• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আইসিটির ব্যবহার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি ভাবনা
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আইসিটির ব্যবহার
ভৌগোলিক ও ভূতাত্বিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর ক্ষতির মাত্রা ও পরিধি এবং সাথে সাথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি। বিগত দশকে দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পথ পরিবর্তন ও ঘটনার সংখ্যা, তীব্রতা বাড়াতে দুর্যোগ প্রস্ত্ততি কার্যক্রম, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি জনগণের বসবাস, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির দেশ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৩ কোটি লোক সমুদ্র উপকূলে বসবাস করে যাদেরকে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততাসহ অন্যান্য ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়। প্রায় ৪ কোটি লোক বন্যার মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সেই সাথে খরা, লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি ধীরগতির দুর্যোগও উত্তরোত্তর বাড়ছে এবং প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও বিগত দুই দশকে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃতের সংখ্যা সাফল্যজনকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যেখানে ৩ লাখ মানুষ মারা যায়, ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে সেই মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজারে নেমে এসেছে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সফলতা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার নিমণলিখিত নাগরিক সেব দ্রুত জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে : ০১. দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীকে সতর্ক করার জন্য মোবাইল ফোনভিত্তিক তিন ধরনের প্রযুক্তি যথা- সিবিএস, এসএমএস ও আইভিআরনির্ভর দুর্যোগ সতর্কীকরণ পদ্ধতি প্রচলন। ০২. নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের কাছে দুর্যোগের সতর্ক বার্তা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য মোবাইল ফোনের সেল ব্রডকাটিং (সিবি) প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া। ০৩. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে দুর্যোগের আগাম সর্তকবার্তা পৌঁছানোর জন্য এসএমএস অল্টার ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া।
এবার জেনে নেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার কী কী দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি নিয়েছে।
সোশ্যাল প্রটেকশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এসপিএমআইসি) : সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুষ্ঠু তদারকি ও নীতিনির্ধারণে সহায়তার জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ/বিতরণ কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্যাদি ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার জন্য ওয়েবসাইটভিত্তিক এসপিএমআইসি প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের জেলাভিত্তিক কার্যক্রম ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং এ পোর্টালটির লিঙ্ক ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের পোর্টালের সাথে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ : আইসিটিনির্ভর এ ম্যাপ ভূমিকম্পের ঝুঁকিমুক্ত নগরায়নের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা শহরের ভৌত পরিকল্পনা, উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার, নতুন নগরায়নের উপযুক্ত স্থান চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিল্ডিং কোড হালনাগাদকরণ, পুরনো অবকাঠামো মেরামত/পুনর্নির্মাণ/রেট্রোফিটিং কাজে ব্যবহার করা হয়। ভূমিকম্পজনিত বিপদাপন্ন এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের তিন বড় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
সাইক্লোন শেল্টার ডাটাবেজ : উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাদি ওয়েবসাইটভিত্তিক ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ডাটাবেজটিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কাঠামোগত এবং আনুষঙ্গিক তথ্য যেমন- ভৌগোলিক অবস্থান (অক্ষাংশ/দ্রাঘিমাংশ), ব্যবহার উপযোগিতা, ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ডাটাবেজটির তথ্য ব্যবহার করে নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের সঠিক স্থান নির্ধারণ করা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য উপযুক্ত পথ নির্ধারণ করা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করা যাবে।
ইনআনডেশন ম্যাপ/রিস্ক ম্যাপ ফর স্টর্ম সার্জ : বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। ফলে জীবন-জীবিকা এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছ্বাসজনিত বন্যার স্থানভিত্তিক গভীরতার তথ্যনির্ভর ইনআনডেশন ম্যাপ/রিস্ক ম্যাপ ফর স্টর্ম সার্জ তৈরি করা হয়েছে। এ মানচিত্র থেকে এসব এলাকার ঘরবাড়ির ভিটা কতটুকু উঁচু করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তা বা অন্যান্য অবকাঠামো কতটুকু উঁতুতে করতে হবে, তার ধারণা পাওয়া যাবে।
মডেলিং ব্যবহার : আধুনিক ও যুগোপযোগী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মডেলের ব্যবহার করে দুর্যোগ ঝুঁকি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষা কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যেমন- তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও বায়ুর গতিবেগবিষয়ক গবেষণা কাজে আঞ্চলিক জলবায়ু মডেল (egional climate model) প্রেসিস (চজঊঈওঝ) ব্যবহার করা হয়েছে। এই গবেষণালব্ধ ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও দুর্যোগের ঝুঁকি কমার কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। যেমন-
ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস : জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষত খরার জন্য Global Circulation Model (GCM) I MAGICC/SCENGEN Software ব্যবহার করে খরার গতি-প্রকৃতির চিত্র (Trend) নির্ণয় করা হয়েছে; যার মাধ্যমে ২০১৫ থেকে ২০৬৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের খরার চিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে।
হাইড্রো ডিনামিকস/ফ্লুইড ডিনামিকস : MIKE 11 ও GBM বেসিন মডেল ব্যবহার করে বন্যা পূর্বাভাসের আগে তিন দিনের স্থানে লিড টাইম আরও দুই দিন বাড়িয়ে পাঁচ দিনে উন্নীত করা হয়েছে, যা এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ লিড টাইম। বন্যা পূর্বাভাস স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ এবং গাইবান্ধায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ফ্লাড ভলান্টিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া হাইড্রো ডিনামিকস/ফ্লুইড ডিনামিকস মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গনের ভবিষ্যৎ চিত্র নির্ণয় করা হয়েছে, যা বিশেস্নষণ করে ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেয়া যায়।
মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ : ভূ-বিজ্ঞান ব্যবহার করে দেশে প্রথমবারের মতো ভূমিকম্পজনিত বিপদাপন্নতা এবং ঝুঁকি নিরূপণ করে দেশের তিন বড় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে এবং আরও ৬টি শহরে এ ম্যাপ তৈরি করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এ ম্যাপটি কন্টিনজেন্সি প্লান ও বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় দূর অনুধাবন প্রযুক্তি : জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপেস্নারেশন এজেন্সির (জেএএক্সএ) কারিগরি ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি (এসবিটি) ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারে বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং ও পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে যুগপৎভাবে ‘Applying Remote Sensing Technology in River Basin Management’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
একটি দুর্যোগ সহনশীল জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্যোগের ঝুঁকি কমায় ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ে আরও উন্নত শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও প্রণোদনা দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর কার্যক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস