বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া কোনো কিছু ভাবা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, দোকান, মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কিছু দিক সবসময় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন, যেমন : ইন্টারনেটের স্পিড কেমন, এর ডাউনলোড লিমিট কত, আপলোড লিমিট কত, সর্বোচ্চ কতটুকু ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যাবে ইত্যাদি। যেসব ব্যবহারকারী ইন্টারনেট নতুন ব্যবহার করেছেন বা ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করে থাকেন বা একই ইন্টারনেট কয়েকজনে মিলে ব্যবহার করেন, তাদের ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়। নিচে কিছু ব্যবহারকারীর উদাহরণ দেয়া হলো, যারা এ নিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকেন।
০১.
একজন নতুন ও পুরনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয়। কারণ, ইন্টারনেট প্রোভাইডার যত স্পিডে ইন্টারনেট সংযোগে কথা বলেছিলেন তত স্পিড তিনি পাচ্ছেন কি না, যদি দেখা যায় কোনো কারণে স্পিড একটু খারাপ হয়েছে তখন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে যোগাযোগ করেন কিংবা উদ্বেগে থাকেন। কিন্তু ইন্টারনেট স্পিড পরীক্ষা করার টুল দিয়ে আপনি ঘরে বসেই পরীক্ষা করতে পারবেন ইন্টারনেট স্পিড কতটুকু পাচ্ছেন, ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না, কী হারে ডাটা হারিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি সব হিসাব।
০২.
যেসব ব্যবহারকারী ইন্টারনেট শেয়ার করে ব্যবহার করে তাদের জন্যও স্পিড টেস্টার প্রয়োজন। ধরুন, ৩ জন মিলে একটি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। হঠাৎ করে দেখতে পেলেন আপনার ব্রাউজিংয়ে ইন্টারনেট কম পাচ্ছেন। এর কারণ কী, তা জানার জন্য আপনি বাকি ২ জনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন অথবা আপনি স্পিড মিটারের সাহায্যে দেখতে পারেন আপনাকে যত স্পিডে ইন্টারনেট ব্যবহার করার কথা বলেছে, তা আপনি ব্যবহার করতে পারছেন কি না। অথবা দেখতে পারেন আপনার ইন্টারনেট শেয়ার করা অন্য কমপিউটার থেকে কেউ কোনো কিছু ডাউনলোড করেছে কি না ইত্যাদি।
উপরের দুটি কাজই আপনি বিশেষ ধরনের কিছু টুলের সাহায্যে বের করতে পারেন। কোন টুলটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন বা আপনার জন্য ভালো হতে পারে, তা আপনি এবারের সংখ্যার নিচের আলোচনা থেকে বেছে নিতে পারেন বা ধারণা নিতে পারেন।
ইন্টারনেট স্পিড মাপার জন্য নিচে কিছু টুল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ওয়েবভিত্তিক টুল এবং কিছু ডেস্কটপের টুল।
০১. ব্যান্ডউইডথ মিটার প্রো :
ব্রডব্যান্ড বা ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ মাপার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টুল। এই টুলের সাহায্যে ব্যান্ডউইডথ মনিটরিং, রিপোর্টিং, নোটিফিকেশন মাপা সম্ভব, বিশেষ করে কি হারে আপনার ডাউনলোড বা আপলোড হচ্ছে, দৈনিক বা সাপ্তাহিক ব্যান্ডউডথের ব্যবহারের লগ ইত্যাদি গ্রাফিক্যাল ও নিউমেরিক পদ্ধতিতে মাপা সম্ভব।
মাত্র ১.১৬ মেগাবাইটের এই টুলটির ফ্রি ভার্সন ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। টুলটি ডাউনলোড করার জন্য ভিজিট করুন : http://www.bandwidth-meter.net।
০২. স্পিড টেস্ট :
স্পিড টেস্টও ইন্টারনেটের স্পিড মাপার জন্য একটি স্পিড পরিমাপক টুল। ৫ মেগাবাইটের এই টুলটি ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এ টুলের সাহায্যে আপনার ব্যান্ডউইডথ স্পিড, সেবার মান, ওয়েবসাইটের স্পিড, কানেক্টিভিটি ও রেসপন্স পরিমাপ করতে পারেন। এর সাহয্যে আপনার হোম নেটওয়ার্ক বা ল্যানের স্পিড, ব্রডব্যান্ডের স্পিড, ডায়ালআপ কানেকশনের স্পিডও মাপতে পারবেন। এর সাহায্যে আপনি এটিও মাপতে পারবেন ১ কিলোবাইটের ওপর পিং প্যাকেট সাইজ বের করা ছাড়াও সিপিইউ ইউজেস গ্রাফ, মেমরি স্ট্যাটাস, হার্ডডিস্ক স্পেস গ্রাফ, সিস্টেম আপটাইম, ব্যাটারি স্ট্যাটাস মাপাসহ আরও বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। এই টুলটি ডাউনলোড করার জন্য ভিজিট করুন : http://speedtestpro.net।
০৩. স্পিড নেট :
স্পিড নেট একটি বিশেষ ধরনের ওয়েবভিত্তিক স্পিড পরিমাপক টুল। এটি আপনার কমপিউটারে ডাউনলোড করে ইনস্টল করার প্রয়োজন নেই, তবে এই টুলের সাইটে ভিজিট করেই আপনার ইন্টারনেটের স্পিড পরিমাপ করতে পারেন। এই টুলের রেজাল্টের ধরন একটু অন্যরকম। এই টুলটি অন্যান্য লাইনের সাথে আপনার স্পিডের পার্থক্যও দেখিয়ে দেবে। এই ওয়েবভিত্তিক টুলের সাহায্যে আপনার ইন্টারনেটের স্পিড মাপার জন্য ভিজিট করুন : http://bm.speed.net.id।
০৪. ব্যান্ডউইডথ মিটার :
ব্যান্ডউইডথ মিটার নামের এই টুলটি ফ্রি সোর্সভিত্তিক টুল সাইজের দিক থেকে মাত্র ১.১৪ মেগাবাইট। এই টুলটি ব্যবহার করার জন্য আপনার কমপিউটারে ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক ২.০ ভার্সনটি ইনস্টল করা থাকতে হবে, অন্যথায় টুলটি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই টুলের সাহায্যে গ্রাফিক্যাল মোডে আপনার ইন্টারনেটের ডাউনলোড/আপলোড স্পিড মাপতে পারবেন, ব্যান্ডউইডথ লিমিট ক্রস হয়ে গেলে তা আপনাকে নোটিফিকেশনে জানাবে, এই টুলের পিং, ট্র্যাসরাউট, ইমেইল নোটিফাইয়ারও যুক্ত করা হয়েছে। এই টুলের সাহায্যে একাধিক কমপিউটারের স্পিড পরিমাপ করা সম্ভব। টুলটি ডাউনলোড করার জন্য ভিজিট করুন : http://www.bandwidthmeter.co.uk।
০৫. আরও কিছু টুল :
ওয়েবভিত্তিক ইন্টারনেটের স্পিড পরিমাপক আরেকটি টুল হচ্ছে ট্র্যাসার্টের ব্যান্ডউইডথ মিটার টুল, যা সম্পূর্ণ ওয়েবভিত্তিক। ওয়েবে ব্রাউজ করেই আপনার স্পিড পরিমাপ করতে পারেন। ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস হচ্ছে : http://www.tracert.org/bandwidth_meter। এ ধরনের আরেকটি টুলের অ্যাড্রেস হচ্ছে : http://reviews.cnet.com/internet-speed-test।
মনে রাখুন : ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কিছু দিক সব সময় মাথায় রাখা উচিত যে কী কী কারণে ইন্টারনেট স্লো হতে পারে বা আপনার ব্যান্ডউইডথ বেশি খরচ হতে পারে। যেমন :
০১. ফেসবুক বা ইউটিউব বা অনলাইনে কোনো ভিডিও দেখলে,
০২. কিছু কিছু ব্যবহারকারী বেশি রেজ্যুলুশনে ছবি তুলে থাকেন, সেক্ষেত্রে ছবির সাইজও বড় হয়ে থাকে, কিন্তু ব্যবহারকারী ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করার সময় রিসাইজ করে নেন না, ফলে আপনি যখন ছবিটি দেখতে যাবেন সেক্ষেত্রে ছবিটি লোড হতে সময় নেবে এবং আপনার ব্যান্ডউইডথ বেশি খরচ হবে ও ব্রাউজিংয়ের সময় স্পিড কম পেতে পারেন।
০৩. উপরের ২ নম্বর কারণটি যদি নেটওয়ার্কে থাকা কোনো ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে তাহলে অন্য ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহারে সমস্যার পড়তে পারেন,
০৪. ভাইরাসের কারণেও স্পিড স্লো হতে পারে, হতে পারে আপনার কমপিউটারে কোনো হিডেন ভাইরাস আপনার স্পিড স্লো করে দিয়েছে। আরও অনেক কারণে স্পিড স্লো হতে পারে।
উপরে আলোচনা করা টুলের মতো অনেক টুল ইন্টারনেটে পেতে পারেন। এর জন্য আপনি গুগলে সার্চ করুন। এখানে যেসব টুল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্য থেকে আপনি খুঁজে নিন আপনার পছন্দের টুলটি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rony446@yahoo.com