লেখক পরিচিতি
								
									
																		
										
																						
											লেখকের নাম:
												সাজ্জাদ হোসেন											
											
										 
																																								
										
											মোট লেখা:২										
									 
																		
								 								
								
																লেখা সম্পর্কিত
								
								
								
																
																
								
								
							 
						 
						
						
										এবার রোবট কৃষক 						
						
							এবার রোবট কৃষক
মো: সা’দাদ রহমান
এমন কিছু কাজ আছে, যা আজো রোবট করতে পারে না। অনেক কঠিন কঠিন কাজ রোবট সুন্দরভাবে করতে পারলেও কিছু সহজ-সরল কাজ রোবট দিয়ে করানো যায় না। যেমন শতমূলী গাছের বীজ বপন ও তা তুলে আনার কাজ আজো রোবট করতে পারেনি। অতএব শতমূলী গাছের চাষবাস করতে আপনার দরকার হয় মানব-কৃষকের। কিন্তু কৃষকেরা বলছেন, এই কাজটি রোবট দিয়ে করানো দরকার। কারণ, মানুষ এ কাজটি আর করে না কিংবা করতে চায় না।
নেদারল্যান্ডসের কৃষক মার্ক ভেরমির শতমূলীর চাষবাস নিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়েন। কারণ, তিনি তার ক্ষেতে শতমূলী চাষ এবং এ ফসল ঘরে তোলার জন্য কোনো কৃষি শ্রমিক পাচ্ছিলেন না। তিনি যে শ্রমিককেই এনে কাজে লাগাতেন, সেই এক সময় চলে যেত। সে জন্য তাকে নতুন নতুন কৃষি শ্রমিক এনে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হতো। এ জন্য তার চাষবাসের খরচও বেড়ে যেতে থাকে। সাদা শতমূলী ক্ষেত থেকে তুলতে হয় একটি বিশেষ সময়ে, যখন এটি মাটির নিচে থাকে। নতুবা এটি সবুজ হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময়টা চেনা খুব কঠিন কাজ। সঠিক সময় চিনে এগুলোকে যথাসময়ে ক্ষেত থেকে না তুললে এ ফসল সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। 
এ কারণে ২০০০ সালে এই পরিস্থিতিতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মার্ক ভেরমির তার উদ্ভাবক ভাই অ্যাডকে একটি চ্যালেঞ্জের কাজ দিয়ে বসেন। কাজটি হচ্ছে, এমন রোবট বানাতে হবে, যাতে এই রোবট শতমূলী ক্ষেতে মানুষের মতো                    কৃষিকাজ করতে পারে। তখন সেখানে আর মানব           কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত মানব কৃষি শ্রমিক ছাড়া ক্ষেত থেকে শতমূলী তোলা বিপজ্জনক। কারণ, আনাড়ি অপ্রশিক্ষিত কৃষক এগুলো তুলতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলে। অতএব এমন রোবট চাই, যা এ কাজটি মানুষের চেয়েও আরো ভালোভাবে করতে পারে।
মার্ক ভেরমির ভাই অ্যাড কয়েক দশক ধরে ডিজাইন করে আসছিলেন সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির নানা ধরনের জটিল যন্ত্রপাতির। তিনি তার ভাইয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি ধারণার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষ চালান। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চৌদ্দ বছর পর যখন কৃষি শ্রমিকের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করল, তখন মার্ককে আবার তাগাদা দিলেন এমন যন্ত্র বানাতে হবে, যা মাটির নিচে গভীরে দেখতে পারে। কারণ. তা না হলে মাটির নিচ থেকে মানুষের মতো সাদা শতমূলী তুলে আনতে পারবে না ওই রোবট যন্ত্র।
এবার এ কাজ করতে অ্যাড ব্যবহার করেন এক নতুন প্রযুক্তি। তিনি বলেন, ‘বাছাই করা কিছু ফসল তোলার.কাজ সত্যিই খুব জটিল। এর জন্য প্রয়োজন উচ্চপ্রযুক্তির সেন্সর ব্যবহার। এখানে প্রয়োজন ইলেকট্রনিকস ও রোবট। কিন্তু, এই জটিল হাইটেক মেশিন বানানো সম্ভব। কারণ, প্রযুক্তির দ্রæত উন্নয়ন ঘটছে।’
অ্যাডের স্ত্রী থেরেসি ভ্যানভিনকেনকে সাথে নিয়ে এরা শুরু করেন রোবট প্রতিষ্ঠান ঈবৎবংপড়হ (সিরিসকন)। ভ্যানভিনকেন জানান, শতমূলী চাষীরা এটি চাষ করতে জানত। আর মার্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে তা বিক্রি করার। মার্ক করেছেন এর বাণিজ্যিক কাজের অংশটি। অ্যাড করেছেন উদ্ভাবনের কাজটি। আর থেরেসি দেখাশোনা করেছেন অর্থনীতির দিকটি। ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বের তাদের কোম্পানি ইনকরপোরেটেড হয়। এর পরদিনই নেমে আসে ট্র্যাজেডি। তিন সন্তানের জনক ৫১ বছর বয়েসী মার্ক হঠাৎ করে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হন। তাকে কয়েক দিন রাখা হয় কৃত্রিম কোমায়। তার স্ত্রী জানান, যখন তার কোমাবস্থার অবসান হয়, তখন তিনি বার বার এই মেশিনের কথাই শুধু বলতে লাগলেন। কিন্তু তিনি এই রোবটকে মাঠে কাজ করতে দেখে যেতে পারেননি। তিনি সেরিব্রাল হেমারেজের শিকার হয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যান। তার স্বপ্নের রোবট   কৃষককে তার ক্ষেতে কাজ করতে দেখার আগেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। তার মৃত্যুতে আঘাত পেয়ে থেরেসি ও অ্যাড একবার ভাবেন, এই রোবট তৈরির চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেবেন। ভ্যানভিনকেন বলেন, আমিও বহুবার ভেবেছি, এই রোবট বানানোর চিন্তা ছেড়ে দেব। 
কিন্তু এরই মধ্যে এর পেছনে হাজার হাজার ইউরো খরচ হয়ে গেছে। তাই এরা ভাবলেন, এই কাজটিকে সামনে এগিয়ে নেয়া দরকার। তারা এতে সফলও হলেন। আজ এরা এদের প্রথম বাণিজ্যিক রোবট কৃষক যন্ত্রটি বিক্রি করেছেন ফ্রান্সের কাছে। এর এই থ্রি-রো সংস্করণটি ৭০ থেকে ৮০ জন কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে সক্ষম। বাজারে এটিই প্রথম সিলেকটিভ হার্ভেস্টিং মেশিন।
ভ্যানভিনকেন আরো বলেনÑ ‘আমি নিশ্চিত এটি হবে এ ধরনের প্রথম রোবট। আর আগামী দিনে আমরা পাব নানা ধরনের সিলেকটিভ মেশিন।’
এই রোবট কৃষক প্রতিঘণ্টায় ২৬০০টি শতমূলীর কাটিং রোপণ করতে পারে। একজন দক্ষ কৃষক সেখানে পারেন ১৪০০ থেকে ২০০০ কাটিং রোপণ করতে। তা ছাড়া একজন কৃষি শমিক পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন, অপরদিকে মেশিন কখনো পরিশ্রান্ত হয় না। 
ফ্লোরেন্সিসের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্ক স্ট্রাইক মনে করেন, রোবট ক্রমে ক্রমে সব কৃষি শ্রমিককে অপসারণ করবে। এটি ঠিকÑ মানব কৃষি শ্রমিকের অভাবে আমরা রোবট কৃষকের দিকে যেতে বাধ্য হয়েছি। উন্নয়ন বজায় রাখতে এর কোনো বিকল্প ছিল না আমাদের কাছে