• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি দেশেই
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: রাহিতুল ইসলাম
মোট লেখা:৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি দেশেই
প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্ট বাড়ির ধারণা তো এমনই। এতে মানুষের কসরত যেমন কমে, জীবনযাত্রাও সহজ হয়। স্মার্ট বাড়ির জন্য বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপলম্বটেক (Aplombtech) বিডি। আর তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ‘স্মার্ট হোম সাইনপালস’ নামের মোবাইল অ্যাপিস্নকেশনের (অ্যাপ) মাধ্যমে। নিচে তুলে ধরা হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: সাইফুলস্নাহর স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি। তিনি জানান, ‘শুধু দেশের মধ্যে নয়, বহির্বিশ্বেও নিজেদের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে চাই। দেশীয় ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে চাই।’ তাদের উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।
অ্যাপই বৈদ্যুতিক বোর্ডের নিয়ন্ত্রক
ধরুন, মাঝরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। বাতি জ্বালাতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমেই তা পারবেন। একইভাবে বন্ধও করতে পারবেন। এর জন্য অ্যাপের এনাবল ও ডিজ্যাবল বাটনে চাপ দিলেই হবে। শুধু বাতি নয়, একইভাবে ফ্যানও বন্ধ বা চালু করা যাবে। এর জন্য দরকার হবে প্রতিষ্ঠানটির তৈরি বিশেষ এক বৈদ্যুতিক বোর্ডের। তাতে আবার সংযুক্ত আছে টাচ প্রযুক্তি। অ্যাপ ছাড়াও বোর্ডে টাচ করে বন্ধ বা চালু করা যাবে। তবে কোনো বাতি শুধু অ্যাপের মাধ্যমে চালু করতে চাইলেও তা পারা যাবে। এক্ষেত্রে অ্যাপটির ‘ম্যানেজ’ বিভাগে ঠিক করে দিতে হবে কোন বাতিটি আপনি অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তা। সাইফুলস্নাহ জানালেন, তাদের বোর্ডে রয়েছে বস্নুটুথ প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে অ্যাপের সাথে সংযুক্ত হয় বোর্ড।
গতি বা আলো কমানো-বাড়ানো যাবে
ফ্যান না হয় অ্যাপের মাধ্যমে চালু করলেন। কিন্তু এর গতি বাড়ানো বা কমাতে কি সুইচের প্রয়োজন পড়বে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুলস্নাহ বললেন, ‘অ্যাপেই পারা যাবে গতি বাড়ানো বা কমানো। আর আমাদের বোর্ডের সুইচে সময় নিয়ে টাচ করলে কমানো-বাড়ানো যাবে।’ আলো কমানো-বাড়ানোর জন্য তারা বিশেষ এক এলইডি বাতি তৈরি করেছেন। শুধু কমানো-বাড়ানো নয়, চাইলে ঠিক করে দেয়া যাবে কত ওয়াটে জ্বলবে বাতি। তাও করতে হবে অ্যাপে। তাদের বাতি ছাড়া সাধারণ বাতিতে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আরও একটি সুবিধা পাবেন গ্রাহকেরা। ধরুন, আপনার বাড়ির বাতি, ফ্যানসহ সব বৈদ্যুতিক সংযোগ তাদের বোর্ডের সাথে সংযোগ করলেন। আর তাতে আপনি কি পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করছেন সে তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভারে যোগ হবে। মাসশেষে গ্রাহকেরা চাহিদা জানালে বিদ্যুৎ খরচের তথ্য জানিয়ে দেবে প্রতিষ্ঠানটি-এমনটিই বললেন সাইফুলস্নাহ।
নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া দরজা খুলবে না
আপনার বাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোন রুম কে খুলতে পারবেন তাও আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে অ্যাপলম্বটেকের স্মার্ট ক্যামেরার। এতে নির্দিষ্ট মানুষের ছবি যোগ করে দিতে হবে। এর বাইরে কেউ খোলার চেষ্টা করলে সঙ্কেতের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেবে অ্যাপটি। এ ছাড়া কেউ এলেও তা জানা যাবে।
গ্রাহকই ঠিক করতে পারবেন বিদ্যুৎ খরচ
অ্যাপলম্বটেক ‘স্মার্ট এনার্জি মিটার’ নামে একটি মিটার উদ্ভাবন করেছে, যা বাড়ির প্রতিটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এই মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মাসিক বিল নিজে থেকেই ঠিক করে নিতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে এ মিটার ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।
বাতি জ্বলবে মানুষের উপস্থিতিতে
প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি বাতি তৈরি করেছে, যেটি মানুষের উপস্থিতিতে জ্বলে উঠবে। সুইচ অন রাখলেই হবে। এর অর্থ এই নয়, দিনের আলোতে জ্বলবে। সাইফুলস্নাহ বললেন, এতে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে দিনের আলোতে জ্বলবে না। অন্যদিকে রাতের বেলা মানুষের উপস্থিতিতে জ্বলে উঠবে। এজন্য ১০ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে।
বাইরে থাকলেও বাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা যাবে
ধরুন, আপনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন। আর ঘরে প্রবেশের আগেই বাতি বা শীতাতপ যন্ত্র চালু করতে চান। সেটি অ্যাপের মাধ্যমে পারবেন। এজন্য তাদের উদ্ভাবিত স্মার্ট রাউটার ব্যবহার করতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমে ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত রাউটারকে সংযুক্ত করা। অ্যাপলম্বটেকের সিইও বলেন, ম্যানুয়ালিও তা ঠিক করে দেয়া যাবে। ঘরের একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছালে তা চালু হয়ে যাবে। আর তা জিপিআরএসের মাধ্যমে শনাক্ত হবে।
প্রবাসী দম্পতিরই উদ্ভাবন স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি
২০০৯ সালের ঘটনা। ডি-র্যা ম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিমন্ডা লোকসানে পড়ে। কর্মী ছাঁটাই করলে চাকরি হারান জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশী মো: সাইফুলস্নাহ ও তার স্ত্রী তানিয়া রহমান। এর আগে দুজনে চাকরি করেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনফিনিওন, সিমেন্স, ইন্টেলে। এবার চাকরি খোঁজা নয়, বরং নিজেদেরই কিছু করার উদ্যোগ জন্ম দেয়। ‘তখন আমরা চিম্মা করলাম দুজনে মিলে কিছু করার। দেশে ফিরে কিছু করতে চাইলাম।’ বললেন সাইফুলস্নাহ। সে সময় এক বন্ধু সাইফুলস্নাহকে বলেন, দেশে গিয়ে সরাসরি কিছু করা কঠিন। এখানে (জার্মানি) কিছু তৈরি করে তবে দেশে যাও। ‘এরপর ২০০৯ সালেই আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম সাইনপালস।’
শুরু হলো সাইনপালসের গবেষণা। প্রথমেই তৈরি করা হলো বাংলাদেশের জন্য ভেহিকল নেভিগেশন সিস্টেম। ‘কিন্তু ঢাকা শহরের ডিজিটাল মানচিত্র পুরোপুরি তৈরি না থাকায় ওই যন্ত্র কার্যকর করা গেল না। এরপর আরও কয়েকটি যন্ত্র তৈরি করি। কিন্তু এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম যেটি সাধারণ মানুষ যেমন ব্যবহার করবে, তেমনি দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাবে সবখানে।’ বলেন সাইফুলস্নাহ।
আর তা থেকে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপলম্বটেক বিডি। আর সাধরণ মানুষ ব্যবহার করবে এমন পণ্য হিসেবে স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মনোযোগ দেন তারা। সফলও হয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের এসব পণ্য দেশ ও বিদেশের বাজারে ছেড়েছেন। তবে আফসোস করে বললেন, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড প্রযুক্তির সুবিধা না থাকায় এখন পর্যন্ত দেশে উৎপাদন করা যাচ্ছে না আমাদের এসব পণ্য। বাইরে বানিয়ে দেশে আমদানি করতে হচ্ছে। অ্যাপলম্বটেক সম্পর্কে জানা যাবে www.aplombtechbd.com সাইট থেকে

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস