লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
দায়-দণ্ডে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য কিংবা পুরনো ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য বা এর ভগ্নাংশ সবই ই-বর্জ্য। নীরব ঘাতকের মতো পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে এই ই-বর্জ্য। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে এ ধরনের পণ্য প্রস্ত্ততকারক, সংগ্রহ কেন্দ্র, পরিবহনকারী, চূর্ণকারী, মেরামতকারী ও পুনঃব্যবহারোপযোগীকরণকারী এই ছয় ধাপে দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে প্রণীত হয়েছে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা। সর্বোচ্চ দুই বছরের দ--র বিধান রেখে প্রণীত বিধিমালাটি মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও এনজিওর কাছে। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মতামত পাওয়ার পর তা পরিবেশ অধিদফতরে পাঠানো হবে। এরপর খসড়া চূড়ান্ত করতে আমত্মঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ শীর্ষক এই খসড়া বিধিতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্রেতাসহ সুনির্দিষ্ট ছয়টি পর্যায়ে দায়িত্ব বণ্টিত হয়েছে। এতে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারীকে ফেরত নেয়ার বিধি যেমনটা রয়েছে, তেমনি ক্রেতাকে পণ্যমূল্য অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট হারের অর্থ বিক্রেতার কাছে জামানত হিসেবে জমা রাখার বিধানও রয়েছে। তবে ক্রেতা ই-বর্জ্য ফেরত দিলে বিক্রেতা জামানতের টাকা মুনাফাসহ ফেরত পাবেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (১৯৯৫ সালের ১নং আইন)-এর ধারা ২০-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই বিধিমালা প্রণয়ন করেছে সরকারের সংশিস্নষ্ট বিভাগ। বিধিমালাটি সব উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মজুদকারী, পরিবহনকারী, মেরামতকারী, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, পুনঃব্যবহারোপোযোগীকরণকারী, নিলাম বিক্রেতা, রফতানিকারক, ভোক্তা বা বড় ব্যবহারকারী ভোক্তা ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন, বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, আমদানি, রফতানি, মজুদ, গবেষণাগারে গবেষণার জন্য মজুদ, পরিত্যজন, মেরামত, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবহন বা এ সংক্রান্ত কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। একই সাথে এটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, যা পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯৩ (১৯৯৩ সালের ২১নং আইন) এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ১৯৯৭ (এসআরও নম্বর-২০৫-ল/৯৭) দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে।
বিধিমালায় যা আছে
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে দেশে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। কিন্তু অকেজো (ই-বর্জ্য) হওয়ার পর এগুলো ব্যবস্থাপনায় উন্নাসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন সংশিস্নষ্টরা। এসব ই-বর্জ্যে উদ্বেগজনক মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান যেমন- সীসা, মার্কারি, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক বেরেলিয়াম ইত্যাদি থাকে। এসব বিষাক্ত বস্ত্ত মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। অর্থাৎ ই-পণ্য সামগ্রী ব্যবহারের ক্রম ঊর্ধ্বমুখিতায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ ও ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। ই-বর্জ্য বিষয়ে সচেতনতা কম থাকায় সর্বস্তরে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রণীত হয়েছে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিবন্ধন
বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক ই-বর্জ্য প্রস্ত্ততকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মজুদকারী, পরিবহনকারী, মেরামতকারী, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী, নিলাম বিক্রেতা ও রফতানিকারককে পরিবেশ অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। দেশে ই-বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকলে রফতানিকারক পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে তা বিদেশে রফতানি করতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ই-বর্জ্য উৎপাদন, পরিচালনা, সংগ্রহ, গ্রহণ, মজুদ, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ, পুনঃব্যবহারোপযোগীকরণ, চূর্ণকরণ, পুনঃচক্রায়ন ও ধ্বংসকরণের জন্য প্রস্ত্ততকারক, চূর্ণকারী, পুনঃব্যবহারোপযোগীকরণকারী ও মেরামতকারীকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফ্লুরোসেন্ট ও মার্কারীযুক্ত ল্যাম্পের ক্ষেত্রে যেখানে পুনঃচক্রায়নকারী পাওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে উক্ত ই-বর্জ্য মজুদ ও নিষ্পত্তি সুবিধার লক্ষে্য সংগ্রহ কেন্দ্রে সরবরাহ নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
ব্যবস্থাপনায় দায়-দায়িত্ব
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খসড়া বিধিমালায় প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারী, মজুদকারী বা ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মেরামতকারী, সংগ্রহ কেন্দ্র, ব্যক্তিগত ভোক্তা বা বড় ব্যবহারকারীর/প্রাতিষ্ঠানিক ভোক্তা, চূর্ণকারী ও পুনঃব্যবহারকারীর দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে তাদের কার্যক্রম।
বিধিমালায় নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ ও বিপণনকারী এবং অন্য কোনো প্রস্ত্ততকারক বা সরবরাহকারী ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য নিজ ব্র্যান্ডের অধীন উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ ও বিপণন করে থাকে তাদেরকে প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। প্রস্ত্ততকারক ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য প্রস্ত্ততের সময় উৎপাদিত যেকোনো ই-বর্জ্য পুনঃব্যবহারোপযোগী বা ধ্বংস করার জন্য সংগ্রহ করবে। ধ্বংসপ্রাপ্ত সব ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য রাখার জন্য উৎপাদনকারী ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা সমন্বিতভাবে সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ফ্লুরোসেন্ট ও মার্কারিযুক্ত ল্যাম্পের ক্ষেত্রে যেখানে পুনঃচক্রায়নকারী পাওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে এই সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একই সাথে তাদেরকে ধ্বংসপ্রাপ্ত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে উৎপন্ন ই-বর্জ্যের পরিবেশসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার খরচ পরিচালনার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে সৃষ্ট ই-বর্জ্যে পরিবেশসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থাও করবে উৎপাদনকারী। প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে বা এর আগে ই-বর্জ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদফতরে দিতে হবে প্রত্যেক প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারীকে।
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক ই-বর্জ্য মজুদকারী বা ব্যবসায়ী বা দোকানদার ভোক্তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত স্থানে ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। তাদেরকে বিধিমালার ফরম-৪ অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য পরিবেশ অধিদফতর বরাবর আবেদন করতে হবে। সন্তুষ্ট হলে অধিদফতর ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেবে। অনুমোদন বলে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত স্থানে ই-বর্জ্য সংগ্রহ করবেন। তবে এমন পণ্য সংগ্রহের স্থানের অবস্থান জলজ সম্পদ বা জলাশয় থেকে নিরাপদ দূরত্বে হবে। এভাবে প্রত্যেক মজুদকারী বা ব্যবসায়ী বা দোকানদার নিশ্চিত করবেন যে, প্রস্ত্ততকারকের কাছ থেকে ই-বর্জ্য নিরাপত্তার সাথে সংগ্রহ করে এবং নিরাপদ পরিবহনের মাধ্যমে অনুমোদিত সংগ্রহ কেন্দ্রে পরিবহন করেছে সে বিষয়টিও তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সাইকেলের তৃতীয় ধাপে রয়েছে মেরামতকারী। মেরামত প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে তা অনুমোদিত সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠানোর দায়িত্ব রয়েছে তাদের ওপর। তাদেরকে এই বিধিমালার নির্ধারিত ফরম-১ অনুযায়ী ই-বর্জ্য পরিচালনা সংক্রান্ত নথি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত বা ব্যবহৃত ইলেকট্রনিকস পণ্য বা এর অংশবিশেষ ভাঙার কাজে নিয়োজিত তিনি হচ্ছেন চূর্ণকারী। চূর্ণকারীকে অবশ্যই পরিবেশ অধিদফতরের নিবন্ধন ও ছাড়পত্র নিতে হবে। তাদের চূর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশ বা জনস্বাস্থ্যের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রভাব পড়বে না মর্মে নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব ই-বর্জ্য (ফ্লুরোসেন্ট ও মার্কারিযুক্ত ল্যাম্পসমূহ) পূর্ণ প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব নয়, সেসব ই-বর্জ্য চূর্ণকারী পরিবেশসম্মতভাবে মজুদ বা গুদামজাত এবং নিষ্পত্তির ব্যবস্থা (Treatment Storage & Disposal Facility) গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ফ্লুরোসেন্ট ও মার্কারীযুক্ত ল্যাম্পসমূহ নিষ্পত্তির পূর্বে পারদ নিশ্চল (immobilise) এবং বর্জ্য আয়তন হ্রাস করার লক্ষে্য একটি প্রয়োজনীয় প্রাক-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক অর্থবছর সমাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে বা এর আগে ই-বর্জ্য সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদফতরে দাখিল করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক বা মহাপরিচালক কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো কর্মকর্তা যেকোনো সময় আকস্মিকভাবে চূর্ণকরণ স্থান পরিদর্শন ও চূর্ণকারীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
বিধিমালা অনুযায়ী, ভোক্তাকে নিবন্ধিত ব্যবসায়ী বা সংগ্রহ কেন্দ্রে ই-বর্জ্য জমা দিতে হবে। ভোক্তারা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আইনে নির্ধারিত জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবেন বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিধামালায় প্রত্যেক প্রস্ত্ততকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, মেরামতকারী ও পুনঃব্যবহারোপযোগীকরণকারী তাদের ই-বর্জ্য ১২০ দিনের বেশি মজুদ করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ই-বর্জ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, হস্তান্তর, মজুদ, বিভাজন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক তদমেত্মর জন্য তা উপস্থাপন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতিবেদন দেবে পরিবেশ অধিদফতর
বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় অফিস প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফরম অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন একত্রিত করে তা পুনঃপরীক্ষা ও দিক-নির্দেশনার জন্য প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
জামানতের বিধান
বিধিমালায় পণ্য উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্বে বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিকস পণ্য বা যন্ত্রপাতি বিক্রির সময় প্রত্যেক প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারী ব্যক্তিগত ভোক্তা বা বড় প্রাতিষ্ঠানিক ভোক্তার কাছ থেকে পণ্যের মূল্যের ওপর একটি হারে (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) অর্থ জামানত হিসেবে রাখবে। ই-পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা ব্যবহার শেষে ফেরত দেয়ার সময় বিক্রেতা জামানতের অর্থ প্রচলিত হারে সুদ বা মুনাফাসহ ফেরত দেবেন।
দুই বছরের দ-
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি যারা উৎপাদন করবে, ই-বর্জ্যের দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। সেখানে ক্রেতাকেও সহযোগিতা করতে হবে। বিধিমালার কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ১৫ (২) ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- পেতে হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুই বছরের বেশি কারাদ- বা ২ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- পেতে হবে বলে খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো: নুরুল করিম জানান, প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব অনুমোদনের সময় ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এদিকে সম্প্রসারিত দায়িত্বের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, বিধিমালা বাস্তবায়নের প্রথম প্রস্ত্ততকারক বা সংযোজনকারীকে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের ১৫ শতাংশ ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় বছরে ২৫ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৩৫ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ই-বর্জ্যের ৫৫ শতাংশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
ই-বর্জ্য প্রস্ত্ততকারক, সংগ্রহ কেন্দ্র, পরিবহনকারী, চূর্ণকারী, মেরামতকারী ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীর দায়িত্ব অনুযায়ী পরিবেশগত বা জনস্বাস্থ্যের যেকোনো ক্ষতির জন্য দায়ী হবে। এ ক্ষেত্রে এদের নিজ অর্থে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বা ধ্বংসপ্রাপ্ত পরিবেশগত উপাদান পুনরুদ্ধার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ই-বর্জ্য ১২০ দিনের বেশি মজুদ নয়
প্রত্যেক প্রস্ত্ততকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, মেরামতকারী ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী ই-বর্জ্য ১২০ দিনের বেশি মজুদ রাখতে পারবে না। এদের ই-বর্জ্য সংগ্রহ, বিক্রি, হস্তান্তর, মজুদ ও বিভাজন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর তদমেত্ম এলে এসব তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। তবে পরিবেশ অধিদফতর শর্ত সাপেক্ষে ই-বর্জ্য মজুদকরণের সময় বর্ধিত করতে পারবে।
বিপজ্জনক পদার্থ ব্যবহারের মানমাত্রা অনুসরণ