি নিয়মিত ফোনে থাকা তথ্য ব্যাকআপ নিয়ে থাকেন। যদি ফোনটি নিয়মিত সিনক করেন, তবে আপনার ব্যাকআপটি আপডেটেড থাকবে। প্রত্যেকটি প্লাটফর্মই সাধারণত ব্যাকআপের সুবিধা দিয়ে থাকে। আইফোনের রয়েছে নিজস্ব সিনক কনটেন্ট প্লাগ-ইন। ব্ল্যাকবেরিতে ইচ্ছে করলে আপনার বুকমার্কসহ আরো অনেক কিছুই ব্যাকআপ রাখতে পারেন। তাছাড়া কিছু থার্ড পার্টি সফটওয়্যারও রয়েছে, যা ব্যবহার করে ডাটা ব্যাকআপ বা সিনক করতে পারেন।

০৪. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট : কিছুদিন পরপর আপনার স্মার্টফোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্যের আপডেট অবমুক্ত করে থাকে। যদিও এই ধরনের আপডেট সাধারণত কোনো নতুন ফিচার বা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য হয়ে থাকে। ফিচার বা অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াও এরা আপডেটের সময় সিকিউরিটি আপডেট দিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত আপনার অপারেটিং সিস্টেমটিকে আপডেট করে নিতে হবে।

যেভাবে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করবেন

অ্যান্ড্রয়িড : আপনাকে যেতে হবে Settings>About phone>System updates-এ।

ব্ল্যাকবেরি : আপনাকে প্রথমে ফোনটিকে কমপিউটারে যুক্ত করতে হবে। এরপর ব্ল্যাকবেরি আপডেট পেজ ভিজিট করতে হবে। এরপর Check for Updates বাটনে ক্লিক করলে ফোনটি অটো আপডেট হয়ে যাবে।

আইফোন : আপনার ফোনটিকে কমপিউটারের সাথে কানেক্ট করুন এবং iTunesটি চালু করুন। এটি আপনাকে কোনো আপডেট থাকলে নোটিফাই করবে।

উইন্ডোজ ফোন ৭ : মোবাইলটিই আপনাকে নোটিফাই করবে যদি কোনো আপডেট থাকে। তবে আপডেট ইনস্টল করতে আপনাকে ফোনটি পিসিতে যুক্ত করে Zune software দিয়ে আপডেট করতে হবে।

০৫. ব্লুটুথ ডিসকভারি মোড অফ : দেখা যায়, প্রায়শই আমরা অনেকেই মোবাইল ডিভাইসটি ব্লুটুথ ডিসকভারি মোডে অন করে রাখি। ফলে আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসটি নিয়মিত ডিসকভারি মেসেজ দিতে থাকে। ফলে কোনো হ্যাকার ইচ্ছে করলে অবৈধভাবে যুক্ত হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা যায় ৯০ শতাংশ মানুষই ডিসকভারি মোড অফ করেন না।

কিভাবে ব্লুটুথ ডিসকভারি মোড অফ করবেন

অ্যান্ড্রয়িড : আপনাকে যেতে হবে Settings>Wireless and networks>Bluetooth settings>check Not-এ।

ব্ল্যাকবেরি : আপনাকে যেতে হবে Options>Bluetooth->click the BlackBerry logo (Menu) button->Choose Options->set Discoverable to No-> press the BlackBerry logo button again-> choose Save-এ।

আইফোন : আপনি ইচ্ছে করলে ব্লুটুথ অফ করতে পারবেন না। তবে আইফোন শুধু যখন ডিসকভার মোডে থাকে তখনই নিজে তা ডিসকভার মোডে নেবেন। অন্যথায় তা অফ মোডে থাকে।

উইন্ডোজ ফোন ৭ : ডিফল্ট অফ থাকে।

০৬. ওয়াই-ফাই জোনের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে : কোনো ওয়াই-ফাই জোনে যুক্ত হওয়ার আগে সতর্ক হতে হবে। কারণ, এই ধরনের হটস্পট থেকে অনেক সময় তথ্য বা অইডেনটিটি চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। আপনাকে যদি ইন্টারনেটে যুক্ত হতেই হয়, তবে ভিপিএন যুক্ত করে নিতে পারেন।

কিভাবে ভিপিএন কনফিগার করবেন

অ্যান্ড্রয়িড : ভিপিএন কনফিগার করার জন্য আপনাকে যেতে হবে

Settings>Wireless and networks>VPN settings-এ।

ব্ল্যাকবেরি : ভিপিএন কনফিগার করার জন্য আপনাকে যেতে হবে

Options>Security Options>VPN-এ।

আইফোন : ভিপিএন কনফিগার করার জন্য আপনাকে যেতে হবে

Settings>General>Network>VPN-এ।

উইন্ডোজ ফোন ৭ : উইন্ডোজ ফোন ৭-এ বর্তমানে সার্ভিসটি নেই।

০৭. মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যাপারে সতর্ক হোন : মোবাইল অ্যাপস স্টোরগুলোতে অসংখ্য চোখ ধাঁধানো সেটিং পাওয়া যায়, যা অনেক সময় ফ্রি বা খুব কম দাম। এটি মানুষকে ওই অ্যাপ কিনতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু অনেক সময়ই আমরা খেয়াল করি না এই অ্যাপ আমাদের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে কি না। বিশেষ করে কোনো অ্যাপ ফোনে ইনস্টল করার আগে আমাদের দেখা উচিত তার ইউজার রিভিও কেমন।

০৮. অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন : স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে স্মার্টফোন ভাইরাস। আমরা যেমন পিসি বা ল্যাপটপের জন্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করি তেমনি স্মার্টফোনের জন্যও অ্যান্টিভাইরাস, ব্যবহার করা উচিত। স্মার্টফোনে কোনো ওয়েব লিঙ্ক বা ইমেইল অ্যাক্সেস করার সময় সতর্ক থাকা দরকার, কারণ এসব উপায়েই সবচেয়ে বেশি ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি স্মার্টফোনের জন্য অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করে থাকে। আপনি এর মধ্য থেকে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।

আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক না হন তাহলে তথ্য হারানো বা চুরি হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন। যেমন : ফিশিং অ্যাটাক, স্পাইওয়্যার অ্যাটাক, নেটওয়ার্ক স্পুফিং অ্যাটাক ও সারভাইলেন্স অ্যাটাক ইত্যাদি। সুতরাং স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় সবারই আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা