লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
ব্যান্ডউইডথ নিয়ে কী হচ্ছে?
ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। ভারতে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিতর্ক কাটতে না কাটতে এবার সামনে এসেছে ইতালিতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির প্রসঙ্গ। বলা হচ্ছে, ইতালিতে পানির দরে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। এই ‘পানির দরে’ শব্দ দুটি যত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিতর্ক নিয়ে আলোচনার আগে জেনে নেয়া যাক ব্যান্ডউইডথ রফতানি ও ভারতে ১০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিশদ আলোচনা।
বলা হচ্ছে, ভারতে বছরে যে পরিমাণ রফতানি করা হবে তা দিয়ে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ আয় করতে ইতালিতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করতে হবে ১৫ বছর। ভারতে রফতানি হবে ১০ গিগা আর ইতালিতে তা রফতানি করতে হবে ৫৭ গিগা। বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই বিষয়টিই। যদিও দেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা প্রথম থেকেই ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিরোধিতা করে আসছেন। এরা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে চান। এরা এ-ও বলেন, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যান্ডউইডথ বিনামূল্যে সরবরাহ করতে। ফ্রিল্যান্সারদের একেবারে নামমাত্র মূল্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিতে বারবার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এটা করা সম্ভব হলে দেশের ভেতর থেকেই ব্যান্ডউইডথ রফতানি আয়ের চেয়ে বেশি টাকা আয় হবে। কিন্তু সরকার সে বিষয়টি কখনই কর্ণপাত করেনি। এখনও করছে না। বরং সরকার বরাবরই ব্যান্ডউইডথ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার চেয়ে বিদেশে রফতানি করে নগদ আয়ের পক্ষে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) ক্ষেত্রে সমুদ্র থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইডথ রফতানি হবে না। বাংলাদেশের স্থলভাগ ব্যবহার করেই ব্যান্ডউইডথ রফতানি করা হবে। ভারতে ১০ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে বাংলাদেশ বছরে আয় করবে ৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। অন্যদিকে ইতালিতে ৫৭ গিগা ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে বাংলাদেশ ১৫ বছরে আয় করবে ৯ কোটি টাকা। টাকার এই পরিমাণটা ব্যান্ডউইডথ রফতানি বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতালি বাংলাদেশ থেকে প্রতি মেগা ৯.৫২ টাকায় কিনবে। এমন দাম নির্ধারণ করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই ব্যান্ডউইডথ পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যদিও দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ব্যান্ডউইডথের চেয়ে ৬৫.৬ শতাংশ দাম কম। বিএসসিসিএল দেশের বাজারে ১ মেগা ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করছে ৬২৫ টাকা, তাও আবার নানা ধরনের শর্ত দিয়ে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে। সূত্র আরও জানায়, বিএসসিসিএল ১৫ বছরে ৫৭ গিগা ব্যান্ডউইডথ ইতালিতে রফতানির বিষয়ে এগিয়ে নিয়েছে। এজন্য ইতালির স্পার্কেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৯.৭৭ কোটি টাকার চুক্তিও হয়েছে। জানা গেছে, এই দামে ব্যান্ডউইডথ কেনার জন্য বিএসসিসিএল দেশের কোনো ক্রেতাকে অফার করেনি।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার বলেছেন, ইতালির কাছে এরকম বিনামূল্যে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি না করে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিতে পারি।
বিডিনগের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির এ প্রসঙ্গে বলেন, এত কম দামে পেলে তো আমরাই কিনতে পারি। এর জন্য রফতানি করার তো কোনো দরকার নেই।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি থেকে (যদিও সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির দাম ৪০ শতাংশের বেশি)। অন্যদিকে ভারত থেকে দেশের ৬টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) উচ্চমূল্যে ব্যান্ডউইডথ আমদানি করছে। এই ৬টি আইটিসির মাধ্যমে প্রায় ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ দেশে আসছে।
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে বোঝার ভুল রয়েছে। অনেকে ভারতের দামের সাথে ইতালির দামের মধ্যে পার্থক্য করছেন। যদিও এটা একেবারেই অনুচিত। কারণ, ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করতে গেলে আমাকে ৬টি কম্পোনেন্ট ব্যবহার করতে হয়। সেসবের ভাড়া দিতে হয়। ফলে ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির ক্ষেত্রে এসব ব্যয় হয় বলে ভারতের কাছ থেকে আমরা যে টাকা পাব তা ইতালির কাছ থেকে পাব না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইতালি ব্যান্ডউইডথ নেবে সমুদ্র থেকে। ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করতে গেলে যেসব কম্পোনেন্ট প্রয়োজন হয়, তার কিছুই লাগবে না। শুধু একটা পেপার ওয়ার্ক করতে হবে। পেপারটা পাঠিয়ে দিলেই কাজ শেষ। সি-মি-উই ফোরের কনসোর্টিয়াম থেকে ইতালি ব্যান্ডউইডথ নিয়ে নেবে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ব্যান্ডউইথের দাম প্রতি মেগা ১০৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬২৫ টাকা। শতাংশের হিসেবে কমানো হয়েছে ৪১ শতাংশ। কিন্তু দামের কোনো সুফলই পাচ্ছে না সাধারণ গ্রাহক।
এদিকে ভারতে এখনও ব্যান্ডউইডথ রফতানি হচ্ছে না বলে গুঞ্জন উঠেছে। জানা যায়, রফতানি প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হচ্ছে ভারতের কারণে। বাংলাদেশ ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য প্রস্ত্তত। এ প্রসঙ্গে মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আমাদের পক্ষের সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছি, কিন্তু ভারতের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। ওরা (আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএনএল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পেয়েছে। কারিগরি দুয়েকটি কাজ বাকি থাকায় দেরি হচ্ছে। ওরা আমাদের বলেছে, দিন দশেকের মধ্যে লিঙ্ক স্থাপন করা সম্ভব হবে। সে হিসেবে উভয় পক্ষ মিলে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিকে উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরে সেভাবেই অগ্রসর হচ্ছি।
জানা গেছে, বিএসএনএল আমাদের আখাউড়া সীমান্ত থেকে ২০০ ফুট দূরত্বে ল্যান্ডিং পয়েন্ট তৈরি করছে। বাংলাদেশ থেকে ওই পয়েন্টে ব্যান্ডউইডথ পৌঁছবে আর সেখান থেকে আগরতলা হয়ে ত্রিপুরা রাজ্য এবং পরবর্তী সময় আসামের গুয়াহাটি পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ যাবে।
ভারতে ব্যান্ডউইডথ পৌঁছানোর জন্য বিএসসিসিএল বিটিসিএলের সহায়তায় একটি ট্রান্সমিশন রুট (ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইন) তৈরি করেছে। রুটটি হলো কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-বি.বাড়িয়া-আখাউড়া।
প্রসঙ্গত, ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯-এ দেশের উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইডথ কী হবে সে প্রসঙ্গে কিছু বলা নেই। এমনকি রফতানির প্রসঙ্গ তো নয়ই। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ এবং বিএসসিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে ব্যান্ডউইডথ বিদেশে রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে