• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভিয়েতনাম হবে দক্ষেণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সিলিকন ভ্যালি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভিয়েতনাম হবে দক্ষেণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সিলিকন ভ্যালি
চার দশকের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ সৈন্যদলকে হেলিকপ্টার বহর তুলে নিয়ে যায় ১৯৭৫ সালে। এরপর থেকেই অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভিয়েতনাম সরকার ও দেশের জনগণ সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে নেমে পরে দেশ গঠনে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে সূদৃঢ় করতে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে ভিয়েতনাম সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে, যার মধ্যে অন্যতম এক উদ্যোগ হলো ভিয়েতনামের যুবসমাজকে আইসিটিসমৃদ্ধ করা।
১৯৮০ সালের শেষের দিকে ভিয়েতনামি সরকার সে দেশের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করার পর থেকে দেশের সার্বিক অবস্থা পাল্টে যেতে থাকে। ফলে কৃষিপ্রধান দেশটি অল্প মজুরির ম্যানুফ্যাকচারিং রাষ্ট্র থেকে ক্রমেই হয়ে উঠছে শিল্পপ্রধান রাষ্ট্রে। অবশ্যই কোনো আলাদিনের চেরাগের ঘষায় নয়, বরং ভিয়েতনামি সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে। এ নীতিমালায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আইসিটি খাতকে বিশেষ করে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার, টেলিকমিউনিকেশন এবং ইন্টারনেট সম্প্রসারণের খাতকে।
ভিয়েতনামের আইসিটির ক্রমোন্নতি
ভিয়েতনামের ডা ন্যাং হাইটেক পার্ক হলো তিনটি ন্যাশনাল হাইটেক পার্কের মধ্যে অন্যতম একটি, যা ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধামেত্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি হবে ঘরোয়া ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের ডেস্টিনেশন, ডা ন্যাং সিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করা এবং সেন্ট্রাল ভিয়েতনাম ও ওয়েস্টার্ন হাইল্যান্ডের উন্নয়নকে আরও বেগবান করা।
বর্তমানে ভিয়েতনামের জনসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটির বেশি। এ জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি ৩০ বছরের কম। এসব তরুণ-তরুণী মেধাবী ও পরিশ্রমী। বয়সে তরুণ ভিয়েতনামের এ জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ হলো কোডার, প্রকৌশলী, এন্টাপ্রেনার ও ছাত্ররা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি এবং প্রযুক্তির উদ্ভাবক। ভিয়েতনামি জনগণের কাছে তাদের সুদীর্ঘ ৪৪ বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এক ইতিহাস শিক্ষা, কিন্তু দুঃসময় স্মৃতি হতে পারে না।
বিস্ময়কর হলেও সত্য। আজ থেকে ১৫ বছর আগে ভিয়েতনামে ছিল হাতেগোণা মাত্র কয়েকটি আইটি কোম্পানি। কিন্তু এখন সেখানে বিসত্মৃত হয়েছে ১৪ হাজারের কাছাকাছি হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও ডিজিটাল কনটেন্টের আইটি ব্যবসায়। ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার পার্ক QuangTrung Software City (QTSC)-এর সিইও লং ল্যাম (Long Lam)-এর মতে, ভিয়েতনামি সরকার টেক সেক্টরকে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কী প্লেয়ার হিসেবে দেখছে। এ সফটওয়্যার পার্কটি অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করে এবং ব্যবসায় শুরু করার জন্য ডোমেস্টিক ও অন্তর্জাতিক এন্টাপ্রেনারদের অনুপ্রাণিত করতে পাস করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
ভিয়েতনামের হ্যানয়ের নর্দার্ন রাজধানী থেকে শুরু করে ডা ন্যাংয়ের উপকূলবর্তী শহর হয়ে দক্ষেণের হো চি মিং সিটি পর্যন্ত শত শত আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর তৈরি করে সুপ্রশিক্ষেত হাজার হাজার আইটি ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার গ্র্যাজুয়েট। অনেকগুলো আবার সিসকো, ফুজিৎসু, এইচপি, আইবিএম, ইন্টেল, এলজি, স্যামসাং, সনি ও তোশিবার মতো কোম্পানির মাধ্যমে রিক্রুট করা হয়। ভিয়েতনামে বেশি থেকে বেশি গ্র্যাজুয়েটেরা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিংয়ের খোঁজ করছে, যাতে স্টার্টআপ চালু করতে পারে।
সফটওয়্যার টেস্টিং কোম্পানি লগিগিয়ারের (LogiGear) সিইও, প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার তথা সহপ্রতিষ্ঠাতা Hung Q. Nguyen বলেন, এসব তরুণ আইটি প্রফেশনাল উপস্থাপন করছে ভিয়েতনামের প্রথম প্রজন্মের মিডল ক্লাস। Nguyen বলেন, সত্যি সত্যি বাজারে খুব তেজী ভাব বিরাজ করছে এবং এ প্রজন্মের কাছে বাড়ি কেনার জন্য হাতে প্রচুর টাকা আছে। এটি দেশের জন্য এক দারুণ পরিবর্তনও বটে।
Nguyen-এর জন্ম ভিয়েতনামে হলেও পড়াশোনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন সিলিকন ভ্যালিতে এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৯৪ সালে লগিগিয়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে যখন তিনি আন্তর্জাতিকভাবে আউটসোর্সিংয়ের চেষ্টা করেন, তখন তিনি দেশে ফিরে যেতে মনস্থির করেন। লগিগিয়ার হো চি মিং সিটিতে ওপেন করেন গবেষণা ও ডিজাইন ফ্যাসিলিটিজ। পরবর্তী দশকে বিপুলসংখ্যক আইটি গ্র্যাজুয়েটের কর্মসংস্থান হয় হো চি মিং সিটিতে।
লগিগিয়ার হলো অন্যতম প্রথম কোম্পানি, যে ভিয়েতনামে চালু করে কর্মী প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি প্রভাষক এবং অন্যান্য কোম্পানির সাথে সহযোগীরূপে কাজ করেন দি ভিয়েতনাম আইটি আউটসোর্সিং অর্গানাইজেশন (VNITO) গঠন করার জন্য। এটি একটি কমিউনিটি, যার লক্ষ্য হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে ভিয়েতনামের সম্পূর্ণ আইটি স্পেকট্রামের সমৃদ্ধশালী হাব হিসেবে বিসত্মৃত পরিসরে রূপ দেয়া।
ডা ন্যাং হলো ভিয়েতনামের চতুর্থ বৃহত্তম শহর ও একটি ট্যুরিস্ট লোকেশন। এটি সুপরিচিত প্রথমত এর সৈকত রিসোর্ট ও ফায়ার-ব্রিদিং ড্রাগন ব্রিজের কারণে। দ্বিতীয়ত এর টেক সেক্টরের কারণে। সরকার নতুন বিমানবন্দরের জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলার ও ৯৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে হাইওয়ে সিস্টেমের জন্য। ফলে এ শহরের নতুন অবকাঠামো আগের অবকাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি উপযোগী হয়ে উঠেছে বিশাল অঙ্কের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য। আর এ কারণে হ্যানয় এবং হো চি মিং হয়ে উঠেছে অনেক বেশি কর্মচঞ্চল ও কোলাহলময়।
মার্কেট
ভিয়েতনামের ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি (ICT) মার্কেট বেশ শক্তিশালী, ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত যার গড় প্রবৃত্তি ৮ শতাংশ। ভিয়েতনাম আশা করছে, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির প্রবৃদ্ধি হবে দারুণ, যেহেতু দেশটি ইতোমধ্যে আবির্ভূত হয়েছে আইটি হার্ডওয়্যার সার্ভিসেস ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আউটসোর্সিং উভয়ের প্রোডাকশন সেন্টার হিসেবে।
ভিয়েতনাম সরকার আইসিটিকে একটি কী সেক্টর হিসেবে শনাক্ত করে, যা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির জন্য পরিকল্পনা করে এক মাস্টার প্ল্যান, যা ২০২০-এর জন্য টার্গেট নির্দিষ্ট করে এবং ভিয়েতনামকে একটি অ্যাডভ্যান্ড আইসিটি দেশে রূপান্তরের। সরকার ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে স্টেট বাজেট থেকে আইসিটি সেক্টরের জন্য আনুমানিক ৪১৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করা হবে।
ভিয়েতনাম আইসিটির চারটি গুরুত্বপূর্ণ এরিয়ায় ফোকাস করছে, অ্যাড্রেস করছে যেমন সরবরাহ তেমন চাহিদা।
* পলিশি এনভায়রনমেন্ট উন্নত করা।
* আইটি মানবসম্পদ উন্নত করা।
* আইটি এন্টারপ্রাইজ ও ট্রেডমার্কস, প্রোডাক্ট ও মার্কেট উন্নত করা।
* আইটি জোন ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার তৈরিতে বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা।
ভিয়েতনামি আইসিটি মার্কেটে যেসব কোম্পানি অপারেট করবে, সেসব কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সহযোগিতা পাবে, যেমন- ট্যাক্স ইনসেনটিভ ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসিউডিউরকে সহজ করা। ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায়, লোকাল তথা স্থানীয় সরকারের তহবিল ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল তথা ব্যক্তিগত সম্পদের সমন্বয়ে নতুন নতুন হাইটেক পার্ক সেটআপ করা হবে। সফটওয়্যার ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত এন্টারপ্রাইজসমূহকে অফার করা হয় আরও বেশি সাপোর্ট ও উৎসাহ। হাইটেক পার্কের ক্রমোন্নতির ফলে আশা করা যায়, এর ফলে আইটি পণ্যের চাহিদা বাড়বে।
কমপিউটার হার্ডওয়্যার
ভিয়েতনাম আশা করছে, কমপিউটার হার্ডওয়্যার পণ্যের বিক্রির পরিমাণ ২০১৬ সালে হবে ১.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার ও ২০২০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১.৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। কমপিউটারের বিভিন্ন পার্টস, ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্টস ও মোবাইল ফোন হলো প্রধান পণ্যের ক্যাটাগরি, যেগুলো ভিয়েতনামে তৈরি হয়।
হার্ডওয়্যার মার্কেট একটি পরিমিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু পিসি পেনিট্রেশন হার খুবই কম এবং স্মার্টফোন ও নোটবুক/ডেস্কটপের ফাংশনালিটির মধ্যে পার্থক্য বেশ। এ ক্ষেত্রে ক্রমোন্নতি ফ্যাক্টর সম্পৃক্ত করে ক্রমোবৃদ্ধি আয়, ডিভাইসের দরপতন, এন্টারপ্রাইজের আধুনিকায়ন এবং চলমান বিনিয়োগ থেকে টেলিকম পর্যন্ত আপগ্রেড। ফিক্সড ও ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডসহ নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর সম্প্রসারণকে বিবেচনা করা হয় দীর্ঘমেয়াদী আইটি হার্ডওয়্যার মার্কেটের ক্রমোন্নতি।
টেলিকমিউনিকেশন
ভিয়েতনামি আইসিটি সেক্টরের সর্বমোট রাজস্বের প্রায় এক চতুর্থাংশের অবদান হলো টেলিকমিউনিকেশনের এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত জনগণের ১৫ শতাংশ কর্মী হলো টেলিকমিউনিকেশনের। মোবাইল টেলিফোনি জেনারেট করে সাবসেক্টরের ৯০ শতাংশ রাজস্ব এবং টেলিকম সেক্টরের দ্রুত উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
মোবাইল মার্কেট প্রচ-ভাবে স্যাচুরেটেড। এর পেনিট্রেশন হার ১৩০ শতাংশ। বিপুলসংখ্যক জনগণ থ্রিজি টেকনোলজির সুবিধা ভোগ করছে। ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় ফোরজি টেকনোলজি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পেনিট্রেশন হার গ্রামাঞ্চলে তেমন সমেত্মাষজনক নয়। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৫ সালে পৌঁছেছে ৭.৭ মিলিয়ন। আশা করা হচ্ছে, গড় বৃদ্ধির হার হবে ৬.৩ এবং ২০২০ সালে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১০.৩ মিলিয়ন।
সফটওয়্যার
ভিয়েতনামে সফটওয়্যার সেক্টরের বৃদ্ধির হার প্রতিবছর ৩০ শতাংশ। এ সেক্টরে এক হাজারের বেশি বড় বড় কোম্পানি অপারেট করে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীসংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনাম আবির্ভূত হচ্ছে একটি সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের ডেস্টিনেশন হিসেবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে ভারত, চীন ও ফিলিপাইনের মতো দেশের সাথে। AT Kearney-এর গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের ডেস্টিনেশন হিসেবে ভিয়েতনামের র্যা ঙ্ক হলো অষ্টম।
ভিয়েতনামি সফটওয়্যার মার্কেটটি হলো বেশ কস্ট-সেনসেটিভ। সফটওয়্যার মার্কেটের প্রায় ৭৫ শতাংশই সরবরাহ করা হয় কম মূল্যের স্থানীয় সফটওয়্যার প্রোভাইডারের মাধ্যমে। স্থানীয় সফটওয়্যার এন্টারপ্রাইজের প্রবণতা হলো সরকার এবং ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজগুলোতে সফটওয়্যার সরবরাহ করা। পক্ষান্তরে ভিয়েতনামি বৃহত্তর কোম্পানিগুলো উচ্চতর মূল্যের সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল, যা অফার করে মাল্টিন্যাশনাল তথা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। স্থানীয় সফটওয়্যার মার্কেটে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মার্কেট শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ।
উচ্চাভিলাষী আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের মতে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভিয়েতনাম, চীন ও ইন্দোনেশিয়া হলো তিনটি দেশ, যেগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে খুব দ্রুত উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। এসব দেশে ২০১৩ সালে আইটি সেক্টরে রেভিনিউ হয় ৩৯.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি। ২০১২ সালের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৫৫ শতাংশের বেশি।
ভিয়েতনাম ২০২০ সালের মধ্যে আইসিটিতে একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে
* আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি অব্যাহতভাবে জিডিপিতে ৮-১০ শতাংশ অবদান রেখে আসছে।
* আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে ১ মিলিয়ন কর্মী কাজ করছে।
* সফটওয়্যার ও ডিজিটাল কনটেন্ট প্রোভাইডারের শীর্ষ ১০ দেশের লিস্ট।
এ উচ্চাকাঙক্ষা উপলব্ধি করার জন্য ভিয়েতনামি সরকার পরিকল্পনা করে ২০১০-২০২০ সালের মধ্যে ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডেভেলপ করার জন্য ৮.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার মোবিলাইজ করতে।
যেসব কারণে ভিয়েতনামে আইটি সেক্টরের দ্রুত ক্রমোন্নতি হচ্ছে
* বিশাল ক্রমোবৃদ্ধি ট্যালেন্টপুল।
* প্রতিষ্ঠিত ও অভিজ্ঞ সার্ভিস প্রোভাইডার।
* রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ও সরকারের সমর্থন।
* বিশাল ভৌগোলিক লোকেশন।
* টেক ট্যালেন্টে শক্তিশালী বিনিয়োগ।
* গ্লোবাল আউটসোর্সিং স্টাডিজে সংখ্যা অনুযায়ী শীর্ষ র্যা্ঙ্কিংয়ে অবস্থান।
ভিয়েতনামে আন্তর্জাতিক টেক কোম্পানিগুলোর জন্য রয়েছে প্রচুর ট্যালেন্টপুল, লক্ষাধিক সফটওয়্যার ডেভেলপার ও আইটি ওয়ার্কফোর্সের জন্য প্রায় ৮০ হাজার ডিজিটাল কনটেন্ট স্পেশালিস্ট। প্রতিবছর আইটিসংশিস্নষ্ট বিভিন্ন প্রোগ্রামের ওপর ৪০ হাজারের বেশি নতুন আইটি গ্র্যাজুয়েট। ভিয়েতনামে খুব দ্রুতগতিত আইটি ওয়ার্কফোর্স গড়ে উঠছে।
শুধু তাই নয়, ভিয়েতনামের রয়েছে বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্ম, যারা প্রচ-ভাবে আইটিতে ক্যারিয়ার গড়ার মনমানসিতাসম্পন্ন। ছাত্রছাত্রীরা পাশ্চাত্ত্যের অনেক দেশের তুলনায় অল্প বয়সেই কমপিউটার সায়েন্সে অর্জন করে এক্সপোজার তথা প্রচারণা এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষায় অর্জন করে সর্বোচ্চ নম্বর। ইন্ডাস্ট্রির জরিপে দেখা গেছে, প্রযুক্তির জন্য দরকার প্রচ- ধৈর্য, যা ইউনিক ও আকর্ষণীয় যা ভিয়েতনামদের আছে।
রাজনৈতিক স্থিতি ও সরকারের সাপোর্ট
ভিয়েতনামি সরকার টেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিশীল। ইন্ডাস্ট্রিকে প্রমোট করার জন্য রয়েছে পলিসি, বিশেষ করে এ আন্তর্জাতিক এন্টারপ্রাইজ জোন, বিনিয়েগের অবকাঠামো যেমন নতুন সফটওয়্যার পার্ক ও উন্নত আইসিটি কানেকটিভিটি।
ভিয়েতনামি সরকার গ্রহণ করে দৃঢ় ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক স্থিতি মানেই হচ্ছে সোশ্যাল স্থিতি। যেখানে কিছু কিছু আইটি হাবে সরকারের পলিসি আনপ্রেডিকটেবল। ভিয়েতনাম সরকার অফার করে দৃঢ়তা ও বিশ্বস্ততা। ভিয়েতনামি সরকার আইটি শিক্ষায় বিনিয়োগ করে প্রচুর অর্থ, সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে দেয় ট্যাক্স সুবিধা, ফিন্যান্স সফটওয়্যার পার্ক ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে।
ভিয়েতনামি সরকার ভবিষ্যতের প্রতিভাধরদের ডেভেলপ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরা সক্রিয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, হাই স্কুল, লোকাল এনজিও ও বিদেশি সরকারের সাথে পার্টনার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে নতুন আধুনিক এডুকেশনাল প্রোগ্রাম ও সুবিধা দেয়ার জন্য, যা নিশ্চিত করে যে, ভিয়েতনামি আইটি ওয়ার্কফোর্স সবসময় থাকছে সাম্প্রতিক ও বিদেশী বায়ারদের কাছে মূল্যবান।
অতি সম্প্রতি এক উল্লেখযোগ্য প্রোগ্রাম হলো হায়ার এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যালায়েন্স পার্টনারশিপ (HEEAP)। এটি ভিয়েতনামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তি শিক্ষা উন্নত করার জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রোগ্রাম, যেখানে আর্থিক সহায়তা করে ইন্টেল, ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি। এরা ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ভিয়েতনামি অধ্যাপককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রোগ্রাম হলো ভিয়েতনাম-জার্মান ইউনিভার্সিটি (VGU)। এটি একটি টেকনিক্যাল স্কুল, যা বিশ্বব্যাংক থেকে ১৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ পায় কমপিউটার সায়েন্সের ১২ হাজার ছাত্রের নতুন ক্যাম্প্যাস তৈরি করার জন্য। VGU-এর মূল লক্ষ্য হলো এশিয়ায় লিডিং রিসার্চ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা।
আইসিটিতে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ
* ইন্টেল ভিয়েতনামে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করছে বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর চিপসেট তৈরি করার জন্য। ইন্টেল ভিয়েতনাম প্রত্যাশা করছে, ২০২৫ সালে ইন্টেলের ৮০ শতাংশ সিপিইউ তৈরি হবে ভিয়েতনামে।
* স্যামসাং ভিয়েতনামে এর বিনিয়োগ ৬.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার বাড়াবে মোবাইল ফোন, টেলিকমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট এবং ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে।
* নকিয়া/মাইক্রোসফট ২০১৪ সাল থেকে মোবাইল ফোন তৈরি করার জন্য চীন, হাঙ্গেরি ও মেক্সিকোয় অবস্থিত তাদের প্রোডাকশন লাইনকে রিলোকেট করে ভিয়েতনামে
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস