• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কলসেন্টার শিল্পে সাফল্যের জন্য অবিলম্বে বিশ্বমানের জনবল তৈরি করতে হবে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কামাল আরসালান
মোট লেখা:৫৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টেলিসেন্টার
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কলসেন্টার শিল্পে সাফল্যের জন্য অবিলম্বে বিশ্বমানের জনবল তৈরি করতে হবে

প্রথম আলো জবসের কলসেন্টারবিষয়ক সেমিনার - কলসেন্টার শিল্পে সাফল্যের জন্য অবিলম্বে বিশ্বমানের জনবল তৈরি করতে হবে।

সম্প্রতি ব্র্যাক ইনে প্রথম আলো জবসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী কলসেন্টারবিষয়ক সেমিনার৷ দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এই সেমিনারে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন৷

সেমিনারের প্রথম সেশনে কলসেন্টারের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন সালেহ জিল্লুর রহমান, সিইও, সফটটক অনলাইন এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার৷ তিনি জানান ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও কলসেন্টার কার্যক্রমের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে৷ এখানে শ্রমবাজার সস্তা কিন্তু প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তির৷ সালেহ জিল্লুর রহমান কলসেন্টারের বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বিষয় যেমন আইপিএলসি (ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট), সিটিআই (কমপিউটারটেলিফোন ইন্টিগ্রেশন), এসিডি (অটোমেটিক কল ডিস্ট্রিবিউশন), আইভিআর (ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স), ভয়েস লগার, কলসেন্টার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন৷ একজন কলসেন্টার এজেন্টের কাছে একটি কল ট্রান্সফারের মুহূর্তে স্ক্রিন পপআপের জন্য সিটিআই ব্যবহার করা হয়৷ পপআপের মাধ্যমে কমপিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কাস্টমারের যাবতীয় তথ্য বা কাস্টমার সে প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তার বিবরণ, যা একজন এজেন্টকে সহায়তা করে প্রয়োজনীয় তথ্যটি জানিয়ে দেয়ার জন্য৷ এসিডির মাধ্যমে অপেক্ষারত এজেন্টদের কাছে আগত কলটি পৌঁছে যায়৷ এটি হতে পারে দক্ষতার মাপকাঠিতে বা কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অথবা সাধারণ ক্রমানুসারেই৷ এসিডি একটি কলসেন্টারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ আইভিআরের মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার বিশেষ তথ্য জানার জন্য প্রয়োজনীয় এজেন্টকে বেছে নিতে পারে৷ ভয়েস লগারে এজেন্টদের সব কথোপকথন রেকর্ড হয়ে যায়৷ ফলে পরবর্তীতে তাদের মনের ওপর লক্ষ রাখা সম্ভব হয়৷

একটি সংক্ষিপ্ত সেশনে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিটেন্ট প্রফেসর ড. মশিউর রহমান উল্লেখ করেন যে তারা বাংলাদেশে কলসেন্টার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ওপেনসোর্স কলসেন্টার সলিউশন ডেভেলপ করেছেন৷ এ বছরের জানুয়ারিতে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আইপি টেলিফোনি ল্যাবের কাজ শুরু হয় যার মূল লক্ষ্য ছিল ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বল্পব্যয়ে দেশে আইপি টেলিফোন সলিউশন এবং একই সাথে দেশের ভবিষ্যৎ কলসেন্টারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সলিউশন সুলভে সরবরাহ করা৷ বর্তমানে এনএসইউ-এর টিমটি সাফল্যজনকভাবে ওপেনসোর্স সলিউশন ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ কলসেন্টার সলিউশন প্রদর্শন করেছে৷ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বল্পমূল্যের কলসেন্টার সলিউশনটি যদি আউটসোর্সিং পার্টনারদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় তবে দেশীয় কলসেন্টার উদ্যোক্তারা দামী বিদেশী কলসেন্টার সফটওয়্যার কেনার বোঝা থেকে রক্ষা পাবেন৷

সেমিনারে দুইজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ ছিলেন৷ এরা হলেন সাউথ আফ্রিকার ওয়ারেন রেড্ডি এবং ভারতের কিউএআই লিমিটেডের শ্রীকান্ত অরুণ বিজয়কার৷ বিজনেস ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট ওয়ারেনের সাউথ আফ্রিকা, ইউকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলসেন্টারগুলোতে ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে৷ তিনি জানালেন বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রথমে ডোমেস্টিক কলসেন্টার প্রসারে উদ্যোগী হতে হবে৷ এর ফলে যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে পরবর্তীতে তারাই আন্তর্জাতিক কলসেন্টার পরিচালনা করতে সক্ষম হবে৷ এটা একটা সময়ের ব্যাপার৷ আন্তর্জাতিক কলসেন্টার বাণিজ্যে অংশ নিতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুততম সময়ে বিশ্বমান অর্জন করতে হবে৷ এদেশের তরুণদের উত্সাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ করে ওরায়েন আশাবাদী যে অল্পসময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের কলসেন্টার বাণিজ্যে নতুন হাব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে৷

ভারতের বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্ত বিজয়কার জানালেন এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও নিশ্চয়ই কলসেন্টার বাণিজ্যে সাফল্য লাভ করবে৷ এর জন্য প্রথমে বাংলাদেশকে মানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে৷ কলসেন্টার এজেন্ট ছাড়াও কলসেন্টার ম্যানেজার, সুপারভাইজারদেরও প্রয়োজন পড়বে৷ আরো প্রয়োজন পড়বে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন কোর্সে ট্রেনিং করা কুশলীদের৷ বিদেশী আউটসোর্সিং পার্টনারদের আস্থা অর্জনের জন্য এর বিকল্প নেই৷

সেমিনারে কলসেন্টার সলিউশন বিষয়ে আনিস রহমান, সিইও, জেনুয়িটি সিস্টেম লি. একটি সুদীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন৷ তিনি কলসেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট মূল বিষয়গুলো যেমন সিটিআই, আইভিআর, এসিডি এবং সিআরএম (কাস্টমাররিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট) ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন৷ ডোমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক কলসেন্টারের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন৷ তিনি উল্লেখ করেন কলসেন্টারে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় সলিউশন নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি৷ আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত বিশ্বখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান যেমন আওয়া, সিমেন্স, নরটেল, হোয়াইও, সিসকো সিস্টেম ইত্যাদির কলসেন্টার সলিউশনেরই অনুমোদন করে৷ তবে স্বল্পমূল্যেও কলসেন্টার সলিউশন পাওয়া যায়৷

আনিস রহমান আরো জানান কলসেন্টারের যাবতীয় কাজের মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এজেন্টরা গ্রাহকদের ঠিকমতো সহায়তা দিয়ে চলেছে কিনা তা লক্ষ রাখা এবং প্রয়োজনবোধে কলট্যাপের মাধ্যমেও নজর রাখতে হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোও কলট্যাপ করে লক্ষ রাখে ঠিকমতো সার্ভিস দেয়া হচ্ছে কিনা জানার জন্য বা কোনো মনিটরিং প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় তাদের পক্ষে মনিটরিং করার জন্য৷ কলসেন্টার পরিচালনার খুঁটিনাটি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর আনিস রহমান কলসেন্টারে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করেন৷ তিনি জানান কলসেন্টারের খরচের মধ্যে আছে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও এগুলোর পরিচালনা ব্যয় এবং ক্রমান্বয়ে আপগ্রেডিংয়ের ব্যয় হোস্টেড কলসেন্টার প্রোভাইডারের ফ্রি এবং কলসেন্টার এজেন্টসহ অন্যান্য কুশলীর খরচ৷

কলসেন্টারের আয়ের ব্যাপারে তিনি জানান আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ৬-১২ ডলার দিয়ে থাকে৷ পাকিস্তানী প্রতিষ্ঠানগুলো পায় ৫-৮ ডলার৷ তাই আনিস রহমান মনে করেন বাংলাদেশের কলসেন্টারগুলো ঘণ্টায় ৫ ডলার পাওয়ার আশা রাখতে পারে৷ এরপর তিনি একটি ২০ সিটের কলসেন্টারের মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থিত উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেন৷ সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় পিসি, ইউপিএস, ফার্নিচার, এসি, জেনারেটর ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় ব্যান্ডইউডথ খরচ, প্রোভাইডারের ফি, এজেন্ট ও অন্যান্য কুশলীর বেতনসহ মোট খরচ আনুমানিক ১২,৪১৫ ডলার৷ ৫ ডলার হারে ৮ ঘন্টা প্রতিদিন হিসেবে আয় ধরা হয়েছে ১৯,২০০ ডলার৷ নিট লাভ হবে প্রতিমাসে ৯৬০ ডলার৷ অর্থাৎ আরওআই (রিটার্নঅন ইনভেস্টমেন্ট) দাঁড়ায় ৩৫%৷

আনিস রহমান আরো জানান বাংলাদেশকে কলসেন্টার কার্যক্রম থেকে বছরে বিলিয়ন ডলার আয় করতে হলে ৩০ হাজার বিশ্বমানের কলসেন্টার এজেন্টের প্রয়োজন পড়বে৷ বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) মঞ্জুরুল আলম প্রস্তাবিত ৬ বিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজন পড়বে প্রায় ২ লক্ষ এজেন্টের৷ তাই অবিলম্বে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্বমানের কলসেন্টার এজেন্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে৷

সেমিনারে আরো কয়েকটি সেশনে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে ফরহাদ করিম, সিইও, করিম এসোসিয়েটস, মুনির হাসান, বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক, ব্যারিস্টার আলী বাসের প্রমুখ৷

কজ


ফিডব্যাক : kkarsalan@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
২০০৮ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস