বার্মিংহাম কলসেন্টার এক্সপো-২০০৮ কলসেন্টারের কাজের নেক্সট ডেস্টিনেশন বাংলাদেশ কলসেন্টারের কাজ আসছে, প্রয়োজন দক্ষ জনবল।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে প্রতি বছর ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় কলসেন্টার এক্সপো এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট এক্সপো নামে কলসেন্টার কার্যক্রমবিষয়ক আন্তর্জাতিক মেলা। প্রতি বছর এ মেলায় অসংখ্য ভিজিটরের সমাগম হয়। এ মেলায় আসে কলসেন্টার সলিউশন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রোডাক্ট ও সার্ভিস প্রোভাইডাররা। মেলায় শিক্ষা ও ট্রেনিংয়ের এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচুর সুবিধা থাকে। প্রদর্শনীতে কয়েকজন টেস্টার থাকেন, যারা প্রদর্শিত পণ্যের মান যাচাই করেন এবং কয়েকটি কৌশলগত সম্মেলন হয়। মাইক্রোসফট, ওরাকল, ফ্রন্ট রেঞ্জ, এসএএস, টিপিএস টেলিফোন রেফারেন্স সার্ভিস ইত্যাদি সফটওয়্যার ও টেলিকম সার্ভিস প্রতিষ্ঠানও এ এক্সপোতে যোগ দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারো বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হয়েছে কলসেন্টার এক্সপো-২০০৮ এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট এক্সপো-২০০৮। এবারের মেলায় ২৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
এবারের কলসেন্টার এক্সপোতে প্রথমবারের মতো বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কয়েকটি কলসেন্টার প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এই আন্তর্জাতিক এক্সপোতে অংশ নেয়ার জন্য বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ ৩৫ স্কয়ার মিটারের একটি প্যাভিলিয়ন বুক করে রেখেছিল। সেখানে বাংলাদেশী কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানগুলো বুথ নিয়ে অংশ নিয়েছিল। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে- আমরা, আউটসোর্সিং, ইনজেন টেকনোলজি, ইকরা মিডিয়া সেন্টার, অরবিট কমিউনিকেশন্স, উইন্ডমিল অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড। উল্লেখ্য, আরো একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান জেনুইটি সিস্টেমস ৯ স্কয়ার মিটারের আলাদা একটি স্টল নিয়ে অংশ নিয়েছিল। জেনুইটি সিস্টেমস তাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেনুসিস ইনকের নামে মেলায় স্টল নিয়েছিল। মেলায় উপস্থিত ছিলেন জেনুসিস ইনকের প্রেসিডেন্ট ড. হাবিব রহমান, জেনুইটি সিস্টেমসের সিইও এম আনিস রহমান, বিপণন পরিচালক খন্দকার শাহাদত হোসেন এবং কর্পোরেট বিষয়ক প্রধান কামরুজ্জামান।
আন্তর্জাতিক কলসেন্টার অঙ্গনে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশী কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানগুলো বার্মিংহামের আন্তর্জাতিক কলসেন্টার এক্সপোতে অংশ নিয়েছিল। এ কলসেন্টার এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নসহ ৮-৯টি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির ফলে সেখানে উপস্থিত দর্শনার্থীদের কাছে কলসেন্টারের নতুন হাব হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ‘নেক্সট ডেস্টিনেশন বাংলাদেশ’ এই স্লোগানটি লাগানো হয়েছিল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের ব্যানারে, যা এক্সপোতে উপস্থিত দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছিল। অনেকেই বাংলাদেশে কলসেন্টার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য বাংলাদেশী কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলে এসেছিল। আগামীতে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বার্মিংহাম কলসেন্টার এক্সপোতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সরব উপস্থিতি অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।
মেলায় অংশ নেয়া ঢাকাভিত্তিক বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জেনুইটি সিস্টেমস এক্সপোতে নিজস্ব স্টল নিয়ে অংশ নিয়েছিল। জেনুইটি কর্তৃপক্ষ বার্মিংহামের স্টল থেকে ঢাকায় তাদের কলসেন্টার এজেন্টদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছিল। এর ফলে তাদের স্টলের দর্শনার্থীরা সরাসরি ঢাকার কলসেন্টার এজেন্টদের সাথে কথা বলেছেন। এই সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে এরা বুঝতে পেরেছেন, জেনুইটির পরিচালনায় একটি আন্তর্জাতিক মানের কলসেন্টার আছে। কলসেন্টার এজেন্টদের এবং আনুষঙ্গিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করে এরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।
মেলায় কলসেন্টার সার্ভিস কার্যক্রমের সাথে জেনুইটি তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপারদের তৈরি করা gPlex Call Centre Solution প্রদর্শন করেছে এবং দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। ইতালির একটি কলসেন্টার প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন ১০০ সিটের কলসেন্টারের জন্য জেনুইটির কলসেন্টার সলিউশনটির জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে পারস্পরিক আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। অল্প দিনের মধ্যেই জেনুইটির একটি টিম ইতালি সফর করবে।
এ ছাড়া জেনুইটি কলসেন্টার আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি অর্জন করেছে। যুক্তরাজ্যের একটি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটি মনিটরিং করে এবং এই কাজের জন্য এরা একটি কলসেন্টার পরিচালনা করে। ওই কলসেন্টারটি শুধু দিনের বেলা অর্থাৎ ৯-৫টা পর্যন্ত সার্ভিস দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছে, যদি বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় আশা কলগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়, তবে জেনুইটি ওই সময়ের জন্য সার্ভিস দিতে পারবে কি না। জেনুইটি এই দায়িত্ব নিতে সম্মতি দিয়েছে।
জেনুইটির সিইও এম আনিস রহমান ‘কমপিউটার জগৎ’-কে জানিয়েছেন, বার্মিংহাম কলসেন্টার এক্সপোর মতো মেলায় এবার প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে কলসেন্টার কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে যে অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসায়িক অগ্রগতি হয়েছে তাকে সন্তোষজনক বলা যায়।
কলসেন্টার এক্সপোতে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠান হলো অরবিট কমিউনিকেশন্স। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ সামাদুল হক মেলায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিদেশে থাকায় অরবিটের একজন ডিরেক্টর নূর-উস শামস ‘কমপিউটার জগৎ’-কে জানান এই কলসেন্টার এক্সপোতে যোগ দিয়ে এরা বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন। অনেক টেলিফোন ও টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাদের আলোচনা হয়েছে বিশেষ করে স্কটল্যান্ডভিত্তিক একটি টেলিফোন কোম্পানি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে। এরা বাংলাদেশে আসবে এবং অরবিটের কলসেন্টার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে, কারিগরি অবকাঠামো দেখবে। এসব ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট হলে এরা বাংলাদেশে কাজ পাঠাবে।
নূর-উস শামস আরো জানান, তাদের কলসেন্টারে এখন পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে এরা ব্রিটিশ ট্রাভেল এজেন্সি কনসোর্টিয়ামের কাজ করছে। এই কনসোর্টিয়ামের অধীনে ২০টি বড় ট্রাভেল এজেন্সি এবং ৩০০টি সাব এজেন্সি আছে। কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে অরবিটের কলসেন্টার স্থাপনা দেখে সন্তুষ্ট হওয়ার ফলে এখন অরবিট পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে ৩টি ট্রাভেল এজেন্সির কলসেন্টার সার্ভিসের কাজ করছে। জুন মাস থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবছরের শেষ দিকে ওই কনসোর্টিয়াম অরবিটের কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হলে ক্রমান্বয়ে গোটা ব্রিটিশ ট্রাভেল এজেন্সির কনসোর্টিয়ামের কাজ বাংলাদেশে চলে আসবে।
কাজের পরিধি সম্প্রসারণের সাথে অনেক কলসেন্টার এজেন্টের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। এ নতুন খাতে জনবলের অপ্রতুলতা লক্ষ করে অরবিট কমিউনিকেশন্স ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে ইনস্টিটিউট অব কলসেন্টার অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (আইসিসিএস) নামে আন্তর্জাতিক মানের একটি ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছে। ৩ মাসের এই কোর্সের পরিচালনায় একজন ব্রিটিশ প্রশিক্ষক আছেন। কোর্স শেষে অনলাইনে ব্রিটিশ কাউন্সিলে পরীক্ষা দিতে হবে। নুর-উস শামস আশাবাদী যে, এই সেন্টারে পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের অন্যান্য কলসেন্টারে যোগ দিয়ে কলসেন্টার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জেনুইটির মতো বার্মিংহাম কলসেন্টার এক্সপোতে আরো একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব স্টল নিয়ে অংশ নিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি হলো ‘হ্যালো ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশন্স’। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিচালনায় এ প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ তাদের কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের পাইওনিয়ার কলসেন্টার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ এবং ইউকে উভয় দেশেই রেজিস্টার্ড করেছে এবং দুই দেশেই তাদের উপস্থিতি আছে। যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতার সুবাদে এরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রফেশনাল কলসেন্টার এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সেন্টার গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশেও তাদের কলসেন্টার থাকায় এরা তুলনামূলকভাবে কম রেটে তাদের ব্রিটিশ ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিতে সক্ষম হবে। যুক্তরাজ্যে অফিস থাকায় চট্টগ্রামভিত্তিক এই কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানটি বিদেশের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখেছে।
কলসেন্টার এক্সপো-২০০৮-এ বাংলাদেশের কলসেন্টার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক পরিচিতি ও ব্যবসায়িক অগ্রগতি লক্ষ করে বিটিআরসির চেয়ারম্যান আগামী ২০০৯ সালের বার্মিংহাম কলসেন্টার এক্সপোতে এবারের চেয়ে আরো বড় পরিসরের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন বুক করেছেন। তার দৃঢ়বিশ্বাস, আগামী বছর তিনি দেশ থেকে আরো বেশিসংখ্যক কলসেন্টার প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসতে পারবেন এবং আন্তর্জাতিক কলসেন্টার অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। বিশ্বের কলসেন্টার কার্যক্রমের ‘নেক্সট ডেস্টিনেশন’ হিসেবে বাংলাদেশ যথার্থই স্বীকৃতি পাবে। কজ ওয়েব