লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মাহফুজুল ইসলাম
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - সেপ্টেম্বর
বিসিএসের সময় কমাবে তথ্যপ্রযুক্তি
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘তারুণ্যের সময় খেয়ে ফেলছে বিসিএস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে রোমহর্ষক এক নতুন বাস্তবতা। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকটি হচ্ছে এ দেশের শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষের বয়স ৩৫-এর মধ্যে। অর্থাৎ এ দেশের তারুণ্যের শক্তি। এ তারুণ্যের প্রত্যেকটি মুহূর্ত যথাযথভাবে ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার অপচয় মেনে নেয়া খুব কষ্টকর। অথচ খোদ সরকারি ক্যাডার সার্ভিসের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে দুই থেকে তিন বছর। প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায়। তাহলে প্রতি বিসিএসের জন্য বাংলাদেশের তারুণ্যের শক্তি অপচয় হচ্ছে মোট প্রায় ছয় লাখ বছর, যা কর্মঘণ্টার হিসাবে প্রায় ২০০ কোটি ঘণ্টা! হ্যাঁ, সত্যিই অাঁতকে ওঠার মতো পরিসংখ্যান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে নববই দশক অবধি দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেয়া। শূন্যের দশক থেকে একুশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত দেশে বেসরকারি খাত উন্নততর হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য এ দেশে বিসত্মৃত হয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে প্রাইভেট চাকরির বিসত্মৃত সুযোগ। এখন তো অনেক ক্ষেত্রেই বরং প্রাইভেট চাকরির সুবিধাদি সরকারি স্থায়ী চাকরির সব সুযোগ ছাড়িয়ে গেছে। তবুও মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তের সমত্মানদের কাছে এখনও ক্যাডার সার্ভিস যেন স্বপ্নের এক চাকরি। অবশ্য জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে যারা ক্যাডার সার্ভিসে আসছেন, তাদের ত্যাগ অত্যন্ত সম্মানযোগ্য।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২৭তম থেকে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম বিজ্ঞাপন থেকে চাকরিতে যোগদান পর্যন্ত গড়ে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ২৮ মাস। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে যে দীর্ঘসূত্রতা, তার পেছনে মোটা দাগে কয়েকটি কারণ প্রণিধানযোগ্য। বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরীক্ষার আয়োজন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও নম্বর জমাদান এবং কোটা নির্ধারণের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এসব প্রতিটি প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কাজটিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ইতোমধ্যেই অনেক সময় সাশ্রয় করেছে। তবে এটি আরও দ্রুততর করার সুযোগ রয়েছে। পরীক্ষাটি যেহেতু বহু নির্বাচনিমূলক পদ্ধতিতে নেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে কয়েক লাখ প্রশ্ন নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় প্রশ্নব্যাংক তৈরি করা যেতে পারে। নিয়মিত এ প্রশ্নব্যাংকে নতুন নতুন প্রশ্ন যোগ করে হালনাগাদ রাখতে হবে। এরপর প্রিলিমিনারির জন্য দেশের প্রত্যেক জেলায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। প্রতিটি জেলায় এখন অসংখ্য কমপিউটার ল্যাব আছে এবং থ্রিজি নেটওয়ার্কও সহজলভ্য। নিরাপদ ব্রাউজার ব্যবহার করে কক্ষ পরিদর্শকের উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। এতে একদিকে যেমন পরীক্ষার্থীদের ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার খরচ ও ঝামেলা কমবে, তেমনি পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই ফল প্রকাশ সম্ভব। লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব। প্রতিবছর প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য লাখ লাখ টন কাগজ ব্যবহার হয়। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া শুধু যে সময়ের সাশ্রয়ের নিমিত্ত তা নয়, বরং পরিবেশবান্ধব সবুজ পৃথিবীর জন্যও এটি অপরিহার্য। সারা পৃথিবীতেই আইইএলটিএস বা জিআরইর মতো পরীক্ষাগুলোও নেয়া হয় অনলাইনে। লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র অনলাইনে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করতে দুই-তিন সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না। অনলাইনে এসব পরীক্ষা গ্রহণ করলে প্রশ্ন ফাঁসের প্রশ্ন উঠবে না, আর নম্বরপত্র হারানোর কোনো শঙ্কাও থাকবে না। এমনকি পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভিডিও কলের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব। বিদ্যমান বাস্তবতায় এ প্রক্রিয়াটি কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেই তা স্বাভাবিকতায় পরিণত হবে। কেননা, সেবাদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ আধুনিক ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জমা করা কাগজপত্রাদি বাছাই করাও সময়ক্ষেপণের আরেকটি কারণ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পিএসসির সমন্বিত তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলে এটি দ্রুততার সাথে করা সম্ভব। যেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারের সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্যের যাচাই করা হচ্ছে, সেভাবে এ ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার্থীর রোল ও সাল দিয়েই এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত তথ্য যাচাই সম্ভব। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্যও অনেকটা সময় লেগে যায়। এ প্রক্রিয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে ফরমটি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো ও ভেরিফিকেশন শেষে সরাসরি প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হলে সময় সাশ্রয় হবে।
পৃথিবীর কোনো দেশেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগে না। এমনকি পাশের দেশ ভারত-পাকিস্তানেও নয়। পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হলে বাংলাদেশেও এ পরীক্ষা নিতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। এ ছাড়া কোটা পদ্ধতির পুরো প্রক্রিয়াটিকেও অটোমেশনের আওতায় আনা খুবই সম্ভব।
দেশের প্রতিটি জেলায় থ্রিজি নেটওয়ার্ক রয়েছে। কমপিউটার ল্যাবও আছে জেলার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। সরকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এসব অবকাঠামো সুবিধা ব্যবহার করে বিসিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করা এখন সময়ের দাবি। পত্রিকাটির সম্পাদকীয় থেকে তাই নিঃসন্দেহে এ কথা উদ্ধৃত করা যায়- যথাসময়ে পরীক্ষা ও ফল
প্রকাশিত হলে একদিকে উত্তীর্ণ তরুণদের যেমন কর্মজীবন শুরু হতে পারে, অন্যদিকে অনুত্তীর্ণ তরুণেরাও পরেরবারের জন্য অথবা অন্য কোনো পরিকল্পনা নিয়ে জীবনে অগ্রসর হতে পারবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতায় হাজারো তরুণের জীবন ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না
ফিডব্যাক : myshamim2006@gmail.com