• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্ট টেকনোলজি কর্মকর্তা বললেন, বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
আলাপচারিতা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্ট টেকনোলজি কর্মকর্তা বললেন, বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে
স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠান। স্মার্ট টেকনোলজিস ১৯৯৮ সালে এর যাত্রা শুরু করে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য সারাদেশের গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিয়ে এবং একনিষ্ঠ বিক্রয়োত্তর সেবার মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১৯ বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি পণ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারাদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এইচপি, স্যামসাং, ডেল, এসার, লেনোভো, তোশিবা, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, সিসকো, অ্যাপল, বেনকিউ এবং গিগাবাইটের মতো বিশ্বের প্রায় ৫৫টিরও বেশি ব্র্যান্ডের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে পরিবেশন করছে এই স্মার্ট টেকনোলজিস। দেশব্যাপী ২৬টি শাখা অফিস এবং প্রায় ২৫০০ পার্টনার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের প্রযুক্তিবাজার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অনুন্নয়নের সাথে এই কোম্পানির কর্মকর্তাদের রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা। সে বিষয়ে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা জানতে সম্প্রতি কমপিউটার জগৎ প্রতিনিধির কথা হয় স্মার্ট টেকনোলজিসের বিক্রয় ও বিপণন মহাব্যবস্থাপক মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন-এর সাথে। তার সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ নিচে উপস্থাপিত হলো।

কমপিউটার জগৎ : বাংলাদেশের কমপিউটার হার্ডওয়্যার শিল্পের ভবিষ্যৎ কেমন?
মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন : বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত খুব দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার তার বিভিন্ন খাতের অবকাঠামোর ডিজিটালায়নের অংশ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রয়োজন হচ্ছে অসংখ্য টেকনোলজিক্যাল ডিভাইসের। সারাদেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ে অসংখ্য ল্যাব স্থাপিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কনজ্যুমার পর্যায়েও কমপিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এরা সবাই কমপিউটার নয়তো স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে কমপিউটার হার্ডওয়্যারের চাহিদাও বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরও অনেক বেশি বাড়বে। এই চাহিদা পূরণের লক্ষক্ষ্য অনেকেই কমপিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। তৈরি হচ্ছে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় লড়াই করে অনেকে টিকে থাকছেন, অনেকেই টিকতে না পেরে ব্যবসায় গুটিয়ে নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে দেশের অনেকগুলো কমপিউটার হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যা কমপিউটার হার্ডওয়্যার খাতের সুন্দর ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এক কথায় বলতে গেলে কমপিউটার হার্ডওয়্যার খাত বড় হচ্ছে, কিন্তু কাঙিক্ষত মাত্রায় বড় হচ্ছে না।

কমপিউটার জগৎ : বাংলাদেশের কমপিউটার হার্ডওয়্যার শিল্পের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন : আমাদের দেশে কমপিউটার হার্ডওয়্যার পণ্যগুলো পুরোপুরিই আমদানিনির্ভর। যেকোনো পণ্য আমদানি করতে হলে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করতে হয়। এই আনুষ্ঠানিকতায় জড়িত থাকে আমদানিকারক ও রফতানিকারক দেশের ব্যাংক এবং সরকারের বেশ কয়েকটি বিভাগ। এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই পণ্যের দাম রফতানিকারক দেশের তুলনায় আমাদের একটু বেশি হয়ে যায়। এই কমবেশির মাঝখানে ঢুকে পড়ে নন-চ্যানেল আমদানিকারক এবং লাগেজ পার্টির দৌরাত্ম্য। অনেক ক্ষেত্রেই এসব লাগেজ পার্টি অনুমোদিত আমদানিকারকদের চেয়ে কম দামে বাজারে পণ্য ছাড়ে। অনৈতিক উপায়ে বাজারে পণ্য ছাড়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেছে নেয়া হয় পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকেই। এই পণ্যগুলো একটা পর্যায়ে আসল পণ্যের পাশে রেখে বিক্রি করেন দোকানিরা। কিন্তু, যেহেতু সেসব পণ্য অননুমোদিত, সেহেতু সেসব পণ্যে ক্রেতাসাধারণ বিক্রয়োত্তর সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তখন সেই ব্র্যান্ডের মূল আমদানিকারকের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং ক্রেতাসাধারণ বিভ্রান্ত হন।
আমাদের দেশের আইটি হার্ডওয়্যার শিল্পে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারণ নিয়ে। আমাদের দেশে আর কোনো সেক্টরেই ব্র্যান্ডের পণ্য এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ দামে বিক্রি হয় না, যা হয়ে থাকে আইটি সেক্টরে। আপনি একটা মোবাইল মার্কেট থেকে মোবাইল কিনতে যাবেন, দেখবেন সেখানে সব দোকানেই একই দাম (যদি ওয়ারেন্টি পণ্য হয়)। একটি নির্দিষ্ট খুচরা দাম নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করছে জামা-কাপড়ের ব্র্যান্ড, জুতার ব্র্যান্ড এমনকি সেমাই, নুডুলসের ব্র্যান্ডগুলো। শুধু আমরাই পারছি না নির্দিষ্ট খুচরা দামে যেকোনো একটি ল্যাপটপ অথবা মাদারবোর্ড বিক্রি করতে। বিক্রি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে আমরা নিজের কান কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মতোই কাজ করছি। এতে কমে যাচ্ছে মুনাফার অংশ। দুর্বল হয়ে পড়ছেন অনেক ভালো ব্যবসায়ী। একটা পর্যায়ে গিয়ে অনেকেই ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমাদের কমপিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যবসায়ের টাকা তুলে নিয়ে অন্য খাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিনিয়োগ করছেন। এই খাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমদানিকারকের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ধারে পণ্য ক্রয় করছেন। কিছু নির্বোধ ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর লাভের অংশটুকুকে নিজের না ভেবে পুরো বিক্রয়মূল্যকে নিজের ভেবে নিয়ে সেই টাকাকে অন্য খাতে বিনিয়োগ করছেন। পরে আরেক আমদানিকারকের কাছ থেকে ধারে আরও কিছু পণ্য কিনছেন। সেই পণ্য বিক্রি করে আংশিকভাবে প্রথম আমদানিকারকের অর্থ পরিশোধ করছেন। তখন প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় সব আমদানিকারকের টাকা রোলিং করে করে কোনোমতে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। এতে উক্ত খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি আমদানিকারকদের আর্থিক সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বড় পরিবেশক তথা আমদানিকারককে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। এতে পুরো মার্কেটেই একটা অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
সঠিক মানের বৈধ চ্যানেলের পণ্যগুলো ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব ব্যবসায়ীকে কাজ করা উচিত। পরিকল্পনা মাফিক মুনাফার বিপরীতে খরচ হিসাব করে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

কমপিউটার জগৎ : বাংলাদেশের কমপিউটার হার্ডওয়্যার শিল্পের সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন : আমাদের চাহিদার প্রায় পুরোটাই পূরণ করছে বিদেশী পণ্য। দোয়েল ল্যাপটপ ছাড়া দেশে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের কমপিউটার কিংবা কমপিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের প্রোডাকশন প্লান্ট তৈরি হয়নি। আমাদের দেশে আইটি খাতের কথা বললে কার্যত সফটওয়্যার শিল্পের কার্যক্রমগুলো সবার চোখে ভাসে। সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্ট, প্রণোদনা, উৎসাহ সব কিছুই মূলত সফটওয়্যারকেন্দ্রিক। হার্ডওয়্যার পণ্যের শুধু বাণিজ্যই হচ্ছে, কিন্তু এটা শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। যেকোনো দেশে নির্দিষ্ট কোনো খাতের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেই দেশের স্থানীয় বাজার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। এখন যেহেতু বাংলাদেশে কমপিউটার হার্ডওয়্যারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, সেহেতু এখন হার্ডওয়্যার উৎপাদনের কথা ভাবা যেতেই পারে। সরকার সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে যে ধরনের প্রণোদনা এবং উৎসাহ দিয়েছে, কমপিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদনেও আগ্রহী উদ্যোক্তাদেরকে একইভাবে সহযোগিতা করলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হতে পারে বাংলাদেশের পণ্য। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশ পারলে আমরাও কমপিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদনে সক্ষম। কারণ, বাংলাদেশে বর্তমানে খুব চৌকস একটি তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। এখানকার তরুণেরা যদি গুগল, ইউটিউব, মাইক্রোসফট ও ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে, তাহলে পৃথিবীর বিখ্যাত কমপিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলেও তারা তা এগিয়ে নিতে পারবে




পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস