লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
থ্রিডি সিজিআই মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন জগৎ
থ্রিডি সিজিআই হচ্ছে ত্রিমাত্রিক কমপিউটার জেনারেটেড ইমাজেরি, থ্রিডি সিজিআই মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন গত কয়েক দশক অ্যানিমেশন প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা ও আলোচনার বিষয়বস্ত্ততে জায়গা করে নিয়েছে। ইমেজ ম্যাট্রিক্স ‘মার্কারলেস মোশন ক্যাপচার’ সিস্টেমের আশ্চর্যজনক এক উন্নতিসাধন করেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পের প্রযুক্তি সিস্টেমেও মার্কেটলেস মোশন ক্যাপচার দিয়ে বেশ উন্নতি এনেছে। এতে অভিনেতা বা ক্যারেক্টারের পুরো বডির বিভিন্ন জয়েন্ট ও দিকের ম্যাচিং করায় নির্ভুলতা এসেছে। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় একই সিস্টেমে বেশ কিছু উন্নতি এনেছে এ প্রযুক্তিতে। এতে যুক্ত হাড় এবং শরীরের বিভিন্ন আকারের ত্রিমাত্রিক অবস্থান বেশ সুন্দরভাবে স্পষ্টত হয়েছে মোশন ক্যাপচারে। ডিজিটাল ক্যামেরা, মার্কারলেস মকাপ টেকনোলজি, লাইটিং-রিগ সবকিছুর সমন্বয়ে থ্রিডি সিজিআই মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশনে বেশ ভিন্নতা এসেছে।
ত্রিমাত্রিক কমপিউটার জেনারেটেড ইমাজেরি
কমপিউটার জেনারেটেড ইমাজেরি হচ্ছে কমপিউটার গ্রাফিক্সের একটি অ্যাপ্লিকেশন, যে পদ্ধতি থ্রিডি ভিজ্যুয়াল দৃশ্য তৈরিতে বর্তমান সময়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। চলচ্চিত্র, গেম, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি বেশ জনপ্রিয়। থ্রিডি সিজিআই অ্যানিমেশনে কমপিউটারে গ্রাফিক্স সফটওয়্যারের সহায়তায় একজন অভিনেতা বা ক্যারেক্টারের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, চলাফেরা ও অবস্থার দৃশ্যাবলী সেন্সর বা ক্যামেরার সহায়তায় মোশন ক্যাপচার রেকর্ড করে কমপিউটারের সাহায্যে অ্যানিমেটেড রূপ দেয়া হয়। এর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, ক্যারেক্টারের বিভিন্ন অবস্থানের পোজ বা অঙ্গভঙ্গি এ প্রযুক্তিগত পদ্ধতিতে বেশ নিখুঁতভাবে প্রকাশিত হয়। এ কারণেই হলিউড চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গেমিং জগতে থ্রিডি সিজিআই মোশন ক্যাপচার ব্যবহার বেশ বেড়েছে ।
রবার্ট এবেল ও তার দল ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে মোশন ক্যাপচার নিয়ে যে চেষ্টা শুরু করেছিলেন, সেই পথেই পরবর্তী সময় ‘হিউমেন মোশন’-এর ব্যবহার চলচ্চিত্রে শুরু এবং হলিউড চলচ্চিত্রে এখন সিজিআইয়ের ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। হলিউড নির্মাতা জেমস ক্যামেরন তার ‘অ্যাভাটার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে এ প্রযুক্তির সফল কার্যক্রম চালান। হলিউডের ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ চলচ্চিত্রে ১৯৯৫ সালে যে স্বল্প পরিসরে মোশন ক্যাপচারের ব্যবহার শুরু হয়, তা থেকে দুই দশক সময় পেরিয়ে গেছে এবং আরও আধুনিক হয়েছে সিজিআই মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন।
মোশন ক্যাপচারের ধরন
মোশন ক্যাপচার দুই ধরনের- মার্কারভিত্তিক মোশন ক্যাপচার ও মার্কারলেস মোশন ক্যাপচার।
মার্কারভিত্তিক মোশন ক্যাপচার
বেশ কয়েক ধরনের মার্কারভিত্তিক মোশন ক্যাপচার সিস্টেম রয়েছে। মার্কার বা সেন্সরগুলোকে ক্যারেক্টার বা অভিনেতার সাথে সংযুক্ত করে সেই ক্যারেক্টারের গতিময় অবস্থানসমূহকে রেকর্ড করা হয়।
জনপ্রিয় কিছু মার্কারভিত্তিক মোশন ক্যাপচার সিস্টেম
* অ্যাকোয়েস্টিক সিস্টেম।
* মেকানিক্যাল সিস্টেম।
* ম্যাগনেটিক সিস্টেম।
* অপটিক্যাল সিস্টেম।
অ্যাকোয়েস্টিক সিস্টেম
সাউন্ড ট্রান্সমিটারের একটি সেট এ পদ্ধতিতে ক্যারেক্টার বা অভিনেতার সাথে সম্পর্কিত করা হয়, যেখানে তিনটি রিসেপটর স্থাপিত থাকে। এখানে এমিটারগুলো সক্রিয় থাকে ক্রমাগতভাবে ক্যারেক্টারের বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি তৈরিতে, যা রিসেপটর গ্রহণ করে এবং এমিটার ত্রিমাত্রিক অবস্থায় অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহার হয়। প্রতিটি ট্রান্সমিটার অবস্থা নির্ণয় করে ডাটার ব্যবহার, সময়ের পার্থক্য, অর্থাৎ শব্দ বের হওয়া ও পরিবেশে ভ্রমণের গতিময়তা দিয়ে। এ পদ্ধতির কিছু সমস্যা আছে, তাৎক্ষণিকভাবে ডাটার বিস্তারিত সঠিক তথ্য দেয়া এর পক্ষে কঠিন এবং এতে অ-তরল প্রকৃতির অথবা খুব বেশি তরল নয় এমন উপভোগ্যহীন অবস্থা তৈরি করে। এ পদ্ধতিতে আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এটি ক্যারেক্টার বা অভিনেতার স্বাধীনভাবে চলাচলের অবস্থাকে বাধা দেয়। এ পদ্ধতিতে প্রকৃতপক্ষে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা গুণগত মানসম্পন্ন অ্যানিমেশন তৈরিতে বাধা দেয়। তবুও মেটালিক ও অপটিক্যাল সিস্টেমের কিছু সমস্যা এখানে নেই।
মেকানিক্যাল সিস্টেম
মেকানিক্যাল সিস্টেমে যান্ত্রিক উপায়ে ক্যারেক্টার বা অভিনেতার গতিময় অবস্থানকে ক্যাপচার বা ধারণ করা হয়। মেকানিক্যাল মোশন ক্যাপচার পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা এ সিস্টেমকে অনেকের কাছে বেশ আকর্ষণীয় করেছে। এর সুবিধা হচ্ছে এতে ইন্টারফেস আছে, যা স্টপ মোশন অ্যানিমেশনের অনুরূপ এবং চলচ্চিত্র শিল্পে এ প্রযুক্তি বেশি জনপ্রিয় এবং বেশ ব্যবহার হতে শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির একটি ভালো দিক হচ্ছে, এতে অবাঞ্ছিত প্রতিচ্ছবি এবং চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে প্রভাবিত হয় না। এ পদ্ধতি ব্যবহার কিছুটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয় হলেও এতে মোশন ক্যাপচার করে অ্যানিমেশন বেশ আকর্ষণীয়।
ম্যাগনেটিক সিস্টেম
রিসেপটরের একটি সেট ক্যারেক্টার বা অভিনেতার সাথে স্থাপন করা থাকে, ক্যারেক্টারের বিভিন্ন গতিময় অবস্থান ও সময়ের সাথে পরিবর্তন সবকিছু একটি অ্যান্টিনার মাধ্যমে সম্পর্কিত থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
ম্যাগনেটিক সিস্টেম খুব ব্যয়বহুল নয়, মোশন ক্যাপচারের অন্য সিস্টেমগুলোর সাথে তুলনা করা হলে এবং ডাটা গ্রহণ ও প্রসেস পদ্ধতি খুব সহজতর এই সিস্টেমে। তথ্য অনেক সঠিক দিয়ে থাকে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১০০ ফ্রেম। দ্বিতীয়ত, ম্যাগনেটিক সিস্টেম সাধারণ মুভমেন্ট ক্যাপচারের জন্য সঠিক। এ সিস্টেমের অসুবিধাসমূহ হচ্ছে, এতে অনেক ক্যাবল আছে, যা অ্যান্টিনার সাথে কানেক্টেডভাবে কাজ করে এবং এটি অভিনেতার স্বাধীনভাবে চলার গতি-প্রকৃতিতে বেশ সমস্যা করে।
অপটিক্যাল সিস্টেম
অপটিক্যাল মোশন ক্যাপচার সিস্টেমে একজন অভিনেতা বা ক্যারেক্টার বিশেষ ডিজাইনের পোশাক পরে থাকে, যা আচ্ছাদিত থাকে রিফ্লেক্টর দিয়ে ও মূল বিষয়বস্ত্ততে স্থাপিত থাকে। এরপর হাই রেজ্যুলেশনের ক্যামেরাসমূহ কৌশলগতভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী স্থাপিত থাকে, যাতে ক্যারেক্টারে মুভমেন্টসমূহ ট্র্যাক করতে পারে। প্রতিটি ক্যামেরা দ্বিমাত্রিক অবস্থান তৈরি করে প্রতিটি রিফ্লেক্টরের জন্য এবং একটি শ্রেণীবদ্ধ স্টেপ রাখে। পরবর্তী সময়ে সফটওয়্যারসমূহ ব্যবহার হয় ডাটা নিরীক্ষণের জন্য, যা বিভিন্ন ক্যামেরার সহায়তায় ক্যাপচার বা গ্রহণ করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক অবস্থান নির্ণয়ে। এ সিস্টেম অনেক ব্যয়বহুল একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া, কারণ এতে অনেক ব্যয়বহুল ক্যামেরাসমূহ ও সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। এ সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে দ্রুত জিমন্যাস্টিক ও মার্শাল আর্টের মতো দ্রুততাসম্পন্ন গতিময় মুভমেন্টগুলো ক্যাপচার বা গ্রহণ করা যায় এবং এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের ক্যাবল বা জায়গার সীমাবদ্ধতার বিষয় নেই। অপরদিকে বেশ কিছু সমস্যাও আছে এই সিস্টেমে, কিছু ট্রান্সমিটার বিশেষ করে ছোট বস্ত্তসমূহ নিকট সম্পর্কিত অবস্থাসমূহ মাঝে মাঝে অপ্রকাশিত থাকে। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব অতিরিক্ত আরও কিছু ক্যামেরা সংযোজনে।
সমস্যা হচ্ছে ‘সিপিইউর’। এতে সব কাজের ট্র্যাকিং প্রসেসিং করতে বেশ সময় ব্যয় হয়। বেশ কিছু জটিল বিষয় এতে বিদ্যমান রয়েছে ও সরাসরিভাবে এটি ক্যামেরার রেজ্যুলেশন দিয়ে প্রভাবিত হয়। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়গুলো বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার, ক্যামেরাগুলো অনেক ব্যয়বহুল হয় এবং এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।
অ্যাক্টিভ মার্কার
এ ধরনের অপটিক্যাল মোশন ক্যাপচারে এলইডি ব্যবহার হয় এবং এতে হাই রেজ্যুলেশন ক্যামেরা থেকে নির্গত প্রতিফলিত আলোর পরিবর্তে নিজস্ব এলইডি আলো নির্গত করে, যা ক্ষুদ্র ব্যাটারি দিয়ে পরিচালিত হয়।
প্যাসিভ মার্কার
প্যাসিভ মার্কার অ্যাক্টিভ মার্কারের চেয়ে ভিন্নতর। এটি বিপরীতমুখী-প্রতিবিম্বিত উপাদানের সাথে আচ্ছাদিত থাকে, যাতে আলো প্রতিফলিত হয়ে ক্যামেরায় ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রে শুধু মার্কার চিহ্নিত হয়, কিন্তু অন্য উপাদান উপেক্ষা করে থাকে। একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রতিফলিত বস্ত্তর সহায়তায় অবস্থানের ব্যাস নির্ণয় করে। সাধারণত এ পদ্ধতিতে ৬ থেকে ২৪টি ক্যামেরা যুক্ত থাকে, তবে তিনশ’র বেশি ক্যামেরাসহ বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যাতে জটিল বা বিভ্রামিত্মমূলক ক্যাপচার সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা যায়।
মার্কারলেস মোশন ক্যাপচার
মার্কারলেস মোশন ক্যাপচার টেকনিক ক্রমাগতভাবে উন্নত হচ্ছে গবেষণা কাজের মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে অভিনেতা বা ক্যারেক্টারের মুভমেন্ট ট্র্যাক করার জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। অভিনেতার মুভমেন্ট একাধিক ভিডিও স্ট্রিমে রেকর্ড হয় এবং কমপিউটার ভিশন এলগরিদমসমূহ পর্যবেক্ষণ করে স্ট্রিমগুলো, মানুষের গঠন বুঝতে এবং বিষয়গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন অংশের ট্র্যাকিং পর্যবেক্ষণ করায়। মোশন ক্যাপচারের পুরো বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হয় সফটওয়্যারের সহায়তায় ও বিভিন্ন ভুলসমূহ ঠিক করা হয়