লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
এই আমাদের অবিরাম বাংলাদেশ
আনেক আগ থেকেই নির্ঘুম রাত পেরিয়ে ক্লান্তিহীন রানারকে আর বয়ে নিতে হয় না খবরের বোঝা। কয়েক শব্দের টেলিগ্রামে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে সেই বার্তা পৌঁছল কি না, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। টেলিফোনে অস্ফুট স্বরে ভেসে আসা প্রবাসী সন্তানের মা ডাক শুনে চোখের পানি ফেলতে হয় না। স্বজনদের উপস্থিতিতে প্রিয়তমকে বিশেষ কথাটি মনের কোনেই লুকিয়ে রাখতে হয় না। বড় কর্তার নাগাল পেতে দারোয়ানের চোখ রাঙানিকে গ্রাহ্য করতে হয় না। ফাইলগুলো লাল ফিতায় বেঁধে তা হাপিস করে দেয়া যায় না। এখন সব পৌঁছে যায় মুঠোফোনে, ইন্টারনেটে, ই-মেইলে। গৃহশিক্ষক ছাড়াই অশিক্ষক্ষত অভিভাবকেরা সন্তানকে বর্ণ পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন মুঠোফোন কিংবা ট্যাব থেকে। অনর্গল আউড়ে অঙ্ক বা বিজ্ঞানের জটিল সব তত্ত্ব মুখস্থ না করে রপ্ত করা যায় জটিল পাঠ। পাওয়া যায় পরীক্ষার ফল, ভর্তি সেবা। এক মুহূর্তে ঘুরে আসা যায় ভূগোলকের দুর্গম পথ। মুঠোফোন থেকেই জমিতে সার-কীটনাশকের তথ্য পেয়ে যান কৃষক। ব্যাংক হিসাব ছাড়াই মিলছে ব্যাংকিং সেবা। ঘরে বসেই কেনাকাটার পাশাপাশি পরিশোধ করা যাচ্ছে নাগরিক সেবার মূল্য। পাওয়া যায় আইনি পরামর্শ ও পুলিশি সেবা। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেলে রাজধানীর ডাকসাইটে ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা।
গত ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর রাজধানীর বারিধারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬’। আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও এটুআই যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে অংশ নেন ৮টি দেশের প্রযুক্তি ব্যক্তিত্বসহ দুই শতাধিক বক্তা। তিন দিনের এই সম্মেলনে ডিজিটাল সেবা, উদ্ভাবন ও উদ্যোগের পাশাপাশি দিনভর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উঠে এসেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প পলস্নবিত হওয়ার গল্পকথা। প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে বিনিময় হয়েছে অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে থরে থরে সাজানো হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গন্তব্যের রূপরেখা। আর সবশেষে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপরেখা বাস্তবায়নের কারিগর ও কলাকুশলীদের সম্মাননা জানিয়ে শেষ হয় এই তারুণ্যদ্বীপ্ত উপাখ্যানের। আয়োজকদের দাবি, সম্মেলনে সরাসরি এক লাখ এবং সব মিলিয়ে ৩০ লাখ মানুষ সংযুক্ত ছিলেন।
সম্মেলনের বাঁকে বাঁকে
সম্মেলন কেন্দ্রের ‘গুলনকশা’য় পর্দা ওঠে এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের। দেশের দামাল প্রযুক্তি-শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় সম্মেলন কেন্দ্রে হাজির রোবট ধ্রুব ‘মাই নেম ইজ ধ্রুব, আই অ্যাম প্রিভিলেজড টু রিকোয়েস্ট টু ইনাগোরেট দ্য ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬’ বলে মেলার উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এরপর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও সবশেষে ধন্যবাদ জানায় রোবট ধ্রুব।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ রোবটটিকে ভাষা দেন মো: রাকিন সরদার, সৈয়দ দিলশাদ হোসেন, বায়জিদ আহমেদ ও মো: আছির আহসান। তারা সবাই ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
রোবটের অনুরোধে সুইচ টিপে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে এই গুলনকশাতেই অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো। মূলত সাতটি ভাগে বিন্যস্ত ছিল পুরো আয়োজন। সম্মেলন কেন্দ্রের ‘পুষ্পদর্শন’-এ নাগরিকের নানা প্রাযুক্তিক সেবা নিয়ে হাজির হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ই-গভর্ন্যান্স জোনে আয়োজন করা হয়েছিল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কর্মকা--র প্রদর্শনী। দেশকে ডিজিটাল করে তুলতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাফল্য তুলে ধরার জন্য সাজানো হয়েছিল স্টলগুলো। এর মধ্যে সফটওয়্যার শোকেসিং ছাড়াও ই-গভর্ন্যান্স, মোবাইল ইনোভেশন অ্যান্ড গেমিং, ই-কমার্স নিয়ে তিনটি স্বতন্ত্র মেলা সম্মেলনে সাধারণের আগ্রহ কেড়েছে। সম্মেলনে বেসরকারি উদ্যোগগুলো প্রদর্শিত হয় (সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, স্টার্টআপ) ‘নবরাত্রি’ আর ‘রাজদর্শন’-এ। এখানে প্রদর্শিত হয় দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন উদ্ভাবন।
সব মিলিয়ে রূপকল্প ২০২১-কে সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চারশ’ প্রদর্শক তাদের ডিজিটাল সেবা উপস্থাপন করেন দর্শনার্থীদের সামনে। সম্মেলনে সরকারের ৪০টি মন্ত্রণালয়, দেশের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার খাতের ১৫৬টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অংশ নেয় ৫০টি স্টার্টআপ কোম্পানি। সফটওয়্যার জোনে ছিল ৯০টির মতো দেশী-বিদেশী কোম্পানি। এর মধ্যে আমরা টেকনোলজি, রিভ সিস্টেমস, ডাটা সফট, সার্ভিস ইঞ্জিন, এসএসএল কমার্জের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। হার্ডওয়্যারের মধ্যে ছিল মাইক্রোসফট, ওয়ালটন ও লেনোভোর মতো প্রতিষ্ঠান। আর ই-কমার্স জোনে ওয়েবসাইট প্রদর্শন করে ৩৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। একই সাথে ক্রেতাদের অর্ডার নেয়া হয়। এ ছাড়া ওই জোনে অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন শপিংসহ অনলাইনে কাজ করার বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় দর্শনার্থীদের। ই-বাণিজ্য বিষয়ে জানতে ভিড় ছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের প্যাভিলিয়নে। দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে আজকের ডিল, আপনজন, চালডাল, বর্ণ, বাগডুম, ওখানেই ডটকম ইত্যাদি দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের স্টল। এর মধ্যে বাংলাদেশের নিরাপদতম পেমেন্ট গেটওয়ে ওয়ালেটমিক্সে গিয়ে ই-কমার্স সাইট বানাতে আগ্রহীরা ও পেমেন্ট গেটওয়ে নিতে ভবিষ্যতের আগ্রহী উদ্যোক্তারা নির্ধারিত ফরমে তাদের ই-কমার্স সাইট ও গেমেন্ট গেটওয়ে নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া মোবাইলের সাথে সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেকে নতুন নতুন উদ্ভাবন যেমন- অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল গেমিং, হোম অটোমেশন সেবা প্রদর্শিত হয়। সম্মেলন প্রাঙ্গণে ১৮টি নতুন কোম্পানিসহ উদীয়মান ব্যবসায়িক কোম্পানি তথা স্টার্টআপগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করে।
প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে সাইবার ঝুঁকি
বক্তব্যের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা আইটিইউর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বিসিএসআইআর প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা দেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ড. কুদরত-ই-খুদার মতো বিজ্ঞানীর হাতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে তিনি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও গবেষকদের দেশে ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশের জন্য বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদের সরকার বিগত সাড়ে সাত বছরে আইসিটি খাতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। দেশের প্রতিটি উপজেলা ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের আওতায় এসেছে। যে ব্যান্ডউইডথের দাম ২০০৭ সালে ছিল ৭৬ হাজার টাকা, তা কমে বর্তমানে ৬২৫ টাকায় এসেছে। ইতোমধ্যে প্রায় সব উপজেলাই থ্রিজি পৌঁছে গেছে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ফোরজি চালু হয়ে যাবে। দেশে আজ প্রায় ১৩ কোটির বেশি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে। ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ৫ হাজার ২৫০টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ ২০০ ধরনের সেবা পাচ্ছেন। তিন হাজার ডাকঘরেও ডিজিটাল সেবা দেয়া হয়েছে। কয়েকটি উন্নত দেশসহ প্রায় ৪০টি দেশে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবা রফতানি শুরু হয়েছে। কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ সারাদেশে আরও ২০টির মতো হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ও আইটি ভিলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। সরকারি টেন্ডারগুলো এখন ই-জিপিতে চলে এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদানের জন্য আইসিটি ফর ডেভেলমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্যতম কারিগর। তিনি সবাইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটালাইজেশনের সাথে সাথে নিরাপত্তাজনিত কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক খাত ও গোপনীয় বিষয়ের নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে যাতে কেউ অপরাধ কার্যক্রম চালাতে না পারে সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শেষে পাঁচটি স্মার্ট বাস উদ্বোধন করেন।
প্রযুক্তি খাতে ভর্তুকির দাবি
তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রফতানিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভর্তুকি চেয়েছেন বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জববার। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কোনো বিদেশীর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রিজার্ভ চুরি হয়েছে, সেটি আমাদের দেশের ছেলেরা থাকলে হতো না। তিনি আরও বলেন, একসময় আমি প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে আপনার কাছে শুল্কমুক্ত সহায়তা চেয়েছিলাম। আজ প্রযুক্তি-যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক সুবিধা চাই। একই সাথে বিদেশী প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দেশে উৎপাদনে প্রণোদনা দাবি করছি। তাহলে দেশেই এসব পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বিনিয়োগকারীরা। তিনি আরও বলেন, বিদেশ-নির্ভরতা কমাতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এখন নগদ অর্থ সহায়তা দরকার। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। পাশাপাশি মেধাশ্রম আইন কার্যকর করতে সরকারের অগ্রণী ভূমিকা দরকার।
সভা-সমাবেশ
সম্মেলনে আইটি ক্যারিয়ার মেলা, সফটওয়্যার শোকেজিং, ই-গভর্ন্যান্স এক্সপোজিশন, মোবাইল ইনোভেশন, ই-কমার্স এক্সপো, স্টার্টআপ জোন ছাড়াও ছিল আইটিসংশ্লিষ্ট সভা-সেমিনার। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির পাশাপাশি আগামী দিনের রোডম্যাপ উপস্থাপনে তিন দিনে ২৫টির মতো সেমিনার ও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেমিনারে ১২৪ জন দেশী ও ৪৩ জন বিদেশী বক্তা ২৫টি সেমিনারে অংশ নেন। হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ সৌদি আরবের
সভায় ভুটানের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী লাইয়োনপো দাঙ্গেল, মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মাদ আসমালে, নেপালের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সুরেন্দ্র কুমার, সৌদি আরবের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ড. খালিদ এফ আলোতাইবি, উগান্ডার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর প্রতিনিধি ভারতে নিযুক্ত উগান্ডার হাইকমিশনার এলিজাবেথ পলা, ভিয়েতনামের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হোং জিং বাও এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনামের ট্রান্সপোর্ট, তথ্য ও ট্যুরিজম মন্ত্রী আনদোজো রাসল্যান্ড বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরকে সাধুবাদ জানান। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্যের শুরুতেই স্থানীয় পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন মালদ্বীপের ফিন্যান্স ও ট্রেজারি প্রতিমন্ত্রী মোহামেদ আসমালি। বক্তব্যে তিনি ইন্টারনেট কানেক্টিভিডি, টায়ার থ্রি ডাটা সেন্টার, ইনকিউবেশন সেন্টার ও নাগরিকদের বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড সেবা দিয়ে কীভাবে দ্বীপরাষ্ট্রকে স্মার্টসিটিতে রূপান্তর করা হয়েছে তা তুলে ধরেন। এরপর নিজ দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর বিষয়টি তুলে ধরেন ভিয়েতনামের তথ্যপ্রযুক্তি ভাইস মিনিস্টার হোয়াং ভিন ভাও। ভুটানের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী লিওনপো ডি এন দুঙ্গেল জানান, তাদের সম্ভাবনাময় হাইড্রো ইলেকট্রিসিটির কথা। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সময় তেল নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে আগেই প্রযুক্তিতে নিজেদের পথ চলার কথা জানিয়ে কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশের সাথে মিলে যাওয়া ভিশন ২০২০-এর কথা উল্লেখ করেন সৌদি আরবের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি মিনিস্টার ড. খালিদ এফ আলোতাইবি। সম্মেলন শেষে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আল-রাজী ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। অপরদিকে সম্মেলনের শেষ দিন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে নেপালের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী সুরেন্দ্র কুমার কার্কি এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে একসাথে পর্যটন খাতের কমন কনটেন্টগুলো শেয়ার করার জন্য অ্যাপ ডেভেলপ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ- নেপালের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেয়া, উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা, বাংলাদেশ সরকারের ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আদলে নেপালেও ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো, রিজিওনাল কানেক্টিভিটি ব্যাকবোন উন্নয়নে গৃহীত সাসেক প্রকল্পের নেপাল অংশ বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতা করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে তথ্য সুরক্ষার জন্য কালিয়াকৈরে স্থাপিত হওয়া ডাটা সেন্টারে নেপালের তথ্য রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
শিক্ষা-শিল্পে মেলবন্ধন দাবি
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সকাল সাড়ে ১০টায় এক নম্বর সেমিনার হলে ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এম নুরুজ্জামান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। একই সময় ‘ইমপ্রম্নভিং বিজনেস ইফিসিয়েন্সি দো আইসিটি’ শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। দুপুরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ- পারস্পেকটিভ স্মার্ট ঢাকা’ সেমিনারে বক্তা হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পলস্নী উন্নয়ন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। একই সময় ‘বিল্ডিং এ স্মার্ট স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম-কানেক্টিং স্টার্টআপ’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প’, ‘ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স দো টেকনোলজিস’ ও ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমি ডায়ালগ ফর ডিজিটাল গ্রোথ’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে ডিজিটাল দেশ গড়তে একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রিকে এক হয়ে কাজ করার ওপর সবিশেষ গুরুত্ব উঠে আসে। ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমি ডায়ালগ ফর ডিজিটাল গ্রোথ’ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রগতি সিস্টেম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ড. শাহাদাত হোসেন একাডেমিক পরিসরে কীভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং তা যখন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রি দুটি খাত আসলে দুটির পরিপূরক। কারণ একাডেমি থেকে লোক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে আসে। এজন্য আসলে তর্কের কোনো অবকাশ নেই। একাডেমি থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে যখন আসে তখন তার কাজ ইন্ডাস্ট্রিকে প্রমোট করতে কাজ করা। তার সুবিধা-অসুবিধা দেখা। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য তাকে অবশ্যই প্রস্ত্ততির শিক্ষা পেতে হবে একাডেমি থেকে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদ ভূঁইয়া, আইইউটি অধ্যাপক এমএ মোতালিব, অধ্যাপক রাহুল সন্দ্বীপ, এসআরআইআই সভাপতি কৃশ সিং, বিসিসি ডিরেক্টর এনামুল কবির, অধ্যাপক কায়কোবাদ প্রমুখ সেমিনারে তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
স্মার্ট ঢাকার প্রত্যয়
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২০১৭ সালে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে স্মার্ট ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : পারস্পেকটিভ স্মার্ট ঢাকা’ সেমিনারে তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে স্মার্ট ঢাকা গড়তে হবে। খোকন বলেন, এটা সত্য চাইলে খুব সহজেই ঢাকাকে সিঙ্গাপুর বানানো যাবে না, ধীরে ধীরে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। এটুআই প্রকল্পের পরিচালক (ইনোভেশন) মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ইশাক কিম, জিটিই কর্পোরেশনের জ্যেষ্ঠ পরিকল্পক জো হেনগুয়ে, ভেনরকের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড কারবি প্রমুখ।
উদ্ভাবনী উদ্যোগে প্যাকেজ সুবিধা
সম্মেলন কেন্দ্রের গুলনকশায় অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি ও বিনিয়োগ’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জেনারেল পার্টনার ও এফবিসিসিআই পরিচালক শামীম আহসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, ভারতীয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ভিএস শুক্লা, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবীর, বাগডুম ডটকমের প্রধান নির্বাহী সৈয়দা কামরুন আহমেদ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী ও আইডিএলসি ফিন্যান্সের প্রধান নির্বাহী আরিফ খান। সঞ্চালক শামীম আহসান সফল বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের উদারহণ দিয়ে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। নিউজক্রেড, টাইগার আইটি, রিভ সিস্টেমস, ডাটা সফট, লিডস সফট, বিডিজবসসহ অনেক উদ্যোগ এখন বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে স্বগৌরবে তুলে ধরছে। আমাদের তরুণকে এ ধরনের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে।
সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বাংলাদেশকে যদি একটি ছায়া কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান মনে করা হয়, তাহলে কিন্তু স্টার্টআপ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন দেশ তৈরির উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায় পরিকল্পনাসহ ভালো উদ্যোগ আসলে বিনিয়োগে কোনো বাধা নয়। অসংখ্য বিনিয়োগ কোম্পানি আছে যেগুলো বিনিয়োগ করার জন্য বসে আছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর বলেন, স্টার্টআপ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বাংলাদেশে নতুন ধারণা। এই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আসছে সাইবার আইন
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রী যে সাইবার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছিলেন রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আয়োজিত ‘ইউ আর নট সেইফ! ডিজিটাল ফর এভরি সিটিজেন’ শীর্ষক সেমিনারে তা মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষক্ষপের কথা তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে এই খাতে নানা ধরনের অপরাধও বাড়ছে। সেসব অপরাধ দমনে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের নিরস্ত করতে নিরন্তর কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন। মন্ত্রী বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুব শিগগিরই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হতে যাচ্ছে। এ আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে সরকারের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেট্রোনেট বাংলাদেশের নিরাপত্তা গবেষক আলমাস জামান। বক্তব্য রাখেন বেসিস পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির।
প্রযুক্তি অঙ্গনের সেরাদের সম্মাননা
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অংশগ্রহণকারী ও প্রতিযোগীদের সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে পর্দা নামে এই জমকালো আয়োজনের। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় সাতটি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পুরস্কার দেয়া হয়। ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় তিনি ১ নভেম্বর থেকে রফতানিতে ১০ শতাংশ ইনসেনটিভ দেয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষা : প্রতিষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি শাখায় পুরস্কার পেয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. সৈয়দ আখতার সোহাইন।
স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন এমআইএস স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
কৃষি : কৃষি ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠান বিভাগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন সিদ্দিকী।
সাংবাদিকতা : সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক অনু।
সফটওয়্যার ইনোভেশন : প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে রিভ সিস্টেমস এবং ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ওয়াসিইউ টেকনোলজির ফয়সাল করিম।
হার্ডওয়্যার ইনোভেশন : প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে এপলমটেক এবং ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে সিক্স এক্সিস টেকনোলজির ফারুক আহমেদকে পুরস্কার দেয়া হয়।
নাগরিক সেবা : নাগরিক সেবা বিভাগে তিনজনকে পুরস্কার দেয়া হয়। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো: আবদুস সবুর ম-ল, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিলাল হোসেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উসমান গণি, সিআইডি ঢাকা পুলিশ সুপার শেখ মো: রেজাউল হায়দার এবং সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমিত কুমার কু-ু।
এ ছাড়া সম্মেলন উপলক্ষক্ষ আয়োজিত স্টার্টআপ খোঁজার প্রতিযোগিতা সিডস্টারস ওয়ার্ল্ডের ঢাকা পর্বের বিজয়ীদেরকেও পুরস্কৃত করা হয় এই আসরে। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোবাইলভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সেবা ফিল্ডবাজ। প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্স আপ হয়েছে ক্লাউডভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সিএসইডি হেলথ, দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছে ব্যবসায় সম্প্রসারণের ওয়ানস্টপ সলিউশন শপআপ আর চতুর্থ হয়েছে টেন মিনিট স্কুল নামের উদ্যোগ
বিনিয়োগের আহবান জয়ের
প্রযুক্তি রূপান্তরের নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রতিবেশী দেশসহ আট প্রযুক্তিবন্ধু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা জড়ো হয়েছিলেন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ‘মন্ত্রিসভা’ বৈঠকে। তিন ঘণ্টাব্যাপী ‘মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স’ সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। সম্মেলনের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রস্ত্তত রয়েছে জানিয়ে জয় বলেন, আমরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি। এজন্য ইতোমধ্যে সিস্টেম উন্নয়ন করা হয়েছে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই ডিজিটাল সেবা বেড়েছে। আমাদের এখানে সবকিছুই প্রস্ত্তত। তিনি আরও জানান, দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরিমাণ ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে। যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুই শতাধিক সেবা দেয়া হয়। সরকারি সেবার বেশিরভাগই এখন ই-সার্ভিসের মাধ্যমে পাওয়া যায় জানিয়ে জয় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে দেখান, দেশে ২০২১ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ এই ই-সেবার অন্তর্ভুক্ত হবে। একই সাথে সে সময় ৯০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। বর্তমানে দেশে ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বলেও দেখান তিনি। উপস্থাপনায় জয় আরও জানান, ২০২১ সাল নাগাদ ২০ লাখের বেশি শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই কাজ করবেন। আর তথ্যপ্রযুক্তির বৈদেশিক আয় এ সময় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের ই-কমার্স খাতে ৩৪ মিলিয়নের মতো ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। শহর-গ্রামের মধ্যে মানুষের পার্থক্যও ঘুচে যাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষক্ষত্রে সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার পেলেন
মোহাম্মদ আবদুল হক অনু
মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরের হাত ধরে ১৯৯২ সালে মোহাম্মদ আবদুল হক অনুর তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতায় অভিষেক। দীর্ঘ এই পথচলার পর তথ্যপ্রযুক্তি প্রসার ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক অনুকে ‘সেরা সাংবাদিকতা’ ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরস্কার ২০১৬-এ ভূষিত করা হয়। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজ হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। উক্ত অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার স্বাক্ষরিত সম্মাননা সনদ দেয়া হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী খালেদ এফ আল ওতাইবি, নেপালের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী সুরেন্দ্র কুমার কারকি, বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জববার, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলাম ও এটুআইয়ের পলিশি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে গিগাবাইট গেমিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে গিগাবাইট গেমিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গিগাবাইট এবং স্মার্ট টেকনোলজিসের আয়োজনে প্রতিযোগিতায় মোট ৭টি গেম খেলানো হয়। যার মধ্যে এইবারই প্রথম ছিল বাংলাদেশী গেম নৌকাবাইচ এবং হিরোজ ৭১। আর অন্যান্য গেম ছিল ফিফা ১৬, কল অফ ডিউটি, ডটা টু, মোস্ট ওয়ানটেড এবং সিএসগো। সহযোগিতায় ছিল কুলার মাস্টার, জি স্কিল, স্যামসাং, লেনোভো, করসিআর, তোশিবা, ডিলাক্স, এভিরা। প্রতিযোগিতা আয়োজক ছিল অর্পণ কমিনিউকেশন লিমিটেড এবং সহযোগী আয়োজক আটি বাজার ও অ্যাপ্লয়মেন্টট্রি।