লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
বিশ্বের সেরা ১০ দৃষ্টিনন্দন ডাটাসেন্টার
ডাটাসেন্টারগুলো হওয়া উচিত দেখতে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন। এ লেখায় বিশ্বের সেরা দশটি দৃষ্টিনন্দন ডাটাসেন্টারের কথা তুলে ধরার প্রয়াস পাব। এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। ‘ডাটাসেন্টার ডিনামিকস’ ম্যাগাজিন টিম অনুসন্ধান চালিয়ে বিশ্বের এই দশটি সেরা ‘গুড-লুকিং’ ডাটাসেন্টারের কথা জানতে পারে। তবে ডাটাসেন্টার ডিনামিকস মিডিয়া টিম এই দশটি বিশ্বসুন্দর ডাটাসেন্টারের কথা এই ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক একটি সংখ্যায় তুলে ধরে কোনো ধরনের ধারাক্রম অনুসরণ না করেই। এ লেখায় একইভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারাক্রম অনুসরণ না করেই এখানে তা উপস্থাপিত হলো। উল্লেখ্য, ডাটাসেন্টার ডিনামিকস ম্যাগাজিন এসব দৃষ্টিনন্দন ডাটাসেন্টারের পরিচিতি তুলে ধরে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে। আমরা এই বর্ণনার পরিসর আরও বর্ধিত করে এ লেখায় উপস্থাপন করছি।
সুইচ পিরামিড ডাটাসেন্টার
ডাটাসেন্টার প্রোভাইডার ‘সুইচ’ (Switch) ব্যাপকভাবে পরিচিত এর SuperNAP ডাটাসেন্টার ক্যাম্পাসের জন্য। ক্যাম্পাসটির অবস্থান লাস ভেগাসে। সুইচ ২০১৭ সালের ৯ মার্চে মিসিগান ক্যাম্পাসে এর প্রথম ডাটাসেন্টার উদ্বোধনের কথা ঘোষণা করে। এটি একটি রূপান্তরিত পিরামিড আকারের কাঠামো, যা এর আগে ব্যবহার হতো একটি করপোরেট অফিস ভবন হিসেবে।
এই পিরামিড ডাটাসেন্টারটি গ্র্যান্ড র্যােপিডসের কাছেই অবস্থিত। উল্লেখ্য, গ্র্যান্ড র্যাআপিডস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিগান স্টেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং পশ্চিম মিসিগানের সবচেয়ে বড় শহর। গ্র্যান্ড রিভারের তীরে গড়ে ওঠা এই শহর লেক মিসিগান থেকে ৩০ মাইল পূর্বে। সুইচ পিরামিড ডাটাসেন্টার সম্ভবত বিশ্বের মধ্যে একমাত্র পিরামিড, যা গড়ে তোলার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে এর ভেতর একটি ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্থান সঙ্কুলান করা। এর বাইরের রয়েল পাইপস পিরামিডের ধূসর রঙের দেয়ালের সাথে একটু বেমানানই মনে হয়। তবে এটি দেখতে অনেকটা ভবিষ্যতের কল্পবিজ্ঞানের মতো একটা কিছু। এর ভেতরের নাটকীয় আলো দেখলে মনে হবে, এটি যেন একটি আধুনিক করপোরেট লবি ও একটি নাইট ক্লাবের সংমিশ্রণ। এসব বৈশিষ্ট্য এই ডাটাসেন্টারটিকে বিশ্বের অন্যসব ডাটাসেন্টার থেকে আলাদা করে তুলেছে। বিশ্বের অন্যান্য ডাটাসেন্টারের বেশিরভাগই বাইরের দিকে সাদাসিধে নন-কনক্রিট বক্স এবং ভেতরটা ইউলিটারিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাসিলিটি বৈ কিছু নয়। এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে একান্তভাবেই তাদের কাজটুকু সম্পন্ন করার উপযোগী করে তোলার বিষয়টিই মাথায় রেখে, এর বাইরে অন্য কিছু নয়।
কিন্তু সুইচ পিরামিড ডাটাসেন্টার সবকিছুকে নিয়ে গেছে আরও অনেক দূরে। এর মূল লবির ভবনটির কেন্দ্রের সিলিং থেকে ঝুলে আছে একটি বড় ফোকাল্ট পেন্ডুলাম, যা দর্শণার্থীদের দেবে পৃথিবীর অব্যাহত পরিভ্রমণের একটি আমেজ। সুইচ এই ভবনটির নাম দিয়েছে পিরামিড ক্যাম্পাস। এর নিচের দুই তলা ডিজাইন করা হয়েছে ২,২৫,০০০ বর্গফুট (২১,০০০ বর্গমাইল) ডাটাস্পেস জোগান দেয়ার মতো উপযোগী করে। অপরদিকে পুরো ক্যাম্পাসে থাকবে ১৮ লাখ বর্গফুট (১,৭০,০০০ বর্গমাইল) স্পেস ও ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সুবিধা। এতে আছে ১,৩৫,০০০ বর্গফুটের (৪০,০০০ বর্গমাইল) একটি ডিজাস্টার রিকভারি অফিস স্পেস। সুইচের প্রতিশ্রম্নতি হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে এর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। আর পিরামিড ডাটাসেন্টার চালনার ক্ষেত্রে এটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়ে আরও বেশি নিরাপদ। এটি হবে একমাত্র ডাটাসেন্টার প্রোভাইডার, যা গ্রিনপিসের সবশেষ ক্লিকিং ক্লিন রিপোর্টের সব ‘A’ মেনে চলবে। চলতি বছরে চালু করা ডাটাসেস্টারের মধ্যে এটি সুইচের দ্বিতীয় ডাটাসেন্টার লোকেশন। এই কোম্পানির গ্রহকদের মধ্যে রয়েছে- eBay, Amazon, Web Services, Fox, Hulu ও Boeing। এই কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে ডাটাসেন্টার গড়ে তুলছে ইতালি ও থাইল্যান্ডে। মিসিগান ফ্যাসিলিটির টার্গেট হচ্ছে শিকাগো, নিউইয়র্ক, নর্দার্ন ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি ও টরন্টো বাজারের গ্রাহকেরা।
বেহ্নফের ডাটাসেন্টার
স্টকহোমে অবস্থিত সুইডিশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান বেহ্নফের (Bahnof) ডাটাসেন্টার ক্রিয়েটিভ ডাটাসেন্টার আন্দোলনের অগ্রপথিক। এটি ২০০৮ সালে খোলা হয় সাবেক এক পারমাণবিক বাঙ্কারে। এটি Bahnof Pionen নামেও পরিচিত। পাইওনেন হচ্ছে সুইডেনের স্টকহোমে ১৯৪৩ সালে নির্মিত সাবেক একটি সিভিল ডিফেন্স সেন্টার। এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল অতি প্রয়োজনীয় সরকারি কর্মকা-কে পারমাণবিক হামলা থেকে নিরাপদ রাখা। এটি ২০০৮ সালে রূপান্তরিত করা হয় একটি ডাটাসেন্টারে। এ কাজটি করে বেহ্নফ। এটি চালু করা হয় ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে।
বেহ্নফ অব্যাহতভাবে এই ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করছে। এই ফ্যাসিলিটি একটি পাহাড়ের মাটির নিচে থাকায় এবং এর দরজার পাল্লা ৪০ সেন্টিমিটার পুরো হওয়ায় এই ডাটাসেন্টারটি হাইড্রোজেন বোমা হামলা থেকেও নিরাপদ। এতে প্রবেশ করা যায় একটিমাত্র এন্ট্র্যান্স টানেল দিয়ে। এটি ৩০ মিটার গ্রানাইট পাথুরে মাটির নিচে অবস্থিত। পাহাড়ে রয়েছে এর তিনটি ভৌত ডাটালিঙ্ক।
পাইওনেন ডাটাসেন্টার একটি কোলোকেশন সেন্টারও বটে। ২০১০ সালে উইকিলিকস পাইওনেনের কোলোকেশন সার্ভিস ব্যবহার করে তাদের সার্ভার স্টোর করার জন্য। উল্লেখ্য, colocation centre-কে carrier hotel-ও বলা হয়। কোলোকেশন সেন্টার হচ্ছে এক ধরনের ডাটাসেন্টার, যেখানে ইক্যুইপমেন্ট, স্পেস ও ব্যান্ডউইডথ ভাড়ায় পাওয়া যায় রেন্টাল কাস্টমারদের জন্য। কোলোকেশন ফ্যাসিলিটিগুলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে জোগান দেয় স্পেস, বিদ্যুৎ, কুলিং এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্কিং ইক্যুইপমেন্টের ভৌত নিরাপত্তা এবং এসব প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করে দেয় বিভিন্ন ধরনের টেলিযোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে- সবচেয়ে কম খরচ ও কম জটিলতায় তা প্রোভাইড করা হয়। স্টকহোমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই ডাটাসেন্টারের রয়েছে ১১০০ বর্গমিটারের স্পেস। পাইওনেনের আরও আছে ঝরনা, গ্রিন হাউস, স্টিমুলেটেড ডে-লাইট ও একটি বড় নোনাপানির মাছের পুকুর। এর ডাটাসেন্টারের রয়েছে দুটি ব্যাকআপ পাওয়ার জেনারেটর, যেগুলো আসলে এক-একটি সাবমেরিন ইঞ্জিন।
বার্সেলোনা সুপারকমপিউটিং সেন্টার
বার্সেলোনা সুপারকমপিউটিং সেন্টার (বিএসসি) চালু করা হয় ২০০৫ সালে। এটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত একটি গির্জায় চালু করা হয়। এই খ্রিস্টীয় উপাসনাগারটির নাম ছিল Torre Girona, যা নির্মিত হয়েছিল স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময়ে। এটি এখন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অব ক্যাটেলোনিয়ার একটি অংশ। এতে রয়েছে MareNostrum সুপারকমপিউটার, যা আইবিএম ও স্পেন সরকার নির্মাণ করে যৌথ উদ্যোগে। একটা সময়ে এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত কমপিউটার মেশিন। এখন এর সে অবস্থান না থাকলেও এটি এখনও সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ডাটাসেন্টার। ২০১৫ সালের দিকের র্যা ঙ্কিংয়ে এটি ছিল বিশ্বের ৯৩তম দ্রুত সুপারকমপিউটার। বার্সেলোনা সুপারকমপিউটিং সেন্টার হচ্ছে একটি সরকারি গবেষণাকেন্দ্র।
এটি পরিচালিত হয় একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে, যা গঠিত স্পেনের মিনিস্ট্রি অব ইকোনমি (৬০ শতাংশ), ক্যাটেলোনিয়া সরকার (৩০ শতাংশ) এবং ইউপিসি (১০ শতাংশ)। প্রফেসর ম্যাটিও ভ্যালেরিও হচ্ছেন এর মূল প্রশাসক। MareNostrum সুপারকমপিউটারটি রাখা আছে একটি কাঁচের বাক্সে।
বার্সেলোনা সুপারকমপিউটিং সেন্টারটির পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচসালা একটি বাজেট ঘোষণা করা হয়, যার পরিমাণ বছরে ৫৫ লাখ ইউরো, ডলারের অঙ্কে যা বছরে ৭০ লাখ ডলার। এই সেন্টার আইবিএমের ‘সেল মাইক্রোপ্রসেসর আর্কিটেকচার’ ডেভেলপ করায় অবদান রেখেছে।
বিএসসি’র এই প্রতীকী সুপারকমপিউটারের বিভিন্ন সংস্করণের জেনেরিক নেম হিসেবে MareNostrum নামটি ব্যবহার করে আসছে। ২০০৪ সালে এর প্রথম সংস্করণটি চালু করার পর থেকে আজ পর্যন্ত MareNostrum মেশিনগুলো তিন হাজারেরও বেশি বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি গবেষণা প্রকল্পে সেবা সরবরাহ করেছে। এ সময়ে মেয়ারনস্ট্রাম অর্জন করেছে ৪২.৩৫ টেরাফ্লপ/সেকেন্ড (প্রতি সেকেন্ডে ৪২.৩৫ ট্রিলিয়ন অপারেশন) সক্ষমতা। ২০০৬ সালে এটি উন্নীত করে এর সক্ষমতা দ্বিগুণ (সেকেন্ডে ৯৪.২১ টেরাফ্লপ) করা হয়। ২০১২-১৩ পরিধিতে সম্পন্ন করা সবশেষ উন্নীত করার পর থেকে ‘মেয়ারনস্ট্রাম ৩’-এর পারফরম্যান্স ১.১ পেটাফ্লপে (সেকেন্ডে ১১০০ ট্রিলিয়ন অপারেশন) নিয়ে তুলেছে। এই ফ্যাসিলিটি সায়েন্টিফিক কমিউনিটির সেবায় নিয়োজিত। বর্তমানে সুপারকমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের একটি মৌল স্তম্ভ। সুপারকমপিউটার ছাড়া এখন অগ্রসরমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা অসম্ভব। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বৈজ্ঞানিক প্রকল্পে এখন প্রয়োজন বড় ধরনের ক্যালকুলেশন, যা শুধু সুপারকমপিউটারের মাধ্যমেই সম্ভব।
‘মেয়ারনস্ট্রাম ৪’ সুপারকমপিউটার হবে ‘মেয়ারনস্ট্রাম ৩’ সংস্করণের তুলনায় ১২ গুণ বেশি শক্তিশালী। বিএসসি এই নতুন সুপারকমপিউটারটি কিনেছে আইবিএমের কাছ থেকে। আইবিএম একটি একক মেশিনে এর নিজস্ব প্রযুক্তির পাশাপাশি লেনোভো, ইন্টেল ও ফুজিৎসুর প্রযুক্তির সমন্বয় করবে। মেয়ারনস্ট্রাম ৪-এর ক্যাপাসিটি হবে সেকেন্ডে ১৩.৭ পেটাফ্লপ। অর্থাৎ এটি সেকেন্ডে ১৩,৬৭৭ ট্রিলিয়ন অপারেশন সম্পন্ন করতে পারবে।
ন্যাভেরের ডাটাসেন্টার
ন্যাভের (Naver) হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় ওয়েব পোর্টাল। এর রয়েছে একটি ডাটাসেন্টার। এই ডাটাসেন্টারটি চালু করা হয় ২০১৩ সালের জুনে। এটি এর গ্রাহকদের অনলাইন কনটেন্ট স্টোর করে। ফলে এটি ন্যাভেরের ‘স্টোরেজ চেস্ট অব ডাটা’ নামেও অভিহিত হয়। এটি Naver’s Data Center Gak নামে পরিচিত। এর নাম রাখা হয় Haeinsa Temple-এর Janggyeonggak Palace-এর নামানুসারে। এই মন্দিরের এই প্রাসাদে সংরক্ষিত রয়েছে ৮০ হাজার কাঠের ব্লক, যাতে নানাভাবে লিপিবদ্ধ আছে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কিত ঐতিহাসিক নানা রেকর্ড। যে চেতনা থেকে এই প্রাসাদে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কিত ঐতিহাসিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল, সেই চেতনা সমুন্নত রাখার মানসেই এই প্রাসাদের নামানুসারে ন্যাভেরের আলোচ্য ডাটাসেন্টারের নাম রাখা হয়। ন্যাভেরের জনৈক মুখপাত্র এমনটিই জানিয়েছেন ডাটাসেন্টার ডিনামিকস ম্যাগাজিন প্রতিনিধিকে। এই ডাটাসেন্টারটি অবস্থিত চানচিয়নের মাউন্ট গুবংয়ের পাদদেশে। এটি রয়েছে ৫৪,২২৯ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে। এই জায়গাটি কোরিয়ার গ্যাংওউন প্রদেশের অন্তর্গত।
এখান থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় সার্চ ইঞ্জিন ও ওয়েব পোর্টাল ন্যাভের অপারেট করে হাজার হাজার সার্ভার, যা স্টোর ও পরিচালনা করে এর সম্প্রসারিত ডাটা ও ই-মেইল সার্ভিস থেকে শুরু করে অনলাইন ব্লগ, ক্লাউড সার্ভিস ও সার্চ কুয়েরিগুলো। এই সেন্টারটির রয়েছে চারটি ভবন। মূল ভবনটি হচ্ছে এর মেইনটেন্যান্স সেন্টার। অন্য তিনটিতে রয়েছে তিনটি সার্ভার স্টোরেজ সেন্টার। ভবনগুলোতে প্রচলিত ডিজাইন উপাদান ব্যবহার করলেও এতে ব্যবহার হয়েছে উৎকর্ষ মানের প্রযুক্তি। যেমন- এই ভবনে ব্যবহার হয় রিসাইকল করা বৃষ্টির পানি। সব মিলিয়ে এই হাউস স্থান সঙ্কুলান করতে পারে মোটামুটি ১২ হাজার সার্ভার ইউনিটের, যার প্রতিটি ইউনিট ধারণ করতে পারে সাড়ে ৭ টেরাবাইট ডাটা। অন্য কথায় ৯০০ পেটাবাইট (১ পেটাবাইট সমান ১০২৪ টেরাবাইট) ডাটা।
প্রতি সেকেন্ড ন্যাভের কোরিয়া ও বিদেশ থেকে ব্যবহার করে ৭৪০০ সার্চ কিওয়ার্ড। এর ক্লাউড সার্ভিসে বিনিময় করে ২৫০০ ই-মেইল এবং আপলোড করে ৪৫০টি ছবি। এর সবই রিয়েল টাইমে কোম্পানির সার্ভারে স্টোর করা হয়। এর বিশাল পরিমাণের এই ডাটা চুরি, সাইবার হামলা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ রাখতে ন্যাভেরের গ্যাক ডাটাসেন্টারকে লিঙ্ক রাখতে হয়েছে এর দুইটি অতিরিক্ত সার্ভার ফ্যাসিলিটির সাথে, যেগুলো অবস্থিত সিউলের গ্যাসানদং ও ম্যাককদংয়ে, যেখানে ডাটাগুলো অব্যাহতভাবে ব্যাকআপ দেয়া হচ্ছে।
গ্রিন মাউন্টেন ডাটাসেন্টার
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কোম্পানি গ্রিন মাউন্টেন নির্মাণ ও অপারেট করে অতি নিরাপদ ও হোলসেল কোলোকেশন ডাটাসেন্টার। বর্তমানে নরওয়েতে রয়েছে গ্রিন মাউন্টেনের দুটি ডাটাসেন্টার- DC-1 Stavanger ও DC-2 Telemark। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের ডাটাসেন্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে গ্রিন মাউন্টেনের। এই ডাটাসেন্টারগুলো চলে ১০০ শতাংশ কম খরচের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ দিয়ে এবং অনন্য বিদ্যুৎ দক্ষতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফ্রি কুলিংয়ের ওপর নির্ভর করে। গ্রিন মাউন্টেনের এই উভয় ডাটাসেন্টার একমাত্র নরডিক কোলোকেশন প্রোভাইডার হিসেবে Uptime Institute Tier III সার্টিফিকেশন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া উভয় ডাটাসেন্টার অর্জন করেছে ISO 9001, ISO 14001 ও ISO 27001 সার্টিফিকেশন।
স্ট্যাভেঞ্জারের নিকটবর্তী ডাটাসেন্টারটি, অর্থাৎ DC1-Stavanger নামের এই অনন্য আন্ডারগ্রাউন্ড ডাটাসেন্টারটি গড়ে তোলা হয়েছে একটি পাহাড়ের গভীরে, যা এর আগে ছিল ন্যাটোর একটি হাই-সিকিউরিটি অ্যামিউনেশন স্টোর তথা গোলাবারুদের ভা-ার। ‘ডাটাসেন্টার ডিনামিকস’ ম্যাগাজিন এই ডাটাসেন্টারটিকে বিশ্বের সেরা দশ দৃষ্টিনন্দন ডাটাসেন্টারের তালিকাভুক্ত করেছে। এক সময়ের গোলাবারুদের এই ভা-ারটি এখন রূপান্তরিত হয়েছে হাই সিকিউরিটি কোলোকেশন ডাটাসেন্টারে। প্রাথমিকভাবে এর রয়েছে ১৩,৬০০ বর্গমিটার টেকনিক্যাল/হোয়াইট স্পেস। অবকাঠামো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এর বিদ্যুৎক্ষমতা ২৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো যায়। মূল ডাটাসেন্টারটিতে রয়েছে তিনটি দুইতলা কনক্রিট বিল্ডিং। বিল্ডিংগুলো রয়েছে পাহাড়ের অভ্যন্তরভাগে। ভবনগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের কোনো বিকৃতি না ঘটে। এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্রিন এনার্জি তথা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা, যা আসে দুটি হাইড্রোলিক উৎস থেকে।
টেলেমার্কে অবস্থিত DC2-Telemark ডাটাসেন্টারটি আসলে অবস্থিত নরওয়ের একটি ঐতিহাসিক এলাকায়। প্রাথমিকভাবে এটি পাবে ১০ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ। এর প্রথম পর্যায়ে পুরোপুরি চালু হয়ে গেছে টায়ার থ্রি ১ মেগাওয়াট ফ্যাসিলিটি। এর জন্য ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসহ চারটি নয়া ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য এই স্থানটি নির্বাচনের কারণ, এই এলাকাটি নরওয়ের ‘ক্র্যাডল অব হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার’ বলে সুপরিচিত। এর কাছাকাছি এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ফলে এখানে কম খরচে প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
ডিসি-২ টেলেমার্ক ডাটাসেন্টারের রয়েছে অনন্য কুলিং সোর্স, যা পাওয়া যাওয়া নিকটবর্তী পানি সরবরাহ থেকে। এটি প্রথমে ব্যবহার করা হয় পাহাড়ের হাইড্রোজেনেশনের কাজে। এখানে বছরজুড়ে পাহাড় থেকে পানিপ্রবাহ চলে। ডাটাসেন্টারের আশপাশের তাপমাত্রা কুলিং স্টেশনের একটি হিট এক্সচেঞ্জারে পাঠানো হয়। এরপর তা ছেড়ে দেয়া হয় নদীর পানিতে, যেখানে তাপমাত্রা বেড়ে তা মাছ প্রজননে সহায়তা করে।
এনজিডি’র নিউপোর্ট ডাটাসেন্টার
এনজিডি’র নিউপোর্ট ডাটাসেন্টার চালু করা হয় ২০১০ সালে, এলজি’র পূর্বতন একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানায়। ১৯৯৮ সালে এই সেমিকন্ডাক্টর কারখানাটি চালুর অল্প কিছুদিন পর থেকে এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এই কারখানাটি পরিত্যক্ত ছিল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। এনজিডি এই কারখানাকে রূপান্তর করে একটি ডাটসেন্টার ফ্যাসিলিটিতে। ভবনের ভেতরে ডাটাসেন্টারের স্পেস বারবার সম্প্রসারিত করা হয়েছে। একটি আধুনিক ডাটাসেন্টারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। এই ডাটাসেন্টারের রয়েছে নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি এখানে ৯ মেগাবাইট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সবটুকুই সরবরাহ করা হয় নিকটবর্তী ডিনরউইগ পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
আগামী প্রজন্মের ডাটার ‘নিউপোর্ট ডাটাসেন্টার’ হচ্ছে ইউরোপের নবতর ও বড় বড় ডাটাস্টোরের একটি। এটিতে সুযোগ রয়েছে ‘টায়ার ৩’ ডাটা কোলোকেশনের। এনজিডি’র নিউপোর্ট ডাটাস্টোর খুবই কাস্টমাইজেবল। এর প্রতিটি হল দিচ্ছে বিস্পোক ডাটাসেন্টার সার্ভিস। এখানে পাওয়া যায় গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ডাটা সার্ভিস। এর অবস্থান দক্ষিণ ওয়েলসে। এনজিডি মোকাবেলা করবে কার্ডিফ, নিউপোর্ট ও দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়েলসের ডাটা কোলোকেশনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা।
এ ডাটাসেন্টারটি ইউরোপের সর্বোত্তম সুসজ্জিত কোলোকেশন ফ্যাসিলিটিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ইউরোপের বৃহত্তম ডাটাসেন্টার। এতে স্থান সঙ্কুলানের সুযোগ রয়েছে একটি উঁচুমাত্রার পরিবেশে ২০ হাজার র্যাঅকের। এর ৫০ একর ক্যাম্পাসে রয়েছে ৭,৫০,০০০ বর্গফুট সেট। আছে সে অনুযায়ী আইটি অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। এন্টারপ্রাইজ লেভেল ডাটাসেন্টার কাস্টমারদের জন্য এটি যথার্থ উপযোগী। বিশ্বের বেশকিছু বড় কোম্পানি এই ডাটাসেন্টারে লোকেট করেছে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ডাটাচাহিদা মেটাতে।
অ্যামস্টারডাম ডাটা টাওয়ার
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অ্যামস্টারডামের সায়েন্স পার্কে উদ্বোধন করা হয় ‘অ্যামস্টারডাম ডাটা টাওয়ার’ নামে নতুন একটি ডাটাসেন্টার। এর ১৩তলা ভবনটির উচ্চতা ৭২ মিটার। এর রয়েছে ৫,০০০ (৫৪,০০০ বর্গফুট) বর্গমিটার ডাটাস্পেস। এতে ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। কুলিংয়ের জন্য এই ভবনে ব্যবহার হয় আউটসাইড এয়ার ও গ্রাউন্ড ওয়াটার। এই ভবনের নকশাকার হচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের Rosbach Architects।
এই ডাটা টাওয়ার উদ্বোধন করার সময় অ্যামস্টারডাম ইকোনমিক বোর্ডের ডিরেক্টর নিনা টরেজেন বলেন, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হচ্ছে এই বোর্ডের পাঁচটি চ্যালেঞ্জের একটি। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদেরকে ইউরোপের সবচেয়ে ‘ইনোভেটিভ রিজিয়ন’ হতে হলে তাদের প্রয়োজন অ্যামস্টারডাম ডাটা টাওয়ারের মতো ডাটাসেন্টার। উল্লেখ্য, অতি উঁচুমাত্রার ডিজিটাল কানেক্টিভিটি অ্যামস্টারডামকে করে তুলেছে ইউরোপের আকর্ষণীয় এক লোকেশন ও ডাটা হটস্পট। অ্যামস্টারডাম থেকে কোম্পানিগুলো মাত্র ৫০ মিলি/সেকেন্ডে ইউরোপের ৮০ শতাংশ এলাকায় পৌঁছতে পারে। শুধু অ্যামস্টারডাম মেট্রোপলিটন এলাকায় রয়েছে কমপক্ষে ৭০টি ডাটাসেন্টার। আর এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৫ সালে এগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এরই মাধ্যমে এরা এ ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দিয়েছে এর প্রতিযোগী ফ্রাঙ্কফুর্ট ও লন্ডনকে। অ্যামস্টারডাম এই অঞ্চলের একটি জুয়েল। নতুন ডাটাসেন্টার অ্যামস্টারডাম ডাটা টাওয়ার চালুর অর্থ হচ্ছে, নেদারল্যান্ডসের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এর বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের সাথে অব্যাহতভাবে চলবে। এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় এর প্রসেসিং পাওয়ার ও ডাটা স্টোরেজ ক্যাপাসিটির প্রবৃদ্ধিকে। এর ভবিষ্যৎ স্টোরেজ ক্যাপাসিটি হবে ১ এক্সাবাইট, অর্থাৎ ১০ লাখ টেরাবাইট। এ সক্ষমতা নিয়ে নেদারল্যান্ডস প্রবেশ করতে পারবে এক্সাস্কেল লিগে, অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক গবেষণার চ্যাম্পিয়ন লিগে। আর তা আগামী দিনকে পুরোপুরি পাল্টে দেবে।
নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল সুপারকমপিউটার Cartesius-সহ নতুন এই ডাটাসেন্টারের একই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ও প্রসেসিং পাওয়ার থাকবে, যা মোটামুটি ১০ হাজার আধুনিক পিসির স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ও প্রসেসিং পাওয়ারের সমান। বর্তমানে এটি স্টোর করে মোটামুটি ১০০ পেটাবাইট তথা ১০ লাখ গিগাবাইট ডাটা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি অদূর ভবিষ্যতে ব্যাপক বাড়িয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডসে ডাটা স্টোরেজ অর্ধেক বাড়িয়ে তোলা হয়।
সালেম চ্যাপেল
স্থানীয় নেটওয়ার্ক সার্ভিস কোম্পানি একিউএল যুক্তরাজ্যের লিডসের সালেম চার্চের সালেম চ্যাপেলে (উপাসনালয়ে) গড়ে তুলেছিল এর সদর দফতর। এটি হচ্ছে লিডসে টিকে থাকা একমাত্র চ্যাপেল, যা নির্মাণ করা হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই চ্যাপেলটি চালু করা হয়েছিল ১৭৯১ সালে। আর এতে ১০০০ লোক একসাথে বসে উপাসনা করতে পারত। এটি বন্ধ ছিল ২০০ বছর ধরে। ২০০১ সালে একিউএল এই চ্যাপেলের গ্রাউন্ড ফ্লোর রূপান্তরিত করে একটি কোলোকেশন ডাটাসেন্টার স্পেসে। নতুন করে এর ছাদ তৈরি করা হয় কাঁচ দিয়ে। চ্যাপেলের ব্যালকনি নতুন করে সাজিয়ে এটিকে রূপ দেয়া হয় একটি কনফারেন্স অডিটরিয়ামে। ব্রিটিশ সরকার ২০১৬ সালে সেখানে চালু করে এর ‘নর্দার্ন পাওয়ারহাউস’ প্রোগ্রাম। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এটি সেই জায়গা, যেখানে লিডস ফুটবল টিম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
একিউএলের DC1, DC2 ও DC3 সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি নর্দার্ন হাব। একিউএল সালেম চ্যাপেলে তাদের সদর দফতরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৫০ র্যা ক ডিসি১ ও ডিসি২ ফিটিং শুরু করে। ২০১১ সালে এর ক্যাপাসিটি দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়। একিউএল ডিসি৩ সালেম চ্যাপেলে বর্তমানে ১৬টি নেটওয়ার্ক রয়েছে। আর তা একিউএল লিডসকে পরিণত করেছে একটি ওয়েল-কানেকটেড লোকাল ক্যারিয়ার হাবে। যারা ক্যারিয়ার অ্যাক্সেস চায়, তাদের জন্য এটি যথার্থ উপযোগী। আধুনিক মান বিবেচনায় এর ‘পাওয়ার পার ক্যাবিনেট’ কিছুটা সীমিত। কিন্তু একিউএল ডিসি৫ (যা চালু করা হয়েছে ২০১৬ সালে এবং এর অবস্থান মাত্র আধমাইল দূরে) উচ্চতর পাওয়ার ডিমান্ডের জন্য হবে অধিকতর উপযুক্ত।
একিউএল ভবনটির অবস্থান লিডস ব্রিজের ঠিক দক্ষিণে। সিটি সেন্টার থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার এটিই ছিল এক সময়ের প্রধান রুট। লিডস ডিসি৩ ডাটাসেন্টার রয়েছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। অপরদিকে আপার ফ্লোরের সিটিং এরিয়াগুলো সংরক্ষিত। এখন চালু আছে ৩৬০ আসনবিশিষ্ট কনফারেন্স রুম। একিউএলের ডাটাসেন্টার ক্যাম্পাস আরও সম্প্রসারিত করেছে সাবেক কাউন্সিল বিল্ডিং কিনে নিয়ে। ৫ লাখ পাউন্ডেরও বেশি দামে একিউএল তা কিনে নেয়। ফলে এখন একিউএল ডাটাসেন্টার ক্যাম্পাস সম্প্রসারিত হয়ে দাঁড়াবে ১,১০,০০০ বর্গফুটে। সাউথ পয়েন্টে অবস্থিত কাউন্সিল বিল্ডিংকে রূপান্তর করা হবে লিডসে একিউএলের তৃতীয় ডাটাসেন্টারে
গুগলের ডাটাসেন্টার মুর্যাবল প্রজেক্ট
ফটো শেয়ার করা, ওয়েব সার্চ করা অথবা ভাষা ট্র্যানসেস্নট করার জন্য মানুষ প্রতিদিন শত শত কোটি রিকুয়েস্ট পাঠায় ক্লাউডে। কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবে, কী করে ফিজিক্যাল লোকেশনের মাধ্যমে এসব ইনফরমেশনের প্রবাহ চলে। এই ফিজিক্যাল লোকেশনগুলোকেই বলা হয় ডাটাসেন্টার। কারণ, সাধারণত ডাটাসেন্টার বিল্ডিংগুলো তেমন দেখার মতো হয় না। মানুষ আসলেই জানে না, এর অবিশ্বাস্য কাঠামো সম্পর্কে। তা ছাড়া জানে না এসব ভবনের ভেতরের সেই সব মানুষ সম্পর্কে, যারা আধুনিক জীবনকে সম্ভব করে তুলছে। এতে পরিবর্তন আনার জন্য গুগল আর্টিস্টদের সহযোগে সৃষ্টি করেছে গুগলের ডাটাসেন্টার মুর্যা্ল প্রজেক্ট। লক্ষ্য- ডাটাসেন্টারের ভেতরটাকে বাইরে নিয়ে আসার জাদুকরি কাজ করা। গুগল এ কাজটি শুরু করছে দুটি ডাটাসেন্টার লোকেশনের মাধ্যমে।
গুগলের ডাটাসেন্টার মুর্যা ল প্রজেক্ট চালু করা হয় ২০১৬ সালে। এখানে ডাটাসেন্টার অ্যাক্টিভিটি উপস্থাপন করা হয় বাইরের দেয়ালগুলোতে মুর্যা লের মাধ্যমে। ওকলাহোমার মেইস কাউন্টির ডিজিটাল আর্টিস্ট জেনি ওডেলের মুর্যাাল তৈরি হয়েছে গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ইমেজারি থেকে। তিনি দেখতে পান- গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ইমেজে মানুষের তৈরি ফিচারগুলো সংগ্রহ করছে সুইমিং পুল, সার্কুলার ফার্ম, পানি শোধনাগার ও লোনা পুকুরের দৃশ্যগুলো। বড় বড় দোলনা থেকে কাজ করে ১৫ জন পেইন্টার চক ট্র্যাচিং টেকনিকে ৪০০ রঙ ব্যবহার করেন ইমেজকে দেয়ালে স্থানান্তর করতে। এই একই টেকনিক ব্যবহার করেন মাইকেল অ্যাঞ্জেলো রোমের সিক্সটিন চাপেলের সিলিং পেইন্টিংয়ের কাজে। ওডেলের মুর্যা্ল আর্টওয়ার্ক আলোকপাত করে সেইসব ধরনের অবকাঠামোর ওপর- যা পণ্য, বিদ্যুৎ ও তথ্যের প্রবাহকে সম্ভব করে তোলে; ঠিক ডাটাসেন্টারের মতোই।
বেলজিয়ামের স্থানীয় স্ট্রিট আর্টিস্ট ওলি-বি প্রেরণা লাভ করেন ক্লাউড থেকে। তিনি তা কাজে লাগান গুগলের সেইন্ট গিসলেইন ডাটাসেন্টারের বাইরের দেয়ালে অাঁকা তার বিচিত্র রঙের মুর্যা ল অাঁকায়। তিনি এঁকেছেন ক্লাউড, যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অঞ্চলবিশেষ, ডাটাসেন্টার ও এতে কাজ করা মানুষের উপাদান- এমনকি এতে আছে সেই ভেড়া, যা ডাটাসেন্টার মাঠে ঘোরাফেরা করে এবং লা এসেনশন অ্যা সেইন্ট গিসলেইনের অ্যানুয়াল ফেস্টিভালের বেলুনও।
খুব শিগগিরই গুগল মুর্যা্ল সংযোজন করবে এর আরও দুটি ডাটাসেন্টারে। তা ছাড়া তা বিশ্বব্যাপী আরও লোকেশনে ছড়িয়ে দেয়ার আশাও রাখে গুগল।
লুক্সকানেক্ট ডাটাসেন্টার
লুক্সেমবার্গ হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ডাটাসেন্টারের জন্য একটি জনপ্রিয় লোকেশন। আর লুক্সকানেক্ট হচ্ছে একটি বেসরকারি কোম্পানি। এর সূচনা ২০০৬ সালে। কার্যত, লুক্সেমবার্গ সরকারের উদ্যোগে এই বেসরকারি কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর লুক্সেমবার্গ নগরীর ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ন্যাশনাল ডাটা ফাইভার নেটওয়ার্কের উন্নয়ন এবং দৃষ্টিনন্দন উৎকর্ষ মানের ডাটাসেন্টার গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা। এর লুক্সকানেক্ট ডাটাসেন্টার মাল্টিটায়ার ডাটাসেন্টার হিসেবেও সমধিক পরিচিত। লুক্সকানেক্টের ডিসি১.৩-এর রয়েছে মাল্টিপল আপটাইম সার্টিফিকেট। এর ফলে এটি ইউজারদের দিতে পারে টায়ার২, টায়ার৩ ও টায়ার৪ রিলায়াবিলিটির বিকল্প সুযোগ। ৫৯,০০০ বর্গফুট বা ৫,৫০০ বর্গমিটার স্থান জুড়ে গড়ে তোলা এর ভবনে ব্যবহার হয় ফ্রি কুলিং। এটি ব্যবহার করতে পারে সব ধরনের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ। ভবনটির রয়েছে স্টিল মেশ ওয়াল। এর ছাদে লাগানো হয়েছে ঘাস, ফলে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব এ ভবনে নেই বললেই চলে।
সাসটেইনেবিলিটি হচ্ছে এই ডাটাসেন্টারের মুখ্য মূল্যবোধ। লুক্সকানেক্টের সবগুলো ডাটাসেন্টার এমনভাবে ডিজাইন করা ও পরিচালিত হয়, যাতে এর জ্বালানি-দক্ষতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো যায় পরিবেশের ওপর প্রভাব সৃষ্টি না করে। এ জন্য এই ডাটা সেন্টার নির্ভর করে গ্রিন এনার্জির ওপর।