লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
অভিনব স্মার্ট মানিব্যাগ চুরি যাবে না, হারাবেও না
আপনার বেলায় কি এমনটি ঘটে যে, নিজের মানিব্যাগটি ভুল করে কোথাও ফেলে চলে আসেন। হতে পারে তা ফেলে আসেন কোনো গণপরিবহনে, আপনার কর্মস্থলেবা কর্মস্থলের বাইরের কোথাও, কোনো সাধারণ জনসমাবেশস্থলে কিংবা অন্য কোথাও। হতে পারে আপনার কোনো অসতর্ক মুহূর্তে মানিব্যাগটি কেউ চুরি করে নিয়ে গেল। ফলে এভাবে আপনার যেমন কিছু টাকা হারিয়ে ফেলতে পারেন, তেমনি হারাতে পারেন মানিব্যাগে থাকা মূল্যবান অনেক কিছু, যেমন- ক্রেডিটকার্ড, এতে রাখা জরুরি কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। তবে এখন এ নিয়ে আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনাকে যাতে আর কোনো দিন এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়, সেজন্য আর্মেনিয়া ভোল্টারম্যান আপনার জন্য উদ্ভাবন করেছে একটি অভিনব স্মার্ট মানিব্যাগ। এটি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়া হয়েছে।
চিত্র : ভোল্টারম্যান স্মার্ট ওয়ালেট
এই মানিব্যাগে রয়েছে একটি গোপন ক্যামেরাসহ আরও অনেক ফিচার, যেগুলো আপনার মানিব্যাগ হারানো ও চুরি যাওয়া ঠেকাবে নিশ্চিতভাবে। তাই চূড়ান্ত বিবেচনায় এটি একটি নিরাপদ স্মার্ট মানিব্যাগ। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ভোল্টারম্যান স্মার্ট ওয়ালেট’। এই ওয়ালেট বা স্মার্ট মানিব্যাগটিতে সংযোজিত রয়েছে একটি বিল্টইন অ্যালার্ম সিস্টেম, একটি গ্লোবাল জিপিএস ট্র্যাকার ও একটি ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরা। যেকেউ এই মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে যেইমাত্র খুলতে যাবে, সাথে সাথে এই ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই চোরের ছবি তুলবে এবং তা মানিব্যাগের মালিকের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেবে। আমরা জানি, ওয়ালেট হচ্ছে কাগজপত্র, কাগজের নোট ও টুকটাক জিনিসপত্র রাখার জন্য চামড়ার তৈরি ভাঁজ করা পকেট কোষ বা পকেট কেস। আর আমরা এও জানি, আজকের এই ডিজিটাল যুগে এসব ওয়ালেটের ব্যবহার অনেকটা অচল। কিন্তু ভোল্টারমান স্মার্ট ওয়ালেটকে আর দশটা সাধারণ ওয়ালেটের মতো শুধু একটি ওয়ালেট ভাবলে ভুল হবে।
একটি স্মার্টফোনে যত ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, মোটামুটি এগুলোর সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে এই ওয়ালেটে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে ৫১২ এমবি র্যাোম, বিল্ট-ইন ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক, জিপিএস ট্র্যাকার, অ্যালার্ম সিস্টেম, আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকুয়েন্স আইডেন্টিফিকেশন) প্রটেকশন ও এমনকি ওয়াইফাই হটস্পট ক্যাপাবিলিটি।আছে চার্জ দেয়ার সুবিধাও। চার্জ না থাকার কারণে এই মানিব্যাগের কার্যকারিতা হারাবে, এমন অভিযোগ তোলার কোনো সুযোগ নেই। বাইরের দিকে এটি দেখতে চামড়ার তৈরি একটি সাধারণ ওয়ালেট বা মানিব্যাগের মতো। কিন্তু এর ভেতরটা আশ্চর্যজনকভাবে স্মার্ট।
এর একটি প্রধান ফিচার বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর রয়েছে একটি রিমোট সেন্সিটিভিটি অ্যালার্ম সিস্টেম। একবার যদি একটি স্টাইলিশ কার্ডহোল্ডার আপনার স্মার্টফোনে জুড়ে দেন, তবে যখনই এই ওয়ালেট ও স্মার্টফোনের মধ্যকার দূরত্ব একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে যাবে, তখনই আপনি একটি সতর্ক-সঙ্কেত পাবেন। এই ব্যবস্থাটি আপনার জন্য দুইভাবে কাজ করবে। প্রথমত, যদি স্মার্টফোন ভুলে কোথাও ফেলে চলে যান, তবে ওয়ালেটটির অ্যালার্ম বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে জেনে যাবেনআপনার স্মার্টফোনটি কোথাও ফেলে এসেছেন। এর রয়েছে একটি জিপিএস ট্র্যাকার। তখন এই জিপিএস ট্র্যাকারআপনাকে জানার সুযোগ করে দেবে বিশ্বের কোন জায়গায় রয়েছে আপনার ওয়ালেটটি। একটি আরএফআইডি প্রটেকশন সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি ইলেকট্রনিক রিট্রাকশন বা আরএফআইডি স্কিমিং রোধ করতে পারে।
আমরা জানি- আজকের দিনে ক্রেডিট কার্ড, কিছু পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে ব্যবহার করা হচ্ছে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) চিপ। চোরেরা এগুলো ক্লোন করতে পারে। কিন্তু ভোল্টারমান স্মার্ট ওয়ালেট তা রোধ করতে পারে। আজকের দিনের উচ্চপ্রযুক্তি অ্যাক্সেসরিজগুলোতে থাকছে বিল্টইন পাওয়ার ব্যাংক (২০০০থেকে ৫০০০ অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার), যা ওয়ালেট অন-দ্য-গো চার্জিংয়েরসুযোগ দেয়। বস্নুটুথ ৫.০ টেকনোলজি ও ওয়াইফাই হটস্পট হচ্ছে বিল্টইন। এটি ইন্টারনেট রোমিং সার্ভিসের সুযোগ দেয় ৯৮টি দেশে। আর এর খরচ আদর্শ মানের বিদ্যমান রোমিং চার্জের তুলনায় এক-দশমাংশ।
তবে ভোল্টারম্যান স্মার্ট ওয়ালেটের সবচেয়ে অবাক করা ফিচার হচ্ছে এর ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরা। যখন এটি লস্ট মোডে থাকবে, তখন এটি সব সময় ছবি তুলবে সেই ব্যক্তির, যিনি এই স্মার্ট মানিব্যাগটি খোলার চেষ্টা করবে। আর এই ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলে যাবে মানিব্যাগটির মালিকের কাছে তার স্মার্টফোনে। এই ফিচারটি একটি অপশন হিসেবে তালিকাভুক্ত, তাই যেসব গ্রাহক মানিব্যাগ চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আশঙ্কিত, তাদেরজন্য এই স্মার্ট মানিব্যাগ উপযুক্ত।
ভোল্টারম্যানের প্রতিষ্ঠাতা আজাত টভমাসিয়ান বলেন, ‘কেউ যদি আপনাকে না জানিয়ে আপনার স্মার্ট মানিব্যাগ খোলার সাহস দেখায়, তবে এর ছোট্ট ক্যামেরা তার ছবি তুলে আপনার স্মার্টফোনে পাঠিয়ে দেবে। আমরা এমন একটি ওয়ালেট বা স্মার্ট মানিব্যাগ উদ্ভাবন করেছি, যেটি হারিয়ে গেলেই সব শেষ হয়ে যাবে না। চোরের ছবি দেখে চোরকে চিহ্নিত করে সহজেই তাকে পাকড়াও করতে পারবেন। উদ্ধার করতে পারবেন আপনার ওয়ালেট।’
জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও অভিনব এই স্মার্ট মানিব্যাগটির দাম প্যাকেজ হিসেবে ধরা হয়েছে ৯৮ ডলার, ১৫৭ ডলার ও ৩৬৫ ডলার।