লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - ফেব্রুয়ারী
ডিজিটাল বাংলদেশ বলতে আমরা কী বুঝেছিলাম?
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা কী বুঝেছিলাম?
রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দিন বদলের সনদে যেদিন ঘোষণা করা হলো ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে, এই কথা শুনে সেদিন আমরা কী বুঝেছিলাম? নিশ্চয়ই এই রূপকল্পের কোনো তাত্ত্বিক কাঠামো সে ঘোষণায় ছিল না বা শেখ হাসিনা কিছু না বুঝেই এই স্বপ্নের কথা তার ভোটের অঙ্গীকারের অংশ করে নেননি। কিন্তু আমরা যারা বহুদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সীমাহীন সম্ভাবনার স্বপ্নের জগতে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম, আমরা ভেবে নিলাম এখন সরকার যদি এ কাজে সত্যি সত্যি সচল হয়, আমাদের স্বপ্ন বাসত্মবরূপ নেবে, সেখানে আপাতত কোনো রূপের কাঠামো থাকুক বা না থাকুক।
যে স্বপ্নের জগতে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, তা মোটেও অবাসত্মব ছিল না। এই স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন মোসত্মাফা জববার, সেই আশির দশকে যখন বাংলা হরফে কমপিউটারে লেখা শুরম্ন করলেন। এরপর যুক্ত হলেন কমপিউটার জগৎ-এর কাদের ভাই, আর অগ্রজ সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন মোসত্মান, যারা এই স্বপ্নকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিলেন গরিবের জন্য প্রযুক্তির সেবা হিসেবে। তাদের এই সৃজনশীল অনুপ্রেরণায় আমরা ভাবতাম- এই দেশের সবাই একদিন ডিজিটাল প্রযুক্তির সেবা পাবে। আমরা ভাবতে শুরম্ন করলাম কেউ যদি কমপিউটার না-ও কিনতে পারে, সে অবশ্যই কমপিউটার কী কী কাজ করে তা বুঝতে পারবে ও তার ছেলেমেয়েদের কাছে গল্প করতে পারবে। একজন দরিদ্র্র কৃষক বা দিনমজুর পিতা-মাতার পক্ষে সে সময় ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে কমপিউটার কিনে দেয়া অসম্ভব ছিল (এখনও অনেকের পক্ষে তা অসম্ভব)। কিন্তু আমরা যদি গ্রামে গ্রামে এমন ব্যবস্থা করে নিতে পারি যে, সবাই কমপিউটার দেখতে, ছুঁয়ে দেখতে ও ব্যবহার শিখে নিতে পারবে। তাহলে ঘরে ঘরে কমপিউটার পরিচিত হবে ও একটি প্রজন্ম জীবনের শুরম্ন থেকেই এই প্রযুক্তির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যসত্ম হবে। ২০০৮ সালে যে শিশুর বয়স পাঁচ, ২০২১ সালে তার বয়স হবে ১৮। মাঝখানের এই ১৩ বছরে তাদের পাশাপাশি যাদের বয়স পাঁচ হবে, তাদের হালশুমারি হাতে রেখে ক্রমে ক্রমে ১২, ১১, ১০, ৯ করে কমিয়ে এনে ২০২০-২১ সালে আমরা গ্রামের ছেলেমেয়েদের কোথায় পৌঁছে দিতে পারব, ভেবে কয়েকটি রাত ঘুমাতে পারিনি।
একদিন এসব শুনে মোসত্মাফা জববার ভাই উৎসাহ দিয়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিয়েই এই স্বপ্ন বাসত্মব করতে হবে। তুমি নূহ-উল আলম লেনিনের অফিসে আসো, আমরা সব পস্ন্যান ঠিক করে নেই।’
আমার রাজনৈতিক জগতের বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র হাসান মাহমুদই শেখ হাসিনার কাছে এসব বার্তা তুলে ধরতেন। ২০০৪ সাল থেকে আমি আর হাসান মাহমুদ কেমন করে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে গ্রামে গ্রামে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলাপ করে আমাদের পরিকল্পনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলাম। যদিও সেসবই ছিল আমাদের স্বপ্নের অংশ। তার মাধ্যমে আমি নিজেও বেশ কয়েকবার ডাক পেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে সুধা সদনে কথা বলতে গেছি। ব্যাখ্যা করেছি, কেমন করে আমাদের ‘এক্সেস’ বাড়াতে হবে, রামপালের উদাহরণ তুলে ধরে বলেছি, মানুষ বিষয়টা আগে বুঝতে চায়। শেখ হাসিনা আমাকে বললেন, ‘শুধু ‘এক্সেস’ দিয়ে হবে না, ‘এফরডেবল’ও হতে হবে।’ আমি আমাদের নিত্যদিনের প্রযুক্তি-কাজের সুপরিচিত এই ‘এফরডেবল’ বা ‘সাশ্রয়ী’ শব্দটি তার মুখে শুনে সেদিন চমকে উঠেছিলাম।
আমাদের অগ্রজ রাজনীতিক, যাকে আদর্শ বলেই জ্ঞান করি নূহ-উল আলম লেনিন ভাইয়ের সাথে এই নিয়ে আলাপ করতাম। শেষতক লেনিন ভাই একটা সেল গঠন করলেন, আমি আর মুনির হাসান মাঠের গল্প আর অভিজ্ঞতা এনে সিই সেল গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। আমাদের সাধ্যমতো গড়ে তুলেছি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য রিসোর্স সেন্টার, যেখানে সব পাওয়া যাবে। আমরা উপলব্ধি করলাম চাষি-মজুর থেকে শিক্ষিত-দরিদ্র সবাই সেখানে সমান অংশ নেবে। নতুন নতুন ভাবনা এনে জমাতে হবে আর তা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে। একদিন মাহবুবুল হক শাকিল আমার কাছে জানতে চাইল, ‘ভাই, ডিজিটাল বাংলাদেশে নাকি আপনারা ড্রাইভার-হেলপারদেরও যুক্ত করবেন? ক্যামনে?’
আমি বললাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু কি কমপিউটার? এটা তো রূপকল্প। আপনি এমন এক বাংলাদেশের কল্পনা করেন, যেখানে কোনো ড্রাইভার বেপরোয়া গাড়ি চালাবে না। কোনো হেলপার যাত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করবে না, অন্যায্য ভাড়া নেবে না। গাড়ি, ট্রেন, বাস, লঞ্চ ছাড়বে সব নিয়ম মতো। পথে-ঘাটে মানুষের কোনো ভোগামিত্ম থাকবে না। সেই বাংলাদেশে কোনো প্রসূতি মাতা যানজটে থেকে শেষে পথে সমত্মান প্রসব করবে না। কোনো ফাইল কোথাও আটকে থাকবে না। আপনার-আমার বাবা বা আমাদের স্কুলের শিক্ষক অবসরে গেলে তার পেনশন পেতে কোনো হয়রানি হতে হবে না। ছেলেরা মেয়েদের স্কুলের সামনে বসে থেকে শিস দেবে না। কারণ, সে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সীমাহীন শক্তি সম্পর্কে জেনে গেছে। এখন তার অনেক চিমত্মা, তাকে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে হচ্ছে।
২-৩ অক্টোবর ২০০৯ আমরা আয়োজন করলাম ‘বাগেরহাট হবে ডিজিটাল’ এই শিরোনামে জ্ঞানউৎসব। ছাত্রছাত্রী, সাধারণ ব্যবসায়ী, কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই উৎসবে অংশ নিয়েছিল। সেখানে জ্ঞান আর বিজ্ঞানের মেলা, গণিতের উৎসব, তথ্যপ্রযুক্তির নানারকম উদ্ভাবন প্রদর্শন, স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা, বিজ্ঞান মন্ত্রী থেকে প্রযুক্তি শিক্ষাবিদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল থেকে শুরম্ন করে মোসত্মাফা জববার- প্রায় শতাধিক জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন। পুরো বাগেরহাট শহরজুড়ে কয়েকদিন ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এক প্রত্যয় ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি এত নামিদামি অতিথি থাকার ভালো ব্যবস্থা ওই ছোট শহরে নেই বলে বাগেরহাটের অনেক সাধারণ পরিবার তাদের বাড়িতে দূরের মেহমানদের রেখে আতিথেয়তা দিয়েছেন, এমন উদাহরণও তখন তৈরি হয়েছিল।
এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক প্রদর্শন করেছিল গ্রামের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবার কেন্দ্রগুলো কেমন হবে তার অভিজ্ঞতা ও ডি-নেট শেয়ার করেছিল তাদের পলস্নী তথ্যকেন্দ্রের রূপরেখা। আমাদের গ্রাম শেয়ার করেছিল জ্ঞানকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামের তথ্যভা-ার কেমন করে গ্রামের মানুষের নিজেদের অর্থনৈতিক বা স্বাস্থ্য অবস্থার বিশেস্নষণ তুলে ধরতে পারে, তার নানাবিধ নমুনা। বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সদস্যরা ডিজিটাল বাংলাদেশে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে একটি সেমিনার করে। আরেকটি সভা হয় তাদের উদ্যোগে শুধু মোসত্মাফা জববারকে নিয়ে ‘মোসত্মাফা জববার সন্ধ্যা’। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরম্ন করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অনেক সাধারণ মানুষ মোসত্মাফা জববারের সাথে আড্ডা দেন। আর তার সারা জীবনের কাজ বিশেষ করে কমপিউটারে বাংলা অক্ষর বিন্যাস, বিজয় কিবোর্ড এসব নিয়ে অভিজ্ঞতা জানতে চান। বাগেরহাটের সেই উৎসবে পুলিশের এসপি ও র্যা বের আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। সাধারণ মানুষের কাছে একটি সেমিনারে তারা তুলে ধরেন ডিজিটাল বাংলাদেশে তাদের ভূমিকা কী হবে, কেমন করে অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হবে। জেলা প্রশাসন এই আয়োজনে ব্যাপক সমর্থন দেয়। জেলা প্রশাসক থেকে শুরম্ন করে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন, এমনকি ওই অনুষ্ঠানেই প্রথম বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা হয়, যেখানে স্থানীয় ভূমির ডিজিটাল তথ্য প্রকাশিত হয়।
এই সামান্য বর্ণনায় দুদিনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞের বিবরণ তুলে ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই অনুমেয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা তখন কী বুঝেছিলাম। আমরা এটাই বুঝেছিলাম, সেখানে সব মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। সবাই নিজেদের প্রযুক্তি শিক্ষা ও ব্যবহারে কনফিডেন্ট বোধ করবে। আর সে শিক্ষা হবে সমান সুযোগের, সাশ্রয়ী। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে মানুষের সাথে প্রযুক্তির দূরত্ব সৃষ্টি নয়। মিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখা নয়, বা ঘরের কোনে বসে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট নিয়ে প্রাইভেসির নামে যা খুশি করা নয়। এদেশের মানুষ কী চায়, প্রযুক্তির কোন কোন সেবা দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করা যায়, ছেলেমেয়েদের জীবন কেমন করে আরও নিশ্চিত রাখা যায়, স্ত্রীর অসুখ হলে সুচিকিৎসা পাবে, বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতা ঘরে বসে পাবেন রিমোট চিকিৎসা সেবা, ট্রেন চলবে কাঁটায় কাঁটায় ডিজিটাল তালে পা রেখে। ডাক্তারের কাছে থাকবে রোগীর সব উপাত্ত ও রোগের বিবরণ। শিক্ষক তার ল্যাপটপের এক টোকায় জানবেন তার শিক্ষার্থী গত মাসের তুলনায় এ মাসে কতদূর এগিয়েছে। মুদি দোকানি এক লহমায় দেখে নেবেন তার মালামালের তালিকা। সবজিওয়ালা জানবেন মাঝখানে কেউ তাকে ঠকাবে না। কারণ, মহাজনের সব হিসাব ওপরে রাখা আছে।
মোসত্মাফা জববার যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের হাল ধরেছেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনেক পূর্বশর্ত পূরণের কাজ বাকি রয়ে গেছে। এই দেশের মানুষের কাছে এখনও উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নাগালের বাইরে। নানারকম ইংরেজি নামের প্রজেক্টের কাছে ব্রডব্যান্ডকে বন্ধক দিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে যে ইন্টারনেট এতদিনে কূলপস্নাবিত হওয়ার কথা, সেখানে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট। সাশ্রয়ী হবে কেমন করে? একটা স্মার্টফোন, ইন্টারনেট প্যাকেজ, সাথে কাজের খোঁজ। কাজ পেলে সেই কাজ কি মোবাইল ফোনে করা যাবে? লাগবে কমপিউটার, মডেম, প্রিন্টার আর নানা রকম অনুষঙ্গ। যন্ত্রপাতির জন্য মোট বিনিয়োগ খরচ যদি ৫০-৬০ হাজার টাকাও হয়, সে-ও তো অনেক বেশি। একটা কাজ পেলো তো আপ করবে কেমন করে? এই ফোনের ইন্টারনেট তো কানেক্ট হওয়ার সাথে সাথে নানা ফাঁকিজুকির মাঝে তার ‘ডাটা’ শেষ হয়ে যায়! ওই যে গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো নানা চেষ্টায় একটা কাজ জোগাড় করল, তার তখন কী হবে? তাকে একটা ভুল প্রতিযোগিতার স্বপ্ন ধরিয়ে দেয়া হলো- মোবাইল ফোনের ‘অ্যাপ’ তৈরি নাকি একটা ভালো ‘অপরচ্যুনিটি’। ঘুরে ঘুরে কোথাও সে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না। এসব অর্থহীন ‘উদ্যোগ’ কি বন্ধ হবে? গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখনও দেখছে, তথ্যপ্রযুক্তি মানে আলোর চিকচিকি! বাংলা-ইংরেজির মিশেলে এক অদ্ভুত উচ্চারণে কথা চলছে ঢাকার বিশাল আলো ঝলমলে মিলনায়তনে। এসব কি ডিজিটাল বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল?
এখন এই নতুন বাসত্মবতায় মোসত্মাফা জববারের চ্যালেঞ্জ তার সামনের সীমিত কর্মকাল। নির্বাচন যদি ডিসেম্বরে হয়, তো হাতে আছে দশ-এগারো মাস। বুঝে-শুনে যদি সব কাজ গুছিয়ে নিতে হয়, তাহলেও আমরা বুঝতে পারি, তাকে অগ্রাধিকার ঠিক করে আর নির্বাচন বিবেচনা রেখেই কাজ করতে হবে। আর এতে ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক কাজই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আমরা জানি যে কাজগুলো ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারত, তার মধ্যে জরম্নরি ছিল সবার জন্য উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সারাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে উন্মুক্ত করা। আর ইন্টারনেট বিতরণের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা। কে কত গতি পাবে, কে কত টাকা দিয়ে কত মাত্রার গতি পাবে, আর কী কাজে ইন্টারনেট নেবে- এগুলো জেনে বুঝে এই ‘বিতরণ নীতি’র কর্ম সংযোগ হবে, যা দুর্ভাগ্যবশত এখনও আমাদের হয়নি! এই অল্প সময়ে জানি না মোসত্মাফা জববার পারবেন কি না তার ক্রমাগত উচ্চারিত ‘প্রযুক্তি সেবাকে গ্রামবান্ধব’ করার স্বপ্ন বাসত্মবে রূপ দিতে। এক যুগ আগে খুলনায় ‘আমাদের গ্রাম’ আয়োজিত উদ্ভাবনী মেলার উপস্থাপনাকালে তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রামে গ্রামে যুবশক্তির সংযোগ ঘটিয়ে গ্রামভিত্তিক তথ্যভা-ার তৈরি করা দরকার।’ যার কোনো উদ্যোগ গত নয় বছরে নেয়া হয়নি। এখন কি তা সম্ভব হবে?
জববার ভাই আমাদের সাথে সব আন্দোলনে একমত ছিলেন- বিটিসিএলের আমলাতান্ত্রিকতা থেকে ইন্টারনেট সেবাকে বের করে আনতে। এখন কি সেটা হবে? সোচ্চার ছিলেন আমাদের দাবির সাথেও- আমাদের দেশের জন্য বিদেশ থেকে কিনে আনা ইন্টারনেট যেন দেশের বাজারেই থাকে, সে রকম ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে। তাকে দেখতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমত্মর্জাতিক রীতিনীতি ও অনুশাসনগুলো বুঝতে ও মেনে চলতে আমাদের সরকার ও মিশনগুলো যেন ঠিক ভূমিকা পালন করে সেটাও।
দেরি হয়ে গেলেও আমরা মোসত্মাফা জববারের নেতৃত্ব ও কর্মদক্ষতার প্রতি আস্থাশীল। তিনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝেন। তিনি জানেন ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু যন্ত্র নয়, আলো ঝলমলে স্টুডিও সেবা নয়। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো এই দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের রূপক। আশা করি, নানা রকম অনুষ্ঠানের আলোকচ্ছটায় তাকে ব্যসত্ম রেখে, মূল কাজ থেকে তার দৃষ্টি কেউ সরিয়ে রাখতে পারবে না