লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গেমের জগৎ
স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্ট
স্ট্র্যাটেজিক শুটিং গেমাররা সচরাচর বহুদিন অপেক্ষা করে থাকেন একটি মানসম্পন্ন গেমের রিলিজের জন্য। স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্ট আসলেই মানসম্পন্ন কোনো গেম কি না, তা গেমাররা এতদিনে নিজেরাই যাচাই করে ফেলেছেন। তাই দিন শেষে স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্টের প্রিসিক্যুয়ালগুলো খেলে নিলেই বা ক্ষতি কী। কথা বলছি স্প্লিন্টার সেল নিয়ে। এতটুকু বলাই যায়, পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্ট্র্যাটেজিক শুটিং গেমের মতোই বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়াও স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্টে আছে টানটান উত্তেজনা, অদ্ভুত নাটকীয়তা আর অবশ্যই রক্তক্ষয়। যদিও সত্যিকারের নয়। তবে যাই হোক না কেনো, স্প্লিন্টার সেল গেমটি গেমারকে নিয়ে যাবে বাস্তবতার অনেকখানি কাছাকাছি। দুর্দান্ত স্ট্র্যাটেজিক শুটিং গেম আবহের গ্রাফিক্স আর শব্দকৌশল গেমারকে বাস্তব গেমিংয়ের অপূর্ব সমন্বয়কে জীবন্ত করে তুলবে।
শুধু শুটিং নয়, বিভিন্ন যানবাহন কন্ট্রোল, অপারেশনে অন্য কমান্ডোদের নেতৃত্ব দেয়া, ইনফ্যান্ট্রি প্লেসমেন্ট- সবকিছুই করা যাবে আরমা সিরিজের এই গেমটিতে। অন্যান্য টেকটিক্যাল বা স্ট্র্যাটেজিক গেমের সাথে স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্টের পার্থক্য এখানেই, অন্য গেমগুলো যেখানে ভয়াবহতার প্রচ-তা আর সিনেমাটিক অ্যাপিয়ারেন্সের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, সেখানে ব্ল্যাকলিস্ট গুরুত্ব দিয়েছে লাইভ স্টাইল কমব্যাট আর যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতার ওপর। ‘Every Bullet Counts’- এ ধরনের একটা আবহের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে গেমটি। সুতরাং সাবধান- বর্তমান গেমগুলোর মতো লাইফ রিজেনারেশন, শিল্ড রিজেনারেশনের আশায় বসে থাকলে হবে না। মৃত্যুর জন্য একটা গুলিই যথেষ্ট।
স্প্লিন্টার সেল ব্ল্যাকলিস্ট পুরোটাই এমন এক প্রণোদনা, যেখানে গেমার প্রতিমুহূর্তে যুদ্ধক্ষেত্রকে, যুদ্ধকে অনুভব করবেন নিজের প্রতিটি রক্তকণিকায়। সামনে থেকে ছুটে আসা গুলিকে মনে হবে যেনো নিজের কানের পাশ দিয়েই শিষ কেটে গেল। এখন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্ল্যাকলিস্ট খেলতে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ধৈর্য; অপেক্ষা করতে হবে প্রতিটি সতর্ক মুহূর্তের মাঝে প্রতিটি অসতর্কতার। সুযোগ বুঝে আঘাত হানতে হবে সবচেয়ে কঠিন রক্ষাব্যূহের সবচেয়ে দুর্গম কিন্তু মোলায়েম জায়গায়।
যারা এই সিরিজের একেবারেই নতুন গেমার, তাদের শুরুর দিকে একটু ঝামেলা হতে পারে গেমিং কন্ট্রোল নিয়ে। কারণ, মাউস হুইল আর স্পেসবার দিয়ে গেমের অনেকখানি চালাতে হবে। যদি পুরনো গেমার হয়ে থাকেন, তাহলে নিঃসন্দেহে পুরোপুরি বাস্তব মডেলের অস্ত্র ও আর্সেনাল আপনাকে করবে মন্ত্রমুগ্ধ। সুতরাং অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ সব গেমারেরই উচিত হবে লড়াই শুরু করা।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : কোর টু ডুয়ো ২.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন, র্যাম : ৪ গিগাবাইট উইন্ডোজ এক্সপি/৪ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/৭, ভিডিও কার্ড : ১ গিগাবাইট, সাউন্ড কার্ড, কীবোর্ড ও মাউস।
ডিভিনিটি ড্রাগন কমান্ডার
একটি নারী, একটি হাতকাটা লোক, একটি টিকটিকি- সাথে মনাকল, বার সব মিলিয়ে হিবিজিবি অবস্থা। সবাই বলে ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারলে আর কোনো কিছুর দিকে খবর থাকে না মানুষের। কিন্তু ডিভিনিটি এসব ধারণাকে নিয়ে আরেকবার ভাবাবে। রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি ঘরানার ম্যাপ স্টাইল অনেকটাই সিভিলাইজেশনের মতোই। জয় করতে হবে অজানাকে, ডাঞ্জনস, প্যালেস আর রাইভাল হিরোদেরকে। সাথে আছে শক্তিশালী কাস্টোমাইজেশন সেকশন। যেখানে হিরো কাস্টোমাইজেশন করা যাবে। আছে ফ্যান্টাসি সেটিং দিয়ে ইউনিট ক্র্যাফটিং, যা নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো সেনাবাহিনীকে তৈরি করা যাবে।
পুরো ডিভিনিটি ড্রাগন কমান্ডারের ব্যাটল স্কিম অসম্ভব দ্রুত। তাই দক্ষ গেমারদের জন্য এটি পারফেক্ট স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যাটফর্ম হলেও রুকিদের চিমিত্মত হওয়ার কিছু নেই। গেমটির অসাধারণ গেমপ্লে গেমারকে দেবে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। যদিও টার্নাভাত্তক নয় এবং গ্রাফিক্স বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো উন্নত নয়। তারপরও পুরো ব্যাটল স্কিম কখনই গেমারকে একঘেয়েমিতে ফেলবে না। যুদ্ধ আরও জমজমাট হয়ে ওঠে যখন খুব শক্তিশালী কোনো হিরোর সাথে ড্রাগনদের ব্যাটল শুরু হয় কিংবা যখন বিশাল এক সিজ উইপনারি-মিক্সড আর্মির সামনে পড়ে কাবু হয়ে ওঠে। গেমটিতে আছে বেশ বড় টেক ট্রি, যা নিজের সিংহাসনে থেকে হিসাব করে বের করতে করতেই অনেক আনন্দ উপভোগ করা যাবে।
সাথে আছে ক্যাম্পেইন মোডের বিশাল ম্যাপস কালেকশন, যা দিয়ে সহজেই পুরো দু’দিন চালিয়ে দেয়া যাবে। অদ্ভুত সুন্দর টেক্সচার, টেরিয়ান, রিসোর্স সবকিছুই গেমারকে মুগ্ধ করবে। সাথে তৈরি করা প্রতিটি সিটিতে থাকছে নির্দিষ্ট রেসিয়াল ইনহ্যাবিটাট। তাই সেগুলো দেখাশোনা করাটাও বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হবে। সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ ছাড়াও গেমারকে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ওপর কিছুটা নির্ভর করতে হবে। কারণ, গেমটির এআই যথেষ্ট ভালো প্রতিপক্ষ। সবকিছু মিলিয়ে ডিভিনিটি ড্রাগন কমান্ডার গেমারকে যুগের অন্যতম সফল ও উত্তেজনাপূর্ণ রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজির অভিজ্ঞতা দেবে। তাই দেরি না করে এখনই কৌশলী স্ট্র্যাটেজিস্ট হয়ে উঠুন আর নিজেকে তৈরি করুন দক্ষ ড্রাগন কমান্ডার হিসেবে।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : ইন্টেল কোর টু কোয়াড বা তার সমতুল্য, র্যাম : ২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭, ভিডিও কার্ড : জি ফোর্স ৬০০০ সিরিজ জিটিএস/রাডেওন (সমতুল্য) ও হার্ডডিস্ক : ৮ গিগাবাইট।
সিরিয়াস স্যাম এইচ ডি
বর্তমান গেমিং বিশ্বে সবচেয়ে বিখ্যাত থার্ড পারসন অ্যাকশন- অ্যাডভেঞ্চার ও থার্ড পারসন শুটিং জনরার গেম সিরিজ সিরিয়াস স্যাম এবং ভিনগ্রহী প্রাণীদের থেকে তার পৃথিবী রক্ষার অনবদ্য কাহিনী। পরবর্তী পর্বগুলোতে এই সিরিজের সর্বশেষ গেমগুলো নিয়ে কথা বলার আগে যারা এই সিরিজের সাথে পরিচিত নন, তাদের জন্য সিরিজের প্রথম গেমটি সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া দরকার। ক্রোয়েশিয়ান একটি গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ক্রো টিম এই গেমটি যখন তৈরি করে, তখন তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এমন কোনো গেম সৃষ্টি করা, যা তৎকালীন ঝিমিয়ে পড়া গেমিং জগতকে এক ঝাঁকুনিতে জাগিয়ে তুলতে পারে।
আর সবকিছু ছাপিয়ে এবার ক্রো নিয়ে এলো সেই ক্লাসিক সিরিয়াস স্যামের এইচ ডি ভার্সন। সামনের বছর সিরিয়াস স্যাম বের করার আগে নিজেদের সূক্ষ্মতা একটু ঝালাই করে নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি সিরিয়াস স্যাম এইচ ডি দিচ্ছে সিরিজটির সবচেয়ে দুর্দান্ত গ্রাফিক পারফরম্যান্স, অসাধারণ অডিও কোয়ালিটি এবং স্বছন্দ সাবলীলতা। পৃথিবী যখন মিসরকেন্দ্রিক সভ্যতাকে ভর করে এগিয়ে চলছে, তখন পৃথিবীর উত্তরোত্তর উন্নতি ভিনগ্রহবাসীর মোটেও পছন্দ হচ্ছিল না। তাই তারা ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসে পৃথিবীর সভ্যতার কেন্দ্রকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। সিরিয়াস স্যাম নামে এক অভিযাত্রী তখন তপ্ত রোদ্দুরে মিসরের পিরামিডগুলোকে দেখে নিজের জ্ঞান পিপাসা মিটাচ্ছিল। অনিন্দ্যসুন্দর সেই দিনের আকাশ কালো করে তখন সেই এলিয়েনরা নেমে আসে পিরামিডগুলোতে। স্যাম প্রথম দিকে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পরে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।
স্যাম বিভিন্ন আদিবাসীর বাসস্থানে এলিয়েনদের অবস্থান খুঁজে পায় এবং ধীরে ধীরে তাদের ইনভেশন প্ল্যান সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করে। কিন্তু অল্প সময় পরে সেও বুঝতে পারে নিজের হাতে দায়িত্ব তুলে না নিলে পৃথিবীকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। হাতের কাছে থাকা ছোট্ট রিভলবারটা সঙ্গী করে স্যাম বেরিয়ে পড়ে এলিয়েন-নিধন অভিযানে। পরে স্যাম দেখা পেতে থাকে আরও শক্তিশালী এলিয়েনদের আর খোঁজ পায় তার চেয়েও বড় ষড়যন্ত্রের।
সিরিয়াস স্যাম এমন একটি গেম, যা নিয়ে একবার বসে পড়লে যেকোনো গেমার কোনোভাবেই গেমটি শেষ না করে উঠতে পারবেন না। টানা খেলে গেলে সম্পূর্ণ গেমটি শেষ করতে লাগতে পারে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এর মাঝে বিদ্যুৎ যদি গেমপ্লেতে বিঘ্ন না ঘটায় তাহলে গেমটি শেষ না করে কমপিউটারের সামনে থেকে ওঠার কোনো কারণ নেই। এই কয়েক ঘণ্টার গেমপ্লেতে গেমার পাবেন লক্ষাধিক এলিয়েন ধ্বংস করার আনন্দ। আছে অসম্ভব মারাত্মক সব অস্ত্র। আছে রিভলবার, শটগান, প্লাজমাগান, চেইন শ, মিনিগান, চেইন গান, রেইল গান, লেসার গান, গ্রাইন্ডারসহ নানা ধরনের অস্ত্র। আছে ডেস্ট্রাক্টেবল অবজেক্ট, ডিনামাইট, গ্রেনেড, স্মোক বম্ব, বস্নাস্ট বম্ব, ফ্ল্যাশ বম্ব, টাইম বম্বসহ বহু ধরনের বম্বিং ইকুইপমেন্ট। গেমটিতে আছে ছোট ছোট এলিয়েন মনস্টার থেকে শুরু করে বিশালাকার দানব। আছে উড়ন্ত দানব, মানুষখেকো গাছগাছালি। আর এগুলোকে ধ্বংস করার জন্য স্যাম ব্যবহার করতে পারবে নানা ধরনের হেলিপ্যাড, টারেট প্রভৃতি। তাই প্রিয় গেমাররা- সিরিজের সর্বশেষ গেম এসে পড়ার আগেই পোক্ত করে নিন সিরিয়াস স্যামের সাথে সম্পর্কটা।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : ইন্টেল কোর টু কোয়াড বা তার সমতুল্য, র্যাম : ৪ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/৪ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭, ভিডিও কার্ড : জি ফোর্স ৬০০০ সিরিজ জিটিএস/রাডেওন (সমতুল্য) ও হার্ডডিস্ক : ১৬ গিগাবাইট।
ফিডব্যাক : alyousufhridoy@yahoo.com