• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তি নিয়ে ‍আমাদের প্রস্তুত হতে হবে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুসা ইব্রাহিম
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৭ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
আলাপচারিতা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তি নিয়ে ‍আমাদের প্রস্তুত হতে হবে




প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শরীফ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ভাইস চ্যান্সেলর৷ চট্টগ্রামের আহলা সাদারপাড়া হাই মাদ্রাসায় তার শিক্ষা জীবনের শুরু৷ এ মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিক, কানুনগোপাড়া কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন৷ প্রফেসর শরীফ বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮০ সালে পলিটিক্যাল ইকোনমিতে এম.এ. এবং ১৯৮৪ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷ মেধার স্বীকৃতি হিসেবে দেশ-বিদেশের বহু প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সম্মাননা ও বৃত্তি পেয়েছেন৷ প্রাথমিক বৃত্তি, জুনিয়র বৃত্তি, ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ন্যাশনাল ট্যালেন্ট স্কলারশিপ ও ন্যাশনাল মেরিট স্কলারশিপ, ফোর্ড ফাউন্ডেশনের হায়ার এডুকেশন স্কলারশিপসহ অসংখ্য বিদেশী স্কলারশিপ তিনি পেয়েছেন৷ দেশে-বিদেশে শিক্ষকতায় তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ আমেরিকায় থাকার সময় সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইসিটি ব্যবহারের চূড়ান্ত মাত্রাটুকু তিনি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ এবং উপভোগ করেছেন৷ সে অভিজ্ঞতাই তিনি বর্ণনা করেছেন মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর কাছে৷ সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুসা ইব্রাহীম৷



? আপনার চোখে কমপিউটারের বিবর্তনটুকু কেমন?

আমি ১৯৭৭ সালে যখন বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া শুরু করি, তখন ইনফরমেশন টেকনোলজি খুব একটা প্রসার লাভ করেনি৷ সে সময় আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোতে মেইনফ্রেম কমপিউটার ব্যবহার হতো৷ আমি যখন পিএইচডির ডেজার্টেশন করছিলাম, তখন ওই একটাই মেশিন ছিল৷ এর মাধ্যমে প্রিন্ট নেয়া যেত৷ বিশাল কাগজে প্রিন্ট নিয়ে প্রফেসরদের কাছে নিয়ে যেতে হতো৷ কিন্তু আমার নিজের কোনো কমপিউটার ছিল না৷ হাতে লিখেই সব ধরনের গবেষণা করতে হতো৷ সেই কাগজগুলো নিয়ে মেইনফ্রেমে টাইপ করে তবেই প্রিন্ট নিতে হতো৷ এ অবস্থা পিএইচডি শেষ হওয়া পর্যন্ত নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকেও চলেছে৷

ইউনিভার্সিটি অব রোড আইল্যান্ডে চাকরিতে যোগ দেয়ার পর পার্সোনাল কমপিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ আমাকেও একটা কমপিউটার দেয়া হলো৷ এর কয়েক বছর পর ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে ইন্টারনেট চালু হলো৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব যে বিশ্বে একটা বিপ্লব শুরু করবে, সে সময়ই তা উপলব্ধি করা গিয়েছিল৷

আশির দশকের শেষ দিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা ব্যাংকগুলোর গড়ে ওঠা শুরু হলো৷ বিভিন্ন জার্নাল অনলাইনে তাদের আর্টিকেল দেয়া শুরু করলো৷ এভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জার্নাল পড়ে গবেষণা করার সুযোগ সৃষ্টি হলো৷

? এখন এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইসিটির উপযুক্ত ব্যবহার করে কিভাবে শিক্ষার মান উন্নত করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকলেও সে অভাব পরণ করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জার্নাল কেনা যাবে৷ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে বেশ কিছু জার্নাল কেনার প্রস্তাব দিয়েছি৷

বাংলাদেশে সম্প্রতি আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে৷ বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের অধীনে একটি সংস্থা এ কাজটা করছে৷ এরা সাবক্রিপশন ও সদস্যপদ বাড়াচ্ছে৷ তাদের টার্গেট হলো বাংলাদেশের অন্তত ৯০-৯৫ শতাংশ ইউনিভার্সিটিকে এর আওতায় নিয়ে আসা৷ এ নেটওয়ার্কে যদি কলেজগুলো নাও আসে, অন্তত ইউনিভার্সিটিগুলো এলেও বিশ্বে এখন জ্ঞানের জগতে কী কী রিসোর্স ডেভেলপ হচ্ছে, তা এরা মুহূর্তে জানতে পারবে৷

আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে শিক্ষকতায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- এখানে যা পড়ানো হয়, সে বিষয়ে কোনো রিসোর্স নেই, বই নেই, জার্নাল নেই৷ এসব সংগ্রহ করতে হলে অনেক টাকা প্রয়োজন৷ বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিরই এমন সমৃদ্ধ নেই যে এরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জার্নালগুলো কিনবে৷ কিন্তু প্রতিদিনই প্রচুর বই বের হচ্ছে৷ এসব সর্মžদ একমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সংগ্রহ করে ইউনিভার্সিটিগুলোকে আধুনিক করা যেতে পারে৷

? আমেরিকায় থাকার সময় প্রযুক্তির বিবর্তন আপনি দেখেছেন৷ সেখানে আইসিটি শিক্ষাব্যবস্থাকে কিভাবে প্রভাবিত করে চলেছে?

আমেরিকা বা পশ্চিমা দেশগুলোতে আইসিটির কোনো উন্নয়ন হলে তা সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলে আসে৷ এর একটা উদাহরণ দিই৷ আমার পিএইচডি গবেষণা শেষ হওয়ার আগেই আমার কাজের রেজাল্টগুলো সেখানকার শিক্ষকরা জেনে যান এবং এ বিষয়গুলো এরা তিনটা ক্লাসে পড়াতেন৷ এটা এ কারণেই বললাম কোনো দেশে আইসিটির কোনো নতুন বিষয় উদ্ভাবিত হলে মুহূর্তেই তা ক্লাসে চলে আসে৷ সেখানে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ জ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সাথে সাথেই নতুন টেকনোলজি কিনে নিয়ে পুরনোকে বাতিল করে দেয়৷ নতুন প্রযুক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে সাথে নিয়ে আসার সুবিধা হলো শিক্ষার্থীরা সহজেই এর সাথে জড়িত হতে পারছে৷ তবে প্রযুক্তি এত দ্রুতই বদলে যায় যে, আজ যা শিখলাম সেটা কয়েকদিন পর বাতিল হয়ে যাচ্ছে৷ এতে করে নতুন প্রযুক্তি শিখতে গিয়ে অবশ্য বেশ কিছু সময় ও সম্পদের অপচয় হয়৷

? অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আইসিটির ব্যবহার কেমন হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বিজনেস ওয়ার্ল্ডে প্রতিটি ক্ষেক্ষে ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে৷

? শিক্ষা বা অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নে উন্নত দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের আইসিটি ব্যবহারের পার্থক্যগুলো কী ধরনের?

এবার দেশে ফিরে এসে মনে হয়েছে যে পার্থক্য যথেষ্ট আছে৷ তবে ঠিক কোন খাতে কতটুকু পার্থক্য আছে, সে বিষয়ে এ মুহর্তেই কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না৷ কারণ, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ডাটা আমার কাছে নেই৷ তবে এ পার্থক্য দূর করতে হলে আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন৷ চিন্তার ব্যাপার হলো, যে খাতে এত বেশি দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন, সেখানে কমপিউটার বিজ্ঞান বা কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার কমে গেছে৷ শিক্ষার্থীরা এখন বিবিএ পড়ার জন্য ভিড় করছে৷ এর একটা কারণ চাকরির বাজার বিবিএ পড়ুয়াদের সহায়তা করছে৷ এ অবস্থা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে একই রকম৷ কিন্তু একটা সময় ছিল যখন কমপিউটার পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেক্ষে চাকরির বাজার ছিল রমরমা৷ তখন এত বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী কমপিউটার বিষয়ে লেখাপড়া করেছে যে আইসিটির চাকরির বাজারে দক্ষ মানবসম্পদে সয়লাব হয়ে গেছে৷ আর সেটা আমেরিকাতেও৷ কিন্তু সেখানে গত কিছুদিন কমপিউটার সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের চাকরির বাজার ছোট হয়ে এসেছিল৷ কিন্তু বর্তমানে আইসিটির চাকরির বাজার ফের চাঙ্গা হয়েছে৷ আমেরিকার প্রভাব আর কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের দেশে এসে পৌঁছাবে৷ এ জন্য এদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৭ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস