• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন জগৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অ্যানিমেশন
তথ্যসূত্র:
মাল্টিমিডিয়া
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন জগৎ
‘মোশন ক্যাপচার’ আধুনিক অ্যানিমেশন জগতের উদ্ভাবিত একটি জনপ্রিয় অ্যানিমেশন পন্থা, যে পদ্ধতিতে মূলত একজন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিকালীন সময়ের মুহূর্তকে রেকর্ড করে তাকে ডিজিটাল মডেলের অ্যানিমেশনে রূপ দেয়া হয়। বিনোদন, গেম, রোবটিক্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বর্তমান সময়ে কমপিউটার প্রযুক্তির সহায়তায় থ্রিডি মোশন ক্যাপচারে অ্যানিমেশন ব্যবহার হয়। ‘মোশন ক্যাপচার’ অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণে গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যারেক্টার মডেলের অ্যানিমেশন রূপ নেয়া হয়, বিভিন্ন মানুষকে তাদের অভিনয়ের বিভিন্ন রূপে ব্যবহার করে এবং এভাবেই ক্যারেক্টারের মোশন তথ্য নিয়ে ডিজিটাল ক্যারেক্টার মডেল অ্যানিমেশন করা হয় থ্রিডি মোশন ক্যাপচারে কমপিউটারের সহায়তায়। এভাবেই একেকটি চরিত্রের প্রয়োজনে মুখভঙ্গি, আঙুলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের গতি নিয়েই তৈরি ‘থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন’।
থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশন
লাইভ ক্যারেক্টারের বিভিন্ন মোশন ক্যাপচার বিভিন্ন সময়ের কি-ফ্রেমে লাইভ মোশন রেকর্ড করে একেকটি থ্রিডি অ্যানিমেশনে রূপ দেয়া হয়। মূলত এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে জীবমত্ম বা লাইভ অভিব্যক্তিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিগত অভিব্যক্তিতে রূপদান করা হয়। ক্যাপচার বিষয়বস্ত্ত বিভিন্ন রকম হতে পারে, অর্থাৎ পৃথিবীতে বাসত্মব উপস্থিতি ও গতি আছে এ রকম সবকিছুই এতে বিদ্যমান হতে পারে। কি-ফ্রেমগুলো হচ্ছে বিভিন্ন স্পেস বা জায়গা, যা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্ত্তকে বিভিন্ন সময়ে তাদের অবস্থানের গতিকে সুচারম্নভাবে প্রদর্শন করে থাকে। এই কি-ফ্রেম পয়েন্টগুলো হতে ‘প্রাইভেট বা বিষয়বস্ত্ত’ অথবা এর বিভিন্ন রিগ বা জয়েন্টের অংশ এবং এই স্পর্শ করা অংশগুলো সংযুক্ত থাকে বিভিন্ন সেন্সর দিয়ে। সেন্সর হচ্ছে সেই জিনিস, যা প্রাণীর আবেগ, অনুভূতি কিংবা গতির বিভিন্ন মুহূর্তকে পৌঁছে দেয় ডিভাইসে, যা দিয়ে কমপিউটারের মাধ্যমে মোশন ক্যাপচার করে অ্যানিমেশন রূপে। যখন কথা বলে, তখন ফেসিয়াল পরিবর্তন হয়। আবার যখন শরীরের অন্য অংশের পরিবর্তন হয়, তখন সে অনুযায়ী মোশন ক্যাপচারের পরিবর্তন ঘটে। মোট কথা, মোশন ক্যাপচার হচ্ছে অনেকগুলো ডাটার সমষ্টি, যা বস্ত্ত বা প্রাণীর গতি বা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে চূড়ামত্মভাবে থ্রিডি ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
মোশন ক্যাপচার করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যামেরা ব্যবহার করে, যা বিষয়বস্ত্তর বিভিন্ন অভিব্যক্তি বা অঙ্গভঙ্গিকে ডিজিটালাইজ করে ক্যামেরাবন্দীর মাধ্যমে এবং অভিব্যক্তির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কি-ফ্রেম হিসেবে যুক্ত হয় অ্যানিমেশনে।
হলিউডের ‘অ্যাভাটার’ চলচ্চিত্রের মোশন ক্যাপচার
হলিউড চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন তার ‘অ্যাভাটার’ চলচ্চিত্রে মোশন ক্যাপচার পদ্ধতি ব্যবহার করে মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশনের জগতে এক অভাবনীয় ছাপ রাখেন। অসাধারণভাবে ছবিতে নির্মাতা দেখাতে সক্ষম হন কীভাবে মোশন ক্যাপচারে মানুষের রাখা অভিব্যক্তির সাথে অ্যানিমেশনের একীভূত করতে হয়। পূর্বেকার মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রগুলোতে মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো, যদিও সেই চলচ্চিত্রগুলোতে পোস্ট প্রোডাকশনে গিয়ে অ্যানিমেটরদের সহায়তায় আলাদাভাবে ফেসিয়াল মুভমেন্ট সংযুক্ত করতে হতো ভার্চুয়াল থ্রিডি রূপ দেয়ার সময়।
রোটোস্কোপি
১৯৩৭ সালে ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিও ‘রোটোস্কোপি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডরফ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। পরে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ১৯৭৮ সালে আমেরিকান ফ্যান্টাসিনির্ভর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ নির্মাণ করেন নির্মাতা রিলফ বক্সি। ‘রোটোস্কোপি’ হচ্ছে একটি অ্যানিমেশন পদ্ধতি, যে পদ্ধতিতে অ্যানিমেটরেরা ফ্রেম টু ফ্রেম গতিময় বা মোশন ধরনের ছবির ফুটেজ ব্যবহার করে রিয়েলিস্টিক অ্যানিমেশন নির্মাণে। বর্তমান সময়ে অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উৎকর্ষের ধারায় সেই রূপে পরিবর্তন এসে মোশন ক্যাপচার অ্যানিমেশনের শুরম্ন। ‘রোটোস্কোপি’ ডিভাইস ১৯১৫ সালে কার্টুনিস্ট ম্যাক্স ফ্লিচার উদ্ভাবন করেন, যাতে গতিময় কার্টুন ফিল্ম তৈরি করা সহজতর হয়। ডিভাইসটি চলমান ফিল্মে সাহায্যের জন্য ব্যবহার হয়, যাতে কার্টুনিস্টেরা সহজে লাইট টেবিলের ওপর কাগজ রেখে ফ্রেম ধরে ধরে ছবি অাঁকতে পারেন। প্রথম রোটোস্কোপি পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা কার্টুন ছিল ‘কোকো দ্য ক্লাউন’। ‘রোটোস্কোপি’র উদ্ভাবক ম্যাক্স ফ্লিচারের ভাই ডেভ এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথম ‘কোকো’র ক্যারেক্টার তৈরি করেন। এ পদ্ধতির জনপ্রিয়তা পেতে অনেক সময় লাগে। যদিও এ পদ্ধতি মোশনে অল্পকিছু দৃশ্যের জন্য কখনও কখনও প্রয়োজন হতে পারে এবং আধুনিক মোশন থ্রিডি অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ফলে মোশন অ্যানিমেশন এখন অধিকতর জনপ্রিয়।
মোশন ক্যাপচার ব্যবহারের শুরম্ন
১৯৭০ দশকের শেষের দিকে মোশন ক্যাপচার প্রথমত ব্যবহার শুরম্ন। ১৯৮০ সালের শুরম্নর দিকে কমপিউটার গ্রাফিক্সের মোশন ক্যাপচার ব্যবহার হয় আমেরিকার ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)’, ‘নিউইয়র্ক ইনস্টিটিটিউট অব টেকনোলোজি’র বিভিন্ন গবেষণাকার্যে। মূলত ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন ফিল্ম প্রোডাকশনে এর ব্যবহার শুরম্ন হয়। ১৯৮৪ সালের শেষের দিকে রবার্ট এবেল ‘হিউম্যান মোশন’-এর গুরম্নত্বের কথা বিশেষভাবে বলেন। তিনি বলেন, আমরা এখনও মানুষের মোশন নিয়ে কাজ করিনি। যদিও রবার্ট এবেল ও তার টিম ১৯৬০-এর দশকের শুরম্ন থেকে বিভিন্ন রকম মোশন নিয়ে কাজ করছিলেন, যেখানে তারা মোশন কন্ট্রোল করে থাকতেন ক্যামেরার সাহায্যে। ১৯৭০ সালের শুরম্নর দিকে এসে তারা সফল হন এবং বুঝতে পারেন, সময় এসেছে ‘হিউম্যান মোশন’ নিয়ে কাজ করার এবং সেই ধারাতেই নিজেদের তারা ধাবিত করেন। সেই প্রেক্ষাপটেই তিনি ও তার দল একজন নারীর একটি অভিনয় ক্যারেক্টারের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি বেশ কিছু ক্যামেরার সহায়তায় বিভিন্ন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নেন এবং সেই ফুটেজগুলো ব্যবহার করে তৈরি করেন ‘মোশন অ্যালগরিদম’।
প্রথম দিকে বায়ো-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের গতিবিজ্ঞানের জন্য মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভিডিও গেমস ‘হাইল্যান্ডার : দ্য লাস্ট অব দ্য ম্যাকলেডস’ ও ‘সোল বেস্নড’-এ মোশন ক্যাপচার অনস্ক্রিনে ব্যবহার হয় অঙ্গভঙ্গি অধিকতর বাসত্মব দেখানোর প্রয়াসে এবং এ ধারাবাহিকতায় পরে ‘দ্য লাস্ট অব আস’, ‘রাইজ অব দ্য টম্ব রাইডার’, ‘রেসিডেন্ট এভিল’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গেমে মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
অ্যানিমেটরেরা যখন নিজেরা ক্যারেক্টার মুভমেন্ট করান কমপিউটার ব্যবহার করে, তখন তারা রেফারেন্স হিসেবে ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করেন। ডিজিটাল অ্যানিমেশনে অ্যানিমেটরেরা কি-ফ্রেম ধরে কাজ করেন। কি-ফ্রেম হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তের মুভমেন্টের একেকটি ÿুদ্র অংশ। বিভিন্ন কি-ফ্রেমে মুভমেন্টের পজিশন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করতে অ্যানিমেটরেরা মোশন ক্যাপচার পদ্ধতি ব্যবহার করেন। গবেষক টম কার্লভেট এ ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেন। একটি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ালডো’ নামে ফেস ও বডি ক্যাপচার করে একটি ডিভাইস তৈরি করে। আমেরিকার ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র লেডনির্ভর ‘গ্রাফিক্যাল মেরিওনেট’-এর উন্নতি সাধন করে, যা প্রথম অপটিক্যাল মোশন ট্র্যাকিং সিস্টেমের একটি।
মোশন ক্যাপচার যেভাবে কাজ করে
মোশন ক্যাপচার একটি চরিত্রের মুভমেন্টকে ডিজিটাল চরিত্রে রূপামত্মর করে। এ পদ্ধতিতে ট্র্যাকিং ক্যামেরা ব্যবহার করে মেকানিক্যাল মোশন পরিমাপ করা হয়। ক্যাপচার স্যুট পরে এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ক্যারেক্টারের গতিময় পরিবর্তন ট্র্যাক করা হয়। গুগল প্রজেক্টে ‘ট্যাঙ্গো’ ম্যাপিং করতে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। অপটিক্যাল সিস্টেম ট্র্যাকিং মোশনের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে থ্রিডি মোশনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ট্র্যাকিং করে ও ক্যারেক্টারের বিভিন্ন মোশন বা গতিময় অবস্থানগুলোর ডাটা একীভূত করে। মার্কারবিহীন পদ্ধতিতে ম্যাচ মুভিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে অ্যালগরিদমগুলো ব্যবহার করা হয় ক্যারেক্টারের পোশাক ও নাকের মতো বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ট্র্যাক করায়। মোশন একবার ক্যাপচার হলে তখন সেই মোশন ম্যাপিং হয়ে যায় অ্যানিমেটেড ক্যারেক্টারের ভার্চুয়াল রূপে। এই অ্যানিমেশনে অটোডেস্কের ‘মোশন বিল্ডার’ সফটওয়্যার ব্যবহার হয় এবং এ কারণে অ্যানিমেটেড ক্যারেক্টারগুলো বাসত্মব জীবনের চরিত্রের মতো মনে হয়।
চলচ্চিত্রে প্রথম মোশন ক্যাপচার ক্যারেক্টার
হলিউড চলচ্চিত্র ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’-এর ‘গোলাম’ চরিত্রটি প্রথম মোশন ক্যাপচার ক্যারেক্টার লাইভ অ্যাকশনে ব্যবহার হয়। ১৯৯৫ সালে প্রথম মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার হয় হলিউড চলচ্চিত্র ‘ব্যাটম্যান ফর এভার’-এ। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন তার বিখ্যাত ‘টাইটানিক’ চলচ্চিত্রের ভিড়ের দৃশ্যগুলোয় ‘পারফরম্যান্স ক্যাপচার ফিগার’ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। জনপ্রিয় ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ চলচ্চিত্রতেও মোশন ক্যাপচার ব্যবহার হয়।
বিশ্ব চলচ্চিত্রে হলিউড চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তির ব্যাপকতা ঘটান তার নির্মিত ‘অ্যাভাটার’ চলচ্চিত্রে। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি অপেক্ষা করেছিলেন এই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক আয়ত্তে আনতে এবং এ বিষয়ে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন।
মোশন ক্যাপচারে ব্যবহার হওয়া কিছু সফটওয়্যার
* আইপিআই মোশন ক্যাপচার স্টুডিও এক্সপ্রেস।
* মোশন বিল্ডার।
* ভিকন বেস্নড মোকাপ সফটওয়্যার।
* দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব টিনটিন।
মোশন ক্যাপচারে ব্যবহার হওয়া কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র
* অ্যাভাটার।
* পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান।
* দ্য লর্ড অব দ্য রিংস।
* হ্যাপি ফিট।
* ডাউন অব দ্য পস্নানেট অব দ্য এপিস।
* দ্য হবিট : দ্য ডিসোলেশন অব স্ম্যাগ।
* দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব টিনটিন।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস