• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অ্যামাজন ইকো বাড়িতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পিএ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
দশ দিগন্ত
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অ্যামাজন ইকো বাড়িতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পিএ
অ্যামাজন কোম্পানি ‘অ্যামাজন ইকো’ নামের ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড হোম স্পিকারটি যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বাজারে বিক্রি শুরু করেছে গত সেপ্টেম্বরে। আমেরিকার বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে গত এক বছর ধরে। পণ্যটি সেখানে মোটামুটি ছোটখাটো একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে সেখানে এর বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৩ কোটি ডলারের। মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই এই যন্ত্রটি আমাদের জীবনেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
‘অ্যামাজন ইকো’ ভয়েস কমান্ড পেয়ে আপনার জন্য শুধু মিউজিক বাজাতেই শুরু করবে না, এটি আরও বেশ কয়েকটি স্মার্ট হোম অ্যাপস্নায়েন্সের একটি হবে, যেটি শুধু গান বাজানো ও লাইট জ্বালানোর মতো সাধারণ কাজের বাইরে আরও অনেক কাজই করবে। এটি ব্যবহার করে একটি আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাপ, যার নাম আলেক্সা। এই আলেক্সা অ্যাপের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা তথ্যসেবা ও ইন্টারনেট সেবা পাবেন। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ব্যবহারকারীর পার্সোন্যাল অরগানাইজেশন টুল। আপনি ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করে অর্ডার দিতে পারবেন ট্যাক্সি কিংবা পিৎজার। চেক করে দেখতে পারবেন আবহাওয়া বা আপনার ডায়রি। আলেক্সাকে শুধু বলে দিলেই সবকিছু সম্পন্ন হবে। এ ক্ষক্ষত্রে এটি অনেকটা অ্যাপলের ‘সিরি’ রোবটের মতো। তবে এর রয়েছে অগ্রসর মানের মাইক্রোফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। এর ফলে আলেক্সা আগের যেকোনো ডিভাইসের তুলনায় আরও অনেক সঠিকভাবে কমান্ড বুঝতে ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। আর এটি বাড়ির যেকোনো স্থান থেকে দেয়া কমান্ড শুনতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক মার্ক স্কিলটন জানান, তিনি এক বছর আগে একটি অ্যামাজন ইকো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ই-বে’র মাধ্যমে আমদানি করে নিয়ে সেখানে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, এটি একটি অবাক করা ডিভাইস। এটি পার্সোন্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের ধারণাকে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। এটি একটি বাড়িকে সাফল্যের সাথে স্মার্ট হোম হাবে পরিণত করতে পারে। অ্যামাজন সিইও জেফ বেজোস বলেছেন, অবাক করার ব্যাপার নয় যে, এটি হচ্ছে এর ক্লাউড সার্ভিস ও মোবাইল সার্ভিসের পর সম্ভাবনাময় ফোর্থ কোর অ্যামাজন সার্ভিস।
অনেকে এরই মধ্যে তাদের মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার করেছেন নিমণমানের ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়্যার। কিন্তু অ্যামাজন শুরু করেছে একটি যথার্থ সঠিক তথা হাই-প্রিসিশন মাইক্রোফোন ও অধিকতর অভিজাত ধরনের ভয়েস রিকগনিশন সিস্টেম, এর প্রতিযোগীদের চেয়ে ১২ মাস আগে। এ ক্ষক্ষত্রে অ্যামাজন অনেকদূর এগিয়ে গেছে। অন্যান্য আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্টের চেয়ে এর বড় পার্থক্য হচ্ছে- একটিমাত্র সফটওয়্যারের বদলে আলেক্সা ব্যবহার করে এর নিজস্ব ৩০০ অ্যাপ (যাকে অ্যামাজন নাম দিয়েছে ‘স্কিলস’), যাতে ডিভাইসটির সক্ষমতা আর সব ডিভাইসের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় এমন একটি ব্যবস্থা বা সিস্টেমের, যা আরও অনেক বেশি সমন্বিত ও অভিজাত। অধিকন্তু এটি মিনিমাম সেটআপের সাহায্যে সহজে ব্যবহারের উপযোগী।
অ্যামাজন ইকো সবসময় শুনছে আপনার ভয়েস কম্যান্ড
কানেকটেড হোমের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষক্ষত্রে এটি একটি বড় ধরনের উন্নয়ন বলতে হবে। এটি আমাদের কাছে আসছে কার্যত আমাদেরকে পিসির যুগ থেকে ইন্টারনেট অব থিংস যুগের মোবাইল ডিভাইসে উত্তরণ ঘটানোর জন্য। এ যুগে আমাদের চারপাশের সব বস্ত্ততে থাকবে কমপিউটার চিপস। যৌক্তিক কারণেই ‘অ্যামাজন ইকো’ হচ্ছে প্রথম সফল পণ্য এই ঘাটতিটুকু পূরণের জন্য। এটি একটি ‘ওয়ার্কিং ভয়েস রিকগনিশন সার্ভিস ও কানেকটেড সেন্সর’, যা অপরিহার্যভাবে আপনার বাড়িকে সংযুক্ত করবে একটি মার্কেটপ্লেস সাপস্নাই চেনের সাথে। আর এসব সার্ভিসের সবগুলো না হলেও অনেকগুলোই আপনার জন্য প্রয়োজনীয়।
এখনও এসব ডিভাইসের জন্য এটি প্রাথমিক সময়। বলা যায়, সবে মাত্র এর শুরু। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- কী করে অন্যান্য দোকান, ব্যাংক ও বিনোদন কোম্পানি এই প্রযুক্তির প্রতি সাড়া দেবে। কারণ, এর ফলে এটি তাদের ও তাদের গ্রাহকদের মাঝে একজন মধ্যস্বত্বভোগী এনে দাঁড় করাতে পারে। আপনি যদি কিছুর জন্য অর্ডার দিতে চান, সরাসরি জোগানদাতা কোম্পানিতে যাওয়ার বদলে আপনি আপনার অ্যামাজন ইকোর মাধ্যমে অ্যামাজনে যাবেন। আইটি ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা এর নাম দিতে পারেন ‘অ্যাগ্রিগেটর’ বা ‘সার্ভিস ব্রোকার প্ল্যাটফরম’। অনেক টেক কোম্পানির লক্ষ্য সব সার্ভিসের সার্ভিস প্রোভাইডার হওয়া।
আছে সমালোচনাও
ইকো সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের আর্লি অ্যাডাপ্টারদের কাছে ফিডব্যাক ছিল খুবই শক্তিশালী। প্রফেসর মার্ক স্কিলটন অভিজ্ঞতা সূত্রে বলেন, তার অভিমত হচ্ছে এর কোনো স্ক্রিন নেই। সে কারণে যখন আপনি প্রকৃতপক্ষক্ষ এই ডিভাইসটি ব্যবহার করেন, তখন এর সাথে ইন্টারেক্ট করা কঠিন। ভয়েস ইন্টারেকশন স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে যদি সিস্টেমে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন সমস্যা দেখা দেয় এর বেশ কিছু স্কিলসে বা নিজস্ব অ্যাপে।
একটি ডিভাইস অব্যাহতভাবে শুনছে আপনার কম্যান্ড। নিঃসন্দেহে তা প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। ঠিক যেমন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে আমাদের সব স্মার্ট ডিভাইস। ইকো ও আলেক্সা কাজ করে বিদ্যমান সিকিউরিটি প্রটোকলের আওতায়। এই সিকিউরিটি প্রটোকল অনেকেই ব্যবহার করেন অনলাইন শপিংয়ের সময় এবং অ্যামাজনের মাধ্যমে ক্লাউড ওয়েব সার্ভিসে প্রবেশের সময়। অ্যামাজন ও কোনো স্মার্টহোম কোম্পানি যখন অ্যাক্সেস করবে শুধু ব্যাংক ডিটেইলসেই নয়, আমাদের প্রাইভেট
কনভারসেশনেও, তখন প্রকৃতপক্ষক্ষ এই সিস্টেমগুলো কতটুকু নিরাপদ- আর এর অপব্যবহারই বা কতটুকু চলতে পারে?
ইকো উপস্থাপন করে নতুন ধরনের ইন্টারফেস, যা দেবে ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড সার্ভিস। সাথে থাকছে ভার্চু্যয়াল ও অর্গমেন্টেড রিয়েলিটি, যা কমপিউটারের মধ্যে ইন্টারেক্ট করার একটি উৎকৃষ্ট উপায়। এ সার্ভিস পাওয়া যাবে ২০১৭ সালে কিংবা এর কিছু পর। গুগল এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চালু করেছে ‘গুগল হোম’ (এক বছর দেরিতে)। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও একই ধরনের সলিউশন ডেভেলপ করছে। এর সম্পর্কে অবাক করা বিষয় হলো, এটি একটি ফিউচার ভিশন বা ভবিষ্যতের রূপকল্প। আর এটি আসছে প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই। আমরা এখনও জেনারেল আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স থেকে অনেক দূরে আছি, যেখানে মেশিন পুরোপুরি মানুষের মতো চিন্তা ও কাজ করতে পারবে। তবে এ কথা ঠিক, কিবোর্ড ও মাউসের দিন শেষ হয়ে আসছে


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস