লেখক পরিচিতি
								
									
																		
										
																						
											লেখকের নাম:
												মো: সাদা’দ রহমান											
											
										 
																																								
										
											মোট লেখা:১৩										
									 
																		
								 								
								
																লেখা সম্পর্কিত
								
								
								
																
																
								
								
							 
						 
						
						
										অপারেশন থিয়েটারে আসছে নতুন সার্জিক্যাল রোবট 						
						
							অপারেশন থিয়েটারে আসছে নতুন সার্জিক্যাল রোবট
মো: সা’দাদ রহমান
বহু বছর থেকেই রোবটগুলো কাজ করে আসছে সার্জনদের তথা শল্যচিকিৎসকদের কারিগরি হাত হিসেবে। অপারেশন থিয়েটারে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে নানা জটিল শল্যচিকিৎসায়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার হাজারেরও বেশি এ ধরনের সার্জিক্যল রোবট হ্যান্ড বা শল্যচিকিৎসার কারিগরি রোবট হাত ব্যবহার হয়েছে বিশ্বের নানা দেশের হাসপাতালগুলোতে। আর এগুলো অংশ নিয়েছে ৭৫ হাজার রোগীর অপারেশনে। এর বেশিরভাগ অপারেশনই ছিল মূত্রথলির গ্রিবাসংশ্লিষ্ট গ্রন্থিবিশেষ ও জরায়ুর (প্রস্টেট গ্র্যান্ড ও ইউটেরাস) অপারেশনে। এছাড়া কিডনি, কোলন (মলাশয়), হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের অপারেশনেও এসব রোবট হাত সার্জনদের সহায়তা করেছে। এসব যান্ত্রিক হাতের প্রায় সবগুলোই ছিল একটি একক কোম্পানির। ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভেইলের ‘ইনটুইটিভ সার্জিক্যাল’ এই সার্জিক্যাল রোবট বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে সেই ২০০০ সাল থেকে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এই কোম্পানির ‘দ্য ভিঞ্চি’ নামের সার্জিক্যাল রোবটকে অনুমোদন দেয় সে দেশের বাজারে এটি ব্যবহারের জন্য।
সম্প্রতি এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দুটি কারণে। একটি কারণ হচ্ছে, অব্যাহতভাবে চলছে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করার কাজ। এর অর্থ হচ্ছে, আগের চেয়ে আরো বেশি স্মার্ট সার্কিট এখন বসানো যাবে আরো ক্ষুদ্রতর ও অধিকতর কুশলী রোবট হাতে। এগুলো হবে ইনটিউটিভ সার্জিক্যালের উদ্ভাবিত রোবট হাতগুলোর চেয়ে উন্নততর। এর ফলে সার্জিক্যাল রোবটে আরো অনেক প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো যাবে। ফলে সার্জিক্যাল রোবটের বাজারও সমৃদ্ধ হবে। অন্য কারণ হচ্ছে, সার্জিক্যাল রোবট এখন জেনেরিক হয়ে ওঠার পথে। ইনটুইটিভের অনেক প্যাটেন্টের মেয়াদ সম্প্রতি উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অন্য অনেকগুলোর ক্ষেত্রেও তাই ঘটতে যাচ্ছে। এর ফলে আশবাদী স্টার্টআপ ও প্রতিষ্ঠিত হেলথকেয়ার কোম্পানিগুলো পরিকল্পনা করছে তাদের রোবট মেশিন এই ক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর। 
যদিও ‘রোবট’ শব্দটি নির্দেশ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম একটি মেশিনকে, দ্য ভিঞ্চি ও এর অন্যান্য সচরাচর পরিচিত প্রতিযোগী রোবটগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় মানব-সার্জন দিয়ে। এরা সব সময় সার্জনদের সহায়তা করে। এগুলোকে সার্জনদের যন্ত্রপাতি হিসেবেই ধরা হতো, যদিও তারা এটিকে সরাসরি হাতে ধরে কাজ করতেন। দ্য ভিঞ্চির রয়েছে চারটি হাত। এর তিনটি হাত বহন করতে পারে ছোট ছোট সার্র্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, যার একটি কাজ করে ক্যামেরা হিসেবে। সার্জনেরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন একটি কন্সোল দিয়ে, যা সংযুক্ত আছে একটি জয়স্টিক ও প্যাডেলগুলোর সাথে। এর সাথে আছে একটি ব্যবস্থা, যাতে এর অপারেটরের কোনো কম্পন বা দুর্ঘটনা সৃষ্টিকর নড়াচড়া ধরা পড়ে। এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি শবুযড়ষব ংঁৎমবৎু, যেখানে যন্ত্রটি একটি ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে রোগীর দেহে। এখানে বড় ধরনের কাটাছেঁড়ার দরকার হয় না। এর ফলে প্রক্রিয়াটিকে করে তুলেছে আরো প্রবেশমূলক। এতে ঝুঁকি কমেছে এবং রোগী সেরে ওঠে তাড়াতাড়ি। কিন্তু এই দ্য ভিঞ্চির দাম ২০ লাখ ডলার। প্রতিবছর এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যদি নতুনতর কোনো সার্জিক্যাল রোবটের দাম আরো কমিয়ে আনতে পারে, তখন রোবট সার্জারির উপকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে আরো বেশি করে। 
রোবট ভার্সিয়াস
ব্রিটিশ কোম্পানি ‘ক্যামব্রিজ মেডিক্যাল রোবটিকস’ (সিএমআর) এই গ্রীষ্মে উম্নোচন করেছে এর মেডিক্যাল রোবট Versius। চলতি বছরেই এই রোবট বাজারে ছাড়া যাবে বলে এদের আশা। দ্য ভিঞ্চি থেকে ব্যতিক্রমী এই রোবটের হাত দুটি সংযুক্ত রয়েছে নিজস্ব ভিত্তির ওপর থাকা একেকটি একক কার্টের ওপর। এর হাতগুলো ছোট ও হালকা। ফলে একজন সার্জন এগুলো ইচ্ছেমতো অপারেশন টেবিলের চারপাশে সহজেই নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি প্রয়োজনে এটি এক অপারেশন টেবিল থেকে আরেক অপারেশন টেবিলে নেয়া যায় সহজে। এর ফলে হাসপাতালের প্রয়োজন হয় না এই রোবট সার্জিারির জন্য সুনির্দিষ্ট ডেডিকেটেড অপারেশন থিয়েটার। 
দ্য ভিঞ্চি হচ্ছে একটি শিল্প রোবটের মতো। ভার্সিয়াসের হাতগুলো অনেকটা মানুষের হাতের মতো। এর রয়েছে তিনটি জয়েন্ট- একটি কাঁধে, একটি কনুইয়ে এবং একটি কব্জিতে। এর ফলে একজন সার্জন যেকোনো কৌণিক অবস্থানে অপারেশন চালাতে পারেন। কোম্পানিটি এখনো ঠিক করেনি এই হাতের দাম কত হবে। তবে কোম্পানি আশা করছে, এই রোবট অপারেশনে খরচ হবে মানুষের হাতে করা অপারেশনের তুলনায় মাত্র কয়েকশ’ ডলার বেশি। আর দ্য ভিঞ্চির বেলায় এই পার্থক্য কয়েক হাজার ডলার।
ভার্সিয়াস প্রতিযোগিতা করবে দ্য ভিঞ্চির সাথে বিশেষত অ্যাবডমিনাল ও থরেটিক (উদর এবং গলা ও কণ্ঠ-সংক্রান্ত) সার্জারির ক্ষেত্রে। অন্যরা রোবট উদ্ভাবন করতে চাইছে আরো নতুন নতুন নানা ক্ষেত্রে কাজের উপযোগী করে। ইতালির পিসাভিত্তিক কোম্পানি ‘মেডিক্যাল মাইক্রোইনস্ট্র–মেন্টস’ (এমএমআই) সম্প্রতি একটি রোবট প্রদর্শন করেছে, যা ব্যবহার হবে রিকনস্ট্রাকটিভ মাইক্রোসার্জারির কাজে। এই প্রক্রিয়ায় সার্জনেরা একটি মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে দেখে রিপেয়ার করেন বিনষ্ট হয়ে যাওয়া রক্তকোষ ও স্নায়ুকোষ। এই রোবট সার্জনদের সুযোগ করে দেয় দুটি ক্ষুদ্র রোবট কব্জি নিয়ন্ত্রণের। এই কব্জির দৈর্ঘ্য ৩ মিলিমিটার। আর এর অগ্রভাগে সংযুক্ত রয়েছে সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি।
এমএমআইয়ের এই ডিভাইসটি কাজ করতে কন্ট্রোল কন্সোল ব্যবহার করে না। বরং এর পরিবর্তে এখানে সার্জন রোগীর পাশে বসেন এবং যন্ত্রটি ব্যবহার করেন এক জোড়া জয়স্টিকের সাহায্যে। এই জয়স্টিকে ধরা পড়ে নড়াচড়া। ফলে এর সাহায্যে অপারেশন যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে মাইক্রোস্কোপে একজন সার্জন দেখে কোষগুলো আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে পারেন। 
সিএমআর এবং এমএমআই এগুলো সবই স্টার্টআপ। কিন্তু দুটি বড় কোম্পানি যোগ দিচ্ছে মেডিক্যাল রোবট ইন্ডাস্ট্রিতে। লক্ষ্য আরো উন্নততর মেডিক্যাল সার্জিক্যাল রোবট তৈরি করা। এর একটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক। অপরটি ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’, যা গুগলের লাইফ-সায়েন্স ডিভিশন ‘ভেরিলি’র সাথে মিলে যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলেছে ‘ভার্ব সার্জিক্যাল’। এখনো মেডট্রনিক তার ডিজাইন করা রোবট সম্পর্কে তেমন কিছুই প্রকাশ করেনি। তবে এটি চলতি বছরেই রোগীদের কাছে বলে জানিয়েছে। মেডট্রনিক MIRO নামের রোবটের লাইসেন্স নিয়েছে। এটি তৈরি করছে জার্মানির স্পেস রিচার্স এজেন্সি। ভার্ব সার্জিক্যাল গঠিত হয়েছে ২০১৫ সালে। গত বছরের প্রথম দিকে এটি এর প্রটোটাইপ প্রদর্শন করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ভার্ব শুধু সার্জিক্যাল রোবটই তৈরি করছে না, এর রোবটগুলো পরস্পরের কাছ থেকে শেখার সুযোগও পাবে