• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > এস্তোনিয়া: আইসিটিতে সবচেয়ে অগ্রসর দেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: সাদ রহমান
মোট লেখা:৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
এস্তোনিয়া: আইসিটিতে সবচেয়ে অগ্রসর দেশ
এস্তোনিয়া। হোম অব স্কাইপি। ছোট্ট এক দেশ। অথচ এটিই এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর দেশ। এটিকে বলা হচ্ছে টেকনোলজি প্যারাডাইজ। এরই মধ্যে দেশটি এমন কিছু কাজ সম্পন্ন করেছে, যা থেকে শিখবার আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকি দুনিয়ার। বিশেষ করে এস্তোনিয়া শিখিয়েছে- সময়ের সাথে সরকারের ও অর্থনীতির অবকাঠামো পাল্টাতে হবে, শিক্ষাকে সময়োপযোগী করতে হবে, তরুণ প্রজন্মকে করে তুলতে হবে টেক-সেভি, দূর করতে হবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রযুক্তিপথের সব বাধা। বিনিয়োগকে করে তুলতে হবে স্টার্টআপবান্ধব।
আপনি কি কখনও এস্তোনিয়ায় ছিলেন? বিশ্ব মানচিত্রে কি খুঁজে পেতে পারেন এই ছোট্ট দেশটির মানচিত্র? এই দেশটিতে বসবাস করে ১৩ লাখ মানুষ। এর চার লাখেরই বসবাস রাজধানী শহর ট্যালিনে। লোকসংখ্যার ৬৮.৭ শতাংশ এস্তোনীয়, ২৪.৮ শতাংশ রুশ, ১.৭ শতাংশ ইউক্রেনীয়, ১ শতাংশ বেলারুশ, ০.৬ শতাংশ ফিন, অন্যান্য ১.৬ শতাংশ এবং অসংজ্ঞায়িত ১.৬ শতাংশ। অসংখ্য হ্রদ, নদী ও বনভূমির এই দেশটির মোট আয়তন ১৭,৪৬২ বর্গ কিলোমিটার। আর এর স্থলভাগের আয়তন ১৬,৬৮৪ বর্গ কিলোমিটার। এটি প্রধানত নিমণভূমির এক দেশ। এর উত্তরে ফিনল্যান্ড, দক্ষেণে লাটভিয়া, পূর্বে রাশিয়া এবং পশ্চিমে বাল্টিক সাগর। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে শাসিত হওয়া এস্তোনিয়া এর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে ১৯৯১ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নবতর সদস্য।
এক্স-রোড
বাল্টিক জাতির রয়েছে একটি অগ্রসর মানের অর্থনীতি এবং উঁচু মানের জীবনযাপনের রেকর্ড। আর এ দেশটিকে এখন বলা হচ্ছে ‘টেকনোলজি প্যারাডাইজ’। আপনি এটিকে বলতে পারেন ‘হোম অব স্কাইপি’। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই ছোট্ট দেশটির প্রাযুক্তিক উন্নয়ন সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানার আছে। এস্তোনিয়ায় এক্স-রোডের (X-Road) সুবাদে ভোটাভুটি, দলিলপত্রে স্বাক্ষর, ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা ইত্যাদি সবই সম্পন্ন করা হয় অনলাইনে।
এক্স-রোড হচ্ছে একটি অনলাইন টুল। এটি সমন্বিত করে মাল্টিপল ডাটা রিপোজিটরিজ ও ডকুমেন্ট রেজিস্ট্রিজ। এক্স-রোড সব এস্তোনীয়কে, অর্থাৎ সাধারণ নাগরিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের অসমান্তরালভাবে সুযোগ করে দেয় তাদের ব্যবসায়ের লাইসেন্স, পারমিট ও অন্যান্য দলিলপত্র পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডাটাতে প্রবেশের। অন্যান্য দেশের মানুষকে এ কাজের পেছেনে কয়েক দিন, সপ্তাহ, এমনকি মাস পর্যন্ত খরচ করতে হয়। এক্স-রোড হচ্ছে ই-এস্তোনিয়ার মেরুদ-। ই-এস্তোনিয়ার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে এর ডাটাবেজগুলোকে ডিসেন্ট্রালাইজড করা। এর অর্থ কোনো একক মালিক বা নিয়ন্ত্রক না থাকা; প্রতিটি সরকারি এজেন্সি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারে তাদের প্রয়োজনীয় যথাযথ পণ্যটি এবং প্রয়োজনের সময় যেকোনো সার্ভিস সংযোজনের সুযোগ। মাল্টিপল ডাটাবেজ ব্যবহারকারী সব এস্তোনিয়ান ই-সলিউশন এক্স-রোড ব্যবহার করে। এক্স-রোডের সব আউটগোয়িং ডাটা ডিজিটালি সাইনড ও এনক্রিপটেড। প্রতিটি ইনকামিং ডাটা অথেনটিকেটেড ও লগড। প্রথমদিকে এক্স-রোড সিস্টেমটি ব্যবহার হতো বিভিন্ন ডাটাবেজের কুয়েরি তৈরির কাজে। এখন এটিকে এমন একটি টুলে উন্নীত করা হয়েছে, যা মাল্টিপল ডাটাবেজ রাইট, বড় ডাটাসেট ট্রান্সমিট এবং বেশ কিছু ডাটাবেজে সার্চ করতে পারে।
স্ক্যালিবিলিটি
স্ক্যালিবিলিটির কথা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে এক্স-রোড। একটি সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, কিংবা প্রসেসের স্ক্যালিবিলিটি বলতে আমরা বুঝি এর ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ মোকাবেলা করার অ্যাবিলিটি বা সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে আমরা বুঝব এক্স-রোড নামের এই অনলাইন টুলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি বাড়তি কাজের চাপ মোকাবেলা করতে পারে। এর পেছনের কারিগরেরা এটি এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে প্রয়োজনে আরও অনেক সার্ভিস ও রিপোজিটরি এই সিস্টেমের সাথে সন্নিবেশিত করা যায়। এই ডিজিটাল ব্যাকবোনটি এস্তোনীয়দের প্রণোদিত করার মতো। তবে আজকের টেক-ফরোয়ার্ড এস্তোনিয়া গড়ে তোলার পেছনে আরও অনেক টেকপণ্যই রয়েছে।
এস্তোনিয়ায় ২০১৩ সালে এক্স-রোডে সম্পন্ন করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ কুয়েরি। ১৭০টিরও বেশি ডাটাবেজ তাদের সার্ভিস দেয় এক্স-রোডের মাধ্যমে। এক্স-রোডে ব্যবহার হয় দুই হাজারেরও বেশি সার্ভিস। সে দেশে ৯শ’ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে এক্স-রোড। ইনফরমেশন পোর্টাল ববংঃর.বব.-এর মাধ্যমে এস্তোনিয়ার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এক্স-রোড ব্যবহার করে। সে দেশে এক্স-রোডের সুবাদে পাওয়া যায় ব্যাপক ধরনের কমপ্লেক্স সার্ভিস। এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক উপায়ে উপস্থাপন করা হয় রেসিডেন্ট রেজিস্ট্রেশন; চেক করা হয় ন্যাশনাল ডাটাবেজ থেকে একজনের পার্সোনাল ডাটা (ঠিকানা নিবন্ধন, পরীক্ষার ফলাফল, স্বাস্থ্যবীমা ইত্যাদি); ট্যাক্স ঘোষণা করা হয় ইলেকট্রনিক উপায়ে; ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা চেক করা হয় ও কারও নামে নিবন্ধিত গাড়ি এবং নবজাত শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যায় স্বাস্থ্যবীমার সুযোগ।
এস্তোনিয়া স্থির সিদ্ধান্ত নেয় এর নাগরিকদের গড়ে তুলতে হবে টেক-সেভি হিসেবে, যাতে এরা তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয় জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এর যথাযথ ব্যবহার করে আত্মোন্নয়ন করতে পারে। আর এ কাজটি সম্পন্ন করতে দেশটি এর সাত বছর বয়েসি শিশুদের শিক্ষা দিতে শুরু করে কোডিংয়ের নীতি ও মৌলজ্ঞান।
এস্তোনিয়ার এই উদ্যোগ সে দেশে শিশু-কিশোরদের মধ্যে কমপিউটিংয়ের এক শক্তিশালী ভিত গড়ে তোলে। আর তা বয়ে আনে এক আশাপ্রদ ফল। এস্তোনীয়দের মধ্যে জাগে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা-চিমত্মা। এরা হয়ে ওঠে উদ্যোক্তা। একই অবস্থার সৃষ্টি হয় সরকারের মাঝেও। সরকার জোরালোভাবে নিতে শুরু করে নানা প্রযুক্তি প্রকল্প। এর সুফল এখন পাচ্ছে সে দেশটির সাধারণ মানুষ। সেখানে এখন একটি কোম্পানি নিবন্ধন করতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে- ২০১৩ সালে এই দেশটি মাথাপিছু স্টার্টআপ সংখ্যার দিকে থেকে স্থাপন করে এক বিশ্বরেকর্ড। এটি শুধু সংখ্যার দিক থেকেই নয়, মানের দিক থেকেও অনেক এস্তোনীয় স্টার্টআপ কোম্পানি বেশ সাফল্য ও খ্যাতি অর্জন করেছে। এগুলোর অনেকই আপনার কাছেও পরিচিত মনে হতে পারে- Skype, Transferwise, Pipedrive, Cloutex, Click & Grow, GrabCAD, Erply, Fortumo, Lingvist এবং আরও অনেক।
ই-রেসিডেন্ট
ই-রেসিডেন্টদের দেয়া হয় একটি স্মার্ট আইডি কার্ড। এটি এস্তোনিয়া ও গোটা বিশ্বে হাতে লেখা স্বাক্ষর ও সামনাসামনি পরিচিতির সমানভাবে বৈধ। এই কার্ডগুলো সংরক্ষেত ২০৪৮-বিট এনক্রিপশনে। আর সিগনেচার/আইডি ফাংশনালিটি জোগান দেয়া হয় কার্ডের মাইক্রোচিপে মজুদ করে রাখা দুইটি সিকিউরিটি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে। কিন্তু বড় ধরনের ইনোভেশন এখানেই থেমে নেই। এর পেছনে কাজ করে বিট কয়েনের প্রিন্সিপলে তৈরি ‘ব্লকচেইন’, যা নিরাপদ করে ই-রেসিডেন্সি ডাটার অবিচ্ছিন্নতা। এটি এস্তোনিয়ার ১০ লাখ হেলথ কার্ডের অসমান্তরাল নিরাপত্তা দেয়। এটি ব্যবহার হয় যেকোনো পরিবর্তন নিবন্ধন করতে।
শেষকথা
এসব কথা যদি আপনাকে প্রলোভিত করে সে দেশে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার, আর সত্যি সত্যিই যদি আপনি তা করতে চান, তবে আপনার জন্য আছে সুখবর। এস্তোনিয়ায় একটি ব্যবসায় শুরু করা খুবই সহজ। আপনি ব্যবসায় করতে চাইলে সেখানে পাবেন রেসিডেন্সি সার্ভিস। এটি একটি ট্রানজিশনাল ডিজিটাল আইডেনটিটি। যেকেউ এই সুযোগ নিতে পারেন। একজন ই-রেসিডেন্ট এস্তোনিয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুধু একটি কোম্পানিই প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না, একই সাথে পাবেন অন্যান্য অনলাইন সেবা, যা গত এক দশক সময় ধরে ভোগ করছেন এস্তোনীয়রা। এসব অনলাইন সেবার মধ্যে আছে ই-ব্যাংংকং, অনলাইনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থ পাঠানোর সুযোগ। আছে অনলাইনে কর ঘোষণা দেয়ার, ডিজিটাল উপায়ে চুক্তি স্বাক্ষর এবং চুক্তি ও দলিল পরীক্ষার সুযোগ


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা