লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ডিজিটাল মার্কেটিং
বর্তমানে পণ্য বিপণনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং। কারণ, এখন বিশে^র দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পেশাগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। অনেক তরুণ-তরুণী আগ্রহী হচ্ছেন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে।
এ নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লিখেছেন সাঈদ রহমান।
একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস (পণ্য বা সেবা) প্রচার ও প্রসারের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভোক্তার কাছে তা পৌঁছে দেয়া। আর এই কাজটি করার জন্য যে মাধ্যমটি ব্যবহার হয় সেটি হলো বিজ্ঞাপন। লিফটলেট, ব্রম্নশিয়র, পোস্টার, সংবাদপত্র, রেডিও কিংবা টিভি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচলিত বিজ্ঞাপন মাধ্যম। বিংশ শতাব্দীতে এসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপনের ধারণাটাও পাল্টে গেছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলো চলে এসেছে আমাদের বেডরুম কিংবা পকেটে। সেই সাথে বিজ্ঞাপনদাতাদের চাহিদারও বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এখন বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য তাদের কাছে অন্যতম মাধ্যম- গুগল, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস, এসএমএস এবং ই-মেইল- যা ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে পরিচিত।
মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা
মার্কেটিংয়ের শাব্দিক অর্থ হলো বাজারজাতকরণ বা বিপণন ব্যবস্থা, যার মূল উদ্দেশ্য সঠিক বিপণন ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যকে পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রীর বিক্রি বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির জন্য ধারাবাহিকভাবে মুনাফা নিশ্চিত করা। অনেক খ্যাতিমান মার্কেটারের সংজ্ঞা অনুযায়ী, মার্কেটিং এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া, যা ভোক্তাসাধারণের চহিদা এবং জোগানের মাঝে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে একজন মার্কেটার তার কোম্পানির পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী-বিষয়ক তথ্যাবলী ভোক্তাসাধারণের মাঝে আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপন করে থাকে, যা তাদের মানসিকভাবে প্রলুদ্ধ করে নির্দিষ্ট সেবাটি গ্রহণ করার জন্য অথবা সে পণ্যটি কেনার জন্য। এ ছাড়া মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কোনো কোম্পানি তাদের ভোক্তাসাধারণের সাথে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক তৈরি করে থাকে।
মার্কেটিং : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মানবসভ্যতার ইতিহাসের মতোই মার্কেটিংয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং মানবসভ্যতার উন্নয়নের সাথে মার্কেটিং ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রাচীন গ্রিস এবং রোম সভ্যতাকে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও সভ্যতার সূচনালগ্ন। ধারণা করা হয়, ঠিক তখনই মার্কেটিংকে প্রথমবারের মতো সংজ্ঞায়িত করা হয়। তাদের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হয়। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে, শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে মার্কেটিং তার পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে পণ্যশিল্প ও সেবাশিল্পকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বণিক সমাজ মার্কেটিং ধারণার মাধ্যমে পণ্য ও সেবার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসে, যা মার্কেটিংয়ের পরিধিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করে। বিংশ শতাব্দীর নতুন উদ্ভাবন হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। ধারণা করা হচ্ছে, মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মার্কেটিংয়ের ধারণাতেও ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন আসবে।
মার্কেটিং : প্রকারভেদ
মার্কেটিংয়ের তেমন কোনো প্রকারভেদ এখন অবধি কেউ করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু বিবর্তন ধারার সাথে তুলনা করে মার্কেটিং পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর ভিত্তিতে মার্কেটিংকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ০১. প্রচলিত মার্কেটিং এবং ০২. ডিজিটাল মার্কেটিং।
প্রচলিত মার্কেটিং
মার্কেটিংয়ের ৪নং থিওরিকে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং বলে। 4Ps বলতে Product, Price, Place ও Promotion-কে বুঝায়। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ের বিজ্ঞাপন চ্যানেলগুলো হলো- টিভি-রেডিও বিজ্ঞাপন, ট্রেড ফেয়ার, মুদ্রিত বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। এখনও ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং একটি গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞাপন মাধ্যম, কিন্তু কার্যকারিতার তুলনায় এটি এর ডিজিটাল মার্কেটিং চেয়ে পিছিয়ে। তাই এখনকার মার্কেটারেরা ডিজিটাল মার্কেটিংকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
পণ্য : ভোক্তাসাধারণ কি চাচ্ছে, তাদের চাহিদা কোথায়, পণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো কি হওয়া উচিত, পণ্যটি কোন ব্র্যান্ডে হওয়া উচিত, তার আকার এবং কালার কি হওয়া উচিত এসব এই অংশের আলোচিত বিষয়।
দাম : পণ্য বা সেবার দাম কত হবে, কিসের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হবে, কত টাকা ছাড় দেয়া হবে, পণ্যটির রেফারেন্সের দাম কত হবে এবং অন্য পণ্যের সাথে এই পণ্যে দামের পার্থক্য কত, তা এখানে নির্ধারণ করা হয়।
স্থান : এর মাধ্যকে পণ্য ও সেবার চহিদাগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়। সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আউটলেটের মাধ্যকে পণ্যটি ভোক্তাসাধারণের দুয়ারে পৌঁছে দেয়া।
বিপণন : এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবাসামগ্রীর ধারণা ভোক্তাসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় এবং মানসিকভাবে ভোক্তাসাধারণকে পণ্য এবং সেবাটি গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করা। বিপণন চ্যানেলগুলো হলো টিভি-রেডিও বিজ্ঞাপন, ট্রেড ফেয়ার, মুদ্রিত বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
ডিজিটাল মার্কেটিং : ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে সেই বিপণন ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়, যেখানে যা পুরোপুরি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে সরাসরি টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো হয়। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত ও গ্রহণযোগ্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিপণন মাধ্যমগুলো হলো- গুগল এডওয়ার্ডস, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এসইও, ই-মেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, নিশ ওয়েবসাইট মার্কেটিং ইত্যাদি। বর্তমানে প্রায় সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। কারণ, এটি অধিক কার্যকর এবং তুলনামূলকভাবে খরচও কম।
কেনো ডিজিটাল মার্কেটিং : পণ্য বা সেবার প্রচার চালানোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আগে মানুষ ব্যবহার করত সংবাদপত্র, টিভি, রেডিওসহ প্রভৃতি মাধ্যম। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব জায়গা দখল নিতে শুরু করে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া। ফলে বিজ্ঞাপনদাতারাও এদিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করলেন। ডিজিটাল মার্কেটিং ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়। সোশ্যাল মিডিয়া, গুগল এডওয়ার্ড, ই-মেইল কিংবা এসএমএস মার্কেটিং একটি টিভি বিজ্ঞাপন বা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের চেয়ে তুলনামূলক খরচ অনেক কম। এ ছাড়া ডিজিটাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বহুসংখ্যক সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রতিটি ধাপ ও পর্যায় আপনি পরিমাপ করতে পারেন। কোন ডিজিটাল মিডিয়া থেকে কী পরিমাণ ভিজিটর আসছে? কতজন প্রতিদিন রিচ হচ্ছে? কতজন লাইক দিচ্ছে? ওয়েবসাইটে কতজন প্রতিদিন ভিজিট করছে? কোন ল্যান্ডিং পেজে ভিজিট করছে প্রতিটা কার্যক্রম পরিমাপযোগ্য। ওয়েবে যদি রিচ কনটেন্ট, প্রোডাক্ট গ্যালারি এবং চমৎকার প্রোডাক্ট রিভিউ থাকে, তাহলে ভোক্তা আপনার পণ্য বা সার্ভিসকে বেটার পণ্য বা সার্ভিস হিসেবে ধরে নেবে। আপনি যদি সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে যুক্ত থাকেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন, তাহলে তাদের মধ্যে আস্থা গড়ে তুলতে পারবেন আর তখন তারা আপনার সাময়িক ক্রেতা থেকে হয়ে উঠবে স্থায়ী ক্রেতা।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম
গুগল অ্যাডওয়ার্ডস
গুগল অ্যাডওয়ার্ডস একটি অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা মাধ্যম, যা দিয়ে গুগল একটি নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন অনলাইনে প্রচার করে।
গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের বিজ্ঞাপনের ধরন
সার্চ নেটওয়ার্ক উইথ ডিসপ্লে সিলেক্ট : এর মাধ্যমে আপনি গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের ও ওয়েব ভিজিটরদের সহজে খুঁজে বের করতে পারেন। সার্চ নেটওয়ার্ক উইথ ডিসপ্লে সিলেক্টের জন্য প্রথমে কিওয়ার্ড সিলেক্ট করতে হবে, বাজেট নির্ধারণ করতে হবে, অ্যাড তৈরি করতে হবে এবং সবশেষে বিড করতে হবে। আপনার অ্যাড কিছু নির্ধারিত পেজে দেখানো হয়, যে পেজগুলোর কিওয়ার্ড আপনার নির্ধারিত কিওয়ার্ডের সাথে মিলে যাবে। যখন এইসব নির্ধারিত কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করবেন, তখন গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্কে এই অ্যাড দেখানো হবে। এ ছাড়া এখানে বিডিং সিস্টেমটি পুরোপুরি অটোমেটেড এবং অ্যাড সেসব লোকের ডিসপ্লেতে দেখানো হয়, যারা আপনার প্রোডাক্ট কেনার প্রতি আগ্রহী।
গুগল সার্চ নেটওয়ার্ক : এটি হলো বিশেষ কিছু ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসের সমষ্টি, যেখানে আপনার অ্যাডস প্রচার করা হয়ে থাকে। যখন কোনো ইউজারের ব্যবহৃত সার্চ কিওয়ার্ড আপনার র্নিধারিত কিওয়ার্ডের সাথে মিলে যাবে, শুধু তখনই তার সার্চ রেজাল্টে আপনার অ্যাডস দেখানো হবে।
ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক : প্রায় ২০ লাখ ওয়েবসাইট, ভিডিও এবং অ্যাপস দিয়ে ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক গঠিত। এর মাধ্যমে আপনার অ্যাডস প্রচার করা হয়। ডিসপ্লে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি ইন্টারনেট ইউজারের অ্যাডস তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এর বড় সুবিধা হলো ডিসপ্লে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি কনটেক্সট, পার্টিকুলার অডিয়েন্স, লোকেশন ও বয়স অনুযায়ী ইন্টারনেট ইউজারদের ট্র্যাক করতে পারবেন। তাদের কাছে আপনার অ্যাডস পৌঁছে দিতে পারবেন।
ভিডিও ক্যাম্পেইন : সাধারণত ট্রু ভিউ ভিডিও অ্যাডসগুলো এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবসাইটগুলোতে আকর্ষণীয়ভাবে প্রচার করা হয়, যাতে ভিউয়াররা কাস্টমারে পরিণত হয়। আপনি গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের মাধ্যমে ট্রু ভিউ ভিডিও অ্যাডসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এ ছাড়া আপনি গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের মাধ্যমে এটি জানতে পারেন কারা আপনার অ্যাডস দেখছে, কখন দেখছে এবং কোথা থেকে দেখছে। ট্রু ভিউ ভিডিও অ্যাডসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনাকে তখনই অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যখন আপনার একটি ৩০ সেকেন্ডে ভিডিও অ্যাড পুরোপুরিভাবে দেখা হবে অথবা আপনার ব্যানার অ্যাডে ক্লিক করা হবে। যদি কেউ আপনার অ্যাড দেখে, কিন্তু স্কিপ করে চলে যায়, তাহলে আপনাকে আর এর জন্য অর্থ দিতে হবে না। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি ইউজার প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ইউটিউব ভিজিট করে। আপনি কিওয়ার্ড, টপিক, লোকেশন ও বয়স ধরে টার্গেটেড ভোক্তাদের কাছে আপনার অ্যাড পৌঁছে দিতে পারেন।
শপিং ক্যাম্পেইন : এটি ইন্টারনেট ইউজারদের অ্যাড ব্যানারে ক্লিক করার আগেই আপনার পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। Retail-Centric ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই আপনার এই কৌশলের সুবিধা জানতে পারবেন। শপিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যামে একজন রিটেইলার বেশি ট্রাফিক পাওয়ার জন্য অনলাইনে তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে প্রচার চালাতে পারে। এর জন্য প্রথমে রিটেইলারকে তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্যাবলী গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের কাছে পাঠাতে হয়। এরপর এরা সেই তথ্যাবলী দিয়ে নিজেদের মতো করে অ্যাড তৈরি করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পোস্ট করে থাকে, যেখানে সম্ভাব্য ক্রেতারা ভিজিট করে থাকেন। এই ওয়েবসাইটে পোস্ট করার পদ্ধতিকেই শপিং অ্যাড বলে থাকে। এখানে পণ্যের নাম, ছবি, দাম ও কালার উল্লেখ থাকে, যা ক্রেতাদের কাছে এক ভালো ধারণা তৈরি করে।
ইউনিভার্সাল অ্যাপ ক্যাম্পেইন : সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপ এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছে। হাতে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থাকা মানে এতে অনেক ধরনের অ্যাপের সমাবেশ রয়েছে। ইন্টারনেট কানেক্টেড থাকা অবস্থায় যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার করলে ডিসপ্লেতে যে অ্যাড দেখানো হয়, তাকেই অ্যাপ ক্যাম্পেইন বলে। এখানে সামান্য কিছু টেক্সট ও গ্রাফিক্স দিয়ে অ্যাড ডিজাইন করা হয় এবং র্নিদিষ্ট কিছু টেক্সট, বাজেট, বিড, ল্যাঙ্গুয়েজ ও লোকেশন দিয়ে অ্যাড নির্ধারণ করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে বিপণন ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত। এরা প্রতিনিয়তই ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিঙ্কডইন, পিন্টারেস্ট ও ইনস্ট্রাগ্রাম ব্যবহার করছে।
ফেসবুক মার্কেটিং : ফেসবুক মার্কেটিং বলতে বুঝায় ফেসবুক পেজ ও গ্রম্নপের মাধ্যমে ফেসবুক ইউজারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং বিভিন্ন কর্মকা--র মাধ্যমে তাদের সম্ভাব্য ক্রেতায় পরিণত করা। ফেসবুক অথরিটি সবাইকেই পেজ, অ্যাকাউন্ট ও গ্রম্নপ তৈরি করার এবং সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করার অনুমতি দেয়। তবে ফেসবুকের বিশেষ কিছু পলিসি আছে, যা সবাইকে মেনে চলতে হয়।
টুইটার মার্কেটিং : টুইটারকে মাইক্রো-ব্লগিং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট বলা হয়। এখানে বিভিন্ন ইউজার তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ ক্যারেক্টার দিয়ে ম্যাসেজ লিখে পোস্ট করে থাকেন। যেকেউই তাদের মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ডেস্কটপ থেকে টুইটার ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে টুইটারকে Instant Messaging (IM) নামে ডেকে থাকেন।
গুগল প্লাস মার্কেটিং : এড়ড়মষব ওহপ. দিয়ে পরিচালিত গুগল প্লাস হলো একটি অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে গুগল প্লাসের উদ্যোগগুলো চোখে পড়ার মতো। গুগল প্লাস চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে একজন মার্কেটার তার পণ্য ও সেবার ধারণা ইন্টারনেট ইউজারদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
লিঙ্কডইন মার্কেটিং : লিঙ্কডইন হলো বিভিন্ন প্রফেশনের লোকের জন্য। যেমন- স্টেকহোল্ডার, এমপ্লয়ার, কাস্টমার, স্টুডেন্ট, ইন্টার্নি ও ক্লায়েন্টের জন্য একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। লিঙ্কডইন মূলত বিজনেস ওয়ার্ল্ডের একটি ভার্চুয়াল প্লাটফরম, যেখানে একজন এমপ্লয়ার তার কোম্পানির জন্য এমপ্লয়ী খোঁজে, ক্যান্ডিডেট একজন কাজ খোঁজে, আবার কেউ কেউ তাদের প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা শেয়ার করে।
লিঙ্কডইন বিভিন্নভাবে বিজনেস ওয়ার্ল্ডের উন্নতিতে সাহায্য করে। যেমন- বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস কমিউনিকেশন) ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, যা লিঙ্কডইনের মাধ্যমে সহজে করা সম্ভব। লিঙ্কডইনের মাধ্যমে প্রফেশনালেরা কমিউনিটি ও গ্রম্নপ তৈরি করে, যেখান থেকে একটি কোম্পানি প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের জোগান পেতে পারে। এ ছাড়া লিঙ্কডইনে বিভিন্ন কোম্পানি, সিইও এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা অনেক কোম্পানি ও সেখানে কর্মরত ব্যক্তির জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকে।
পিন্টারেস্ট মার্কেটিং : পিন্টারেস্ট হলো ফটো শেয়ারভিত্তিক একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। পিন্টারেস্টের মাধ্যমে যেকেউই তার নামে বা কোম্পানির জন্য চ্যানেল খুলে সেখানে ইমেজ পোস্ট করতে পারেন। পিন্টারেস্টে ইমেজ পোস্ট করাকে বলে পিনিং (চরহরহম)। সাধারণত মার্কেটারেরা তাদের কোম্পানির পণ্য ও সেবার ইমেজ তাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্কসহ পোস্ট করে থাকে। যদি কোনো ইউজারের কাছে ডিজাইন বা ইমেজে থাকা তথ্যাবলী দেখে পণ্যটি ভালো লাগে, তাহলে লিঙ্কে ক্লিক করে সব তথ্য জানতে পারেন। পিন্টারেস্টের মাধ্যমে সহজেই একটি ওয়েবসাইট তাদের ট্রাফিকের সংখ্যা বাড়াতে পারে এবং সাথে সাথে সম্ভাব্য ক্রেতার সংখ্যাও বাড়াতে পারেন। এ ছাড়া একজন মার্কেটার হ্যাশট্যাগ (#), কিওয়ার্ড এবং এসইও ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের পোস্টকে বুস্ট করতে পারেন।
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং : পিন্টারেস্টের মতো ইনস্টাগ্রামও ফটো শেয়ারভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেখানে ছোট, মাঝারি এবং পাইকারি বিক্রেতারা তাদের পণ্য ও সেবার ফটো শেয়ারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে একটি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানও কম খরচে তাদের পণ্যের মার্কেটিং করতে পারে। সঠিক পোস্ট এবং ফটো নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার যেকোনো পোস্ট ভাইরাল করতে পারে, যা ইতিবাচকভাবে তার ব্র্যান্ডিংয়ে সাহায্য করবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে যেকোনো আকারের প্রতিষ্ঠান একদল নিয়মিত ক্রেতা তৈরি করতে সক্ষম।
এসইও
অনলাইনে যেকোনো কিছু খঁজে পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন। সার্চ রেজাল্টে এগিয়ে না থাকলে কোনো পণ্য সহজে মানুষের কাছে পরিচিতি পায় না। এজন্য সার্চ রেজাল্টে নিজের ওয়েবসাইট, পণ্য বা সেবা সবার সামনে বা উপরে তুলে ধরার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একটি ওয়েবসাইটে তার ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এসইও ব্যবহার হয়। একটি ওয়েবসাইট তার নির্দিষ্ট কিছু কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে তাদের প্রমোট করে থাকে। যখন কোনো ব্যক্তি সেসব কি-ওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইট সার্চ করে থাকে, তখনই সেই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটটি তার ডিসপ্লেতে এসে পড়ে। এভাবে ওয়েবসাইটে যত ভিজিটর বাড়বে তার ওপর ভরসা করে ওয়েবসাইটের র্যািঙ্কিং নির্ধারিত হয়।
ই-মেইল মার্কেটিং
ই-মেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট টার্গেটেড ভোক্তাদের ই-মেইল অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবাসামগ্রীর পরিপূর্ণ তথ্য সহকারে ই-মেইল করা হয়। এই ই-মেইলকে ভোক্তার নিকট আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য এক ধরনের টেমপ্লেট ব্যবহার করা হয় যা ই-মেইল টেমপ্লেট নামে পরিচিত। সাধারণত ই-মেইলগুলোতে বিজ্ঞাপনের লিঙ্ক, ওয়েবসাইটের লিঙ্ক, ডোনেশন লিঙ্ক, ইউটিউব লিঙ্ক ইত্যাদি থাকে। বর্তমানে বিশে^র বিভিন্ন দেশের ছোট-বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় ও বিক্রি বাড়িয়ে তুলছে।
এসএমএস মার্কেটিং
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও মানুষের ব্যস্ততা বাড়ার সাথে সাথে মার্কেটিং এখন চলে এসেছে মানুষের বেডরুম কিংবা পকেটে। মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি পণ্য বা সেবার তথ্য খুব সহজেই মানুষের পকেট পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, ওয়েবসাইটের ইউআরএলও এসএমএসের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবেন। এসএমএস মূলত দুইভাবে পাঠানো যায়- ব্র্যান্ডিং এসএমএস ও নন-ব্র্যান্ডিং এসএমএস। ব্র্যান্ডিং এসএমএসে আপনার পণ্য, ব্র্যান্ড কিংবা কোম্পানির নাম দিয়ে পাঠাতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়- ব্র্যান্ড, পণ্য বা কোম্পানি যে নামেই হোক না কেন, তা ১১ ক্যারেক্টারের মধ্যে হতে হবে। আর নন-ব্র্যান্ড এসএমএসে কোনো ব্র্যান্ডের নাম বা কোম্পানির নাম ব্যবহার করা যায় না। এখানে যেকোনো সংখ্যা ব্যবহার হয়। নন-ব্র্যান্ড এসএমএসের তুলনায় ব্র্যান্ড এসএমএসের খরচ তুলনামূলক একটু বেশি।
কনটেন্ট মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কনটেন্ট মার্কেটিং। আমরা গুগলে মার্কেটিং করি কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতেই বিজ্ঞাপন করি না কেন, কোনো বিজ্ঞাপনই সফল হবে না যদি না সেই বিজ্ঞাপনের কনটেন্ট যথাযথভাবে তৈরি করা না যায়। যেকোনো বিষয় লেখা, ছবি, ভিডিও, রিচ মিডিয়া, ইনফোগ্রাফিক কনটেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কনটেন্ট মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিশ ওয়েবসাইট মার্কেটিং
এ পদ্ধতি বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কোনো চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু পণ্য সিলেক্ট করে তা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং অন্যসব অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সেই কোম্পানির জন্য পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করে থাকেন। তবে এ কাজে বুদ্ধিমত্তা, মার্কেটিংয়ের দক্ষতা এবং পরিশ্রম অনেক বেশি।
ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মধ্যে পার্থক্য
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে তুলনামূলকভাবে ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়ের চেয়ে কম অর্থ খরচ হয়।
ট্রাডিশনাল মার্কেটারদের টার্গেটেড ভোক্তাসাধারণের কাছে তাদের মেসেজ পৌঁছে দেয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন, যা ডিজিটাল মার্কেটারদের কাছে অনেকটা সহজ।
প্রায় সবার কাছেই এখন ল্যপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব ও অন্যান্য অনেক ডিজিটাল পণ্য আছে এবং মানুষ ক্রমে এসব গ্রহণ করছে, যার ফলে এখন আমরা ২৪ ঘণ্টা অনলাইন কানেক্টেড থাকতে পারছি, যা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য একটি আলাদা প্লাটফরম করে দিচ্ছে।
সবার কাছে ইন্টারনেটের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাওয়ায় এবং খরচ কম হওয়ায়, সবাই এখন ট্রাডিশনাল মিডিয়া থেকে বের হয়ে তথ্য, বিনোদন ও অন্যান্য প্রায় সব কাজের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এর ফলে ভোক্তাসাধারণের কাছে পৌঁছে যাওয়া ডিজিটাল মার্কেটারদের জন্য অনেক সহজ হয়ে উঠেছে।
ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়ে অনেক সময় বিজ্ঞাপন এবং প্রমোশনাল কার্যক্রম ভোক্তাসাধারণের কাছে পৌঁছে না, কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে মার্কেটারেরা নিশ্চিতভাবে তাদের নির্দিষ্ট কাস্টমারদের কাছে মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং মনিটরিং টুলস- গুগল অ্যানালাইটিকস
এটি বহুল ব্যবহৃত গুগলের একটি অনলাইন মার্কেটিং অ্যানালাইটিক টুল। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট অনেক সোর্স থেকে ভিজিটর পেতে পারে। যেমন- ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, অন্য কোনো ওয়েবসাইট ইত্যাদি। এর মাধ্যমে আপনার বিজ্ঞাপন কতবার দেখা হলো, কোথা হতে দেখা হলো, কোন বয়সের ভিউয়ার দেখল তা জানতে পারবেন। এ ছাড়া স্টকের তথ্যের সাথে মিলিয়ে বুঝতে পারবেন, আপনার এই বিজ্ঞাপন কৌশল কতটা কাজ করছে। পরবর্তী সময়ে আপনি আরও ভালো বাজেট তৈরি করা এবং তার সাথে সাথে অ্যাডের কৌশলেও পরিবর্তন আনতে পারেন। কিন্তু যদি না একজন ওয়েব ম্যানেজার জানতে পারে কোন সোর্স তাকে কত ভিজিটরের জোগান দিচ্ছে, তাহলে তিনি সঠিক বিপণন কৌশল অবলম্বন করতে ব্যর্থ হবেন। অ্যানালাইটিক এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তার কারণ
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বা সেবার বিপণনের জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। সেই সাথে পরিবর্তন আনছেন তাদের বিপণন কৌশলে। ডিজিটাল বিপণন কৌশল প্রয়োগ করে ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা হয়। ডিজিটাল বিপণনে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে পণ্যের প্রচার করা যায় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়া যায়। একজন ব্যবসায়ী ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য অনলাইনে তার পণ্যকে অনেক আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেন।
ডিজিটাল বিপণনের জনপ্রিয়তার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ তুলে ধরা হলো :
প্রচলিত মার্কেটিংয়ের চেয়ে বেশি কার্যকর : ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও প্রযুক্তি পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে মার্কেটিং করার চেয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মার্কেটিং করলে অনেক অর্থ ও সময় সাশ্রয় হয়। জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে মার্কেটিং করে যে খরচ হয়, তার থেকে ৪০ শতাংশ সাশ্রয় করা যায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে মার্কেটিং করে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। অতি অল্প খরচে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিসরে প্রচার চালানো যায়। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, লিঙ্কডইন, পিন্টারেস্ট ও ইনস্টাগ্রামের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোর উক্ত প্লাটফর্মগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার করা ও সুবিধা নেয়ার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অনলাইনের মাধ্যমে মার্কেটিং : ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যতই বাড়ছে, অনলাইন মার্কেটিং ততই জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন শুধু বড় কোম্পানিই নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোও অনলাইনে প্রচারের ব্যাপকতা বাড়াচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানির মাধ্যমে তুলনামূলক কম খরচ ও কম সময়ে খুব সহজেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পণ্যের প্রচার ও প্রসার করতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং একই সাথে ভোক্তা এবং বিপণনকারী উভয়েরই সমান উপকারে আসে। বড় বিনিয়োগই হোক, আর ক্ষুদ্র বা মাঝারি বিনিয়োগই হোক- সবাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট নির্ধারণ সহজ : আমরা সবাই কম-বেশি দেখেছি বড় বড় কোম্পানিগুলো টিভি, নিউজপেপার, রেডিও, ইভেন্টস, টেলিমার্কেটিং ও বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এ ধরনের বিজ্ঞাপনকে Outbound Marketing বলে, যেগুলো অনেক ব্যয়বহুল হয় এবং কোম্পানি কখনই এর রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) নির্ধারণ করতে পারে না। এ ধরনের মার্কেটিং সাধারণত কোম্পানির ব্র্যান্ডিংকে প্রসার করার জন্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আরও কম খরচে কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মার্কেটিং করা যায়, পাশাপাশি রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্টও নির্ধারণ করা সম্ভব।
দ্বিপাক্ষিক বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ, এটি একটি দ্বিপাক্ষিক বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা। অর্থাৎ এখানে বিজ্ঞাপনের মধ্যেই একজন গ্রাহক বিভিন্ন তথ্য জেনে নিতে পারেন। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে কেউ যদি ওই পণ্য বা সেবার প্রতি আগ্রহী হন, তাহলে তিনি সেখানে কমেন্ট করতে পারেন এবং তৎক্ষণাৎ বিজ্ঞাপনদাতা কমেন্টটিতে রিপ্লাই করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এখানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ফেসবুক। তবে টুইটার, লিঙ্কডইন, ইউটিউব মার্কেটিংও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
নির্দিষ্ট টার্গেট লক্ষ্য করা যায় : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি বড় সুবিধা হলো এখানে নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রম্নপকে লক্ষ করে খুব সহজেই বিজ্ঞাপন চালানো যায়। এর ফলে মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরা ডিজিটালের সব সুবিধা ভালোমতো ব্যবহার করতে পারছি না। কারণ, আমরা এখনও ফেসবুকনির্ভর মার্কেটিং করছি, অন্য প্লাটফর্মগুলোকে খুব অল্পই ব্যবহার করছি। যার অন্যতম কারণ আমাদের দেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এটি আরও বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এবং ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য হলে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরিধিও আরও বাড়বে।
ক্ষুদ্র্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কার্যকর মার্কেটিং : বাংলাদেশে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে থাকে ফেসবুক। এর বাইরে যাদের বাজেট একটু বেশি, তারা গুগল অ্যাডওয়ার্ড ও ইউটিউবে ভিডিও মার্কেটিং করে থাকে। এটা হতে পারে কোনো পণ্যের রিভিউ কিংবা ব্যবহার পদ্ধতি। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করে প্রচারণা করে বেশ ভালো আউটপুট পাচ্ছে।
ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে : ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমান বিপণন কৌশলের একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন কার্যকর কৌশল। এটা হলো সব মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ। খুব শিগগিরই ডিজিটাল মার্কেটিং সব ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়ের স্থান দখল করবে। বর্তমানে প্রায় সব বড় কোম্পানিই ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে তাদের পণ্য ও সেবার তথ্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তাই প্রত্যেকটি ব্র্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজারদের কাছে অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে।
সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করে দ্রুত প্রচার সম্ভব : পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য জায়গা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, যার মধ্যে ফেসবুক অন্যতম। ফেসবুকে কমিউনিটি গ্রম্নপ কিংবা পেজ তৈরি করুন। এমনি করে টুইটার, গুগল প্লাস কিংবা লিঙ্কডইন কমিউনিটি তৈরি করুন। আপনার টার্গেট করা ক্রেতাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেন। প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া অনেক বড় ভূমিকা রাখে। টুইটার, ফেসবুকের মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্রেতাদের কাছে পরিচিতি পাওয়া যায়। আপনার ওয়েবসাইটটি মোবাইল ফোনের উপযোগী করে তৈরি করুন। কারণ, বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮০ শতাংশ লোকই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা তুলনামূলক সহজ : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই ক্রেতাদের পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কর্মক্ষেত্রে ডেস্কটপ কমপিউটার এবং আরও অনেক ইলেকট্রনিক্সের মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার মানুষের একটি দৈনিক অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই সাইটগুলো ব্যবহার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্রেতাদের ভালো লাগা ও মন্দ লাগা সম্পর্কে খোঁজ নেয়া যায়। ক্রেতা পণ্যের ওপর কতটা আগ্রহী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এবং বিভিন্ন প্রমোশনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায়।
মোবাইল ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয় : বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস হলো স্মার্ট মোবইল ফোন। স্মার্টফোনে খুব সহজে তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মার্কেটিং করা সম্ভব। মোবাইল ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, মোবাইল অ্যাপস ইত্যাদি ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয়। এসএমএসের মাধ্যমে মেসেজ পাঠানো, এমএমএস মার্কেটিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের ইমেজ পাঠিয়ে থাকে।
স্থানীয় ক্রেতাদের সহজেই সন্ধান পেতে : স্থানীয় ক্রেতারা যাতে সহজেই আপনার সন্ধান পেতে পারেন, এজন্য আপনার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখেন। আর এর জন্য ব্যবসায়ীরা ভিজিটরদের জন্য সহজভাবে ব্যবহারোপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন। একটি উন্নতমানের ওয়েব ডিজাইন করুন, যাতে প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইটটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। এমনভাবে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যাতে ক্লায়েন্ট আপনার পণ্যের ব্যাপারে আকর্ষণবোধ করেন। আর ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য নেই, যা পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো ক্রেতাকে কষ্ট করে মার্কেটে যেতে হয় না।
ডিজিটাল মার্কেটিং বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে : ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমান অনলাইন ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ করে ব্যবসায় সম্পর্কে সবার বিশ^াস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে পেরেছে। এখন বেশিরভাগ ক্রেতা তাদের সময় বাঁচানোর জন্য অনলাইনের ওপর নির্ভর করছে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ভালো আয় করা সম্ভব : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-মেইল মার্কেটিং, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। শুধু দরকার সঠিক নির্দেশনা ও পরিপূর্ণ গবেষণা। ডিজিটাল বিপণন কৌশল ব্যবহার করে কোম্পানির জন্য ২.৮ গুণ বেশি আয় করা সম্ভব। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল বিপণন কৌশল ব্যবহার করে বেশি মুনাফার আশায়। অনলাইন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯২ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই ব্লগিং করে অনলাইনে নতুন গ্রাহক পায় প্রায় প্রতিদিন। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি লিড আসে অন্যান্য মার্কেটিংয়ের তুলনায়, প্রায় ৭৭ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন গ্রাহক পায় ফেসবুক থেকে। মনে রাখবেন, গ্রাহকেরা বেশিরভাগ সময় আছেন অনলাইনে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সফলতা ও ব্যবসায়ে প্রসার
একটি ব্যবসায়ের সফলতা কিছু কৌশল বিপণনের ওপর নির্ভর করে। বিপণন কৌশলটা একটা সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে অনেক ভালো ফল পাবেন। কৌশলটা সচেতনতার মূল ভিত্তি। লভ্যাংশ, বিক্রি বাড়ানো, ক্রেতার সাথে লেগে থাকা। মার্কেটিং কৌশলটা কোম্পানির সংস্কৃতি, পণ্য, সার্ভিস ও দামের প্রদর্শক।
সাধারণ কৌশল
ঙ মার্কেটিংয়ের প্রধান কৌশল হলো টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণ করা। আপনি কী পরিবেশন করবেন, তা সবসময় খোলখুলিভাবে উত্তর দিতে হবে। ঙ প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে কাদের জন্য পণ্য দিতে চান। কারা আপনার কাছ থেকে পণ্য নেবে? মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আপনাকে প্রচার করতে হবে। আপনি ক্রেতার জায়গায় থেকে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন যে আপনার চাহিদা কী? ঙ প্রচার কাজ যত ভালোভাবে করতে পারবেন, ভোক্তা বা ক্রেতা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে তত বেশি। ঙ মার্কেটিং হচ্ছে ব্যবসায়ের ধরন বা বিবরণ। অনেক ব্যবসায়ী তার কোম্পানির বর্ণনাটা সহজতর করতে পারেন না। ফলে আপনি কী করেন মানুষ বুঝতে পারে না, যা মার্কেটিং প্রবৃদ্ধির অন্তরায়। ঙ মার্কেটিংয়ে অন্যান্য সুবিধা অবশ্যই হাইলাইট করতে হবে। এর মাধ্যমে টার্গেটেড কাস্টমার কী চায়, তার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। ঙ আপনার ব্যবসায়ের ধরন কী, কোন ধরনের পণ্যের জন্য মার্কেটিং করছেন, তা পরিষ্কার করতে হবে। যাতে ক্রেতা সহজেই বুঝতে পারেন আপনি কী বার্তা তাদের দিতে চাচ্ছেন। ঙ পণ্যের সুবিধা প্রচার না করে পণ্য ব্যবহারে মানুষ কীভাবে বেশি সুবিধা পাবে, তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। ঙ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আপনি কেন আলাদা, তা তুলে ধরুন ক্রেতাদের কাছে। এতে আপনার পণ্যের গুণগত মানের কথা উল্লেখ করতে পারেন। ঙ আপনার বিজ্ঞাপনের শিরোনামটি এমনভাবে লিখুন যাতে সবার নজরে আসে। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপনে সঠিক যতিচিহ্ন ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে মাঝে মাঝে কিছু অফার দিন, যাতে আপনার বিজ্ঞাপনটি জমজমাট থাকে। ঙ এবার বিজ্ঞাপনকে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে যেকোনো ভিজিটর সেখান থেকে যেকোনো বিষয় সম্পর্কিত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। ঙ এখানে সরাসরি বুঝাবেন, আসলে আপনি ভোক্তাদের কাছ থেকে কী আশা করছেন। ভোক্তাদের বিজ্ঞাপনের ওপর আকৃষ্ট করার জন্য অনেক কিছু যোগ করতে পারেন। যেমন- ‘বিনামূল্যে’, ‘৫০%’ কুপন। ঙ সমস্যা হলে তা খুঁজে বের করতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। ঙ কাজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। ঙ একটি প্রতিষ্ঠান মার্কেটিংয়ের আগে কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায় এবং কী কী সমস্যা ধরা পড়ছে, তা নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। প্রত্যেকটি বিপণন প্রক্রিয়ায় কীভাবে সফলতা আসবে, আগে থেকেই সে ধারণা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ আপনার ব্যবসায়ের পরিচিতির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করুন। এমনভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করুন, যাতে প্রফেশনাল লুক থাকে। ঙ মোবাইল উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করুন। ঙ ভিজিটরদের জন্য সহজভাবে ব্যবহারোপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ঙ নিয়মিত সঠিক তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইট সবসময় আপ-টু-ডেট রাখুন। ঙ কোম্পানির কাজের মান অনুযায়ী ডিজাইন সুন্দর করুন। ঙ এমনভাবে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট তৈরি করুন, যাতে ক্লায়েন্ট আপনার পণ্যের ব্যাপারে আকর্ষণবোধ করেন। ঙ প্রতিটি পেজে ‘কল টু অ্যাকশন’ যুক্ত করুন, যাতে আপনার ভিজিটরকে পণ্যটি কিনতে কিংবা কেনার ব্যাপারে যোগাযোগ করতে উৎসাহবোধ করে। ঙ ওয়েবসাইটে ভিজিটর ট্র্যাকিং করার জন্য যেকোনো একটি টুলস, যেমন- গুগল অ্যানালাইটিকস ব্যবহার করুন, যাতে ভিজিটরদের গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। ঙ ওয়েবসাইট তৈরিতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, যাতে তা ভিজিটর ও সার্চ ইঞ্জিন উভয়ের জন্য উপযোগী হয়।
গুগল অ্যাডওয়ার্ডের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ প্রথমেই বিজ্ঞাপনের জন্য একটি প্ল্যান তৈরি করুন এবং সে অনুযায়ী কখন কোন নেটওয়ার্ককে বিজ্ঞাপন দেবেন তা স্থির করুন। ঙ বিজ্ঞাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি করুন। ঙ বিজ্ঞাপনের ধরন অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড নির্ধারণ করুন। ঙ সার্চ নেটওয়ার্কে এক্সটেনশন ব্যবহার করুন। ঙ পে পার ক্লিক বিজ্ঞাপনকে বেশি গুরুত্ব দিন। ঙ ক্লিক-টু-কল এক্সটেনশন ব্যবহার করুন, একটি ট্র্যাকিং নম্বর ব্যবহার করে যাতে আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন এবং পরিমাপ করতে পারবেন যে কোন বিজ্ঞাপনটি সেরা।
কনটেন্টের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ভিডিও মার্কেটিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিন। ঙ ইনফোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি করে আপনার বিজ্ঞাপনে নতুনত্ব নিয়ে আসুন। ঙ আপনার পণ্য বা সার্ভিসের সুবিধাগুলো নিয়ে কার্যকর কনটেন্ট তৈরি করুন এবং তা শিডিউল পোস্টের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করুন। ঙ একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টগুলোকে আপডেট করুন। সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট পোস্ট করার ক্ষেত্রে অটোমেটিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা উচিত। ঙ পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত ইমেজ বা রিচ মিডিয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে তা প্রকাশ করা। ঙ একেকটি পণ্যের মার্কেটিং করার প্রক্রিয়া ও কনটেন্ট একেক ধরনের হওয়া প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ একটি অ্যাকটিভ কমিউনিটি তৈরিতে নজর দিন। এমনভাবে একটি কমিউনিটি তৈরি করুন, যেখানে সব মেম্বার অ্যাকটিভ থাকবে। ঙ ফেসবুকে কমিউনিটি তৈরি করার জন্য গ্রম্নপ কিংবা পেজ তৈরি করুন। এমনি করে টুইটার, গুগল প্লাস কিংবা লিঙ্কডইনে কমিউনিটি তৈরি করুন।ঙ রেগুলার বেসিসে গ্রম্নপ, পেজ বা কমিউনিটিতে কার্যকর পোস্ট দিন। ঙ সব সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়ভাবে নিয়মিত অংশ নেয়ার জন্য ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করুন, যা আপনার সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফলাফল বের করতে সাহায্য করবে। ঙ আপনার টার্গেট করা ক্রেতাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিন। কোনো বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দিন। ঙ কাউকে ই-মেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ কিংবা গ্রম্নপের লিঙ্কগুলো সিগনেচার হিসেবে ব্যবহার করুন। ঙ আপনার নিজের ওয়েবসাইটে কিংবা কোনো ব্লগে পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক বা শেয়ার বাটন যুক্ত করুন।
ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য বর্তমানে ব্লগিং অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মানুষের কাছে আপনার পণ্যের তথ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্লগ সবচেয়ে কার্যকর। ঙ আপনি যদি ব্লগিংয়ে নতুন হন, তাহলে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে এ সম্পর্কিত অনেক উপকারী তথ্য পাবেন। সেগুলো পড়ে জেনে নিন কীভাবে আপনার ব্লগ সাজাবেন। ঙ এবার ব্লগকে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে যেকোনো ভিজিটর সে সম্পর্কিত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। ঙ এমনভাবে ব্লগের পোস্টগুলো তৈরি করুন, যাতে সেটা পণ্যের মার্কেটিং সম্পর্কিত কোনো কিছু মনে না হয় এবং ক্লায়েন্টের জন্য উপকারী ও তথ্যবহুল পোস্ট হতে হবে। ঙ ব্লগের প্রতিটি নতুন পোস্ট প্রকাশের পর সেটা সাথে সাথে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে শেয়ার করুন। ঙ সম্ভব হলে নিয়মিত কিছু অফার দিন, যাতে আপনার ব্লগটি জমজমাট থাকে। ঙ নিয়মিত পোস্ট দিতে হবে। সেটা একটা রুটিন অনুযায়ী করলে ভালো হয়। যেমন- তিন দিন পর, এক সপ্তাহ পর। তাহলে নিয়মিত ভিজিটর আসবেন নতুন কিছু পাওয়ার আশায়। ঙ গেস্ট ব্লগিং করলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। এগুলোতে সবসময় কিছু নির্দিষ্ট পাঠক থাকে।
এসইও এবং এসইএমের দিকে গুরুত্ব দিন
ঙ আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এসইও এবং এসইএম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসইও বা এসইএমের মাধ্যমে আপনার পণ্যকে গুগল সার্চের সবচেয়ে উপরে নিয়ে আসবেন, তাহলে আপনার পণ্যের বিক্রিও বাড়বে। কারণ, বর্তমানে মানুষ কোনো পণ্য কেনার আগে গুগল থেকে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ঙ অনলাইনে কনটেন্ট, যেকোনো পোস্ট কিংবা ফোরাম ডিসকাশনে যাতে আপনার টার্গেটেড কি-ওয়ার্ডের উপস্থিতি থাকে, যাতে খুব সহজে টার্গেটেড পাঠক আপনাকে খুঁজে পেতে পারেন। ঙ ব্লগের সাথে আপনার পণ্যের ওয়েবসাইটের একটি সংযোগ তৈরি করুন। ঙ কখনও ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা এসইওর ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর হবে। ঙ ওয়েবসাইটে টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগ ব্যবহার করুন। এটা এসইওর ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ঙ গুগলের নিয়মিত নতুন আপডেট সম্পর্কে সচেতন থাকুন, নিজেকে সেভাবে প্রস্ত্তত করুন।
ই-মেইল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষের মেইল অ্যাড্রেস জোগাড় করুন। ঙ ই-মেইল টেমপ্লেটটি কালারফুল ও স্মার্ট করার চেষ্টা করুন। ঙ যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, সেটি নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করুন। ঙ অন্য কোম্পানির একই পণ্য ও তাদের মার্কেটিং কৌশল নিয়ে গবেষণা করুন। ঙ টার্গেট কাস্টমারের ক্যাটাগরি করে সেই অনুযায়ী মেইল পাঠান। ঙ সবচেয়ে সহজভাবে পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করুন আপনার মেইলে। ঙ মেইল অ্যাড্রেস ফিল্টারিং করুন।
এসএমএসের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশল
ঙ টার্গেট কাস্টমারের ধরন অনুযায়ী ফোন নাম্বার সেগমেন্টেশন করুন। ঙ প্রয়োজনে ব্র্যান্ডেড এসএমএস ব্যবহার করুন। ঙ এসএমএসের কনটেন্ট একটি ম্যাসেজের ক্যারেক্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন। ঙ ক্রেতা বা ভোক্তার প্রফেশন অনুযায়ী এসএমএস পাঠানোর ক্যাটাগরি নির্ধারণ করুন। ঙ খেয়াল রাখবেন, ক্রেতার কাছে একই এমএমএস যাতে একের অধিক না যায়।
যেভাবে একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হবেন
ডিজিটাল মার্কেটিং খুব সহজেই অনলাইনে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ তৈরি করতে সাহায্য করে। কীভাবে আপনি ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারবেন, তার বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেয়া হলো :
ঙ ডিজিটাল মার্কেটিং আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে পছন্দ কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। ঙ নিজের জন্য মোবাইল উপযোগী সাইট তৈরি করুন। ঙ নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরির দিকে গুরুত্ব দিন। ঙ বিভিন্ন কাজের জন্য সঠিক টুল ব্যবহার করুন। ঙ নতুন নতুন আইডিয়া এবং পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন। ঙ সেল্ফ মোটিভেটেড হোন। ঙ আপনার পোর্টফোলিও তৈরি করুন। ঙ দক্ষতা গড়ে তুলতে কিছু ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করুন। ঙ ই-মেইল মার্কেটিং করুন। ঙ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন এবং সর্বোচ্চ অ্যাকটিভ থাকার চেষ্টা করুন। ঙ গুগলে আপনার কোম্পানির নাম নিবন্ধন করুন। ঙ আপনার কাজের একটি কার্যকর পোর্টফোলিও রাখুন। ঙ নিজের নামে ব্র্যান্ডেড এসএমএস ব্যবহার করুন। ঙ সবসময় সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলুন। ঙ আপনার প্রতিযোগী সম্পর্কে জানুন। ঙ নতুন কিছু শেখার দিকে গুরুত্ব দিন। ঙ ধারাবাহিকভাবে টেকনিক্যাল নলেজ বাড়িয়ে তুলুন। ঙ ডাটা নিয়ে অ্যানালাইসিস করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো :
ঙ গুগল অ্যাডসেন্স থেকে অর্থ উপার্জন। ঙ অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। ঙ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। ঙ ই-কমার্স খাতে পণ্য সেল করে। ঙ লিঙ্ক সর্টের মাধ্যমে। ঙ অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন।
উপরে উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বুঝা যায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব। শুধু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার তথ্য নির্ধারিত গ্রাহককে খুব সহজেই জানাতে পারি। পিপিসি, এসইএম, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগিং এবং ই-মেইল মার্কেটিং সাথে সম্ভব হলে এসএমএস মার্কেটিংয়ে কয়েকটি কাজ নিয়মিত করার মাধ্যমে আপনার পণ্যের দ্রুত প্রসার সম্ভব। এই মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন শুরু করলেই ধীরে ধীরে এগুলো থেকে আরও ভালো ফলাফল বের করতে পারবেন। আরও ভালোভাবে টার্গেটেড ক্লায়েন্টকে আকৃষ্ট করতে পারবেন আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি
ফিডব্যাক : info@saiedrahaman.com
লেখক পরিচিতি : ডিজিটাল মার্কেটিং কনসালট্যান্ট, গুগল অ্যাডওয়ার্ড অ্যান্ড গুগল অ্যানালাইটিক সার্টিফাইড