লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: সাদা’দ রহমান
মোট লেখা:১৩
লেখা সম্পর্কিত
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানার কথা
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানার কথা
মো: সা’দাদ রহমান
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার এখন সর্বত্র। এরপরও অনেক ভোক্তা ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এই কার্ড সম্পর্কিত সাধারণ মৌল জ্ঞান রাখেন না। এরা জানেন না, কী করে ক্রেডিট কার্ড এর কাজ করে। কোন কার্ড কার জন্য উপযোগী। এই লেখাটি ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত একটি প্রাথমিক জ্ঞানমূলক আলোচনা- কখন কোথায় এসব কার্ড ব্যবহার করতে হবে; কী করে এগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়; আপনার মাল্টিপল ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন আছে কি না; বিভিন্ন ধরনের রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম বলতে কী বোঝায়; আপনার কাজে ব্যবহারের জন্য কোন ক্রেডিট কার্ডটি উপযুক্ত ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর আলোকপাত রয়েছে এই লেখায়।
ব্যবসায় বনাম ব্যক্তিগত ব্যবহার
আপনি যদি কোনো ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকেন, তবে আপনার কোম্পানির চার্জগুলো ব্যক্তিগত কর্মকান্ড থেকে পুরোপুরি আলাদা রাখুন। কারণ, এক-দুই মাস আগে করা লেনদেনটি করা হয়েছিল ব্যবসায়িক কাজে, না ব্যক্তিগত কাজে তা চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
সর্বোত্তম কার্ডটি বেছে নেয়া
নিজের কাজের জন্য সর্বোত্তম কার্ডটি বেছে নেয়ার জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় বিবেচনা করতে হয়। ক্রেডিট কার্ড কিনতে যাওয়ার আগে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কি প্রতি মাসে না প্রতি ব্যালেন্সে কার্ড পে-অফ করার পরিকল্পনা করছেন। আপনি যদি প্রতি ব্যালেন্সে কার্ডটি পে-অফ করতে চান, তবে এমন একটি ক্রেডিট কার্ড খুঁজে নিন, যেটির কোনো ফি নেই অথবা ছোট অঙ্কের বার্ষিক ফি সংবলিত। আর আপনি যদি পরিকল্পনা করেন ব্যালেন্স ক্যারি করবেন, তবে সুদহার হবে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি বিবেচ্য বিষয় বা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর। ১০ হাজার ডলার ব্যালেন্সের জন্য ১৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ সুদহারে ব্যবধান দাঁড়াবে মোটামুটি ৫০০ ডলার।
অনেক ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে ভ্যারিয়েবল ইন্টারেস্ট রেট বা পরিবর্তনশীল সুদহার। একটি ভ্যারিয়েবল ইন্টারেস্ট আপনার সুদ পরিশোধের বিষয়টি বাধা থাকে বেঞ্চমার্ক রেটের সাথে। গত বছর ঋবফ এর বেঞ্চমার্ক ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তন করেছে তিনবার। এর অর্থ হচ্ছে, যেকোনো গ্রাহক গত বছর দেখতে পেয়েছেন তার সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে গেছে। কারণ, তাদের ক্রেডিট কার্ড বাধা বা সংশ্লিষ্ট রয়েছে বেঞ্চমার্ক রেটের সাথে।
সবশেষে নজর রাখুন প্রতারণাপূর্ণ হিডেন বা লুকায়িত ফি’র ওপর। এগুলো হতে পারে, যদি আপনি এর প্রতি নজর না রাখেন। যেমন, যদি আপনি ক্রেডিট লিমিটের বাইরে চলে যান, তবে ব্যাংক আপনার ওপর একটি চার্জ বসাতে পারে। আপনি যদি কোনো পেমেন্ট দেরিতে দেন, তবে আপনার ওপর সাধারণত ২০-৩০ ডলার লেট ফি বসিয়ে দিতে পারে। আপনি যদি আপনার কার্ডে ক্যাশ অ্যাডভান্স করেন, তবে ব্যাংক লেনদেনের জন্য আপনার ওপর একটি চার্জ বসাতে পারে এবং ধার্য করা হতে পারে উচ্চতর সুদহার, যতক্ষণ পর্যন্ত তা পে-অফ না হয়।
আপনি কয়েকবার পেমেন্ট দেরিতে করলে অথবা ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম করলে ব্যাংক অধিকার সংরক্ষণ করে সুদহার বাড়িয়ে দেয়ার। তখন আপনার সুদের হার কয়েক মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ থেকে এক লাফে ২০ শতাংশে উঠে যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। এক্ষেত্রে কার্ড ব্যবস্থাপনায় মুখ্য কাজ হচ্ছে, প্রতিমাসে পুরো স্টেটমেন্ট পাঠ করা। এই পাঠের মাধ্যমে নিশ্চিত হোন আপনার ক্রেডিট কার্ডে কোনো প্রতারণাপূর্ণ চার্জ বসানো হয়নি, আপনার ইন্টারেস্ট রেট একই রাখা হয়েছে, কোনো ব্যাখ্যাহীন ফি বসানো হয়নি।
রিওয়ার্ড প্রোগ্রামগুলো স্যাম্পলিং করা
এবার আসি ক্রেডিট কার্ডের ডাউনসাইড প্রসঙ্গে। ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত ব্যবহারে ক্রেডিট কার্ডের রয়েছে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক। ক্রেডিট কার্ড থাকার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্টগুলোর একটি হচ্ছে মন্দা ও নগদ প্রবাহ কমে যাওয়ার সময় এটি ব্যবহার করা যায়। যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্রেডিট কার্ডের মালিক, বিল পরিশোধের সময় অতিরিক্ত ২৫-৩০ দিন পাওয়া একটি বড় সুযোগ তাদের জন্য, বিশেষত যখন তাদের গ্রাহকেরা দেরিতে বিল পরিশোধ করেন।
ক্রেডিট কার্ডের আরেকটি উৎসাহব্যঞ্জক দিক হচ্ছে রিওয়ার্ডগুলো। প্রায় সব ক্রেডিট কার্ড ও চার্জকার্র্ড সুযোগ দেয় কোনো কোনো ধরনের কিছু পার্ক বা প্রণোদনার। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কার্ডে আপনার ব্যবসায়ের জন্য বা ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া যাবে সবচেয়ে সেরা প্রণোদনা। নিচে কিছু ধরনের ক্রেডিট কার্ড রিওয়ার্ড প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করা হলো
ক্যাশব্যাক রিওয়ার্ড কার্ড : ক্যাশব্যাক রিওয়ার্ড কার্ডের একটি সুবিধা হচ্ছে, এর সুবিধাগুলো হিসাব করা তুলনামূলকভাবে সহজ। যেমন, PayPal Cashback Mastercard অফার করে এমন একটি ক্রেডিট কার্ড, যার কোনো বার্ষিক ফি নেই এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি সিঙ্গল পারচেজে ২ শতাংশ হারে আপনি পাবেন ক্যাশব্যাক। এতে যে কোনো মাস্টার কার্ড গ্রহণীয়, কোনো বিধিনিষেধ নেইÑ বিষয়টি খুবই চমৎকার। এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে আপনার প্রয়োজন একটি পে-পল অ্যাকাউন্ট। আরকটি প্রণোদনা হচ্ছে, কোনো ভুলের জন্য পে-পলের কাছে সরাসরি ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায়। অন্যান্য ক্যাশব্যাক কার্ডে হচ্ছে ‘ক্যাপিট্যাল ওয়ান’ এবং ‘ডিসকভার কার্ড’।
রিওয়ার্ড কার্ড : বেশ কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড ও চার্জ কার্ডে গ্রাহকদের জন্য অপশন রয়েছে কাস্টমার অফার পয়েন্টের, যা ব্যবহার করা যাবে আপনার প্রয়োজনীয় ট্র্যাভেল, অফিস সাপ্লাই আরো কিছু ক্ষেত্রের পেমেন্টের জন্য। সাধারণত এসব কার্ডের মাধ্যমে প্রতি ডলার খরচের বিপরীতে কিছু পয়েন্ট দেয়া হয়, যার বিনিময়ে পাওয়া যাবে পণ্য বা সেবা। কিছু কার্ড এমনকি দ্বিগুণ বা তিনগুণ পয়েন্ট দিয়ে থাকে বেশি ব্যবহারের কার্ডের ওপর।
ট্র্যাভেল ক্রেডিট কার্ড : অনেক এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড অফার করে। এসব ক্রেডিট কার্ডের ধারকেরা প্রতি ট্রিপে ১-২টি ব্যাগ ফ্রি নিতে পারে। যারা মাঝেমধ্যেই বাইরে সফরে যান, তাদের জন্য এই কার্ড ব্যবহার সুবিধাজনক। এসব কার্ডের মধ্যে আছে : JetBlue, DeltaGes Southwest Airlines।
একই প্রোগ্রাম অনুসৃত হয় হোটেলগুলোর জন্যও। Hilton Honors, Hyatt, Starwood এবং প্রায় সবগুলো প্রধান হোটেল চেইন রয়েছে ক্রেডিট কার্ড। এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে তাদের জন্য, যারা ঘন ঘন বিদেশ সফর করেন।
রিটেইল ক্রেডিট কার্ড : কিছু ছোট আকারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসায়িক কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করা হয় রিটেইল ক্রেডিট কার্ড। এ ধরনের একটি কার্ড হচ্ছে ‘হোম ডিপো ক্রেডিট কার্ড’।
আপনার ব্যবসায়ের কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যে কার্ডই বেছে নেন, এটি নিশ্চিত করুন আপনি যেনো ফাইন প্রিন্টিং পড়তে পারেন। পেতে পারেন প্রতিমাসের স্টেটমেন্ট। বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করতে পারলে ক্রেডিট কার্ড আপনার জীবনকে জোরালো করে তুলতে পারে। তবে বাছাই করার সময় এমনটি বাছাই করতে হবে, যেটি অন্যের চেয়ে আপনার উপকার বেশি করে