• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশের কৃষিতে আইসিটির ব্যবহার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইকবাল হোসেন
মোট লেখা:৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কৃষি
তথ্যসূত্র:
তথ্য ভান্ডার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশের কৃষিতে আইসিটির ব্যবহার

বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম এক কৃষিপ্রধান দেশ। ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার কারণে এদেশের জমি অনেক উর্বর। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় অপরিকল্পিত জনশক্তি বেড়ে যাওয়ায়, গ্রাম ও শহরের নগরায়নে অব্যবস্থাপনা এবং যথেষ্ট মাত্রায় কীটনাশক ও অজৈব সার ব্যবহারের ফলে এ দেশের জমি উর্বরতা যেমন হারাচ্ছে, পাশাপাশি বাড়ছে বিষযুক্ত সবজির খাদ্যাভ্যাস। বেড়েই যাচ্ছে খাদ্য সমস্যাসহ অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকেরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশের সীমিত সম্পদকে ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে জনগণের খাদ্য সমস্যা নিরসনের। এমনই একটি প্রয়াস আইজিপিএফ (Income Generation Project for Farmer using ICT, IGPF, http://igpf.gramweb.net)। জাপানি দাতাসংস্থা জাইকা’র (JICA) অর্থায়নে, জাপানের কিউসু বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠানের (বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীণ কমিউনিকেশনস এবং উইন ইনকর্পোরেট)-পরামর্শ এবং কারিগরি সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে গবেষণার জন্য দেশের দু’টি স্থানকে বেছে নেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে চাঁদপুরের এখলাসপুর এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা। এই দুটি স্থানের মোট ২৭ জন কৃষককে নিয়ে তাদের নিজেদের জমিতেই গবেষণা প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে।

এ প্রকল্পের একটি অন্যতম দিক হলো তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। কৃষির বিশাল তথ্যভান্ডারের সাথে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে কৃষক তথ্যকৃষির উন্নয়ন ঘটানো এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রথম বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের সরাসরি কৃষির বিপুল তথ্যভান্ডারের সাথে সংযুক্ত করার একটি চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভিওআইপি এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে অডিও/ভিডিও বার্তাকে বিশেষ পদ্ধতিতে ইন্টারনেট প্রটোকলের মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো হয়। এ পদ্ধতিতে কথোপকথন বা ডাটা ট্রান্সফার খরচ কম হয়। এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার জন্য কমপিউটারে Asterisk নামের একটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে স্বল্প পরিসরের একটি টেলিফোনি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন কিংবা আইপি ফোন থেকে DTMF (Dual-tone multi-frequency signaling) ইনপুট নিয়ে কমপিউটার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় IVR (Interactive Voice Response)। যদিও উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশের গুটিকয়েক বড় ব্যাংক এবং টেলিকম অপারেটরদের কাস্টমার সার্ভিস সেবায় IVR-এর ব্যবহার লক্ষণীয়, তথাপি বাংলাদেশ কৃষি ব্যবস্থাপনায় এর ব্যবহার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান আইন অনুযায়ী ভিওআইপি ব্যবস্থাটি এখনও সহজলভ্য হয়নি। ফলে এ মুহূর্তে দেশব্যাপী এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব। এই প্রকল্পে Connect7 নামের একটি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক টেলিকম অপারেটর এ ব্যবস্থাকে সীমিত আকারে সহায়তা দিচ্ছে।

এ প্রকল্পের জন্য একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি একটি ডাটাবেজের সাথে সংযুক্ত। অ্যাপ্লিকেশনটি প্রয়োজন মাফিক এই ডাটাবেজ ব্যবহার করে Semi-Organic কৃষিতথ্য সরবরাহ এবং সংরক্ষণ করতে পারে। IVR প্রযুক্তিকে এই অ্যাপ্লিকেশনের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে BIGBUS (BOP Information Generation, Broadcast and Upload System)। ফলে কৃষক দুই পদ্ধতিতেই কৃষিতথ্য জানতে পারবেন। কৃষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে কল করে IVR-এর নির্দেশনা মেনে কৃষিতথ্য মাঠে বসেই পেতে পারবেন। এছাড়া এই ব্যবস্থায় কৃষককে কৃষি বিশেষজ্ঞের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বিশেষ প্রোগ্রাম এবং তথ্যকে ডাটাবেজে পরিকল্পিত উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সংরক্ষণ করা কৃষিতথ্যের বিপুল সংগ্রহ থেকে দ্রুত সঠিক কৃষি সমস্যার সমাধানও পাওয়া যাবে। শুধুই কৃষক নয় বরং কৃষি বিশেষজ্ঞেরাও এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ওয়েব এবং ফোন দুই উপায়ে কৃষকদের তথ্য জানতে এবং প্রতিউত্তর করতে পারবেন। শুধু টেক্সটভিত্তিক তথ্যই নয় বরং তথ্যকে ইমেজ, অডিও-ভিডিওর ফরমেটেও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনে। ফলে কৃষকদের মাঝে তথ্যকে জানার ও বোঝার পরিধি বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে এসএমএসের সুব্যবস্থা। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কৃষক আবহাওয়া অনুসারে পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় কৃষিবার্তা। ফলে জমিতে কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় সঠিক নির্দেশনা পাবেন কৃষক।

একটি চিত্র দিয়ে ব্যাপারটি বোঝানো যেতে পারে। চিত্রের DB (ডাটাবেজ)-এ সবধরনের সবজির একটি লিস্ট আছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি সবজির উৎপাদন প্রক্রিয়া, রোগবালাই দমন, সংরক্ষণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের তথ্য সন্নিবেশিত আছে। এখন কৃষক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে কল করে ডাটাবেজে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। IVR DB থেকে সবজির লিস্ট পড়ে শোনাবে এবং কৃষকের প্রতিউত্তর গ্রহণ করবে DTMF-এর মাধ্যমে। সেই অনুযায়ী ডাটা সংরক্ষিত বা সংগৃহীত হবে।

উপরের চিত্রের গুরুত্বপুর্ণ অংশটি হলো ইন্টারনেট। সব তথ্যই এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনিময় হবে। কৃষক ইচ্ছে করলে কাছাকাছি টেলিসেন্টার বা যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে, সেখানে গিয়ে ই-অ্যাগ্রিক্যালচার অ্যাপ্লিকেশন থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করে যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া অন্যপ্রান্তে থাকা কৃষি বিশেষজ্ঞেরা কৃষকদের যেকোনো প্রশ্নের জবাব এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বা সরাসরি দিতে পারেন। ইচ্ছে করলে কৃষকেরা এসএমএস বা এমএমএস করে সরাসরি ফসলের বর্তমান অবস্থা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এতে সঠিক ও দ্রুত সমস্যা সমাধান পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।

শুধু কৃষিতথ্যই নয়, এই অ্যাপ্লিকেশন কৃষিপণ্যকে ভোক্তাসাধারণের কাছে সহজে পৌঁছানোর একটি সুন্দর ব্যবস্থাও রয়েছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ওয়েব বা মোবাইলের মাধ্যমে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করবেন এবং শহরের ব্যবসায়ীরা সেসব উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ওয়েব বা মোবাইলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। এছাড়া তারা সরাসরি কৃষকদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে পণ্যের মান যাচাই-বাছাই করতে পারবেন এবং বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পারচেজ অডার দিতে পারবেন। এর ফলে গ্রাম থেকে শহরে পণ্য আনার ব্যাপারে মধ্যস্বত্বভোগীদের পরিমাণ যেমন কমবে, তেমন অযাচিত উচ্চ পণ্যমূল্য দিয়ে ভোক্তাকে পণ্য কিনতে হবে না।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : iqbal.alo@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস