• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অ্যানিমেশন : বিস্ময়কর এক জগত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নাজমুল হক
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অ্যানিমেশন
তথ্যসূত্র:
মাল্টিমিডিয়া
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অ্যানিমেশন : বিস্ময়কর এক জগত
অ্যানিমেশন শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘অ্যানিমা’ থেকে। অ্যানিমা শব্দের অর্থ হলো ‘সোল’ বা ‘আত্মা’। পর্দায় যখন কোনো একটি জড় বস্ত্ত বা চরিত্রকে চলমান কোনো চিত্রে জীবন বা রূপদান দেয়া হয়, তখন সেই অবস্থাকে অ্যানিমেশন বলা হয়।
অ্যানিমেশন সৃষ্টির শুরু খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছরের আগে থেকে লক্ষ করা যায়, একটি মাটির পাত্রে একটি ছাগলের লাফানোর দৃশ্যায়ন প্রাচীন ইরানে। সেখানের সেই দৃশ্যকে আদি রূপ বলা যায়, যদিও সেটা সরাসরি বর্তমান অ্যানিমেশন বলতে যা বুঝায় তার থেকে ভিন্ন, তবুও শুরুটা অনেকেই ধরে নেন সেই মৃৎশিল্পের ওপর করা দৃশ্যকে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে আমরা যে অ্যানিমেশনের কৌশলের সাথে পরিচিত, তার শুরুটা হয় ১৬৫০ সালে। ভেনিসের নাগরিক জিওভান্নি ফন্টানা ‘ম্যাজিক ল্যান্টার্ন’ কৌশল নিয়ে হাজির হন প্রথম, যদিও তার উদ্ভাবন নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে। একটি অশোধিত লেন্স ও একটি মোমবাতির আলোর অভিক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে প্রাণীর চলমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছিল পর্দায়। ১৮৭৭ সালে ফরাসি বিজ্ঞান শিক্ষক চার্লস এমিলি রেয়নড পর্দার অ্যানিমেশন নিয়ে আবার আসেন। পরে ১৮৮৮ সালে তিনি থিয়েটার অপটিক আবিষ্কার করেন এবং ১৮৯২ সালে জনসম্মুখে প্রথম অ্যানিমেশন দেখান ফ্রান্সের প্যারিসের ‘মুসে গ্রিবনে’। সেখানে তিনি সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফের বদলে ফ্রেম ব্যবহার করে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র পরিচালিত করেন।
১৯৯০ সালে প্রথম ফিল্মস্ট্রিপে ব্যবহৃত চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের সিকোয়েন্স অন্তর্ভুক্ত হয়, যা জে. স্টুয়ার্ট বস্ন্যাকটনের হাত ধরেই হয় এবং তাই তাকে আমেরিকান অ্যানিমেশন শিল্পের আদিপিতা বলা হয়। ১৯০৮ সালে বিশ্বে দেখা যায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের, যা ফরাসি শিল্পী এমিলি কোহল নির্মাণ করেন। যাতে দেখা যায় অনেকগুলো লাঠি, যা বিভিন্ন বস্ত্তর সাথে ইন্টারেক্ট করছে।
‘কার্টুন’ শব্দের সাথে ১৯১০ সালে বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয়। অ্যানিমেশনের ডাক নাম হয় ‘কার্টুন’। সংবাদপত্রের কার্টুনিস্ট উইনসর ম্যাকেয়ের হাত ধরে নতুনভাবে আবার আলোচনায় আসে। জন রানডলফ বিরে ও ইয়ারল হার্ড অ্যানিমেশন জগতের অন্যতম সফল প্রযোজক এবং সেল অ্যানিমেশন প্যাটেন্টের পেছনে তাদের ভূমিকা ছিল ও শতাব্দীজুড়ে সেল অ্যানিমেশন আধিপত্য করে।
বর্তমানের অ্যানিমেশন ওয়াল্ট ডিজনির হাত ধরে আজকের এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। বিখ্যাত ‘মিকি মাউস’, ‘পিনোকি’, ‘ডোনাল্ড ডাক’-এর মতো এনিমেটেড কার্টুন ফিল্ম দিয়েই অ্যানিমেশন কার্টুন ফিল্মের প্রকৃত যাত্রা শুরু। ১৯২৯ সালে ‘মিকি মাউস’ কার্টুন চরিত্রের সৃষ্টি করেন ওয়াল্ট ডিজনি। আর এভাবেই ক্রমাগতভাবে অ্যানিমেশন বিনোদনের পাশাপাশি বাণিজ্যিক রূপ নিতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে।
বর্তমান অ্যানিমেশন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রতি সেকেন্ডে ১২ ফ্রেমের প্রাণবন্ত বিচরণ হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেমেরও অ্যানিমেশন সম্পূর্ণ হয়। বর্তমান সময়ে থ্রিডি অ্যানিমেশন টিভি শো ও চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন বিপ্লব এনেছে, বিশেষ করে ১৯৯৫ সালে ‘ট্রয় স্টোরি’ অ্যানিমেশন জগতে নতুন সম্ভাবনার শুরু করে এবং এটি ছিল প্রথম ফিচার লেন্থ কমপিউটার অ্যানিমেশন।
অ্যানিমেশনের ধরন
অ্যানিমেশন বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে- টুডি সেল অ্যানিমেশন, থ্রিডি সিজিআই অ্যানিমেশন, থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, ক্লে অ্যানিমেশন।
টুডি সেল অ্যানিমেশন
সবচেয়ে পুরনো ধরনের পদ্ধতির অ্যানিমেশন হলো টুডি সেল অ্যানিমেশন। যে বস্ত্ত বা চরিত্রের অ্যানিমেশন করা হবে তার সব ধাপের পরপর অনেকগুলো ছবি অাঁকা শেষ করে তাকে সেলুলয়েডের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত রূপ দেয়া হয়। বিখ্যাত ‘মিকি মাউস’ অ্যানিমেশন চরিত্রটি এই পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে নির্মিত হয়।
থ্রিডি সিজিআই অ্যানিমেশন
থ্রিডি সিজিআই অ্যানিমেশন হচ্ছে, সফটওয়্যারনির্ভর অ্যানিমশেন পদ্ধতি। এতে প্রথমে বিভিন্ন ধরনের বাঁকানো রেখার সাহায্যে প্রথমে কোনো একটি ছবির কিছু অংশ (কমপিউটার জেনারেটর ইমেজারি) দিয়ে অাঁকতে হয়। এরপর ছবিটিকে ওই সফটওয়্যারের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশনে রূপ দেয়া হয়। বিখ্যাত পিক্সার স্টুডিওর ‘আপ’ ও ‘টয় স্টোরি’র মতো হলিউডের বিখ্যাত অ্যানিমেশন ফিল্মগুলো এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে।
থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন
অনেক সময় ত্রিমাত্রিক বস্ত্ত বা চরিত্র তৈরি করে তাকে অ্যানিমেট করতে এই পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়। কোনো একজন ব্যক্তির গায়ে একটি সেন্সর লাগিয়ে তার নড়াচড়াকে কমপিউটারের সাহায্যে ওই ত্রিমাত্রিক বস্ত্ত বা চরিত্রের নড়াচড়ার কাজে লাগানো হয়। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিরিজে ‘গোলাম’ চরিত্রটিকে এই পদ্ধতিতে তৈরি করা ও পরিচালিত করা হয়েছিল। হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটারে’ও থ্রিডি অ্যানিমেশনের চমৎকার ব্যবহার করা হয়েছে, যা তার নজরকাড়া অ্যানিমেশনের জন্য বিখ্যাত।
ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস
অ্যানিমেশন ও মাল্টিমিডিয়া স্পেশালিস্টরা আজকাল ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসকেও তাদের কাজে ব্যবহার করে। সাধারণত স্বল্পদৈর্ঘ্যের কোনো অ্যানিমেশন বা স্পেশাল ইফেক্টস তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের চলচ্চিত্রগুলোর অনেকগুলো স্পেশাল ইফেক্ট পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে। এই স্পেশাল ইফেক্টের দৃশ্যগুলোকে প্রাণবন্ত করেছে আর এ কারণেই ছবিগুলো দর্শকের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্লে অ্যানিমেশন
ক্লে অ্যানিমেশন এমন একটি পদ্ধতি, যাতে সিনথেটিক ক্লে’র সাহায্যে চরিত্র তৈরি করে তার নড়াচড়ার পরপর অনেকগুলো ছবি তোলা হয়। এতে অনেক সময় এক সেকেন্ডের একটি নড়াচড়ার জন্য বিশ থেকে পঁচিশটি ফ্রেমে ছবি নিতে হয়। আর এই ছবিগুলোকেই পরপর সাজানোর পর হয়ে ওঠে একেকটি ক্লে অ্যনিমেশন। শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘তারে জমিন পার’-এ এই ক্লে পদ্ধতির অ্যানিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় কিছু অ্যানিমেশন কাজ
০১. টয় স্টোরি : ১৯৯৫ সাল
০২. এ বাগ’স লাইফ : ১৯৯৮ সাল
০৩. মনস্টার ইনক : ২০০১ সাল
০৪. ফাইন্ডিং নিমো : ২০০৩ সাল
০৫. ওয়ালই : ২০০৮ সাল
০৬. আপ : ২০০৯ সাল
অ্যানিমেশনে বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে ‘মানব কঙ্কালের ঢাকা ভ্রমণ’ নামে একটি অ্যানিমেশন তৈরি করে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন স্টুডিও। এ ছাড়া দেশে লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা গল্প অবলম্বনে ‘ত্রাতুলের জগত’ নামে একটি ফিকশন অ্যানিমেশন তৈরি হয়। জনপ্রিয় আরেকটি দেশী অ্যানিমেশন ‘মুরগি কেন মিউট্যান্ট’। শিল্পী রফিকুন্নবীর (রনবী) বিখ্যাত ‘টোকাই’য়ের মাধ্যমে দেশে অ্যানিমেশন চরিত্রের যাত্রা শুরু। এ ছাড়া নাফিস বিন জাফর প্রথম বাংলাদেশী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগে অস্কার পান হলিউড চলচ্চিত্র পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড এ ফ্লুইড ডায়নামিক্সের অসাধারণ কাজ করার জন্য। তার দুই সহকর্মী ডগ রুবেল ও রিও সাকাগুচির সাথে এ কাজের জন্য পুরস্কার পান।
অ্যানিমেশন সফটওয়্যার
০১. অটোডেস্ক থ্রিডি ম্যাক্স
০২. সিনেমা ফোরডি
০৩. অটোডেস্ক মায়া
০৪. বেস্নন্ডার
বর্তমানে দেশী বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও অ্যানিমেশনের আধিক্য বেড়েছে। টিভি এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভিডিও এবং অ্যানিমেশন ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। টেক্সট কিংবা ছবি সংবলিত বিজ্ঞাপনের চেয়েও তথ্যমূলক ভিডিও বিজ্ঞাপন অ্যানিমেশন বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টি করছে। ‘ম্যাজিক ইমেজ’, ‘ড্রিমার ডাঙ্কি’র মতো বেশ কিছু দেশী অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠান এখন দেশে অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করছে।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস