• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > টু-ডি অ্যানিমেশন জগৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অ্যানিমেশন
তথ্যসূত্র:
মাল্টিমিডিয়া
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
টু-ডি অ্যানিমেশন জগৎ
ষোড়শ শতাব্দী থেকে মূলত অ্যানিমেশনের সুদৃঢ় একটা ক্রমবিকাশ শুরু হয়। ১৬৫০ সালে ইতালির ভেনিসের নাগরিক জিওভান্নি ফন্টানা একটি অশোধিত লেন্স ও একটি মোমবাতির আলোর অভিক্ষেপকে ‘ম্যাজিক ল্যান্টার্ন’ কৌশল ব্যবহার করে যে অ্যানিমেশনের ব্যবহার দেখান, তা ধীরে ধীরে মানুষের চিম্মার জগতে অ্যানিমেশন নিয়ে একটা পরিবর্তন শুরু করে, যদিও তার উদ্ভাবন নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে। আমাদের চারপাশের জগৎটায় অ্যানিমেশন না থেকেও যেন অ্যানিমেশনের আধিপত্য চলছে। টিভি থেকে শুরু করে কমপিউটার, ভিডিও গেম কিংবা চলচ্চিত্রে বর্তমান সময়ে বিশাল এক পরিসরে মিশে আছে বিনোদনের এক মাধ্যম হিসেবে অ্যানিমেশন।
টু-ডি অ্যানিমেশন
টু-ডি অ্যানিমেশন সবচেয়ে পুরনো অ্যানিমেশন পদ্ধতি। কোনো একটি চরিত্র বা বস্ত্তর বিভিন্ন ধাপের অবস্থান একের পর এক ছবি এঁকে সাজিয়ে এতে পূর্ণাঙ্গ অ্যানিমেশনের একটি রূপ দেয়া হয়। জনপ্রিয় অ্যানিমেশন ‘মিকি মাউস’ চরিত্রটি এ পদ্ধতির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপদান করা হয়, যা এখনও অ্যানিমেশনপ্রেমীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় ও আলোচিত একটি চরিত্র।
টু-ডি অ্যানিমেশন হচ্ছে দ্বিমাত্রিক বিষয়বস্ত্ত, যেখানে থ্রি-ডি অ্যানিমেশনের ত্রিমাত্রিক বিষয়কে বা চরিত্র তৈরিতে বিভিন্ন অ্যানিমেশন সফটওয়্যারের সাহায্যে চলচ্চিত্রে অসংখ্য পলিগনের ব্যবহার করা হয়। ‘পিক্সার’ মতো অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠানগুলো থ্রি-ডি অ্যানিমেশনে যেখানে আশপাশের পরিবেশ ও বিষয়বস্ত্ত দর্শকের কাছে তুলে ধরছে প্রাণবন্তভাবে ভিন্ন আমেজে, সেখানে টু-ডি অ্যানিমেশনের আমেজ অন্যরকম। এতে বিভিন্ন দৃশ্যায়নের ছবিগুলো ফ্রেম ধরে অাঁকা থাকে এবং অ্যানিমেশনে রূপ দেয়া হয়।
টু-ডি অ্যানিমেশনের পুরনো সেই চিরাচরিত রূপ বর্তমান সময়ে এসে ভিন্নতা পেয়েছে। এখন আগের মতো কাগজ-পেন্সিলের সাহায্যে ফ্রেম ধরে চরিত্রগুলোর বিভিন্ন অবস্থানকে তুলে ধরা হয় না। বর্তমান সময়ে যারা টু-ডি অ্যানিমেশন করেন, সেই অ্যানিমেটরেরা এখন বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে অ্যানিমেশন করে বিষয়বস্ত্তকে তুলে ধরছেন। অর্থাৎ টু-ডি অ্যানিমেশনেও রয়েছে এখন অনেক আধুনিকতার নান্দনিক স্পর্শ।
টু-ডি অ্যানিমেশন টুল
অর্ধশতাব্দী আগেও যেখানে টু-ডি অ্যানিমেশন করার ক্ষেত্রে কাগজ-পেন্সিলের বিকল্প কিছু ছিল না, সেখানে এখন অ্যানিমেটরেরা নিত্যনতুন টু-ডি অ্যানিমেশনের কাজ করতে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন ধরনের টুল কিংবা সফটওয়্যার। একজন অ্যানিমেটর এখন খুব সহজে কমপিউটারের সামনে বসে বিভিন্ন ধরনের টুলের সহায়তায় অল্প সময়ে তার সৃজনশীলতায় নান্দনিক টু-ডি অ্যানিমেশন নির্মাণ করছেন।
অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ
অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্রায় দেড় যুগ সময় ধরে সবচেয়ে বেশি বিশদভাবে টু-ডি অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। স্বল্প পরিসরের গেম, অ্যানিমেশন কিংবা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে অধিক ব্যবহার হয় ফ্ল্যাশ। নতুন অ্যানিমেটরদের জন্য অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ চমৎকার ও সহজবোধ্য টুল। এর মাধ্যমে একজন মানুষ তার দক্ষতা অনুযায়ী সুন্দর প্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারে।
টুনবুম স্টুডিও
বেশকিছু দারুণ ফিচার নিয়ে টুনবুম স্টুডিওর কাজ। এটি নতুন অ্যানিমেশন শুরু করা অ্যানিমেটরদের জন্য চমৎকারভাবে কাজগুলোকে অনেক সহজ করেছে। টুইন জেনারেশন, স্পেশাল ইফেক্ট, লিপ সিঙ্কিংসহ বেশকিছু ফিচার এতে একীভূত রয়েছে।
ক্রিয়েটুন
ক্রিয়েটুন শক্তিশালী একটি ফ্রি অ্যানিমেশন সফটওয়্যার। শুধু উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এটি ব্যবহার করা যায়।
সিনফিগ
সিনফিগ টু-ডি অ্যানিমেটরদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি একটি ওপেনসোর্সভিত্তিক প্রোগ্রাম। এটি বেশ শক্তিশালী একটি টুল। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত উন্নত চলচ্চিত্রের ধাঁচের মোশন গ্রাফিক্স করা সম্ভব। উইন্ডোজ ও লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমে খুব সহজে এতে উন্নতমানের টু-ডি অ্যানিমেশন করা যায়। ওপেনসোর্সভিত্তিক হওয়াতে সিনফিগ টুলে আসছে প্রতিনিয়ত নতুন সংস্করণ।
অ্যানিমেট
টুনবুমের একটি চমৎকার অ্যাপ ‘অ্যানিমেট’। ক্লাসিক ফ্রেম ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্রেম অ্যানিমেশনভিত্তিক এই টু-ডি অ্যানিমেশন অ্যাপ। অ্যানিমেট ব্যবহার করা অনেক সহজ। এতে বেশকিছু অ্যাডভান্স ফিচার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ইন্টারেক্টিভ ক্যামেরা টুল। এনিমেট অনেক ব্যবহার করা হয় এবং এটি টু-ডি অ্যানিমেশনের কাজ অনেক সহজ ও সুন্দর করে।
পেন্সিল টু-ডি
ওপেনসোর্সভিত্তিক একটি ফ্রি অ্যানিমেশন সফটওয়্যার ‘পেন্সিল টু-ডি’। এটি ম্যাক ওএসএক্স, উইন্ডোজ ও লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে এবং এতে সহজে অাঁকা ও অ্যানিমেশন করা যায়। এতে প্রফেশনাল কাজ তেমন একটা করা যায় না এবং এটি ফিচার লেন্থ অ্যানিমেশনের জন্য উপযুক্ত নয়। নতুন অ্যানিমেশন শিখতে আগ্রহীদের জন্য এটি বেসিক ওপেনসোর্সভিত্তিক একটি সফটওয়্যার।
স্টোরিবোর্ড
অ্যানিমেশন সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি ধাপ হচ্ছে স্টোরিবোর্ডিং, যা একটি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বা মুভি তৈরি করার ক্ষেত্রে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘স্টোরিবোর্ড’ হচ্ছে সেরকম একটি প্রয়োজনীয় অনলাইন স্টোরিবোর্ডিং তৈরির সফটওয়্যার, যা দিয়ে সহজেই অ্যানিমেশন তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম ধাপটির কাজ করা যায়। এটি খুব সহজে টু-ডি অ্যানিমেশন তৈরির আইডিয়াকে চিত্রে প্রাথমিক একটা অবস্থা প্রদর্শন করে থাকে। টু-ডি অ্যানিমেশনের জগতে অন্যতম একটি নাম ‘টুনবুম’ এবং ‘স্টোরিবোর্ড’ হচ্ছে টুনবুমের একটি সৃষ্টি।
টু-ডি অ্যানিমেশন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ
টু-ডি অ্যানিমেটেড একটি মুভি তৈরি করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়। প্রতিটি ধাপের সুন্দর ও নান্দনিক সমষ্টিগত সমন্বয়ে গড়ে ওঠে চমৎকার একটি টু-ডি এনিমেশন।
গল্প, স্টোরিবোর্ড, অডিও, ভিজ্যুয়াল ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাকশন এবং পোস্ট প্রোডাকশন- এ ধাপগুলোর পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত অবস্থা নিয়ে নির্মিত হয় একটি সম্পূর্ণ টু-ডি অ্যানিমেশন।
গল্প কিংবা আইডিয়া তৈরি হয়ে গেলে সেই গল্প নিয়ে আবার চিম্মা করতে হয়। আর এটাই একটি অ্যানিমেশন তৈরির প্রথম স্তর। কারণ, এই স্তর থেকেই একজন অ্যানিমেটর ও মডেল ডেভেলপার ধারণা পান যে তাকে আসলে কোন কোন চরিত্র কিংবা বস্ত্ত রাখতে হবে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে। পরিবেশটা কেমন হবে, আর এরপরই স্টোরিবোর্ড করে গল্পটিকে কাগজ-পেন্সিলে প্রাথমিকভাবে চিত্রায়ন করে পর্দার সামনে তৈরি করার আগে একটা প্রাথমিক ধারণা-রূপ তুলে ধরা হয়। গল্প, স্টোরিবোর্ডে যে দৃশ্য উঠে আসে, সেই দৃশ্যকে রূপ দিতে হলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বস্ত্ত কিংবা চরিত্র সব বিষয়কে একটা অডিওর আবেশে রাখতে হয়, যা একটি অ্যানিমেশনের গল্পকে পর্দায় অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত অবস্থা দেয়। আর এজন্যই শব্দের ব্যবহার হয়। গল্প ও স্টোরিবোর্ড হয়ে গেলে শব্দ তৈরির কাজ করতে হয় পুরো অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের টিমকে। এর পরবর্তী ধাপে আসে চলচ্চিত্রের পরিবেশ, বস্ত্ত কিংবা চরিত্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং গল্পের সাথে মেসেজটা মানুষের কাছে কীভাবে যাবে তা চিম্মা করে ও মানুষ কীভাবে নেবে অ্যানিমেশনটি, সেই কথা ধরে সবকিছু তৈরি করতে হবে এবং প্রোডাকশনটি পূর্ণাঙ্গ একটা অবস্থায় আনার কাজ করতে হবে। চরিত্র এবং এর চলমান অবস্থা সবকিছু মিলেই একটা অ্যানিমেশন পূর্ণাঙ্গ অ্যানিমেশন হিসেবে রূপ নিতে পারে। আর এভাবেই টু-ডি অ্যানিমেশনগুলোতে উঠে আসতে থাকে একটা কাহিনী। এরপর পোস্ট প্রোডাকশন, আরও বেশি প্রাণবন্ত রূপ নিশ্চিত করা এবং অ্যানিমেশনপ্রেমীদের কাছে সেটার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা।
টু-ডি অ্যানিমেটেড আলোচিত কিছু চলচ্চিত্র
০১. দ্য জঙ্গল বুক। ০২. মুলান। ০৩. দ্য লায়ন কিং। ০৪. টারজান। ০৫. আলাদিন। ০৬. স্পিরিটেড অ্যাওয়ে। ০৭. দ্য আয়রন জায়ান্ট। ০৮. আকিরা


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস