লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি পর্ব-০২
থ্রিডি অ্যানিমেশন তৈরি পর্ব-০২
ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি অ্যানিমেশনে থ্রিডিএস ম্যাক্স (৩উঝ গঅঢ) সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবহার হওয়া একটি সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারের কল্যাণে অ্যানিমেটর বা থ্রিডি আর্টিস্টদের ত্রিমাত্রিকবিষয়ক কাজ করা বেশ সহজতর হয়েছে। ১৯৮২ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘অটোডেস্ক’ সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত ডিজাইন, আর্কিটেকচার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও থ্রিডি অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনে এ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের জনপ্রিয় হলিউড চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটার’-এ ভিজ্যুয়াল ইফেক্টে ‘অটোডেস্ক’ কোম্পানির মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। এছাড়া ‘ইনসেপশন’, ‘আয়রনম্যান’ ও ‘টাইটানিক’-এর মতো সাড়া জাগানো হলিউড চলচ্চিত্রেও এ প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ভিজ্যুয়াল ইফেক্টে ব্যবহার হয়েছে।
থ্রিডিএস ম্যাক্স
১৯৯৬ সালে বিশ্ব বাজারে ‘অটোডেস্ক’ কোম্পানি থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যারের প্রথম সংস্করণ আনে। সর্বশেষ ‘থ্রিডিএস ম্যাক্স ২০১৮’ সংস্করণ আনে ‘অটোডেস্ক’ কোম্পানি ২০১৭ সালে। প্রতিবছর থ্রিডি আর্টিস্টদের জন্য নতুন সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তারা আপডেট সংস্করণ রিলিজ দেয়। কী থাকে এ থ্রিডিএস ম্যাক্সের নতুন সংস্করণে? প্রতিনিয়ত নতুন কিছু টুল বা প্লাগইন যুক্ত হয় তাদের সফটওয়্যারে। থ্রিডি মডেল বা ক্যারেক্টার তৈরিতে কত বেশি প্রাণবন্ত পরিবেশ আনা যায়, তার জন্য নতুন নতুন ম্যাটেরিয়াল বা উপাদান যুক্ত করা হয়। পলিগনগুলো ব্যবহারে আসে নতুনত্ব, যুক্ত হয় নতুন গ্রাফিক্স ফিচার। সর্বোপরি থ্রিডি আর্টিস্টদের জন্য থ্রিডির কাজ আরও বেশি সহজ এবং আধুনিক পেশাদার করার উপযোগী করা হয়।
থ্রিডিএস ম্যাক্স ইনস্টলে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ ৮.১ ও উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করা যাবে। আর কমপিউটারের কনফিগারেশনের জন্য ন্যূনতম ৬৪ বিট ইন্টেল মাল্টি কোর প্রসেসর, ন্যূনতম ৪ জিবি র্যাম ও ন্যূনতম ৬ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস প্রয়োজন। তাছাড়া থ্রিডি অ্যানিমেশনের কাজে গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য এঞঢ সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড কিংবা (https://knowledge.autodesk.com/certified-graphics-hardware ) সাইট থেকে থ্রিডিএস ম্যাক্সের জন্য কেমন গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন সে বিষয়ে তথ্য জানতে পারবেন।
অটোডেস্কের থ্রিডিএস ম্যাক্স
থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যার ‘অটোডেস্ক‘ কোম্পানির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https:/ww/w.autodesk.com/ থেকে যেকেউ তার প্রয়োজন অনুযায়ী ভার্সনের অরিজিনাল কপি কিনতে পারেন। বর্তমান থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যারের ২০১৯ ভার্সন এসেছে।
থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যারের ২০১৯ ভার্সন
থ্রিডিএস ম্যাক্স ২০১৯ ভার্সনে পার্টিকল ফ্লো ইফেক্ট, জিওডেসিক ভক্সেল অ্যান্ড হিট ম্যাপ স্কিনিং, সিম্পল সিম্যুলেশন ডাটা ইমপোর্ট, ম্যাক্স ক্রিয়েশন গ্রাফিক্স কন্ট্রোলার, ফিজিক্যাল ক্যামেরা, অ্যাকটিভ শেড রেন্ডারিং, থ্রিডিএস ম্যাক্স ইন্টারেকটিভ, অ্যাসেট লাইব্রেরি, পাইপলাইন টুল ইন্টিগ্রেশন, স্মার্ট অ্যাসেট প্যাকেজিং, ডাটা চ্যানেল মডিফায়ার, মেশ অ্যান্ড সার্ফেস মডেলিং, হেয়ার মডিফায়ার, ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট, উড টেক্সচারসহ আরও অনেক ফিচার রয়েছে, যা ২০১৯ ভার্সনের থ্রিডিএস ম্যাক্সে এনেছে বেশ পরিবর্তন। অল্প সময়ে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি কনটেন্ট এবং ভালো ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন তৈরিতে বেশ ভূমিকা থাকবে এর টুলগুলোর।
থ্রিডিএস ম্যাক্স ব্যবহার
থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যার কমপিউটারে ইনস্টল করার পর কাজ শুরু করার আগে সফটওয়্যারটি ওপেন করতে হবে। সফটওয়্যার ওপেন করলে প্রথম ছবির মতো থ্রিডিএস ম্যাক্সের একটি পেজ পাওয়া যাবে। ছবিতে এখানে ফাইল ওপেন করার জায়গায় থ্রিডিএস ম্যাক্সের লোগো সংবলিত একটি অংশ লক্ষ করা যায়। এখানে ক্লিক করলে বেশ কিছু অপশন আসে। সেগুলো হলো New, Reset, Open, Save, Save as, Import, Export প্রভৃতি।
এখন থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যারে এ অপশনগুলোর কী কাজ?
নতুন কোনো ফাইল তৈরি করতে হলে ঘব-িতে ক্লিক করতে হয়। আবার স্থাপনের জন্য জবংবঃ, পূর্বের কোনো তৈরি করা থ্রিডিএস ম্যাক্স ফাইল ওপেন করতে হলে ঙঢ়বহ অপশন ব্যবহারের প্রয়োজন পরে। আর ঝধাব অপশনটির কথা আমরা সবাই জানি। কোনো তৈরি করা ফাইল সংরক্ষণ করতে হলে আপনাকে ঝধাব অপশনে ক্লিক করে সেই ফাইলটি সংরক্ষণ করতে হয়। আর সংরক্ষণ করা ফাইলটি যদি আপনি আবার অন্য কোনো নামে সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে ব্যবহার করতে হবে ঝধাব ধং অপশনটি। এভাবে থ্রিডিএস ম্যাক্সে বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
থ্রিডিএস ম্যাক্সে ত্রিমাত্রিক ফাইলগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়
ফাইল নাম এখানে new.max হিসেবে রাখা হয়েছে এবংsave as type ‡ Z 3ds Max (*.max) হিসেবে সেভ করতে হয়। এভাবে ফরম্যাটে থ্রিডি অ্যানিমেশন বা মডেলগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ ফরম্যাট থেকে ফাইলগুলো রেন্ডারিং বা আউটপুট তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে কাজ শেষে সংরক্ষিত সবগুলো ফাইল পৃথকভাবে রেন্ডার করে আউটপুট নেয়া হয়। পরে ফাইলগুলো একসাথে এডিট করে সংযোগ করা হয়। এর আগে একজন থ্রিডি আর্টিস্টের অনেকগুলো কাজ করতে হয়। কাজগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং এসব পদক্ষেপ পুরো একটি থ্রিডি কাজের গতিকে সামনের দিকে পথ চলায় বেশ ত্বরান্বিত করে।
চিত্র : অটোডেস্ক থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যার ওপেন
থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যারের মেনুবার
থ্রিডিএস ম্যাক্সে অন্যান্য সফটওয়্যারের মতো মেনুবার রয়েছে। একজন থ্রিডি আর্টিস্ট ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরিতে সেই মেনুবারগুলোর সহায়তা নেন।
এ মেনুবারগুলো কী কী?
সফটওয়্যারটি ওপেন করার পরই এর উপরের দিকে Edit, Tools, Group, Views, Modifiers, Animation, Graph Editors, Rendering, Customs, Max script-সহ বেশ কয়েকটি অপশন রয়েছে। এর প্রতিটি মেনুবার অপশনের রয়েছে বেশকিছু সাব অপশন। যে অপশনগুলো ব্যবহার করে একজন থ্রিডি আর্টিস্ট অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। যেমন ঊফরঃ অপশনসহ বেশ কিছুর কথা উল্লেখ করার মতো।
এডিট
এডিট অপশনের অন্তর্গত রয়েছে Undo, Redo, Hold, Delete, Move, Rotate, Scale, Transform অপশনসহ বেশ কিছু অপশন। এডিট বলতে আমরা বুঝে থাকি কোনো কিছু সম্পাদনা করা। এর অন্তর্গত এ সাব অপশনগুলোর কাজ থ্রিডি মডেল তৈরিতে অনেক গতি আনে এবং ত্রিমাত্রিক কাজটিকে সহজ করতে ভূমিকা রাখে। যেমন কোনো ফাইল উবষবঃব হয়ে গেলে টহফড় অপশন ব্যবহার করে তা আবার ফিরিয়ে আনা যায়। আর কোনো কিছু উবষবঃব করতে হলে উবষবঃব অপশন ব্যবহার করতে হবে। থ্রিডি মডেলের বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট করার জন্য গড়াব ও জড়ঃধঃব অপশন ব্যবহার করা যায়। এতে থ্রিডি মডেলিংয়ের কাজগুলো অনেক বেশি সহজে করা যায়। তাছাড়া ঞৎধহংভড়ৎস-সহ বেশ কিছু টুল অপশন রয়েছে, যার সহযোগিতায় থ্রিডি আর্টিস্টরা তাদের কাজ করেন অনেক সহজে।
চিত্র : অটোডেস্ক থ্রিডিএস ম্যাক্স সফটওয়্যার (মেনুবার ও সিলেকশন টুল)
টুলস
টুলস মেনুবারের এ অপশনে রয়েছে বিভিন্ন ডিসপ্লে, অ্যালাইন, অ্যারেসহ লেয়ার অপশনের বেশ কিছু সুবিধা, যা থ্রিডি অ্যানিমেশনে লেয়ার বা বিভিন্ন পার্ট নিয়ে কাজ করার সময় একজন থ্রিডি আর্টিস্টকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। এতে কাজগুলো অনেক তাড়াতাড়ি করতে সুবিধা হয়।
গ্রুপ
গ্রুপ মেনুর অপশনে রয়েছে Group, Ungroup, Attach, Detach-এর মতো বেশ কিছু অপশন। Group I Ungroup অপশনের কাজ কী? থ্রিডি মডেল তৈরির সময় প্রতিটি থ্রিডিএস ম্যাক্স ফাইলে অনেকগুলো অবজেক্ট নিয়ে কাজ করতে হয়। এ অবজেক্টগুলো একটি মডেলের অংশ থাকে। একজন থ্রিডি আর্টিস্ট তার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করার সময় সেই অবজেক্টগুলো যুক্ত করে। যখন একসাথে যুক্ত করার প্রয়োজন পরে অবজেক্টগুলো, তখন Group অপশনে ক্লিক করে প্রতিটি অবজেক্ট একসাথে যুক্ত করা হয়। আবার Ungroup অপশন ব্যবহার করে সেই মডেলটির প্রতিটি অংশ পৃথক করা হয়। এভাবে প্রতিটি কাজ থ্রিডি আর্টিস্টরা সুন্দর ও সহজভাবে করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করে। কোনো নির্দিষ্ট অংশের সাথে আরেকটি নির্দিষ্ট অংশ যুক্ত করার জন্য থ্রিডিএস ম্যাক্সে Attach অপশনটি ব্যবহার করা হয় এবং পৃথক করার জন্য Detach অপশন। যুক্ত ও পৃথক করার অপশন বাদেও আরও বেশ কিছু অপশন এখানে ব্যবহার হয়।
ভিউ
এ অপশনে রয়েছে ক্যামেরা ব্যবহার করে বিভিন্ন সাপেক্ষে বস্তু বা অবজেক্টটির বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল জানার উপায়। ত্রিমাত্রিক অবজেক্ট কেমন মনে হচ্ছে সে বিষয়গুলো জানার জন্য এখানে যেমন তৈরি করা যায় ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, ঠিক তেমনি আরও নিজের ইচ্ছে মতো ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল রয়েছে। অ্যাঙ্গেলগুলোর কনফিগারেশন তৈরি করার সুবিধা রয়েছে এ অপশনের সাব-অপশনে। থ্রিডি অবজেক্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে লাইট ও ছায়ার কাজ। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার অপশন রয়েছে এ অপশনের অন্তর্গত।
ক্রিয়েট
এ মেনুর অপশনটির অন্তর্গত রয়েছে এমন কিছু বিষয় তৈরি করার অপশন, যা অ্যানিমেশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবজেক্ট তৈরি করা ছাড়াও থ্রিডি অ্যানিমেশনে পরিবেশ তৈরির একটি বিষয় থাকে। এ পরিবেশ চারপাশে কী আছে তা নয়। আলো, ক্যামেরার কাজ। বিভিন্ন দিক থেকে আলো এবং ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ধরে অবজেক্ট অবস্থান চিহ্নিত ও প্রদর্শন করা এ অপশনের কাজ। প্রকৃতপক্ষে ত্রিমাত্রিক একটি পরিবেশ সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোর সুন্দর করে ব্যবহারে এ অপশন। এছাড়া পার্টিকল, কম্পাউন্ডসহ বিভিন্ন ধরনের আকার ব্যবহারের অপশন রয়েছে।
থ্রিডি অ্যানিমেশন একটি বিস্তৃত বিষয়। এর বিভিন্ন অপশন ও টুলের ব্যবহারগুলো অ্যানিমেশনে আনে দারুণ ছন্দময়তা। একজন থ্রিডি আর্টিস্টের নিজস্ব দক্ষতা এবং ভালো একটি টিমওয়ার্ক সুন্দর অ্যানিমেশন উপহার দিতে পারে। লেখার মাধ্যমে পুরো বিষয়গুলোর ব্যবহার তুলে ধরার প্রয়াস আছে। যত বেশি চেষ্টা থাকে একজন থ্রিডি আর্টিস্টের তত ভালো কাজ হতে থাকে। তাই চেষ্টা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় এ সেক্টরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।