লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
প্রযুক্তি দিয়ে শীর্ষে যাবে পোশাক শিল্প
স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বাংলাদেশ ছিল কৃষিনির্ভর প্রান্তিক অর্থনীতির দেশ। তখন সোনালি অাঁশ খ্যাত পাটজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল ছাড়া কোনো রফতানি পণ্য ছিল না। সেই শুষ্কাবস্থা থেকে তিলে তিলে গড়ে ওঠা পোশাক শিল্প আজ বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে দেশের পোশাক খাতকে শ্রমিক অসমেত্মাষ ও অস্থিতিশীল বিশ্ববাজার মোকাবেলায় রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্প খাতকে মানবীয়, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাসত্মবায়নে যখন মেধানির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রযুক্তিকায়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তখন এই খাতটি বলতে গেলে পাদপ্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠছে। প্রযুক্তি লালনের বাইরে থেকে যাচ্ছে এ খাতের শ্রমিকেরা। অথচ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেশের পোশাক শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আয় বাড়াতে সহায়ক হবে, তাতে খাত-সংশিস্নষ্টরাও অনুধাবন করেন। কিন্তু তা প্রতিপালনে এখনও নেই যূথবদ্ধ কোনো উদ্যোগ। তাই টিকে থাকতে হলে এখনই এ খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বোদ্ধারা। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশের কারখানায় আগের চেয়ে আরও অটোমেশন ও তথ্য বিশেস্নষণ প্রয়োজন। এই খাতে বিশেষায়িত প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে শতকরা ৩-৪ ভাগ উৎপাদন খরচ কমানো যাবে। এটি সরকারের পোশাক শিল্প থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়তা করবে।
অবশ্য বিষয়টি অনুধাবন করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতোমধ্যেই কোনো কোনো উদ্যোক্তা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন। অনেকেই অর্ডার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিকোয়ারমেন্ট প্ল্যানিং, ডকুমেন্টারি ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট, সুইং প্রোডাকশন প্ল্যানিং উইথ টাইম অ্যান্ড অ্যাকশন, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, স্টোর ম্যানেজমেন্ট, কম্পোজিট নিট সেটআপ, ফেব্রিক্স অ্যান্ড কাট কন্ট্রোল, শপ ফ্লোর প্রোডাকশন কন্ট্রোল, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং, ফিক্সড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এগিয়ে রাখতে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। কারখানার পরিবেশ আধুনিকায়নের পাশাপাশি ডিজিটাল মনিটরিং ও অনলাইন মার্কেটিংয়ের দিকেও ঝুঁকছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। কাপড়, সুতা ও যন্ত্রপাতির পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও।
লক্ষ্য যখন পোশাক শিল্পে সারাবিশ্বে এক নম্বর স্থান করে নেয়ার, তখন এই উদ্যোগটা হওয়া চাই সমন্বিতভাবে। তা না হলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাত নিয়ে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তা দূরাশা হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্প থেকে আমরা ৩০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে থাকি। ২০২১ সালে আমরা এই খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে চাই। কিন্তু এ জন্য হাতে আছে মাত্র চার বছর। এই চার বছরে অতিরিক্ত ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে হলে এই শিল্পে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আর যন্ত্রপাতি হলেই সম্ভব হবে না। সফলতা পেতে প্রয়োজন হবে দক্ষ নজরদারি, মূল্যায়ন ও তাৎক্ষণিক বিশেস্নষণ সক্ষমতা। আর সে কাজটাই এখন সহজ করে দিচ্ছে প্রযুক্তি। আজকাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিল্পোদ্যোক্তারা পণ্যের ফরমায়েশ থেকে শুরু করে উৎপাদন, বিপণন ও বাজারে এর অবস্থান- সব তথ্যই খুব সহজে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন। এর ফলে পুরো ব্যবসায়ের যেকোনো তথ্য এক নিমিষেই পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতার তথ্য বিনিময়ের বাধাও দূর করেছে প্রযুক্তি। কিন্তু পোশাক শিল্পের এমন প্রযুক্তিকায়ন এখনও হাতেগোনাই বলা চলে। এর ওপর অনেকেই দেশের সফটওয়্যার ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এতে করে তাদের খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার ঝুঁকিও বাড়ে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশী সফটওয়্যার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন খাত-সংশিস্নষ্টরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সফটওয়্যার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উদ্যোক্তারা তাদের ওপর সবসময় আস্থা রাখতে পারছেন না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশে একটি সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সেবাদানের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশিস্নষ্টরা। একই সাথে পুঁজি ও অভিজ্ঞতার অপ্রাপ্যতা মেটাতে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর কনসোর্টিয়াম গঠনেরও তাগিদ রয়েছে তাদের।
পোশাক শিল্পের প্রযুক্তিকায়নে এক গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনস্থ গবেষণা প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান। এতে তিনি বলেছেন, উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষমতাকে বলা হয় উন্নয়নের ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন কাজ করে উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষ শ্রমশক্তি এই দুইয়ের সমন্বয়ে। আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি নেই, প্রযুক্তি আমদানিনির্ভর। তবে প্রযুক্তি আমদানি করলেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে না। প্রযুক্তির কার্যকারিতা নির্ভর করে তার প্রায়োগিক সাফল্যের ওপর।
তিনি আরও বলেছেন, জাপান ১৮৬৮ সালে মেইজি পুনর্বাসনের সময় প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ইউরোপের তুলনায় একশ’ বছর পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তারা প্রযুক্তি উদ্ভাবনে না গিয়ে আমদানি করা প্রযুক্তি আত্তীকরণ করে জাপানি পরিবেশে সফল প্রয়োগ ঘটায়। যার নাম দিয়েছিল পশ্চিমা প্রযুক্তি জাপানি উদ্দীপনা, অর্থাৎ Western Technology Japanese Spirit। এই কৌশল গ্রহণ করে মাত্র ৩০ বছরে শত বছর পিছিয়ে পড়া জাপান উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছেছিল। ঠিক অনেকটা একই কায়দায় না হলেও তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া গবেষণার মাধ্যমে উন্নত দেশের প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশকে শিল্পায়িত করেছে। সমাজজীবনে পোশাক শিল্পের আগমন ও বিস্তারের ব্যাপক প্রভাব স্বীকার্য হলেও একে বিপ্লব বলা অতিরঞ্জিত বই কিছু নয়। ইউরোপে সংঘটিত মাত্র কয়েক দশকের শিল্পবিপ্লব হাজার বছরের কৃষিভিত্তিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন সামন্তবাদী সমাজকে ওলটপালট করে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সমাজে পরিণত করেছে। তেমন কিছু বাংলাদেশে ঘটেনি। যদিও ইংল্যান্ডে বস্ত্রশিল্প দিয়েই বিপ্লব শুরু হয়েছিল। জন কের ফ্লাইং শাটল, জেমস হারগ্রিবসের স্পিনিং জেনি, রিচার্ড আকরাইটের ওয়াটার ফ্রেম, জেমস ওয়াটসনের স্টিম ইঞ্জিন, স্যামুয়েল ক্রম্পটনের পাওয়ার লুম- এসব যুগান্তকারী আবিষ্কার মানুষকে একদিকে যেমন দৈহিক শ্রম থেকে মুক্তি দিয়েছে, তেমনি মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে চেতনাকে নাড়া দিয়েছে, যা বাংলাদেশে বিরল। অপরদিকে হংকং, তাইওয়ান, কোরিয়াও বাংলাদেশের মতো পোশাক শিল্পের কোটা সুবিধা এবং নিশ্চিত বাজার সুবিধা পেয়ে শিল্পায়ন শুরু করে এবং তিন দশকেই উন্নত দেশের প্রযুক্তি আত্মস্থ করে দ্রুত শিল্পায়িত দেশে পরিণত হয়। এসব দেশের পরিবর্তনও অনেকটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মতোই। তবে বাংলাদেশ রফতানিমুখী পোশাক শিল্প তিন দশক আগে যাত্রা করলেও এসব দেশের মতো বিপ্লব বা বৈপ্লবিক পরিবর্তন কোনোটারই ধারে-কাছে যেতে পারেনি। কেননা অভিজ্ঞ উদ্যমী উদ্যোক্তা, দক্ষ প্রযুক্তি, শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে বাজার সৃষ্টি বা অনুসন্ধানের ঝুঁকি নিয়ে পোশাক শিল্প সৃষ্টি হয়নি। কোটা সুবিধা, সরকারি সহযোগিতা ও সস্তা শ্রমের কারণেই এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। অবশ্য ২০০৫ সালে কোটা উঠে যাওয়ার পর এই শিল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু কোটা উঠে যাওয়ার পর এই শিল্প টিকে আছে এবং উন্নত বিশ্বে মন্দার সময়ও রফতানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রমিকের সাথে উন্নত প্রযুক্তির সংশেস্নষ ঘটাতে না পাড়লে প্রবৃদ্ধি সঙ্কুচিত হয়ে যাবে।
এদিকে দেশের পোশাক কারখানাগুলো ধীরে ধীরে গ্রিন টেকনোলজি বা সবুজ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। পর্যায়ক্রমে সব কারখানা সবুজ প্রযুক্তির আওতায় আনতে সরকারকে স্বল্প সুদের ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করার আহবানের সাথে সাথে ক্রেতাদেরও সহায়তা চেয়েছেন তিনি। কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সরকার ও ক্রেতাদের সহায়তা চেয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা নির্মাণ বিষয়ে বিজিএমইএ ও কানাডিয়ান হাইকমিশন আয়োজিত এক সেমিনারে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানা মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকারকে অনুরোধ করছি, যাতে কারখানায় সবুজ প্রযুক্তি ও অবকাঠামো নির্মাণ ত্বরান্বিত হয়। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও অনুরোধ করব গ্রিন ট্যাগ লাগানো পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে। বিজিএমইএ’র অ্যাপারেল ক্লাবে গ্রিনিং আরএমজি এজ সিএসআর ইন বাংলাদেশ শীর্ষক ওই সেমিনারে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে পরিবেশ রক্ষা ও কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ বাড়ানো, নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তির সংযুক্তি, শ্রমিক দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেখানে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই দেশে ২৬টি পোশাক কারখানা এলইইডি কর্তৃক গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি পেয়েছে। আরও একশ’র বেশি কারখানা ইতোমধ্যেই ইউনাইটেড স্টেট গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলে (ইউএসজিবিসি) গ্রিন পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। পোশাক কারখানার মালিকদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। তারা ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছেন। সেমিনারে তৈরি পোশাক খাতকে (আরএমজি) পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার বিশেষ দিক তুলে ধরা হয়।
গ্রিন কারখানার মর্যাদা অর্জন করতে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন একেএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করেন রেড কনসাল্টিং বাংলাদেশের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অ্যালিস্টার স্কুট কুরি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শ্রমিক নিরাপত্তার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলেন রেড কনসাল্টিং বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিলিপ প্রক্টর। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপ-উপাচার্য আইয়ুব নবী খান বলেন, আরএমজি খাতকে পরিবেশসম্মত করতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম সাজাতে হবে। তাহলে এ বিষয়ে দক্ষ লোক তৈরি হবে। তাতে সবুজ প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটবে।
খাত-সংশিস্নষ্টদের এই অভিজ্ঞানের পরও আমাদের পোশাক শিল্প খাত এখনও সমন্বিত প্রযুক্তি ব্যবহারের বাইরে রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ এই খাতে প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার এবং এখানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে প্রযুক্তিশিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে এই খাতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে আসীন হতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির মেরুদ- খ্যাত পোশাক শিল্পের প্রযুক্তিকায়নে সামগ্রিক অর্থে এখনও মনোরঞ্জন পর্যায়ে রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে চাহিদা ও জোগান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে কথা হয় খাত-সংশিস্নষ্টদের সাথে।
প্রথমেই পোশাক শিল্প খাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির পরিসংখ্যান-বিষয়ক তথ্য জানতে চেয়েছিলাম বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের কাছে। প্রশ্ন রেখেছিলাম প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই খাতের প্রযুক্তিকায়ন কতটুকু হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন তা ইতিবাচক। তবে এ লক্ষ্য পূরণে আরও সময়ের প্রয়োজন। যে কৌশলের আলোকে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাসত্মবায়ন করতে হলে উদ্যোক্তাদের এর সাথে সংশিস্নষ্ট করতে হবে। এ জন্য অতিসত্বর একটি কৌশলপত্র তৈরি করা দরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তাই উদ্যোক্তারা তাদের ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে যতটুকু, ততটুকু প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এই প্রযুক্তি তাদের শ্রম ব্যয় কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কতটুকু সহায়ক- এ বিষয়ে তাদের অনেকেরই ধারণা নেই। ফলে পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত প্রযুক্তিতে অর্জিত আয় নিয়ে কোনো গবেষণাও এ পর্যন্ত হয়নি। তাই এ বিষয়ে তাদের ততটা আগ্রহ থাকার কথা নয়। সিপিডি থেকে ইতোমধ্যেই পোশাক শিল্পের ওপর আমরা একটি নিবিড় গবেষণা করতে যাচ্ছি। এই খাতের ৪০০ কারখানায় জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এখানে সরাসরি প্রযুক্তিকায়নের মূল্যায়ন বিষয়টি না থাকলেও আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক মূল্যায়ন ও লিঙ্গ সমতায় প্রযুক্তির সংশেস্নষের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব।
পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পোশাক শিল্পে প্রযুক্তিকায়ন বা অটোমেশনে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করার ওপর পরামর্শ দেন এই বিদগ্ধ গবেষক। তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই এখন প্রযুক্তিবান্ধব। ২০০০-০৫ সালের তুলনায় তারা এখন ফ্যাশননির্ভর হলেও কারখানায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে পোশাকের নকশা, শ্রমিক উপস্থিতি, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পর্যায়ে তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এর ফলে ২০০৫-১২ সালে গড়পড়তা তাদের ৭-১০ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে। কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এই খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আইপিভি৬ সমর্থিত মেশিনারিজ ব্যবহার অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিবান্ধব মূলধনী বিনিয়োগে সরকার উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রণোদনা দিতে পারে। রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানি, পণ্য ফরমায়েশ, সরবরাহ এবং শুল্ক ও কর প্রদান ব্যবস্থা অনলাইননির্ভর করা যেতে পারে। শ্রমিকের মজুরি প্রদানেও প্রযুক্তি ব্যবহার করা এখন আবশ্যক হয়ে গেছে।
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, কারখানার উৎপাদন লাইন অনুযায়ী মানবসম্পদের সাথে প্রযুক্তির ব্যবহারে সমন্বয়ের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তির অতি ব্যবহার শ্রমিক আন্দোলন-অসমেত্মাষ বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই কারখানায় ব্যবহৃত সিসি ক্যামেরা তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত অধিকার রক্ষার মাধ্যমে এই ভীতি দূর করতে হবে। কেননা, ভীতি শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কমায়। অতিমাত্রায় নজরদারির কারণে তারা নিজেদের অনিরাপদ মনে করে।
খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেমের কথার প্রসঙ্গ নিয়েই কথা হয় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ফজলুল হকের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ওয়্যারহাউস থেকে ই-মেইল সব জায়গায়ই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। অনলাইনে ডিজাইন হচ্ছে। হিসাব সংরক্ষণ, হাজিরা, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এখন আর এইচআর সফটওয়্যারে আমরা বসে নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ইআরপি ব্যবহার করছে। আমরা প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির সাথেই থাকতে চেষ্টা করছি। অথচ দেশের প্রধান খাত হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এই খাতের প্রযুক্তিকায়নে প্রকল্পভিত্তিক কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমরা নিজেরা নিজেরাই যতটুকু করেছি। আমাদের অনেকেই এখনও আইপিভি৬ বিষয়ে সচেতন নয়। কীভাবে আমরা ইন্টারনেট অব থিংসের সাথে এই শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে পারি, সে বিষয়ে টেকসই উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
তিনি বলেন, শ্রমিকেরা পোশাক শিল্পের প্রাণ। তাই তাদেরকে প্রযুক্তিসেবার মধ্যে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু এখানে নিয়োজিত কর্মীদের প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তোলা সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ফজলুল হক বলেন, পোশাক শিল্পকে পুরোপুরি প্রযুক্তিকায়ন করার জন্য সরকারকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। সফটওয়্যার ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে হবে। দুইপক্ষকে নিয়ে একসাথে বসে বিদ্যমান দূরত্ব ঘোচাতে হবে। দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে আগামীর কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক বংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হলেও এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস ফোকাস সফটওয়্যার তৈরি হয়নি। আমাদের ডেভেলপারেরাও এ খাতে ফোকাস করছেন কম। আবার কোম্পানি পর্যায়ে এই খাতে যারা কাজ করেন, তাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপের প্রবণতা বেশি। এর ফলে সফটওয়্যার খাতের পেশাদারিত্বটা এখনও ততটা নির্ভর করার মতো জায়গায় পৌঁছেনি।
এ পর্যায়ে আলাপ হয় পোশাক শিল্পের জন্য ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা সফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহানুর ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্প আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি খাত। এই খাতের সাথে প্রযুক্তির সংশেস্নষ ঘটানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সচেতনতা, নীতিগত সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের অভাবে এখনও এই ব্যবস্থা ফ্যাশন পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে আমরা আমাদের প্রাপ্য অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, এই খাতে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে অপচয় কমানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতাও বাড়ানো সম্ভব। অব্যবস্থাপনা রোধ করে আয় বাড়ানো যায়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ব্যবসায় গতিশীলতা আনয়নের পূর্বশর্তই হতে পারে প্রযুক্তি। আর এটা উদ্যোক্তাদের বোঝানো এখন আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শাহানুর ইসলাম বলেন, দেশের পোশাক শিল্প খাতে এখন যতটা প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, তা অনেকটাই ক্রেতাদের চাপের কারণে হচ্ছে। হাজিরা, বেতন প্রস্ত্তত করা, সিসি ক্যাম ব্যবহার, সীমিত পর্যায়ের নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যেই যেন তা সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) নিয়ে তো দেশে রীতিমতো চলছে ধোঁকাবাজি। তিনি বলেন, বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত প্রায় ৩৫ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। এরা যদি ইআরপি সফটওয়্যারে শুধু অব্যবস্থাপনা মূল্যায়ন অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে, তবে কারখানার ২-২.৫ শতাংশ খরচ বাঁচবে। কার্যতালিকা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, তবে ১-২ শতাংশ উৎপাদন বাড়বে। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নেও প্রযুক্তির ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ এই খাতে রয়েছে। আর এসব সফটওয়্যার তৈরিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষম হলেও উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রেই ভরসা পান না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশে সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন চালু করা যেতে পারে। একই সাথে স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ৫-১০টি কোম্পানির সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করা যেতে পারে। কোটি টাকা দিয়ে ওরাকল না কিনে স্থানীয় পর্যায়ে ক্লাউডভিত্তিক প্রযুক্তিসেবার প্রচলন করা উচিত।
শুধু সিসি ক্যাম আর ফায়ার ডিটেক্টর নয়, এসব যন্ত্রের সাথে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে শাহানুর বলেন, কারখানার নিরাপত্তা অটুট রাখতে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা চালু করা এখন সময়ের দাবি। পোশাক কারখানাগুলোতে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি, আইপি টেলিফোনের ব্যবহার ও মেইল সার্ভারের সীমিত ব্যবহার সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক হারে বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের ইউনিক আইডিতে নিয়ে এসে তাদের আমলনামা ক্লাউডনির্ভর করা উচিত। তিনি বলেন, এখন দেখা যায় প্রতিটি কোম্পানিই একই কাজ বারবার করছে। ক্লাউডভিত্তিক প্রযুক্তি করা হলে কাজের পুনর্ব্যবহার সম্ভব হবে। গতি বাড়বে। পোশাক শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে ফেয়ার প্রাইস সপ্তাহ চালু করা, অ্যাটেন্ডেন্টস বোনাস, তাদের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো অনলাইনে নিবন্ধন, ওয়ার্কার মাইগ্রেশন পদ্ধতি চালু করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ দৃশ্যমান অ্যাওয়ার্ড চালু করা যেতে পারে।
আলাপকালে বেসিসের সাবেক সভাপতি ও সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রাউলি বলেন, লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিকায়নের ক্ষেত্রে রূপকথা থেকে বের হতে হবে। কৌশল বদলাতে হবে। সুযোগ অনুসন্ধান ও নতুন বাজার সৃষ্টি করে স্থানীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পোশাক শিল্প নয়, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের প্রযুক্তিকায়নে অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে, প্রথমেই এটা মেটাতে হবে। নিজস্ব প্রতিষ্ঠান করতে হবে। তা না হলে বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহারের নামে অপচয় হতেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
পোশাক শিল্পের জন্য নির্মিত ‘কা-ারি’ ও ‘কর্মী’ সফটওয়্যার দিয়ে প্রশংসিত এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বলেন, দেশের মাত্র ৫ শতাংশ পোশাক শিল্পকারখানায় যথাযথভাবে ইআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। বাকি ৯৫ শতাংশই প্রযুক্তি ডিভাইস ব্যবহার করলেও এগুলো থেকে পূর্ণাঙ্গ আউটপুট পেতে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে না। আর এটা ব্যবহার না করার পেছনে অসচেতনতার পাশাপাশি যারা এই সেবা দেবেন তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফটওয়্যার তৈরির পাশাপাশি সার্ভিস ডেলিভারির সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে। ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। প্রতিটি পোশাক কারখানায় ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স অটোমেশনে নিয়ে আসতে হবে। পোশাক শিল্পকে প্রযুক্তিকায়ন করা সম্ভব হলে এখানে কাজের ক্ষেত্র যেমন প্রসারিত হবে, তেমনি ডাটা সেন্টারের বিকাশ ঘটবে। নেটওয়ার্কিং বাজার সম্প্রসারিত হবে।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং, ডিজিটাল নকশা ও দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জববার। তিনি বলেন, শুধু শ্রমিক ছাড়া পোশাক শিল্প খাতের প্রতিটি বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। এ খাতে দেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ভগ্নাংশ খরচে নিরাপদ ও বিশ্বমানের সেবা পাবেন খাত-সংশিস্নষ্টরা। এর ফলে এই খাতের উৎপাদনশীলতা যেমনি বাড়বে, তেমনি এটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও অটুট করবে।
পরিশেষে বলতে হয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এগোচ্ছে। ভবিষ্যতেও এসব ঝুঁকি থাকবে। সেসব ঝুঁকি মোকাবেলা করে বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই টিকে থাকার সাহস দেখিয়েছে। প্রযুক্তির বিপ্লবে এখন তাই শুধু শ্রম আর কাঁচামাল নয়, প্রযুক্তিকায়নের মাধ্যমেই এই খাতকে সমৃদ্ধ করতে হবে। বিষয়টি সব পক্ষকে অনুধাবন না করলে আমরা পিছিয়ে পড়ব