লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি
থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি
থ্রিডি অ্যানিমেশন হচ্ছে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার সন্নিবেশিত চলমান গ্রাফিক্স। কমপিউটার প্রযুক্তির উন্নতি, অটোডেস্ক এবং মায়া সফটওয়্যারের প্রতিনিয়ত নতুন সংস্করণ থ্রিডি জগতে নতুন প্রাণ এনেছে। থ্রিডি অ্যানিমেশন শুরুর কিছু ধাপ থাকে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যানিমেশন গড়ে উঠতে। সেসব প্রতিটি ধাপের এক সুন্দর সমন্বয় প্রয়োজন হয়।
থ্রিডি অ্যানিমেশন প্রোডাকশন কোনো একক মানুষের পক্ষে সুন্দর ও সুচারুভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়। বিষয়টি এমন নয় যে, একজন মানুষ থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন। কিন্তু সেই অ্যানিমেশনে প্রাণ আনতে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে অনেক বেশি সময়ের ব্যাপার। একটি ৩-৪ মিনিটের থ্রিডি অ্যানিমেশন ভিডিও নির্মাণ করতে কয়েক মাস নয়, বছরও লাগতে পারে একজন অ্যানিমেটরের। কারণ, প্রথমেই কয়েকটি উপকরণ নিয়ে একজন থ্রিডি আর্টিস্টকে অবশ্যই ভাবতে হবে। গল্পটা কি হবে? তারপর প্রি-প্রোডাকশন বলে থ্রিডি জগতে একটি কথা আছে। আপনি অ্যানিমেশন তৈরি করার আগে যত বেশি প্রি-প্রোডাকশনের কাজ সম্পন্ন করবেন তত বেশি আপনার কাজের মান নিখুঁত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
থ্রিডি অ্যানিমেশনের প্রতিটি দৃশ্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করে। প্রথমটি প্রি- প্রোডাকশন, এরপর প্রোডাকশন এবং সর্বশেষে পোস্ট প্রোডাকশন। তিনটি ধাপের সমন্বয়ে তৈরি হয় একেকটি ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন। গেমিং, ভিডিও, বিজ্ঞাপন প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ধাপ অনুযায়ী কাজ করা হয়।
স্টোরিবোর্ড
থ্রিডি অ্যানিমেশনে প্রি-প্রোডাকশন
চলচ্চিত্রে প্রি-প্রোডাকশন বলতে আমরা যেমন গল্প, স্টোরিবোর্ড, লোকেশন, ক্যারেক্টার, অভিনয়ের বিষয়কে বুঝি। তেমনি থ্রিডি অ্যানিমেশনে থাকে এরকম কিছু বিষয়বস্তু। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, চলচ্চিত্র বাস্তব জীবন আর থ্রিডি অ্যানিমেশন হচ্ছে প্রযুক্তির স্পর্শে পর্দার জন্য তৈরি ত্রিমাত্রিক কার্টুন মুভি। গেমিং, মুভি প্রভৃতিতে প্রি- প্রোডাকশনগুলোর জন্য কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করার বিষয় থাকে। আপনার গল্প কী হবে? জনপ্রিয় ‘টম্ব রাইডার’ ভিডিও গেমের কথা যদি ধরে নিই, তাহলে কী হচ্ছে? একজন কেন্দ্রীয় সাহসী নারীকে ঘিরে এর গল্প এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি ঠিক এমন, আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি একটি গল্প তৈরি করেছেন এবং ওই গল্পে কতটি ক্যারেক্টারকে রাখছেন সেই গল্পকে সবার কাছে উপস্থাপিত করতে। গল্পে কিছু কথা থাকবে। গল্পের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত থাকবে, যা মানুষকে আবেগতাড়িত করবে। আপনাকে ভাবতে হবে গল্পের প্রয়োজনে কেমন পরিবেশ চারপাশে রাখতে হবে। এই বিষয়গুলোর একটি স্টোরিবোর্ড করতে হবে। একজন থ্রিডি আর্টিস্ট গল্পে স্টোরিবোর্ড দেখেই গল্পের ক্যারেক্টার, পরিবেশ তৈরি করে। স্টোরিবোর্ড প্রতিটি অভিপ্রায়, ক্যারেক্টারের মুভমেন্ট সিকুয়েন্সের পরপর সন্নিবেশিত থাকে। এ সন্নিবেশগুলো থেকে থ্রিডি আর্টিস্ট যেমন মডেলগুলো তৈরি করার বিষয় ধারণা পায়, তেমনি অ্যানিমেটর বুঝতে পারে প্রতিটি ধাপে কেমন হবে অ্যানিমেশনের মডেলগুলোর চলাফেরা। কত সেকেন্ডের জন্য কত টাইমলাইনে কী রকম হবে ক্যারেক্টার, তা সহজে অনুধাবন করতে হয় এ স্টোরিবোর্ডের সহায়তায়।
স্টোরিবোর্ডের মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরতে চিত্রকরের কাজ করতে হয়। তিনি তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ভাগে তুলে ধরেন ছবি। গল্প তৈরি হলেই স্টোরিবোর্ডের কাজের ওপর নির্ভর করছে অ্যানিমেশন তৈরি হওয়ার বিষয়। প্ল্যানিং, ডিজাইন এবং রিসার্চের পর গল্প এবং স্টোরিবোর্ড তৈরি হওয়া শুরু হয়। প্রি-প্রোডাকশনে অ্যানিমেশন টিম দুটি ভাগে থাকে। এক অংশের দল হচ্ছে আর্টিস্ট এবং অন্য অংশে ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের কাজ প্রোডাকশন প্ল্যান করা এবং আর্টিস্টদের কাজ আইডিয়াটি নিয়ে গল্প এবং ডিজাইন করা। ম্যানেজমেন্ট দল বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করে প্ল্যানিংয়ের পাশাপাশি।
থ্রিডি অ্যানিমেশন কাদের জন্য
অ্যানিমেশনের গল্পের ক্যারেক্টারগুলো কী এবং কেমন? কাদের জন্য এই প্রজেক্ট করবে এবং দর্শক কোন বয়সের? গল্পে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে অ্যানিমেশন মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে? অর্থাৎ, একটি মেসেজ থাকবে অ্যানিমেশনটিতে, যা পার্থক্য তৈরি করবে অন্য অ্যানিমেশন থেকে এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। গল্প থেকে উঠে আসে স্ক্রিপ্ট। ক্যারেক্টারগুলোর ডায়ালগ, পরিবেশ এবং সময়ের গতিময়তা দেয়ার একটি কাগুজে উপস্থাপন।
থ্রিডি আর্টিস্টের জন্য প্রোডাকশনের মডেল এবং গল্প, সাউন্ড, স্ক্রিপ্ট, স্টোরিবোর্ড যখন প্রস্তুত, তখন প্রোডাকশন অর্থাৎ প্রথম কাজ থ্রিডি সেট ডিজাইন শুরু হয়। এ ধারাবাহিকতার অংশ হচ্ছে বহুল অপেক্ষা করা থ্রিডি মডেল প্রোডাকশন