• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ শেয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট মাইক্রোটিক রাউটার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ ইশতিয়াক জাহান
ইমেইল:rony446@yahoo.com:
মোট লেখা:৮৮
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
নেটওয়ার্ক
তথ্যসূত্র:
নেটওয়ার্ক সিস্টেম
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ শেয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট মাইক্রোটিক রাউটার
অক্টোবর ২০১৪ সংখ্যায় টিপিলিঙ্ক ওয়্যারলেস রাউটার ব্যবহার করে ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল করার পদ্ধতি ও প্রাকটিক্যালি এর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। ছোট নেটওয়ার্কে এবং লিমিটেডে কিছু ফিচার নিয়ে এই রাউটার দিয়ে ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল করা যাবে, কিন্তু নেটওয়ার্ক এক্সপার্টের চাহিদা অনুযায়ী ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোলসহ অন্যান্য সুবিধা পেতে হলে অন্য ডিভাইস বা পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। ইন্টারনেট শেয়ারিং ও ফায়ারওয়ালের জন্য অনেকেই সার্ভার কমপিউটার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কম খরচে ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোলসহ নানা ধরনের ফিচার পেতে হলে মাইক্রোটিক রাউটার ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের আইএসপি, সাইবার ক্যাফে, অফিসে মাইক্রোটিক রাউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মাইক্রোটিক রাউটার কেন ব্যবহার করবেন এবং কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করার আগে একটি গল্প শোনানো যাক।
সুমন সাহেব আইটির ওপর পড়ালেখা শেষ করেই একটি প্রাইভেট কোম্পানির আইটিবিষয়ক পদে যোগ দিয়েছেন। তার কাজ কোম্পানিতে থাকা ২২টি কমপিউটারের রক্ষণাবেক্ষণ, ইন্টারনেট শেয়ারিং ও নেটওয়ার্ক দেখাশোনা করা। চাকরির শুরুতে কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নামীদামী একটি আইএসপি থেকে ৪ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ অফিসে ব্যবহার করা হয় এবং এর জন্য সার্ভার হিসেবে একটি কমপিউটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ সার্ভারসহ ২৩টি কমপিউটারে ৪ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা হচ্ছে। চাকরিতে যোগদান করার পর প্রায় সময় তিনি দেখতে পান অফিস শুরুতে ব্যান্ডউইডথের তুলনায় স্পিড ঠিকমতো পাচ্ছেন না। অফিসের বস তাকে এ বিষয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলেন এবং ইন্টারনেট প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সমাধান করার জন্য নির্দেশনা দিলেন। আইএসপির সাথে কথা বলে জানতে পারলেন- ব্যান্ডউইডথ ঠিকই আছে এবং MRTG গ্রাফেও (যা দিয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহারের গ্রাফ দেখা যায়) দেখলেন যে ব্যান্ডউইডথ ঠিকই ব্যবহার হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তিনি কাউকে কিছু না বলে অফিস টাইমে বিভিন্ন কমপিউটারে লক্ষ করে দেখতে পেলেন কিছু কমপিউটারে নিয়মিত ইউটিউবে ভিডিও দেখা এবং লাইভ স্ট্রিমিং করাসহ বড় বড় ফাইল ডাউনলোড করা হয়।
একদিন রফিক নামের একজন বললেন, ইন্টারনেটের সংযোগ পাচ্ছেন না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পেলেন রফিক সাহেবের আইপি অ্যাড্রেস অন্য কেউ ব্যবহার করছেন। ফলে তিনি ইন্টারনেট পাচ্ছেন না। এখন কে রফিক সাহেবের আইপি ব্যবহার করছেন তা বের করতে হলে প্রতিটি কমপিউটারে আলাদাভাবে চেক করতে হবে। সুমন সাহেবের বস এসব সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে আইটি এক্সপার্টদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিলেন। সুমন সাহেব জানেন সব সমস্যার কোনো না কোনো সমাধান ইন্টারনেটে সার্চ করেই বের করা সম্ভব বা এক্সপার্টদের সহযোগিতা নিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব। তাই তিনি ব্যান্ডউইডথ ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রোলারের ওপর গুগলে সার্চ করলেন এবং সাথে সাথে বেশ কিছু সমাধানও পেয়ে গেলেন। এর মধ্যে একটি সমাধান তার বেশি ভালো লেগে গেল যে মাইক্রোটিক রাউটার ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান দেয়া সম্ভব। এই রাউটারের খরচও কম এবং এর চাহিদাও অনেক বেশি। তিনি এই বিষয়ে আইএসপি ও বিভিন্ন আইটি এক্সপার্টের সাথে কথা বলে জানতে পারলেন, মাইক্রোটিক রাউটার দিয়ে অনেক সমস্যারই সমাধান দেয়া সম্ভব। মাইক্রোটিক রাউটার সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে যা পেলেন তা হলো- ইন্টারনেট শেয়ারিং, ইউজারভিত্তিক ব্যান্ডউইডথ ম্যানেজমেন্ট, টাইম সস্নট অনুযায়ী ইন্টারনেটের শেয়ারিং দেয়া এবং ওয়েবসাইট/স্ট্রিমিং বন্ধ করাসহ নানা ধরনের সুবিধা। সুমন সাহেব বসের অনুমতিক্রমে মাত্র ১২ হাজার টাকায় এই মাইক্রোটিক রাউটার ব্যবহার করে তার সব সমস্যার সমাধান পেয়ে গেলেন। সুমন সাহেবের মতো অনেক কোম্পানির বসদের ও আইটি এক্সপার্টদের এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এবং ভালো সমাধানও পাচ্ছেন না। ছোট একটি মাইক্রোটিক রাউটারের গুণাবলী এবং এর কার্যাবলীর সব পাঠকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে এ লেখাটি সাজানো হয়েছে।
মাইক্রোটিক রাউটার
মাইক্রোটিক রাউটার অন্যান্য রাউটারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইস, যা ব্যবহার করে ইন্টারনেট শেয়ারিং ও ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোলসহ প্রচুর সুবিধা পাওয়া যায়। এটি সুইচ/রাউটারের মতো একটি ডিভাইস, যার আকার ছোট একটি বক্সের মতো থেকে শুরু করে বড় বক্স আকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু ডিভাইসে ওয়্যারলেস সুবিধাও যুক্ত রয়েছে। যারা এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করতে চান না, তাদের জন্যও রয়েছে অন্য পদ্ধতি- মাইক্রোটিক আইএসও। এটি একটি অপারেটিং সিস্টেম, যা দিয়ে কমপিউটারে এই অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে কমপিউটারকেই রাউটার হিসেবে কাজ করানো যাবে। এই দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে জেনে নেই মাইক্রোটিক রাউটার ব্যবহার করে কী কী সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
মাইক্রোটিক রাউটারের সুবিধাগুলো : মাইক্রোটিক একটি শক্তিশালী রাউটার, যা ব্যবহার করে যেসব সুবিধা পাবেন তা হলো : ০১. ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল ও ডিস্ট্রিবিউশন, ০২. শক্তিশালী QoS কন্ট্রোল, ০৩. অটো সিস্টেম ব্যাকআপ, ০৪. আইপি-ম্যাক অ্যাড্রেস বন্ডিং সিস্টেম, ০৫. ফিল্টারিং, ০৬. ফায়ারওয়্যাল, ০৭. HotSpot, ০৮. RIP, OSPF, BGP, MPLS রাউটিং, ০৯. রিমোট উইনবক্স গ্রাফিকেল ইন্টারফেস, ১০. টেলনেট/ম্যাক-টেলনেট/এসএসএইচ সার্ভিস, ১১. ভিপিএন, ১২. লোড ব্যালান্সিংসহ নানা ধরনের সুবিধা। মাইক্রোটিকের এসব সুবিধা ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেমের দুটিতেই পাবেন। নিচে পদ্ধতি দুটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মাইক্রোটিক ডিভাইস বা রাউটার বোর্ড : মাইক্রোটিক রাউটার বোর্ডটি দেখতে অনেকটা অন্যান্য রাউটার বা সুইচের মতোই। এই ডিভাইসে ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়ার জন্য ওয়ান পোর্ট ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের জন্য রয়েছে ল্যান পোর্ট। তবে একাধিক পোর্টও থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে কনফিগার করে নিতে হবে কোন পোর্ট কোন কাজে ব্যবহার করবেন। এই রাউটারটি ইন্টারনেট শেয়ারিং সার্ভার হিসেবেই কাজ করবে এবং এই ডিভাইস ব্যবহার করে একাধিক ইন্টারনেটকে একই নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা সম্ভব। আপনার প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো সঠিকভাবে কনফিগার করে নিতে হবে। মাইক্রোটিক রাউটার বোর্ডের দাম ৬ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার ওপর আছে। তবে দাম নির্ভর করবে ডিভাইসের ফিচার, লাইসেন্সের ধরন ও রাউটারের সাইজের ওপর। ইন্টারনেট থেকে রাউটার বোর্ডেও মডেল অনুযায়ী ফিচারগুলো দেখে নিতে পারেন। মডেল অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রাউটার বোর্ড রয়েছে। যেমন : RB 750, RB 750G, RB 751 (wireless), RB 951 (wireless), RB 450G , RB 1100, RB 1100AH X2 ইত্যাদি।
মাইক্রোটিক অপারেটিং সিস্টেম (আইএসও) : মাইক্রোটিক রাউটার প্রস্ত্ততকারকেরা এটি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবেও তৈরি করেছেন। একে ব্যবহার করার জন্য একটি কমপিউটার প্রয়োজন হবে এবং রাউটার অপারেটিং সিস্টেমটি উক্ত কমপিউটারে ইনস্টল করে ব্যবহার করতে হবে। তখন কমপিউটারটিই একটি রাউটার হিসেবে কাজ করবে। এর জন্য দুটি ল্যানকার্ড প্রয়োজন হবে। একটি ওয়ান পোর্ট ও একটি ল্যান পোর্ট হিসেবে ব্যবহার হবে। ৪ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকার মধ্যে রাউটার অপারেটিং সিস্টেমটি পেতে পারেন। লাইসেন্স ও রাউটারের লেভেল অনুযায়ী দামের তারতম্য হতে পারে। তাই অপারেটিং সিস্টেমটি কেনার আগে সব কিছু জেনে নিন। মাইক্রোটিক ওয়েবসাইট থেকে ২৪ ঘণ্টার একটি ফ্রি আইওএস অপারেটিং সিস্টেম ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে এর লাইসেন্স কিনে একে ফুল ভার্সনে কনভার্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। লাইসেন্স ভার্সনের আইএসওগুলোর কোনো টাইম লিমিট থাকে না।
আপনার প্রশ্ন : আলোচনার শুরুতে প্রশ্ন ছিল মাইক্রোটিক রাউটার কেন ব্যবহার করবেন এবং কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। কারণ, ডিভাইসের খরচের তুলনায় এর ফিচারগুলোর সুবিধা এতটাই বেশি যে, আপনি সহজেই আপনার পয়সা আদায় করতে পারবেন এই ছোট ডিভাইসটি ব্যবহার করে।
মাইক্রোটিক রাউটার যেভাবে ব্যবহার করবেন : মাইক্রোটিক রাউটার হিসেবে রাউটার বোর্ড বা অপারেটিং সিস্টেম যা-ই ব্যবহার করেন না কেন, এর বেসিক কনফিগারেশন বিক্রয় প্রতিনিধি আপনার জন্য সেট করে দেবেন। বিক্রয় প্রতিনিধি আপনাকে এ বিষয়ে সুবিধা দেবে কি না তা কেনার আগে জেনে নিন।
মাইক্রোটিক ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন : ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বিভিন্ন আইটি ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান মাইক্রোটিকের ওপর ট্রেনিং চালু করেছে। এছাড়া মাইক্রোটিকের ওপর বিভিন্ন ধরনের ভেন্ডর সার্টিফিকেশন রয়েছে। যেমন : MTCNA- MikroTik Certified Network Associate, MTCRE- MikroTik Certified Routing Engineer, MTCWE- MikroTik Certified Wireless Engineer, MTCTCE- MikroTik Certified Traffic Control Engineer, MTCUME- MikroTik Certified User Management Engineer, MTCINE- MikroTik Certified Inter-networking Engineer। যেসব ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং করবেন তাদের মাধ্যমেই জানতে পারবেন কারা ভেন্ডর সার্টিফিকেশন কোথা থেকে নিতে পারবেন অথবা গুগলে এ বিষয়ে সার্চ করলে জানতে পারবেন কারা সার্টিফিকেশন পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে তাদের নাম ও ঠিকানা
ফিডব্যাক : rony446@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস