হোম > ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে না আইসিটি উপকরণ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে না আইসিটি উপকরণ
বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ২৬ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হলেও এর বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে না। শিক্ষায় আইসিটির বিকাশ শুধু উপকরণ বিতরণেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। নেই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে আইসিটি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক এর এক শীর্ষ সংবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে। এভাবে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এলোপাতাড়ি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে, তা কার্যত ছাত্রছাত্রীদের কোনো উপকারে আসছে না। ফলে তা জাতীয় অপচয়ে পরিণত হচ্ছে।
সরকার ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু এরপর চার বছরেরও বেশি সময় পার হলেও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেই। শত শত কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ এখন ‘শোপিস’ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা খ-কালীন কমপিউটার অপারেটর দিয়ে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান চলছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও তারা নবম ও দশম শ্রেণীর আইসিটি বিষয় পড়াতে পারছেন না।
‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এ ‘ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ’ শ্রেণী পর্যন্ত আইসিটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের আলোকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে, ২০১১ সালে সপ্তম শ্রেণীতে, ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণীতে, ২০১৫ সালে নবম শ্রেণীতে এবং ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিকল্পনা শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান- চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে এলোমেলোভাবে আইসিটি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এতে সব প্রতিষ্ঠানে এসব সুবিধা দেয়া না হলেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানে পৃথকভাবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে শিক্ষার মান উন্নয়নের দুই প্রকল্প এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু এই শিক্ষা উপকরণ বিতরণে এসব প্রকল্পের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। আবার বিতরণ করা উপকরণের যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই-তিনবার করে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে গেছে এর বাইরে।
সরকার প্রায় পাঁচ বছর আগে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। অথচ এ বিষয়ের শিক্ষা এখনও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কার্যত আইসিটি শিক্ষার বিকাশে সংশিস্নষ্ট প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। এরপরও নতুন নতুন প্রকল্প চালুর মাধ্যমে এভাবে এলোপাতাড়ি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এখনও চলমান। অভিযোগ উঠেছে, এতে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। স্বার্থান্বেষী এসব কর্মকর্তার অবহেলার কারণে শিক্ষার মৌলিক ও গুণগত উন্নয়ন হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সূত্র মতে, ২৬ হাজার ৮১টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠানেই আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নেই।
আসলে দেশে সার্বিকভাবে আইসিটি শিক্ষার একটা বেহাল অবস্থা বিদ্যমান। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। নইলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।