লেখক পরিচিতি
																
								
																লেখা সম্পর্কিত
								
								
								
																
																
								
								
							 
						 
						
						
										গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশের ধীরগতি						
						
							গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশের ধীরগতি
বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এর প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে নেপাল ও পাকিসত্মানের তুলনায়ও। এর কারণ হচ্ছে- উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত গবেষণা ও বিনিয়োগ এবং একই সাথে মেধাসম্পদের সংরক্ষণে সচেতনতার অভাব।
ডিপার্টমেন্ট অব প্যাটেন্টস, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্কস (ডিপিডিটি) ২০১৬ সালে স্থানীয় ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো যে ৩৪৪টি উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট লাভের আবেদন করেছিল, এর মধ্যে ১০৬টি প্যাটেন্ট অনুমোদন দিয়েছে। আর অনুমোদিত এ ১০৬টি প্যাটেন্টের মধ্যে মাত্র ৭টি বাংলাদেশের স্থানীয়। ২০১৫ সালে রাষ্ট্র পরিচালিত মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ তথা ইনটেলেকচ্যুয়াল রাইটস অথরিটি অনুমোদন দিয়েছে ১০১টি প্যাটেন্টের আবেদন, যার মধ্যে ১১টি ছিল স্থানীয়। ‘ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি অরগ্যানাইজেশন’-এর দেয়া তথ্যমতে- একই বছরে ১৩৮৮টি পণ্য বা উদ্ভাবন প্যাটেন্ট লাভ করেছে ভিয়েতনামে এবং ভারতে ৬০২২টি। শ্রীলঙ্কার লাভ করা প্যাটেন্টের সংখ্যাও বেশ সুউচ্চ।
বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’-এর ফেলো মুসত্মাফিজুর রহমান এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ প্যাটেন্ট লাভের সংখ্যার দৈন্য থেকে আমাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। কারণ, উদ্ভাবনের সংখ্যার মধ্যে দেশে অর্থনীতির একটি প্রতিফলন রয়েছে। উদ্ভাবনের সংখ্যা যত বেশি হবে, ধরে নিতে হবে অর্থনীতি তত বেশি উদ্ভাবনের পথ ধরে হাঁটছে। তার কথার রেশ ধরে আমরা অন্য কথায় বলতে পারি, দেশের অর্থনীতি সত্যিকারের উন্নয়নের পথ ধরে হাঁটছে না। আমাদের দেশের সরকার পক্ষের লোকজন প্রতিদিন উন্নয়নের নানা কাহিনি দেশবাসীকে শোনাচ্ছেন। কিন্তু বাসত্মবতা ভিন্ন। তিনি আরো বলেন- ‘গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) বিনিয়োগ, বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত, যাতে নতুন পণ্য ও উদ্ভাবনের সংখ্যা বাড়ে। চীন ও ভারত অধিক হারে বিনিয়োগ করছে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। সে জন্যই এশিয়ার এই অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ বেশি বেশি পরিমাণের পণ্যে উদ্ভানের প্যাটেন্ট নিবন্ধনও লাভ করছে। কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে আমাদের বিনিয়েগের পরিমাণ দুঃখজনকভাবে অনেক কম।’
বলার অপেÿা রাখে না, সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব অর্থনীতি অধিক থেকে অধিক হারে হয়ে উঠছে প্রযুক্তি-তাড়িত। বাংলাদেশের উচিত অর্থনীতিকে প্রযুক্তি-তাড়িত অর্থনীতি গড়ে তোলা, যে জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে গতিশীলতা আনা অপরিহার্য। সে কারণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি আমাদের তরম্নণ সমাজকে আকর্ষিত করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ ক্ষেত্রেও আছে আমাদের দৈন্য। দিন দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বিষয়ে    পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে।
ডবিস্নউআইপিওর গেস্নাবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে চলতি বছরে বাংলাদেশ মাত্র তিন ধাপ এগিয়ে ১১৪তম স্থানে অবস্থান করছে।  তবে এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতি বাড়ছে বছরে ৬ শতাংশ হারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এর দক্ষেণ এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। উলিস্নখিত গেস্নাবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান ৬০তম স্থানে এবং শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৯০তম অবস্থানে। নেপাল ও পাকিসত্মানের অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে। আমাদের এই দৈন্য কাটাতে হলে বেসরকারি খাতে যারা গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে ব্যাপৃত, তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে আরও বেশি হারে তহবিল জোগান দেয়া। সরকারকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে কারা কোথায় কী ধরনের গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় গবেষণাগুলো চিহ্নিত করে তাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। সর্বোপরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মান বাড়াত হবে। এমন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এ খাতের শিক্ষায় সমধিক আগ্রহী হয়। বাসত্মবতা হচ্ছে- শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যথার্থ বিনিয়োগ না হওয়ার বাসত্মব প্রতিফলন রয়েছে উদ্ভাবন সূচকে আমাদের পিছিয়ে থাকার বিষয়টিতে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারছি না গবেষণা খাতে প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে গবেষণাগার ছেড়ে কাজ করতে হয় বিভিন্ন এনজিওতে। এ প্রবণতার অবসান না ঘটালে আবিষ্কার-উদ্ভাবন আসবে কোথা থেকে? গবেষণা খাতে তহবিল বরাদ্দে পিছিয়ে থাকার আরেকটি কারণ- প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাব। অনেক বিজ্ঞানী যারা কাজ করছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর), তাদের মধ্যেও গবেষণা ও উন্নয়নের এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যে জন্য বিসিএসআইআরে কুদরত-এ-খুদার আমলের আবিষ্কার উদ্ভাবনের গতিশীলতা নেই। এখন সময় এসেছে এসব ব্যাপারে সরকার ও সরকারের বাইরের সবার মনোযোগী হওয়ার।