লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
জাম্বিয়ার ‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’
জাম্বিয়ার ‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’
‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’ প্রকল্প কথাটি শুনলে মনে হয় যেন ভবিষ্যতের কিছু। কিন্তু জাম্বিয়ায় তা আজকের দিনের এক বাস্তবতা। জাম্বিয়ায় ‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’ প্রকল্প নামের স্বাস্থ্যসেবার সূচনা হয়েছিল একটি অতি নিচুমানের অসুখকর পরিস্থিতির মাঝে।
জনৈক ব্রিটিশ হাউ জোনস জাম্বিয়ায় কাজ করতেন একজন সাফারি গাইড হিসেবে। একদিন তিনি ল্যান্ড রোভার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন জাম্বিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক সড়কপথে। তিনি পথে মাঝে মাঝে রক্ত পড়ে থাকতে দেখেন। ভাবলেন- এ হয়তো কোনো পশুর রক্ত, যা সিংহের শিকারে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সামনে গিয়েই দেখলেন একজন মহিলাকে সাইকেলের হ্যান্ডলবারে বসিয়ে এক পুরুষ সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই মহিলা ছিলেন গর্ভবতী। প্রচুর রক্তপাত আর প্রচ- ব্যথায় মহিলা কাতর। এরপরও কষ্টেশিষ্টে বসে আছেন সাইকেলের হ্যান্ডলবারে। কয়েক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে এদের ৬০ মাইল পেরিয়ে পৌঁছতে হবে নিকটস্থ হাসপাতালে। মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়েও এরা যেন দুঃসাহসী। হাউ জোনস তার ল্যান্ড রোভারে ওদের তুলে রওনা হন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু অতি দুর্বল এই নারী পথেই মারা যান। চিকিৎসাসেবা তার ভাগ্যে জোটেনি।
ঘটনাটি গভীরভাবে দাগ কাটে হাউ জোনসের মনে। তিনি দেখলেন, উপসাহারীয় আফ্রিকা অঞ্চলে প্রচুর লোক এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তিনি ভাবতে লাগলেন, উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলে এ ধরনের অনেক মৃত্যু এড়ানো যেত। ভাবলেন, যদি এদের জন্য কিছু করা যায়। খবর নিয়ে জানলেন, জাম্বিয়ায় ১ কোটি ৪০ লাখ লোকের জন্য রয়েছে মাত্র ১৬০০ ডাক্তার। এর দুই-তৃতীয়াংশেরই বসবাস শহরাঞ্চলে। অথচ দেশটির বেশিরভাগ মানুষের বসবাস প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায়। এর অর্থ এদের পক্ষক্ষ চিকিৎসাসেবা নেয়া প্রায় অসম্ভব।
হাউ জোনস ফিরে যান নিজ দেশ যুক্তরাজ্যে। এই অভাব পূরণের জন্য তিনি একটি প্রকল্প গড়ে তোলেন। তিনি ‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’ নামে ব্রাইটনভিত্তিক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন। এটি এখন লাখ লাখ লোকের স্বাস্থ্য সহায়তা জোগাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাম্বিয়ার স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি চিকিৎসা পান ইউকে ডাক্তারদের কাছ থেকে। এসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্বেচ্ছায় চিকিৎসাসেবা জোগাচ্ছেন। এই ভার্চু্যয়াল ডাক্তারেরা সেখানকার ১৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ জোগাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেই। প্রচুরসংখ্যক পরিবার এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এসব সুশিক্ষক্ষত ডাক্তারদের চিকিৎসার প্রতি এরা পুরোপুরি আস্থাশীল। এর আগে সেখানে ডাক্তার-স্বল্পতায় এরা চিকিৎসার সুযোগ পেত না। এরা এখন হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। জাম্বিয়ার ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রেগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীরা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কমপিউটার অ্যাপ ব্যবহার করে রোগীর ছবি ও রোগের লক্ষণাদি নোট করে যাবতীয় তথ্য যুক্তরাজ্যের ভলান্টিয়ার ডাক্তারদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সে অনুযায়ী এরা চিকিৎসা পরামর্শ পাঠান। কোনো বড় ধরনের চর্মরোগ, এইডস কিংবা এইচআইভি-সংশ্লিষ্ট হলে রোগীকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভলান্টিয়ার চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিকগুলোতে পাওয়া যায়, এমন ওষুধের ও যন্ত্রপাতির তালিকা থাকে। সে অনুযায়ী এরা চিকিৎসা পরামর্শ দেন। বর্তমানে ১৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রধানত যেসব রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়, তার মধ্যে আছে- ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এইউআইভি/এইডস ও গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা।
‘ভার্চু্যয়াল ডক্টরস’ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা হাউ জোনস বলেন, অনেক স্থানে এক্স-রে মেশিন আছে, কিন্তু অভাব আছে রেডিওলজিস্টের। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্চু্যয়াল ডাক্তারেরা বুকের এক্স-রে দেখে চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন। জাম্বিয়ার দু’টি জেলা হাসপাতাল এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে। একটি স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার লোকের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। হাউ জোনসের মতে, ভার্চু্যয়াল ডক্টরস প্রকল্পের মাধ্যমে জাম্বিয়ায় ১ লাখ ১০ হাজার লোকের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। সেখানে এখন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ঘটছে। এর ফলে এ প্রকল্প সম্প্রসারণ সুবিধা বাড়ছে
বিশ্বের প্রথম কমপিউটার
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে ১৯০১ সালে উদ্ধার করা হয় Antikythera Mechanism। এটি এখন রাখা আছে এথেন্সের আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে। ছবিতে এর বিভিন্ন ভাঙা অংশ দেখা যাচ্ছে। হতে পারে এটিই বিশ্বের প্রথম কমপিউটার, যা তৈরি করা হয়েছিল সৌরজাগতিক ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য। প্রাচীন গ্রিকেরা ব্যবহার করেছিল এই বিস্ময়কর উন্নত যন্ত্রটি। এটি উদ্ভাবন করা হয়েছিল সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহগুলোর চলাচলের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য। এখন কাটিং-এজ টেকনোলজি ব্যবহার করে এই যন্ত্রে খোদাই করা লেখা পরীক্ষা করার পর গবেষকেরা মনে করছেন, গ্রিকরা সম্ভবত এটি ভবিষ্যদ্বাণী করার বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে তৈরি করেছিল।
গ্রিকের স্পঞ্জ ডুবুরিরা ১৯০১ সালে অ্যান্টিকাইথেরা দ্বীপের কাছে একটি জাহাজ থেকে এটি উদ্ধার করেন। এই দ্বীপের নামেই এর নামকরণ। এই জাহাজে পাওয়া যায় প্রচুর প্রাচীন দ্রব্য- কাচের পাত্র, ফার্নিচার, অলঙ্কার এবং মার্বেল পাথর ও তামার তৈরি মূর্তি। এগুলোর বেশিরভাগই উদ্ধার করা হয় ভাঙা অবস্থায়। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর আমলের প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অ্যান্টিকাইথেরা মেকানিজমকে মনে করা হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান নিদর্শন। এটিকে এখন বলা হচ্ছে বিশ্বে প্রথম মেকানিক্যাল কমপিউটার। এটি প্রাচীন গ্রিকদের প্রকৌশল সক্ষমতার পরিচায়ক। সেই এটি প্রমাণ দেয়, প্রাচীন গ্রিকেরা জ্যোতির্বিদ্যায়ও ছিল অগ্রসর জ্ঞানের অধিকারী। হাজার বছরের আগে এ ধরনের মেকানিজম আর কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি। এই মাল্টি-লেয়ারড মেকানিজমের বিভিন্ন গিয়ার ও খুচরা যন্ত্রাংশের ভৌত কর্মগুলো ভালো করেই বোঝা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন এই যন্ত্রের উপরিভাগে ও পেছনে খোদাই করা লেখার অর্থোদ্ধারের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি। এরা মনে করতেন, এই লেখার অর্থোদ্ধার করতে পারলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত। এর মধ্যে যন্ত্রটি চালনা করার ব্যবহারকারীর নির্দেশিকা হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু বর্ণ মাত্র ১.২ মিলিমিটার আকারের। ইঞ্চির হিসাবে এক ইঞ্চির ২০ ভাগের ১ ভাগ।
সুদীর্ঘ এক দশক ধরে এক্স-রে স্ক্যানিং ও অন্যান্য কাটিং-এজ টেকনিক ব্যবহার করে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল অ্যান্টিকাইথেরায় খোদাই করা ৩৫০০ বর্ণের অর্থোদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এটি ছিল একটি কঠোর কাজ। অতি ক্ষুদ্র আকারের বর্ণগুলো পড়তে তাদেরকে ডজন ডজন স্ক্যান করতে হয়েছে। এরপরই শুধু এসব লেখার অর্থোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, এখন প্রাচীন গ্রিক লেখার অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছি। এটি এমন সময়ের ঘটনা, যে সময় সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি। অ্যান্টিকাইথেরায় খোদাই করা লেখা থেকে আমরা সে আমলের জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
এর প্রস্ত্ততকারকের স্বাক্ষর খোদাই করা আছে এই ডিভাইসে। গবেষকেরা বলছেন, সম্ভবত গ্রিক রোডস দ্বীপে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এরা এ ধরনের যন্ত্র সম্ভবত এই একটিই তৈরি হয়েছিল। এ ধরনের দ্বিতীয় আরেকটি যন্ত্র আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সে যা-ই হোক, এটিই এখন সম্ভবত স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম কমপিউটার হিসেবে