লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
নতুন আরেক যুদ্ধে মোসত্মাফা জববার
নতুন আরেক যুদ্ধে মোসত্মাফা জববার
কর্মগুণেই নিজেকে এক নতুন উচ্চতায় তুলেছেন তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সরব মানুষ মোসত্মাফা জববার। তিনি আমাদের প্রাণের বর্ণমালাকে যুক্ত করেছেন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে। যিনি আলোকিত করছেন কমপিউটার বাংলা ভাষার ভুবন। দেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মন্ত্রী ও কমপিউটার জগৎ-এর উপদেষ্টা, নিয়মিত লেখককে নিয়ে লিখেছেন ইমদাদুল হক।
প্রযুক্তির সাথেই তার বসবাস। ধ্যান-জ্ঞান। ডিজিটাল বাংলা বর্ণমালার রূপকার। ডিজিটাল বাংলার প্রাণপুরম্নষ। বিজয় বাংলার নায়ক। জীবন যুদ্ধে হার না মানা বীর। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার যোদ্ধা তিনি। এবার তিনি নিয়োজিত হলেন নতুন আরেক যুদ্ধে। এ যুদ্ধে বিজয়ের জন্য হাতে সময় এক বছরেরও কম। এই স্বল্প সময়ে নতুন বিজয় ছিনিয়ে আনতে ২ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে প্রযুক্তিবিদ মোসত্মাফা জববার। গত আড়াই বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে থাকা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ওইদিন রাতে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন। অবশ্য খবর ছড়িয়ে পড়ার আগেই ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে বেশুমার অভিবাদন পেয়েছেন। ‘ভাই’ সম্বোধনে ৬৮ বছর বয়সী মোসত্মাফা জববারকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। তার সাথে তোলা সেলফি ছবিতে ভেসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।
শপথ গ্রহণের পরই তিনি ছুটে গেছেন নিজের হাতে গড়া বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির কার্যালয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান সভাপতি আলী আশফাক, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহিদ-উল-মুনীর, মহাসচিব সুব্রত সরকার, সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী শামীম, যুগ্ম মহাসচিব নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল এবং পরিচালক এসএম ওয়হিদুজ্জামান ও এ টি শফিক উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার। বাসায় ফিরেই তার নির্দেশনায় পরিচালিত ব্যবসায় সংগঠন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমালের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন। একই সময়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রযুক্তি নিয়ে তার লেখালেখির অন্যতম প্রকাশনা কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক অনু। পরদিন ৩ জানুয়ারি সংবর্ধিত হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তির অপর সংগঠন বেসিসের পÿ থেকে। এই শুভেচ্ছা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। রাজনীতিতে নিভৃতচারী হয়েও এমন শুভেচ্ছা গ্রহণের ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। নন্দিত ব্যক্তিত্ব গুণে তিনি প্রযুক্তি অঙ্গনের সব মহলেই সমাদৃত। মোসত্মাফা জববারের মন্ত্রীত্ব পাওয়াটাকে এই খাতের জন্য যথাযথ পুরস্কার বলেই মনে করছেন অনেকেই। তারা এবার সোচ্চার হয়েছেন ব্যক্তি মূল্যায়নের মাধ্যমে এবার যেন তাকে একুশে পদক দেয়া হয়।
সূত্রমতে, সদ্য বিদায়ী বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আমত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই প্রযুক্তি উৎসবের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সফটওয়্যার রফতানিতে সাফল্যের কথা তুলে মোসত্মাফা জববারকে আরও দায়িত্ব দেয়ার কথা বলেছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্টে দোয়েল ল্যাপটপ প্রকল্পসহ দেশীয় ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির উদ্যোগের ব্যর্থতা কাটাতে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোসত্মাফা জববারকে টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যমত্ম নানা কারণে তা হয়নি। অবশ্য এবার মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর দেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পুরো সফলতার দায়িত্বই বর্তালো তার ওপর।
১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মোসত্মাফা জববার। তার পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রাম। তার বাবা আবদুল জববার তালুকদার পাটের ব্যবসায়ী ও সম্পন্ন কৃষক ছিলেন। তিনি আর মা রাবেয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সণাতকোত্তর সম্পন্ন করার আগেই ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন কমপিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোসত্মাফা জববার। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ কমপিউটার ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি সম্পাদনা করেছেন সাপ্তাহিক ঢাকার চিঠি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা নিউজ সার্ভিস আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ বা আবাসের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক। ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক অনেক কমিটির সদস্য এবং কপিরাইট বোর্ড ও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের কাউন্সিল সদস্যও এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল ম্যাকিন্টোস কমপিউটারের বোতাম স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে কমপিউটার ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে তিনি কমপিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। পরের বছর ১৬ ডিসেম্বর ‘রহস্যময়’ প্রযুক্তির রূপ দেন কমপিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোসত্মাফা জববার। এর মাধ্যমে ১৭৭৮ সালে পঞ্চানন কর্মকার ও চার্লস উইনকিন্সের হাত ধরে সিসায় তৈরি বাংলা অÿর কমপিউটার প্রযুক্তিতে পূর্ণতা লাভ করে। সেটি প্রথমে ম্যাকিন্টোস কমপিউটার ও পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন। এই সফটওয়্যারটি তাকে ইতিহাসের খাতায় উজ্জ্বল করে তোলে। এখনও তিনি ডিজিটাল মাধ্যমের বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে আন্দোলনে রত। রোমান অÿরের পরিবর্তে বাংলা ভাষার নিজস্বতা নিয়েই ডিজিটল দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে শতভাগ ‘বাংলা’ ব্যবহারের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রীত্ব গ্রহণের পর।
শিÿাব্যবস্থায় ডিজিটাল রূপামত্মর, স্কুলব্যাগকে জাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্নবাজ এই মানুষটি ইতোমধ্যেই বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার উদ্ভাবনের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের কম্পাস কমপিউটার মেলার সেরা কমদামি সফটওয়্যারের পুরস্কার, দৈনিক উত্তরবাংলা পুরস্কার, পিআইবির সোহেল সামাদ পুরস্কার, সিটিআইটি আজীবন সম্মাননা ও আইটি অ্যাওয়ার্ড, বেসিসের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, বেস্টওয়ে ভাষা-সংস্কৃতি পুরস্কার, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ সম্মাননা, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিলেট শাখার সম্মাননা বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার আবিষ্কারক-উদ্যোক্তার স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থার নেত্রকোনার গুণিজন সম্মাননা, রাহে ভান্ডার এনাবল অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ (প্রযুক্তিবিদ হিসেবে) এবং অ্যাসোসিওর ৩০ বছর পূর্তি সম্মাননাসহ ২০টি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
এই কর্মবীরের জীবনে এখন বাকি রইল একুশে সম্মাননা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত বাংলা বর্ণমালার ‘বর্ণপরিচয়’ কিংবা সীতানাথ বসাক প্রণীত ‘আদর্শ লিপি’র মতোই ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় বাংলা কিবোর্ডের ‘বিজয়’-এর জন্যই তিনি এই সম্মাননার দাবিদার বলে মনে করেন তার সুহৃদরা।
সন্দেহ নেই, দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসত্মাফা জববার ডিজিটাল বাংলা কিবোর্ড ও ফন্ট নিয়ে যেভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা বর্ণমালা নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, ডিজিটাল ডিভাইসে যুক্তাÿর লেখার সহজ সমাধান বাতলে দিয়েছেন, দেশের অনলাইনে, ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বসত্মরে বাংলার ব্যবহার নিয়ে দিনের পর দিন অসীম ধৈর্য ধরে নিমগ্ন রয়েছেন তা জাতীয় স্বীকৃতির দাবি রাখে। প্রযুক্তির নিত্যনতুন মাত্রা নিয়ে মোসত্মাফা জববারের সোচ্চার ভূমিকা এখন জববারের ‘বলীখেলা’র মতো আরেক জববারের আশ্চর্য ‘বর্ণখেলা’ হয়ে উঠেছে। তার অবদানের ফলেই কমপিউটারের মাধ্যমে মুদ্রণ ও প্রকাশনায় বৈপস্নবিক উত্তরণ এনে দিয়েছেন। শুধু বাংলা বর্ণমালায় নয়; তিনি কমপিউটারে চাকমা লিপিমালা তৈরি করেছেন। এনালগ বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ পরিণত করতে ছায়া-সঙ্গীর কাজ করছেন ক্লামিত্মহীন।
নিজের কর্মসাধনার সড়ক পথে হেঁটেই তিনি আজ বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার এক পূর্ণমন্ত্রী। তাও আবার তার প্রিয় স্বপ্নভূমি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের। বলা যায়, এর মাধ্যমে তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন আরেক যুদ্ধে।আমরা আশাবাদী তিনি তার অভিজ্ঞতা ও তার লালিত স্বপ্নের পথ চেয়ে এখানেও বিমেক প্রমাণ করবেন একজন সকল ব্যক্তিত্ব হিসেবে
‘যে কঠিন যুদ্ধে জয়ী হতে হবে মন্ত্রী মোসত্মাফা জববারকে’
ফাহিম মাসরম্নর, সাবেক সভাপতি বেসিস এবং কোফাউন্ডার বিডিজবস্
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে পরিচিত মুখ মোসত্মাফা জববার ভাইকে সরকারের শেষ বছরে মন্ত্রী করা আসলেই একটি বড় ঘটনা। জববার ভাই রাজনীতিবিদ নন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক মেরূকরণে তার নিজস্ব পক্ষ বা অবস্থানের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট স্পষ্ট। কিন্তু আমরা সবাই যা জানি বা বুঝতে পারি, তা হচ্ছে তাকে মন্ত্রী করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে তার ভূমিকার জন্য এবং হয়তো বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনে শেষ বছরে আরো গতি আনার জন্যও।
অতীতে আমরা অনেক ‘টেকনোক্রেট’ (মেইনস্ট্রিম রাজনীতিবিদ বা এমপি নন) মন্ত্রী দেখেছি, কিন্তু জববার ভাইয়ের প্রেক্ষিত এক্ষেত্রে আলাদা। তিনি আমলা বা শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেননি। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ (সামাজিক আন্দোলন কর্মী)। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েই তার ‘অ্যাক্টিভিজম’ ও বিভিন্ন বিষয়ে তার বক্তব্য বা অবস্থান নিয়ে যে ছোটখাটো বিতর্ক নেই, তা নয়- যেকোনো অ্যাক্টিভিস্টের ক্ষেত্রে সেটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাপারটা তখনই মজার হয় যখন একজন ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ সরকারের একটি নির্বাহী পর্যায়ে অবস্থান নেন। সাধারণ একজন রাজনৈতিক মন্ত্রীর জবাবদিহিতা তার নেতার কাছে, তার ভোটারদের কাছে, কিন্তু একজন অ্যাক্টিভিস্টের জবাবদিহিতা তার নিজের কাছে, যেসব দাবিতে তিনি এতদিন আন্দোলন করেছেন, সেই দাবিগুলোর কাছে।
সেই দাবি বা এজেন্ডাগুলো কী যা ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ মোসত্মাফা জববার গত দুই দশকে করেছেন এবং দেশের সব বয়স, সব পেশার আর সব শ্রেণীর মানুষ তার সমর্থন দিয়েছেন? অনেকেই হয়তো জানেন, তারপরেও ৩টি প্রধান দাবির কথা বলা যায়, যা মোসত্মাফা জববারের পরিচিতির সাথে জড়িয়ে আছে।
০১. কম খরচে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া
গত কয়েক বছর এই ইস্যু নিয়ে মোসত্মাফা জববার ভাই সবচেয়ে বেশি মুখর ছিলেন। মোবাইল টেলিকম কোম্পানিগুলো শহরভিত্তিক থ্রিজি’র নামে যে ভাঁওতাবাজি করছে, কম দামে ব্রডব্যান্ড ‘স্পিড’ কিনে ‘ডাটা’ হিসেবে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করছে, সেই সচেতনতা জববার ভাই গড়ে তুলেছেন। এছাড়া সারা দেশের গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেটের যে করম্নণ অবস্থা, প্রতিনিয়ত তিনিই তা তুলে ধরেছেন। ব্রডব্যান্ডকে (ডাটা নয় স্পিড) মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা করাও তার দাবিও ছিল।
০২. দেশীয় সফটওয়্যার বাজারকে বিদেশী কোম্পানিগুলোর রাহুমুক্ত করা
বেসিসের সভাপতি হিসেবে এটি ছিল তার একটি প্রধান দাবি ও একদিকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশন বাসত্মবায়নে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার বাজার তৈরি হয়েছে, কিন্তু অন্যদিকে কাজের অভাবে অনেক দেশীয় আর তরম্নণ উদ্যোক্তারা কোম্পানি বন্ধ করে দিচ্ছে, কেননা বাজার দখল করছে বিদেশী কোম্পানিগুলো! এছাড়া বিদেশী টেলিকম কোম্পানিগুলোও আইন ভঙ্গ করে বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস (ভ্যাস, ই-কমার্স, মিডিয়া ইত্যাদি) ব্যবসায় দখল করছে। গত কয়েক বছর বেসিস এবং অন্য (বিসিএস, ইঅঋঈঙগ) পস্ন্যাটফর্মের মাধ্যমে মোসত্মাফা জববার ভাই সরকারি বিভিন্ন ফোরামে এই বিষয়ে সরকারের জরম্নরি পদক্ষেপের ব্যাপারে নিরমত্মন চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন।
০৩. ডিজিটাল মিডিয়া বাংলা কনটের ব্যবহার বাড়ানো
যে দেশের নববই শতাংশের বেশি মানুষ ইংরেজি পড়তে পারে না, সেই দেশে এখনো বেশির ভাগ ডিজিটাল কনটেন্ট বা সার্ভিস ‘ইংরেজি’ মাধ্যমে! দেশে সর্বসত্মরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে এটিকেই মনে করেন মোসত্মফা জববারও এই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পর্যায়ে সব ‘যোগাযোগ’ ও ‘ইন্টারফেসিং’ বাংলা মাধ্যমে করার ব্যাপারে সব সময়ে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন জববার ভাই।
সময় কম : সামনে পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ
জববার ভাইয়ের হাতে এক বছরের বেশি সময় নেই। এটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে, তিনি যা চান তা সহজেই করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় বাধা আসবে ‘আমলাতন্ত্র’ ও ‘ভেস্টেড ইন্টারেস্ট’ গ্রম্নূপ থেকে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ইন্টারনেটের দাম প্রামিত্মক গ্রাহক পর্যায়ে কমানোর ব্যাপারে ২টি বড় প্রতিবন্ধকতা- টেলিকম কোম্পানিগুলো কোনোভাবেই চাইবে না ‘ডাটা’ হিসাবে ইন্টারনেট বিক্রি না করে ‘স্পিড’ হিসেবে বিক্রি করতে, যা হলে তাদের মুনাফা কমে যাবে নিশ্চিতভাবে। ঢাকার বাইরে ব্রডব্যান্ড না যাওয়ার আরেক প্রধান কারণ হচ্ছে ‘ঘঞঞঘহ মনোপলি ও মাত্র ২টি ‘ঘঞঞঘহকে মনোপলি লাইসেন্স দেয়াতে সারা দেশে ডাটা ট্রান্সফার খরচ কমানো যাচ্ছে না। এইসব সমস্যাই বিটিআরসি-র জানা, কিন্তু বরাবরের মতো তারা এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে!
বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল সফটওয়্যার কোম্পানি বাংলাদেশ তাদের ‘সেলস অফিস’ (তাদের কোনো ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশ তাদের কাছে শুধুই একটা বাজার!) খুলে বসেছে। এদের নিয়মিত আনাগোনা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের করিডোরে। বড় বড় আইটি প্রজেক্ট বাগানোর জন্য সরকারি কর্তাদের বিভিন্ন সুবিধা আর নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে। ইতোমধ্যেই কোটি কোটি ডলারের কন্ট্রাক্ট হয়ে গেছে, আরো কিছু হবার অপেক্ষায়।
অনেক ‘ভেস্টেড ইন্টারেস্ট’কে মোকাবেলা করতে হবে ‘মন্ত্রী’ মোসত্মাফা জববারকে তার ‘গণ দাবি’ আদায় করতে। নিশ্চয়ই কাজটা সহজ হবে না। একদিকে আমলাতন্ত্র, অন্যদিকে বড় বড় বিদেশী কোম্পানি- দুই শক্তিকে সামাল দিয়েই মোসত্মাফা জববার ভাইকে তার এজেন্ডা বাসত্মবায়ন করার যুদ্ধে নামতে হবে।
সময় কম, কাজটা অনেক কঠিনও, তবে ইতিহাস সব সময় রচিত হয় অল্প সময়ই, কঠিন পরিস্থিতিতেই। সেই ইতিহাস তৈরির আগাম অভিনন্দন জববার ভাইকে