ইতিহাসজুড়ে সন্ত্রাস, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধবিগ্রহ বরাবরের অনুষঙ্গ। সে সূত্রেই মানুষ সূচনা করেছে অস্ত্র উদ্ভাবনের। শুরুতে মানুষ তৈরি করেছে সরল-সহজ সাধারণ অস্ত্র। সময়ের সাথে পরস্পরের হানাহানিতে মানুষ ব্যবহার করে চলেছে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ের মারণাস্ত্র। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অস্ত্র উদ্ভাবনে প্রযুক্তি প্রাধান্য বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। ফলে অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর মানবসমাজ প্রত্যক্ষ করেছে ২৫টি যুদ্ধবিগ্রহ। এগুলোতে ব্যবহার হয়েছে এসব ব্যাপক ধ্বংসকর অস্ত্র। এই ২৫টি যুদ্ধবিগ্রহে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে ১৯ কোটি মানুষকে।
আজকের দিনে বিমান থেকে মানুষ হত্যা আর সম্পদ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট বোমা। এগুলোতে থাকছে মহাকাশভিত্তিক অত্যাধুনিক সেন্সর ও প্রিসিশন স্যাটেলাইট নেভিগেশন। প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র এর কাছে একেবারে নগণ্য। প্রযুক্তি আজ যুদ্ধকে করে তুলেছে এক খরচবহুল খেলা বা হাই-স্পেন্ডিং গেম। যাদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ যুদ্ধাস্ত্র নেই, তারা সামনাসামনি যুদ্ধ এড়িয়ে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বনে বাধ্য হচ্ছে। তারপরও প্রযুক্তি আজ যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে যে বিবর্তন এনে দিয়েছে, তা যুদ্ধবিগ্রহে লোকক্ষয়কে সর্বোচ্চ মাত্রায় এনে দাঁড় করিয়েছে। অর্থাৎ আজকের দিনের যুদ্ধে হিউম্যান কস্ট ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
স্মার্ট বোমা
যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাওয়ার সুবাদে অস্ত্রপ্রযুক্তি বা ওয়েপন টেকনোলজিতেও রয়েছে সবচেয়ে এগিয়ে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ‘ফুল স্পেকট্রাম ডোমিন্যান্স’ বা পূর্ণমাত্রার প্রাধান্য। যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে বিশ্বাস করে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে সবক্ষেত্রে প্রয়োজন সর্বোত্তম মানের প্রযুক্তি তথা সুপিরিয়র টেকনোলজি। যদিও সমালোচকেরা তা স্বীকার করে না। সে যাই হোক, সে বিশ্বাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত অন্যান্য ধনী দেশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ নিজ যুদ্ধবহরে যোগ করেছে ব্যয়বহুল অভিজাত ও ধ্বংসকর নানা যুদ্ধবিমান। এগুলোর অনেকই আজ যুদ্ধের ময়দানে হাজির হয় মানুষবিহীনভাবে। আজকে রোবট বিমান নির্বিবাদে বোমা হামলা চালাছে শত্রুপক্ষের লক্ষ্যস্থলে। আসছে দিনে হয়তো আমরা দেখবো মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে রোবট বিমান হামলে পড়ছে শত্রুপক্ষের ওপর। রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালাবে অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র। ধ্বংস করবে শুধু সামরিক লোকজনই নয়, বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোকসহ সম্পদরাজিও। ভবিষ্যতের পদাতিক সৈন্যের ঝুলিতে হয়তো থাকবে পাওয়ার এক্সো স্কেলেটন ও রোবটিক প্যাক মিউলের মতো ভয়ানক মারণাস্ত্র। যেগুলো আজকের দিনে আমাদের কল্পনারও বাইরে।
অগ্রসর মানের প্রযুক্তি
আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্র হয়তো সম্প্রসারিত হবে মহাকাশেও। সেখানে থাকবে কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত অস্ত্রাগার। সামরিক ভাষায় যার নাম ‘অরবিটিং আরসেনাল’। থাকবে অতি উঁচুতে চলার উপযোগী এয়ারোস্পেসপ্লেন। রোবট বিমানগুলো উপগ্রহগুলো ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্নও হতে পারে। তবু রোবট বিমানকে কাজে লাগানো হতে পারে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা অন্যান্য কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত সামরিক সম্পদ রক্ষায়। যারা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকবে তারা ক্রমবর্ধমান ফায়ার পাওয়ার থেকেও নিজেদের বাঁচাতে পারবে না। নতুন নতুন অস্ত্র এখন আবিষ্কার হচ্ছে বাঙ্কারের গভীরে হামলা চালানোর জন্য। এর মধ্যে আছে সুপারক্যাভিটিং ওয়্যারহেড এবং বুরোয়িইং বোমা।
অতি উচ্চাভিলাষী অস্ত্র পরিকল্পের মধ্যে আছে একটি বর্ম তৈরি করা, যা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে ব্যালিস্টিক মিসাইলের আক্রমণ থেকে। এই বর্ম তৈরি হবে এয়ারবোর্ন লেজার ও ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বয়ে। কিন্তু যেমনটি ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে এ লেজার প্রোগ্রাম। যেমনটি চ্যালেঞ্জিং একটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত করা। কিন্তু লেজার দিয়ে ট্যাকটিক্যাল রকেট ও আর্টিলারির গুলিকে ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে। নিউট্রিনো বিম বা রশ্মি আঘাত হানতে পারে পৃথিবীর অপরপ্রান্তের ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর। তা সত্ত্বেও অনেক সমালোচকের সন্দেহ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরিকল্প সফল নাও হতে পারে।
কম মারাত্মক অস্ত্র
অস্ত্র উদ্ভাবক ও সমালোচকদের মধ্যে কম মারাত্মক ও অমারাত্মক অস্ত্রের বিষয় নিয়ে প্রবল বিতর্ক আছে। এসব কম মারাত্মক (less-lethal) ও অমারাত্মক (non-lethal) অস্ত্র তৈরি করা হয় এর মানুষ হত্যা করার ক্ষমতাকে অক্ষম করে রেখে। যেমন বিতর্কিত টেসার গান (Taser gun)। এগুলোর সাহায্যে তারের মাধ্যমে একটি ইলেকট্রিক শক সৃষ্টি করে। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর লোকেরা ব্যাপকভাবে এই টেসার গান ব্যবহার করছে। এর নতুন ওয়্যারলেস ভার্সনও তৈরি করা হচ্ছে। এই ওয়্যারলেস টেসার গান জনতার ওপর ব্যাপক ইলেকট্রিক শক ছড়িয়ে দিতে পারে। একই কাজটি করে ইলেকট্রোশক প্রজেক্টাইল ও এমনি আরো কিছু অস্ত্র।
মার্কিন সেনাবাহিনী উদ্ভাবন করেছে একটি ‘অ্যাক্টিভ ডিনায়েল সিস্টেম’। এর অপর নাম people zapper। এই পিপল জেপার বা জনতার ওপর হামলাকারী অস্ত্র মানুষের ওপর এক ধরনের মাইক্রোওয়েভ বিম বা ক্ষুদ্র তরঙ্গের রশ্মি ফেলে শরীরের কোনো ক্ষতিসাধন না করে ব্যথার সৃষ্টি করে। তবে আশঙ্কা আছে এ ধরনের অস্ত্রের অপব্যবহার হতে পারে।
লেজারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে dazzle weapon বা আলোকধাঁধা সৃষ্টিকারক অস্ত্র হিসেবে। অর্থাৎ লেজার রশ্মি ফেলে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার কাজটিই এখানে করা হয়। এমনি অস্ত্র হচ্ছে Veiling glare laser, বহনযোগ্য PHASR ও হেলিকপ্টার মাউন্টেড ACCM। তবে এসব অস্ত্রের প্রয়োগের ফলে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু থেকেই গেছে। Pulsed এনার্জি প্রজেক্টাইল নামের একটি নন-লেথাল লেজার অস্ত্র আছে, যা মানুষের শরীরে যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে সক্ষম।
এক্ষেত্রে আছে নন-লেথাল বা অমারাত্মক কিংবা অপ্রাণনাশক রাসায়নিক অস্ত্রও। এগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন কালমেটিভ বা সেডেটিভ রাসায়নিক অস্ত্র। এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা হয়। এমনি একটি অস্ত্র হচ্ছে অ্যানেসথেটিক ডেরাইভেটিভ। মস্কো থিয়েটার হামলার সময় জনতার ওপর এ অস্ত্র ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। মার্কিন রাসায়নিক গবেষণায় এ ধারণা গ্রহণ করা হয়েছে, এ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র শত্রুপক্ষের সৈন্যদের ওপর প্রয়োগ করা হয় তাদেরকে সাময়িকভাবে সমকামী করে তোলার জন্য। রাসায়নিক অস্ত্র চুক্তিতে এ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু অপ্রাণনাশক অস্ত্র সেনাবাহিনীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন সেনাবাহিনীর বাইরে ব্যবহার হচ্ছে acoustic LRAD। এটি কাজে লাগানো হচ্ছে জলদস্যু তাড়ানোয়। এর মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করে এ কাজটি করা হয়। এ অস্ত্র নিয়ে কিছু উদ্বেগের কথাও শোনা যায়। তবে এর প্রভাব সম্পর্কে এখনো খুব একটা জানা যায়নি।
যুদ্ধপরবর্তী সমস্যা
প্রযুক্তিসমৃদ্ধ আধুনিক অস্ত্র শত্রুপক্ষের ওপর যথার্থ ও সফল হামলা চালানো ও দ্রুত যুদ্ধজয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু যুদ্ধশেষে তা মানুষের জন্য রেখে যায় এন্তার সমস্যা। সৃষ্টি করছে কৃষি ও পরিবেশ সমস্যা। এমনকি তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাস সংরক্ষণেও। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক অনুমিত হিসেব দেখিয়ে বলেছে, শুধু ২০০২ সালে যুদ্ধের ফলে বিশ্বে ৭,৩১,০০০ মানুষ মারা যায়। ল্যান্ডমাইন এক বড় উদ্বেগের কারণ। নিরাপদ, দ্রুত ও সস্তা কোনো পদ্ধতি নেই, যা যুদ্ধের সময়ে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে। মাইন অপসারণে প্রযুক্তি কিছু সমাধান হাজির করেছে। এর মধ্যে আছে বিশেষ ধরনের অ্যারো প্রজেক্টাইল, লেজার এবং এনএমআর স্কেনার। অটোয়া কনভেনশনে প্রয়াস চলে ল্যান্ডমাইন নিষিদ্ধ করে এর বদলে অপ্রাণনাশক কোনো বিকল্প অস্ত্র ব্যবহার চালুর। অবিস্ফোরিত অস্ত্রও উদ্বেগ-আশঙ্কা বাড়িয়ে চলেছে। আজকের দিনে আমরা ব্যবহার হতে দেখছি ক্লাশ্চার বম্ব বা গুচ্ছবোমা। কিন্তু যুক্তরাজ্যের টেমস নদী মোহনায় ডুবে থাকা কার্গো জাহাজের অবিস্ফোরিত বোমা তো অবিশ্বাস্য ধরনের উদ্বেগের কারণ। যুদ্ধের আরেক ভয়াবহ পরিণামের নাম হচ্ছে তেজস্ক্রিয় ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়াম। ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী অস্ত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে। যুদ্ধের পরও যুদ্ধক্ষেত্রে তা থেকে যায় বছরের পর বছর। এর ঝুঁকিটা কী, তা এখনো ব্যাপকভাবে জানা হয়ে ওঠেনি। অবশ্য ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলায় টাংস্টেন ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মানসিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব সুখকর নয়। সৈন্যদের মধ্যে পোস্ট ট্রাউমেটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার প্রবলভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। গবেষকরা লক্ষ করেছেন, সৈন্যদের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ
সম্ভবত যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণাম নেমে আসে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে। আণবিক বোমা প্রথম ব্যবহার হয় জাপানের হিরোশিমায়, ১৯৪৫ সালে। এখনো সেখানে এর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সক্রিয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে ব্যাপকভাবে তৈরি হয় পারমাণবিক অস্ত্র। মূল পারমাণবিক শক্তিধর পাঁচ দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন চেষ্টা চালিয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার নিরোধের। কিন্তু এরা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়িয়ে তুলেছে অভাবনীয়ভাবে। প্রবল বিতর্কের মুখে যুক্তরাষ্ট্র তার বাঙ্কার বাস্টিং পারমাণবিক অস্ত্র শেষ পর্যন্ত বাতিল করে। এই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল অপারমাণবিক দেশের বিরুদ্ধে ফার্স্ট-স্ট্রাইক অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগের জন্য। এখন বিশ্বে নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে। উদ্বেগ আছে গোপন পারমাণবিক বোমার অধিকারী আরো কোনো দেশ রয়েছে কি না। এর বাইরে আছে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র, যা ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষমতার অধিকারী। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ মনে করে ১৯৯১ সালের যুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হয় ‘গালফ ওয়ার সিনড্রোম’। স্বল্পমাত্রার রাসায়নিক প্রভাবে এ জটিলতার সৃষ্টি। পয়ঃজন গ্যাসের ফলে মারা গেছে ৩০ হাজার ব্রিটিশ সার্ভিসম্যান। ১৯৮৯ সালের আগে এদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ‘কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন ট্রিটি’র মাধ্যমে এগুলো এখন নিষিদ্ধ।
জীবাণু অস্ত্রের হুমকিটা এখনো বিদ্যমান। যদিও সাদ্দাম হোসেন কখনোই জীবাণু অস্ত্রের অধিকারী ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্র একটি কর্মসূচী নিয়েছিল জীবাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অ্যানথ্রাক্স উৎপাদনের।
ইতিহাস বলে
মানুষের ইতিহাসে যুদ্ধ ও যুদ্ধাস্ত্র যেনো এক অবিচ্ছিন্ন অনুষঙ্গ। যুদ্ধ অনেক সভ্যতার উত্থান-পতন ঘটিয়েছে। গান পাউডার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাস্ত্রে রসায়নের সংশ্লিষ্টতার সূচনা হয়। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক পদার্থকে রূপান্তর করা হয়েছে বিস্ফোরকে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যেসব প্রযুক্তির গবেষণা চলেছে তার ৪০ শতাংশ ছিল অস্ত্র উদ্ভাবন বিষয় নিয়ে। ১৮৯৩ সালে উদ্ভাবিত বুলেট প্রুফ অন্তর্বাস আবিষ্কারে ছিল প্রাযুক্তিক ভাবনা। আজকের আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, মাইক্রোওয়েভ যুদ্ধাস্ত্র ও ইলেকট্রোমেগনেটিক আর্মার ইত্যাদি সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। এখন যে অদম্য সুপার-ওয়েপন তৈরির ভাবনা চলছে, সেখানেও মূল উপাদান প্রযুক্তি। প্রযুক্তির পথ বেয়েই আজ আমাদের হাতে সেন্ট্রিফিউগাল গান, যা থেকে বেরিয়ে আসে জ্বলন্ত বুলেট।
উন্নততর ক্যামোফ্লেজ এবং এমনকি ইনভিজিবিলিটি বা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়ে গবেষণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চিন্তাভাবনা চলছে রাডার ইনভিজিবিলিটি নিয়ে। ১৮৫০ সালের পর থেকে অস্ত্রপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা যেসব অভাবনীয় সব ধারণা পেয়েছি তার পেছনে রয়েছে DARPA তথা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট অ্যাজেন্সি’ থেকে। সম্প্রতি ‘দর্প’ নিয়ে এসেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ যুদ্ধাস্ত্র ‘রিমুট-কনট্রোলড শার্ক’ এবং ‘র্যা ট’। সেই সাথে এনেছে রোবট জগতের ‘wacky races’। উল্লেখ্য, এই দর্প-ই রচনা করে ইন্টারনেটের ভিত। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজ সবাই দেখতে পারছে ‘গোপন অস্ত্রে’র হালনাগাদ পরিকল্পনাগুলোও। আজকের দিনে ওয়েপন টেকনোলজি যেসব ফলাফল আমাদের সামনে হাজির করছে, বিশেষজ্ঞরাও তা দেখে হতবাক। প্রথম আণবিক বোমার ট্রিনিটি টেস্টের সময় মার্কিন অ্যাডমিরাল উইলিয়াম লেয়াহি ঘোষণা করেছিলেন : ‘একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বলছি, বোমা কখনোই বন্ধ হবে না।’ সামরিক প্রযুক্তির পরবর্তী বড় ধরনের সাফল্য অর্জনটা হবে কোথায়? তা ঘটতে পারে সুপার-এক্সপ্লোসিভ, মাইক্রো-পাওয়ার জেনারেটর, ন্যানোটেকনোলজি কিংবা কোয়ান্টাম কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে। তবে আগামী দিনের সামরিকপ্রযুক্তি বা অস্ত্রপ্রযুক্তিতে যা ঘটবে, তা হবে অভাবনীয় ধরনের কিছু।
লেজার ও সাবমেরিন
পানি সাবমেরিনকে লুকিয়ে রাখে শত্রুর দৃষ্টি থেকে, কিন্তু এই সাবমেরিন পানির ওপর ভেসে ওঠে না এলে নিজেদের অন্য সাবমেরিন, বিমান ও ঘাঁটির সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে না। অর্ধেক ডুবে থাকা সাবমেরিনের যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাইলে প্রয়োজন বড় ধরনের ট্রান্সমিটার। এ ট্রান্সমিটার খুব কম ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ পাঠায়। এর ফলে সম্প্রচারের গতি সীমিত হয়ে পড়ে। এখন ‘দর্প’ নিয়ে আসছে নতুন ‘ব্লু লেজার’, যার মাধ্যমে সাবমেরিনের সাথে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলা যাবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা জেনে আসছি ব্লু লাইট পানির কূপের ভেতরে পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে। ১৯৮০ সাল থেকে ‘দর্প’ চেষ্টা করে আসছে সাবমেরিনের সাথে ব্লু লেজারের একটা সংযোগ গড়ে তুলতে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ, এ ব্লু লেজার ততটা কার্যকর-শক্তিধর ছিল না। দর্প-এর নতুন উদ্যোগে ব্যবহার করে নতুন কমপ্যাক্ট লেজার, যা থেকে বিকিরণ ঘটে ব্লু লাইটের এবং তা ফিল্টার দিয়ে গ্রহণ করা হয়। এই ফিল্টার সম্প্রচার করে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের যেকোনো আলো বন্ধ করে দেয়। এগুলো বিমানে ও জাহাজে স্থাপন করে হাই-ব্যান্ডউইডথসমৃদ্ধ যোগাযোগ গড়ে তোলা যাবে নিজেদের সাবমেরিনের সাথে।
রোবট শিখবে যুদ্ধের আইনকানুন
এ পর্যন্ত আমরা দেখেছি সৈন্যরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কার ওপর কিংবা কোন লক্ষ্যবস্ত্তর ওপর অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু রোবট প্রকৌশলী রন আরকিন এক ধরনের রোবট যুদ্ধের কথা ভাবছেন, যেখানে রোবট সিদ্ধান্ত নেবে কোন লক্ষ্যবস্ত্তর ওপর অস্ত্রপ্রয়োগ করা হবে। এই প্রকৌশলী এখন কাজ করছেন আটলান্টার ‘জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তে। তিনি বিশেষত আগ্রহী মেশিনকে কিভাবে প্রোগ্রামের আওতায় আনা যায়, যাতে মেশিন কাজ করবে নৈতিক বিষয়াবলী ভাবনাচিন্তায় রেখে। যদি তা সম্ভব হয়, তবে মেশিন বা রোবটও যুদ্ধক্ষেত্রে মেনে চলবে যুদ্ধের যাবতীয় নিয়মকানুন। রোবটকে সেভাবে শিক্ষিত করে তোলা যাবে। সামরিক রোবটকে যুদ্ধের আইনকানুন শেখানোর পরিকল্পনাই এখন তার মাথায়।
রন আরকিন উদ্ভাবন করেছেন একটি ‘ইথিক্যাল গভর্নর’। এটি নিশ্চিত করবে হামলাকারী রোবট বিমানের যুদ্ধক্ষেত্রে নৈতিকতাবোধ নিয়ে কাজ করার বিষয়টি। মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তব মানচিত্রে সিমুলেশনভিত্তিক মার্কিন সাম্প্রতিক হামলা পরিস্থিতিতে তা প্রদর্শন করছে। এ যেনো এক ভার্চু্যয়াল ব্যাটলফিল্ড। একটি চিত্রের মডেল তৈরি করা হয়েছে ২০০৬ সালে মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তানে একটি এনকাউন্টারের ওপর ভিত্তি করে। এতে মৌমাছিসদৃশ একটি রোবট একদল তালিবান সৈন্য চিহ্নিত করে একটি সুনির্দিষ্ট কিলিং জোনে। কিন্তু এই মৌমাছি রোবট কোনো গুলি করেনি। এর মানচিত্র নির্দেশ করছে যে, এই গ্রুপটির অবস্থান একটি কবরস্থানে। অতএব সেখানে গুলি করা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। অন্য একটি চিত্রে মৌমাছি রোবট শত্রুপক্ষের গাড়িবহর চিহ্নিত করে একটি হাসপাতালের পাশে। এক্ষেত্রে এই রোবট সতর্কতার সাথে গুলি চালিয়ে শুধু ওই গাড়িবহরটিই ধ্বংস করেছে, হাসপাতালের কোনো ক্ষতি না করে।
আরকিন একটি guilt সিস্টেমও উদ্ভাবন করেছেন। যদি কোনো মারাত্মক ভুল সেনাবাহিনী করতে যায়, তখন রোবট গুরুত্বের সাথে আচরণ করতে শুরু করে। সফটওয়্যারটি ডেভেলপ করতে আরকিন পড়াশোনা করেছেন মিলিটারি ইথিকস নিয়ে। সেই সাথে কথা বলছেন সামরিক ব্যক্তিদের সাথেও। তিনি বলেছেন, তিনি কমাতে চান বেসামরিক লোকক্ষয়ের মাত্রা। একজন ভিয়েতনামী তাকে জানিয়েছেন, সেখানে যা কিছু একটু নড়াচড়া করতো, তার ওপর মার্কিন বাহিনী গুলি চালাতো। তিনি বলেন, আজকে আমি সেই রোবট সহজেই তৈরি করতে পারি, যেটি এক্ষেত্রে নৈতিকভাবে কাজ করবে যুদ্ধক্ষেত্রে। আরকিনের এসব গবেষণা চলছে মার্কিন সেনাবাহিনীর অর্থ-সহায়তায়।
রেডিও কনট্রোলড বুলেট
একটি রাইফেল গুলি করবে। এ থেকে বের হবে যে বুলেট তার নাম ‘ফায়ারিং এক্সপ্লোসিভ বুলেট’। এই বুলেট ডিটোনেট করা হবে টার্গেটের এক মিটার দূরে থাকতেই। এর সাহায্যে গুলি চালানো যাবে ট্রেঞ্চের ভেতরে, দেয়ালের আড়ালে কিংবা কোনো ভবনের ভেতরে থাকা ব্যক্তির ওপর। মোট কথা হামলার শিকার ব্যক্তির লুকোবার কোনো জায়গা থাকবে না। মার্কিন সেনাবাহিনী উদ্ভাবন করেছে এক্সএম২৫ নামের রাইফেল। মার্কিন সৈন্যরা এটি ব্যবহার করবে আর্টিলারি ফায়ারের বিকল্প হিসেবে। যখন শত্রুবাহিনী কভার নেবে এবং সরাসরি তাদের ওপর গুলি চালানো সম্ভব হবে না, তখন ব্যবহার হবে এই রেডিও কনট্রোলড বুলেট রাইফেল। এই রাইফেল মার্কিন বাহিনীর জন্য এক বাড়তি সুবিধা এনে দিল, যা অন্য কোনো দেশের সেনাবাহিনীর কাছে নেই।
এই রাইফেলের গানসাইটে ব্যবহার করা হয় লেজার রেঞ্জফাইন্ডার। এর মাধ্যমে টার্গেট ঠিক কতটুকু দূরে আছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। সৈন্যটি তখন ৩ মিটার কমবেশি করে সে দূরত্বে বুলেট ফায়ার করে, যাতে তা লক্ষ্যবস্ত্তর কাছাকাছি বিস্ফোরিত হতে পারে। যখন ২৫ মিলিমিটার ব্যাসের এই বুলেট ছোড়া হয়, গানসাইট তখন বুলেটের ভেতরের চিপে একটি রেডিও সিগনাল পাঠায়। এর মাধ্যমে বুলেটকে টার্গেটের দূরত্ব জানিয়ে দেয়া হয়। এই রাইফেলের নলের ভেতরটা পেঁচানো। তাই বুলেট নল থেকে বেরিয়ে ঘুরে ঘুরে চলে। এর মধ্যে থাকে একটি রেডিও ট্রান্সডিউচার। তাই বুলেটের ঘূর্ণন ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র মিলে তৈরি করে চলবিদ্যুৎ।
ঘরে তৈরি পারমাণবিক অস্ত্র
কিছুদিন আগে বারাক ওবামা মস্কো সফর করেন। উদ্দেশ্য রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সাথে পারমাণবিক অস্ত্র সঙ্কোচন বিষয়ে আলোচনা করা। বারাক ওবামার এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এখন সব দেশের জন্যই পারমাণবিক অস্ত্র এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি একদল চিকিৎসক তাদের একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, আমেরিকান নগরীগুলো এখন মারাত্মক হুমকির মুখে এর ঘরে তৈরি পারমাণবিক অস্ত্র থেকে। যেকোনো সময় যেকোনো মার্কিন নগরীতে হোম-মেড পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হতে পারে। এ ধরনের একটি বোমাযন্ত্রকে ওবামা বিবেচনা করছেন ‘বিশ্ব নিরাপত্তার চরম হুমকি’ তথা ‘এক্সট্রিম থ্রেট টু গ্লোবাল সিকিউরিটি’ হিসেবে। কারণ, এই হোম-মেড পারমাণবিক বোমা একটি নগরীর হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারে। তবে এ বোমা গোটা নগরীকে ধ্বংসসত্মূপে পরিণত করতে পারবে না। তবে সময়মতো প্রতিকার বিধান করতে পারলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে? একটি চিকিৎসক প্যানেল মনে করে, এ ধরনের বোমা ১০ হাজার টন ট্রিনটি সক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে। এই ব্লাস্ট ওয়েভ ধ্বংস করতে পারে ভবনসমূহ ও বিস্ফোরণস্থলের ১ কিলোমিটার ভেতরের সব মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। সেজন্য এই প্যানেল নজর দিয়েছে বিস্ফোরণস্থলের বাইরে বেঁচে থাকা লোকদের কী করে তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচানো যায়। বিস্ফোরণে যে তেজস্ক্রিয় ধুলোবালি আকাশে উড়ে, তা বৃষ্টির সাথে আশপাশের এলাকায় নেমে আসতে পারে। এগুলো থেকে নির্গত হতে পারে গামা রশ্মি। বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বায়ু তেজস্ক্রিয় ধুলোবালি আশপাশের বিসত্মীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় নিরাপদ হবে ভূগর্ভস্থ কোনো ভবনে অপেক্ষা করা। মানুষকে এ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, সে বিষয়েও শিক্ষিত করে তোলা দরকার।
প্রযুক্তির ফসল
রেল গান : এটি চৌম্বক শক্তিচালিত। এটি ৬ মিনিটে ২৫০ মাইল দূরের লক্ষ্যবস্ত্ততে আঘাত হানতে সক্ষম। রেল গান থেকে ছোড়া হয় গান পাউডারভিত্তিক অস্ত্র।
রেল গান ও রকেটচালিত গ্রেনেড
রকেটচালিত গ্রেনেড : এটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা, ট্যাঙ্ক অচল করে দেয়া, কাছাকাছি দূরত্বের ভবনে হামলা করার জন্য উপযোগী। দক্ষ অপারেটরের হাতে একটি রকেটচালিত গ্রেনেড একটি মারাত্মক ও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার উপযোগী অস্ত্র।
পারমাণবিক বোমা : মানবসমাজের জন্য মারাত্মক হুমকিকর মারণাস্ত্র। এর পরিণতি ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী।
বাঙ্কার বুস্টার : সাধারণ বোমা ভূপৃষ্ঠস্ত লক্ষ্যবস্ত্তর ওপর আঘাত হানে। কিন্তু লক্ষ্যবস্ত্তর অবস্থান যখন থাকে ভূগর্ভে কিংবা কোনো না কোনো ভাবে লুকায়িত, তখন সেই বোমা যা ভূগর্ভে ঢুকে শত্রুর ওপর আঘাত হানতে পারে। বাঙ্কার বুস্টার তেমনি ক্ষমতাধর এক অস্ত্র।
ক্রুজ মিসাইল : আধুনিক এ যুগের যুদ্ধে রিমুট ব্যাটল টেকনোলজি প্রয়োগের এক আদর্শ উদাহরণ হচ্ছে এই ক্রুজ মিসাইল। এই মিসাইল অপরিহার্যভাবেই একটি মানুষবিহীন বিমান, যা থেকে ১০০০ মাইলের দূরের কোনো লক্ষ্যবস্ত্তর ওপর ১০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিক্ষেপ করা যায়।
স্মার্ট বোমা : সেরা প্রযুক্তির ফসল হচ্ছে এই স্মার্ট বোমা। হালনাগাদ মডেলের স্মার্ট বোমা খারাপ আবহাওয়ার মাঝেও সঠিকভাবে টার্গেটের ওপর আঘাত হানতে পারে।
ই-বোমা : এটি একটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক অস্ত্র। এ বোমা মানুষ মারে না। কিন্তু তা সামরিক বাহিনী ও সরকারি কাজে ব্যবহারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অচল করে দেয়। অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন বাহিনীর জন্য এই ই-বোমা এক মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
ডার্টি বোমা : সন্ত্রাসীদের একটি ডার্টি বোমা যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ ও লোকক্ষয় ঘটাবে না সত্যি, তবে তা বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি করবে। এই বোমার প্রভাব কয়েক বছর, এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে।
এমওএবি বোমা : এর পুরো নাম massive ordnance air brust bomb। এটি মার্কিন অস্ত্রভান্ডারের নবতর এক অস্ত্র এবং এটি অতি ক্ষমতাধরও। এ পর্যন্ত তৈরি বোমার মধ্যে অন্যতম ও ভয়াবহতম এক বড় আকারের বোমা।
সাইডউইন্ডার মিসাইল : এটি আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য হামলাকারী ক্ষেপণাস্ত্র নিজে নিজেই লক্ষ্যবস্ত্ত খুঁজে নিতে পারে। ফলে ফাইটার পাইলট সহজেই শত্রুর ওপর আঘাত হানতে পারে নিরাপদে থেকে।
স্টিঙ্গার মিসাইল : ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এ মিসাইলে থাকে স্টিঙ্গার মিসাইল লাঞ্চার। পদাতিক সৈন্যরা নিচু উচ্চতায় চলা শত্রু বিমানে কিংবা হেলিকপ্টারে এর মাধ্যমে আক্রমণ করতে পারে। স্টিঙ্গারের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি চলন্ত টার্গেটের ওপর নিশানা করতে সক্ষম।
সাইডউইন্ডার মিসাইল ও স্টিঙ্গার মিসাইল
সি-৪ : এটি সামরিক বাহিনী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্য প্রিয় বিস্ফোরক মারণাস্ত্র।
স্ট্রাইকার : এটি শক্তিধর এম-১-এর চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর। এটি ব্যবহারও খুব সহজ। এর মাধ্যমে নিরাপদে শত্রুর ওপর হামলা করা যায়।
ব্রেডনি ফাইটিং ভেহিকল : শত্রু এলাকায় সৈন্য পরিবহনে মার্কিন বাহিনী এ যান ব্যবহার করে। ভূমিতে ও সমুদ্রে এটি চলাচলে সক্ষম।
এম-১ ট্যাঙ্ক : ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থলযুদ্ধে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য সহায়ক। এতে বিপুল অস্ত্র বহন করা যায়।
মিলিটারি রোবট : সৈন্যরা প্রতিদিন বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হয়ে থাকে। ল্যান্ডমাইন চিহ্নিত করা, অবিস্ফোরিত বোমা নিষ্ক্রিয় করা, শত্রুপক্ষের ভবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জীবনের জন্য ঝুঁকিময়। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এই রোবট।
মিলিটারি রোবট
মিলিটারি ক্যামোফ্ল্যাজ : প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চলছে আধুনিক মিলিটারি ক্যামোফ্ল্যাজ তথা শত্রুর দৃষ্টি থেকে নিজেকে লুকানোর কাজ।
ফিউচার ফোর্স ওয়ারিয়র : ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন সৈন্যরা ব্যবহার করবে এমন এক ইনফেন্ট্রি ইউনিফর্ম, যা একজন সৈন্যকে করে তুলবে সুপার হিউম্যান। তার থাকবে অগ্রসর যোগাযোগ সুবিধা ও বৃহত্তর ব্যালিস্টিক সুরক্ষা।
বডি আর্মার : বডি আর্মার অভাবনীয় কিছু করে না দিলেও একজন সৈন্যকে দেবে বাড়তি নানা সুযোগ।
শুটগান : একে রাইফেল না বলে কেনো শুটগান বলা হচ্ছে? এটি আসলে একটি মারাত্মক প্রজেক্টাইল।
মেশিনগান : আধুনিক মেশিনগান যুদ্ধের চিত্রটাই পুরোপুরি পাল্টে দিচ্ছে। প্রযুক্তির সুবাদে এর মাধ্যমে একজন সৈন্য কয়েক ডজন মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে।
ফ্লেম ফেয়ার : এটি যুদ্ধের অবাক করা এক অস্ত্র। যদিও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র নয়।
এলআরএডি : ২০০৫ সালের নভেম্বরে সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুরা একটা ক্রুজশিপে আক্রমণ করে। তাদের কাছে ছিল মেশিনগান ও রকেটচালিত গ্রেনেড। কিন্তু ওই ক্রুজশিপে ছিল ‘লং রেঞ্জ অ্যাকস্টিক ডিভাইস’ তথা এলআরএডি। এরা শব্দরশ্মি ছুড়ে জলদস্যু তাড়াতে সক্ষম হয়।
নাইট ভিশন : এটি বেসামরিক লোকদের জন্য একটি মজার খেলনামাত্র। কিন্তু এখন এটি সব সময় কাজ করছে যুদ্ধক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে সৈন্যরা রাতকে দিন করে তুলতে পারে।
নাইট ভিশন ও জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র
জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র : সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রের বানোয়াট কাহিনী সুবিখ্যাত। মিথ্যে অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাক দখল করে নেয়।
গ্যাস মুখোশ : পদাতিক সৈন্যরা এই গ্যাস মুখোশ পরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে।
গ্যাস মুখোশ
অ্যাপাচি হেলিকপ্টার : ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে যেমনি এম-১, হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে তেমনি অ্যাপাচি। এটি খুবই মারাত্মক। এটি ইলেকট্রনিক উপায়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইসরাইলী সৈন্যরা ফিলিস্তিনীদের দমনে প্রায়ই এ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
অ্যাপাচি হেলিকপ্টার
ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার : মার্কিন সেনাবাহিনীতে এটি হচ্ছে অ্যারিয়েল ওয়ার্ক হর্স। এটি খুবই গতিসম্পন্ন এবং আঘাত হানার ক্ষমতাধর একটি হেলিকপ্টার।
মার্কিন গোয়েন্দা বিমান
এফ-১৫ যুদ্ধবিমান : এ যুদ্ধবিমানে থাকে আধুনিক সব অস্ত্র।
ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, এফ/এ-২২ রাপটর ফাইটার ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান
স্টিলথ বম্বার : এটি একটি অনন্য ক্ষমতাধর বোমা বহনকারী বোমারু বিমান। এর প্রাথমিক কাজ ছিল বিশেষ যেকোনো স্থানে পারমাণবিক বোমা বহন করে নিয়ে গিয়ে শত্রুপক্ষের সব সেন্সর এড়িয়ে লক্ষ্যবস্ত্ততে বোমা নিক্ষেপ করে নিরাপদে ফিরে আসা।
স্পাই প্লেন : সামরিক গোয়েন্দার মাধ্যমেই অনেক সামরিক অভিযানের সাফল্য নিশ্চিত করা হয়। এজন্য এই স্পাই প্লেন বা সার্ভিলেন্স প্লেনকে গোয়েন্দা কাজে গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা হয়।
প্রিডেটর ইউএভি : প্রিডেটর আনম্যান্ড অ্যারিয়েল ভেহিকল হচ্ছে সামরিক বাহিনীর উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কম ঝুঁকির অস্ত্র ব্যবহার-প্রবণতার একটি উদাহরণ। এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি গোয়েন্দা বিমান।
ইজেকশন সিট : যখন সামরিক বিমান সমস্যায় পড়ে, তখন পাইলট নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইজেক্ট বা নিক্ষেপ করতে পারে। মধ্য-আকাশে একজন পাইলটের জন্য ইজেকশনের কাজটি সহজতর করে তুলেছে ইজেকশন সিট।
এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার : এটি হচ্ছে মার্কিন বাহিনীর প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হওয়ার অনন্য উদাহরণ। আধুনিক যুগের একটি সুপার ক্যারিয়ার নৌবাহিনীর জন্য কার্যত অত্যাধুনিক প্রাযুক্তিক সুবিধাসমৃদ্ধ একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো।
ডার্টি বোমা ও মেসিড অর্ডন্যান্স এয়ার ব্রাস্ট
সাবমেরিন : পানির নিচে, উপরে কিংবা অর্ধ-ডোবা অবস্থায় এটি কাজ করে। এতে অত্যাধুনিক নৌসমরাস্ত্র থাকে।
এফএসএফ-১ সি-ফাইটার : নৌযুদ্ধ মোকাবেলায় এটি ব্যাপক সুযোগসমৃদ্ধ এক নৌবহর।
যুদ্ধবিমানের ইজেকশন সিট
আগামী দিনের শীর্ষদশ অস্ত্র
০১. অটোনোমাস ওয়েপন : এগুলো রোবটচালিত অস্ত্র। এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার না হলেও এ অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে। এগুলো শত্রুপক্ষের সৈন্যদের খুঁজে বের করে ধ্বংস করবে। ভূমিতে কিংবা আকাশে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিও খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে এ অস্ত্র। নিজেদের সৈন্যের জন্য তা ক্ষতিকর হবে না। এর অনবোর্ড কমপিউটার ইন্টারপ্রিন্ট ডাটা সেন্সর শত্রুবাহিনীকে চিহ্নিত করে আক্রমণের লক্ষ্য বানাবে। এতে থাকবে বিল্ট-ইন ওয়েপন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ওয়েপন শত্রুপক্ষের ওপর হামলা চালাবে। দূরে কোথাও থেকে যে মানুষটি এই রোবট নিয়ন্ত্রণ করবে, রোবট সে মানুষটিকে প্রশ্ন করে জেনে নেবে গুলি করার জন্য সামনে বাড়বে কি না। নিজেদের বাহিনী বহন করে নিয়ে যাবে একটি ট্রান্সপন্ডার, যা দিয়ে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে চিনে নেয়া হবে। তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো এটি দ্রুত ও পুরোপুরি বিশ্বস্ততার সাথে শত্রুবাহিনী, নিরপেক্ষ অথবা বন্ধুপক্ষ এবং বেসামরিক মানুষ, গাভী, গাছ ও ট্রাক্টরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারবে না। হিউম্যান কন্ট্রোলাররা সে সিস্টেম ব্যবহার করবে তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ভুল করে রোবট ব্যাপকভাবে গুলি চালাতে পারে যেকোনো কিছুর ওপর।
০২. হাই-এনার্জি লেজার : খুব শক্তিধর এমন লেজার রশ্মি রয়েছে, যেগুলো সরলরেখায় বায়ু কিংবা মহাশূন্যে প্রবেশ করতে পারে। এগুলো চলে আলোর গতিতে। এই লেজার রশ্মি আঘাত হানতে পারে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের কোনো লক্ষ্যবস্ত্ততে। বড় বড় আয়নার মাধ্যমে আলোকপাত করতে পারে লক্ষ্যবস্ত্তর ছোট্ট কোনো স্থানে। এতে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়, তাতে লক্ষিত স্থানটি পুড়ে যেতেও পারে। এতে করে বিমানে ফ্লাইট বাধাগ্রস্ত করা যেতে পারে। বিমানে থাকা অস্ত্র ধ্বংস করে দিতে পারে। জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলতে পারে। শত্রু বিমানে থাকা বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। বুলেটের চেয়ে ধ্বংসসাধন করতে প্রয়োজন আরো শক্তিধর লেজার রশ্মি। শক্তিশালী লেজারের প্রয়োজন জ্বালানি বা বিদ্যুৎ।
পেন্টাগন কাজ করছে লেজার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি অস্ত্রের ওপর। এর নাম laser dazzler! এ অস্ত্র প্রয়োগ করে চোখের কোনো ক্ষতি না করে সামনে থেকে আসা গাড়ির চালকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া যাবে। যখন কোনো গাড়ি কোনো সামরিক চেকপয়েন্টের দিকে ওয়ার্নিং উপেক্ষা করে অগ্রসর হবে, সৈন্যরা জানতে পারবে না গাড়িচালক নির্বোধ না সুইসাইড বোমারু, তখন তার ওপর এই লেজার ডেজলার প্রয়োগ করে তার চোখ ধাঁধিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়া হবে। এতে করে সে কিছুক্ষণ সামনের দিকে কিছুই দেখতে পারবে না। তবে এতে তার চোখও নষ্ট হবে না। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী গ্রিন লেজার ডেজলার ব্যবহার করেছে প্রতিপক্ষের যোদ্ধাদের সাময়িকভাবে অন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু খুব কাছ থেকে এ অস্ত্র প্রয়োগ করলে চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ফ্র্যান্ডলি ফায়ারের শিকার হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে অনেক সামরিক-বেসামরিক লোক চোখ হারিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। অনেক মার্কিন সৈন্যও এর শিকারে পরিণত হয়েছে। এখন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর কাজ করছে কী করে এ অস্ত্রের হাত থেকে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া এড়ানো যায়।
পেট্রিয়ট মিসাইল
০৩. মহাকাশভিত্তিক অস্ত্র : আগামী দিনে মহাকাশ হবে এক ব্যাপক যুদ্ধক্ষেত্র। মহাকাশ থেকে সৈন্যরা চিহ্নিত করবে ভূমিতে, আকাশে ও কাছের মহাকাশের সামরিক-বেসামরিক সবকিছু। মহাকাশের কক্ষপথে ভ্রমণরত অস্ত্র সেই সক্ষমতা রাখবে। মহাকাশভিত্তিক অস্ত্রের মূল কাজ হবে ভূমির ওপর কোনো টার্গেট নিক্ষিপ্ত ব্যালিস্টিক মিসাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। প্রতিরোধের কিংবা যুদ্ধের কেন্দ্র স্থাপিত হবে মহাকাশের কোনো কক্ষপথে। সেখান থেকেই ঠেকানো হবে প্রতিপক্ষের হামলাকারী ক্ষেপণাস্ত্র। এক্ষেত্রে প্রধান অস্ত্রটি হচ্ছে সলিড প্রজেক্টাইল। যেমন টাংস্টেন রড। এই রড প্রভাব সৃষ্টি করবে ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর। মহাকাশে লেজার ব্যাটলস্টেশন গড়ে তোলার কথাও এখন অস্ত্রপ্রযুক্তিবিদদের বিবেচ্য বিষয়। এর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে মহাকাশভিত্তিক অস্ত্র এখনো তেমন পরিপক্বতা অর্জন করেনি। এর রিয়েকশন টাইম আরো কমিয়ে আনা দরকার। ইন্টারসেক্টরকে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলতে হবে, যাতে করে প্রতিপক্ষের অস্ত্র ধ্বংস করে দিতে পারে। লেজার অস্ত্রের জন্য প্রয়োজন হবে রাসায়নিক জ্বালানি বা বৈদ্যুতিক জ্বালানি, যা মহাকাশে সহজে পাওয়া যাবে না।
০৪. হাইপারসনিক বিমান : একটি আদর্শমানের বিমানবন্দর থেকে উড়ে একটি হাইপারসনিক যুদ্ধবিমান মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে পারবে। এর গতি হবে অভাবনীয়। এ বিমান থেকে লো-আর্থ অরবিটে স্যাটেলাইট পর্যন্ত স্থাপন করা যাবে। রানওয়ে থেকে ওড়ার জন্য একটি হাইপারসনিক যুদ্ধবিমান হয় এটি চড়ে বসবে কোনো প্রচলিত বিমানে অথবা এর থাকবে নিজস্ব প্রচলিত জেট ইঞ্জিন। এ ইঞ্জিন বহন করবে একটা উচ্চতা পর্যন্ত এই হাইপারসনিক যুদ্ধ বিমানকে, যে উচ্চতায় বায়ুর ঘনত্ব ও এর বাধা দেয়ার ক্ষমতা হবে খুবই কম। সেখানে এর গতি সুপারসনিক পর্যায়ে পৌঁছবে। তখন এতে কাজ করবে একটি স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন বায়ুর সাথে জ্বালানি মিশ্রিত করে তাকে যখন এ ইঞ্জিন দিয়ে প্রবাহিত করবে, তখন বিমান অর্জন করবে সুপারসনিক গতি। অর্থাৎ তখন তা শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে চলবে। এর অর্থ স্ক্র্যামজেট অর্জন করবে অনেকটা রকেটের গতি। তবে রকেটের মতো তাতে হ্যাভি অক্সিডাইজার লাগবে না জ্বালানির সাথে মিশ্রিত করার জন্য। এ প্রযুক্তিও এখনো পরিপক্বতা পায়নি। স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন চালু করা যাবে না, যতক্ষণ না বিমানটি শব্দের গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলে। তাছাড়া হাইপারসনিক বিমান এখন পর্যন্ত চালকবিহীন করে উচ্চগতিসম্পন্ন বাহনে করে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে মাত্র। পরিকল্পিত অন্যান্য পরীক্ষামূলক যানগুলো এতটাই ছোট যে এতে চালক বহনের সুযোগ নেই।
০৫. মাইক্রোওয়েভ ওয়েপন : মাইক্রোওয়েভ ওয়েপন আকাশ থেকে যন্ত্রণার বৃষ্টি ছড়াবে। পেন্টাগন এখন প্রবল আগ্রহী এমন সব অমারণাত্মক অস্ত্র উদ্ভাবনে, যার মাধ্যমে মানুষ হত্যা না করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলোকে বলা হচ্ছে ‘নন-লেথাল ক্রাউড-কন্ট্রোল ওয়েপন’। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত, এরা গড়ে তুলবে ‘মাইক্রোওয়েভ পেইন ইনফ্লিকশন সিস্টেম’, যা বিমান থেকে ছোড়া হবে। এটি আসলে বিতর্কিত ‘অ্যাক্টিভ ডিনায়েল সিস্টেম’-এরই সম্প্রসারণ মাত্র। এতে ব্যবহার হবে মাইক্রোওয়েভ, যাতে করে লক্ষিত মানুষের শরীরের চামড়াকে গরম করে তুলবে। ফলে ওই ব্যক্তির শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে, তখন যে পালাতে বাধ্য হবে। ‘অ্যাক্টিভ ডিনায়েল সিস্টেম’ ২০০১ সালে উদ্ভাবিত হলেও আইনগত বৈধতা না থাকা ও নিরাপত্তা হুমকির কারণে এর প্রয়োগ হয়নি। তা সত্ত্বেও পেন্টাগনের ‘জয়েন্ট নন-লেথাল ওয়েপনস ডিরেক্টরেট’ এখন বলছে একে উন্নীত করার জন্য। মার্কিন বিমানবাহিনীর রাডার টেকনোলজি ‘অ্যাক্টিভ ডিনায়েল সিস্টেম’ভিত্তিক। এ ব্যবস্থার খাতে মার্কিন বিমানবাহিনীর বার্ষিক খরচ ২০ লাখ ডলার থেকে ১ কোটি ডলারে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় এর অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য ২ মিটার। নতুন অস্ত্রে থাকবে একটি কমপ্যাক্ট এয়ারবোর্ন অ্যান্টেনা। এটি চলবে ইলেকট্রনিক উপায়ে এবং তা হবে মাল্টিপল বিম তৈরিতে সক্ষম।
০৬. পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র : পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা হবে অভাবনীয় মাত্রার। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী সামরিক বাহিনী হবে অসাধারণ ক্ষমতাধর এক বাহিনী। এক্ষেত্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে থাকে এক বা একাধিক পারমাণবিক মারণাস্ত্র। এটি ছোড়া হবে সোজা উপরের দিকে। বায়ুমন্ডলে উঁচুস্তরে পৌঁছে রকেট বিস্ফোরিত হবে। এর পর পৌঁছবে এর প্রোগ্রাম করা গন্তব্যে, সেখানে বোমা পতিত হয়ে তা বিস্ফোরণ ঘটাবে। এ বোমার বিস্ফোরণের ফলে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে এই বোমা কোথা থেকে নিক্ষিপ্ত হলো সে স্থান ও ট্র্যাজেক্টরি সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব, ফলে তা প্রতিপক্ষের প্রতিশোধমূলক পাল্টা আঘাতের শিকার হতে পারে।
০৭. স্টানগান : এই স্টানগান বা ট্যাসার ব্যবহার করে প্রধানত পুলিশ বাহিনী। বিক্ষুব্ধ জনতা ঠেকাতে এই স্টানগানের ব্যবহার চলে। জনতার ওপর এর মাধ্যমে বেশি ভোল্টেজের ইলেকট্রিক শক সৃষ্টি করে তাদেরকে অক্ষম করে দেয়া হয়। তবে এর ফলে মানুষের ওপর স্থায়ী কোনো আঘাত সৃষ্টি করা হয় না। এই স্টানগান থেকে একটি বর্শা নিক্ষেপ করা হয় তারের ওপর। এই তারে তখন প্রবাহিত হয় বৈদ্যুতিক পালস। এর সংস্পর্শে এলে মানুষ সাময়িকভাবে তার পেশীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পুলিশ সাধারণত এর টার্গেট করে টার্গেট পিপলের শরীর ও পা-কে, যাতে করে মাথা ও ঘাড়কে এর আঘাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। মানুষ যখন তার পেশী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন সে মাটিতে পড়ে যায়। এর সীমাবদ্ধতা হলো ট্যাসারড ব্যক্তিটি যখন পেশীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন সে বড় ধরনের আঘাতের মুখে পড়তে পারে। স্টানগান থেকে নিক্ষিপ্ত বর্শাটি আঘাত করতে পারে গলায়, চোখে কিংবা প্রজনন যন্ত্রে, যা বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
০৮. ই-বোমা : উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ পালস অচল করে দিতে পারে কমপিউটার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। ধ্বংস করে দিতে পারে বিদ্যুৎশক্তি। এর মাধ্যমে কার্যত শত্রুপক্ষকে অচল করে দেয়া যেতে পারে- তা হোক সামরিক কিংবা বেসামরিক প্রতিপক্ষ। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড স্ট্র্যাংথ ব্যাপক বাড়িয়ে তুলে পালসের সময়ে কন্ডাক্টরের বিদ্যুৎ প্রবাহে আলোড়ন সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি জ্বলে যায়। এর সাধারণ শিকার হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর চিপ। বিশেষ ধরনের ই-বোমা বিসত্মীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপকভাবে পালস সৃষ্টি করে। কিন্তু মানুষবিহীন যুদ্ধবিমানের ক্ষুদ্রতর জেনারেটর যথার্থ লক্ষ্যবস্ত্ত নির্ধারণ করতে পারে। এর সীমাবদ্ধতার প্রভাব স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। এবং স্থানীয় পরিস্থিতির পূর্বানুমান করা কঠিন। তবে এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের স্পর্শকাতর সামরিক যন্ত্রপাতি অচল করে দেয়া যায়।
০৯. লেয়ার্ড মিসাইল ডিফেন্স : লেয়ার্ড মিসাইল ডিফেন্স গড়ে তুলে শত্রুপক্ষের হামলাকারী ব্যালিস্টিক মিসাইল সহজেই গুলি করে ভূপাতিত করা যায়। মাল্টিপল এন্টি-মিসাইল সিস্টেম বা ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী বহুমুখী ব্যবস্থা গড়ে তুলে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার জন্যই এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই পর্যায় তিনটি হচেছ : boost phase, mid-course phase এবং terminal phase। যখন রকেট ফায়ারিং ইঞ্জিন সহজেই লক্ষ্য চিহ্নিত করতে পারে, তখনকার পর্যায়ের নাম বোস্ট ফেজ। আর যখন ওয়্যারহেড বোস্ট মহাকাশে থাকে, তখন এর নাম মিড-কোর্স ফেজ। আর যখন তা টার্গেটের দিকে এগিয়ে যায়, তখনকার পর্যায়কে বলা হয় টার্মিনাল ফেজ। প্রতিরক্ষার এই প্রতিটি পর্যায় বা স্তর ক্ষেপণাস্ত্র সাফল্যের সাথে ধ্বংস করার শাখাকেই বাড়িয়ে তোলে। এর সীমাবদ্ধতা হলো, প্রতিটি পর্যায়ের এই প্রতিরক্ষা নির্ভরশীল প্রতিটি স্তরের দক্ষতার ওপর। এ ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই ব্যয়বহুল। এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চালু করা ও রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়বহুল।
১০. ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার : এই কৌশল অবলম্বন করে শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে বা অন্য কোথায় তথ্যপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। ইনফেরমেশন ওয়ারফেয়ারের মূল লক্ষ্য প্রতিপক্ষের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও কমপিউটার, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কমপিউটার হ্যাকার, যাতে বলা হয় ক্র্যাকার, ওভারলোড মিলিটারি কমপিউটার ও নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করে দিতে পারবে। ছড়িয়ে দিতে পারবে মারাত্মক ধ্বংসকর কমপিউটার ভাইরাস। জ্যামারেরা ব্লক করে দিতে পারে টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচার। ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ারের অংশ হিসেবে শত্রুপক্ষের মাঝে ভুল তথ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বড় সামরিক শক্তিগুলোরই বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে বেশি নির্ভরশীল কমপিউটার ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপর। অতএব তাদের কমপিউটার ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অচল হলে এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই সবচেয়ে বড় হুমকি। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ওপর তুলনামূলক কম নির্ভরশীল প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তবে উভয় পক্ষই শিকার হতে পারে মিস-ইনফরমেশন নামের ইনফরমেশন ওয়ারের।
প্রযুক্তির পথ বেয়ে যে সময়ে যে অস্ত্র
খ্রিস্টপূর্বাব্দ
৪০০০০০ : জার্মানিতে বল¬মের প্রথম ব্যবহার শুরু।
৪০০০০-২৫০০০ : প্রস্তর যুগের কালাশনিকভ নামে খ্যাত ‘অ্যাটল অ্যাটল’। এর মাধ্যমে ছোড়া গুলি ৪০ মিটার দূরের একটা হরিণ মেরে ফেলতে সক্ষম ছিল। এর উদ্ভাবন উত্তর আফ্রিকায়। বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে তীর ও ধনুক এর স্থান দখল করে।
২৩০০০ : বুমেরাং, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের উদ্ভাবন। ইউরোপ ও আফ্রিকাজুড়ে এর ব্যবহার ছিল শিকার-অস্ত্র হিসেবে। তবে অনেক বুমেরাং নিক্ষেপের পর আর নিক্ষেপকারীর কাছে ফিরে আসেনি। ২৩০০০ বছর আগের হাতির দাঁত থেকে তৈরি বুমেরাংয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে পোল্যান্ডের গুহায়।
২০০০০ : তীর-ধনুক।
৫৩০০ : যুদ্ধের ঘোড়ার ব্যবহার ও ঘোড়াকে প্রথম গৃহপালিত করার শুরু, কাজাখস্তানে।
৫০০০ : প্রথম ধাতুর ডেগারের প্রচলন।
৫০০ : ট্রাকশন ট্রিবুরেট।
খ্রিস্টাব্দ
৮০০-১৩০০ : চীনে আবিষ্কার হয় গান পাউডার।
১২০০-১৬০০ : ইসলামের স্বর্ণযুগের আগ্নেয়াস্ত্র।
১৪১৫ : মধ্যযুগের লংবার্ড (ধনুক) প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৩৬৮-১৬৪৪ : চীনে আগ্নেয়াস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন।
১৭৫০-১৮০০ : রকেট অস্ত্র।
১৭৫০ : যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম সাবমেরিনের ব্যবহার, যুক্তরাষ্ট্রে।
১৮০৩ : শার্পনেল শেল, ব্রিটিশরা প্রথম ব্যবহার করে, তারও আগে চীনারা তা উদ্ভাবন করে।
১৮৫১-১৮৬১ : মেশিন গান (বেলাজিয়াম আর্মি)।
১৮৬২ : প্রথম লোহার যুদ্ধজাহাজ (দ্য ইউএস মনিটর)।
যুদ্ধজাহাজ
১৮৭৬-১৮৮৩ : স্কুলশিক্ষক জন হল্যান্ড Fenian Ram নামে একটি সামরিক সাবমেরিন নির্মাণ করেন যুক্তরাষ্ট্রে আইরিশ এক বিদ্রোহী গ্রুপের জন্য। আগের যেকোনো সাবমেরিনের চেয়ে এটি ছিল ভিন্নতর। কারণ, এটিই প্রথম স্ট্রিমলাইনড আকারের সাবমেরিন।
১৮৮৪ : Hiram Stevens Maximum তৈরি করেন প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান : ম্যাক্সিম গান। পরবর্তী জীবনে তিনি ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হলে উদ্ভাবন করেন প্রথম দিককার ইনহেলার। তারও আগে তার পুত্র Hiram Percy Maxim বন্দুকের প্যাটেন্ট লাভ করেন।
১৮৯৩ : শিকাগোর মেয়র নিহত হওয়ার পর স্থানীয় যাজক ক্যাসিমির জেগলেন তৈরি করেন প্রথম বুলেটপ্রুফ বর্ম। এর ফলে ভারি ধাতব বর্মের ব্যবহার বন্ধ হয়। এর বুলেটপ্রুফ বর্ম প্রধানত তৈরি হয় বুনন করা পশমী কাপড় দিয়ে।
১৯০৯ : সাইলেন্সার।
১৯১৪ : ব্রিটিশ সেনাবাহিনী প্রথম সূচনা করে ট্যাঙ্ক।
১৯৪২ : যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়।
১৯৪৫ : ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোতে প্রথম সফল পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আগস্ট ৬ ও ৯ তারিখে জাপানী শহরে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলে মার্কিনীরা। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে বটে, তবে শুরু হয় পারমাণবিক অস্ত্রের এক নতুন যুগ।
১৯৫২ : প্রথম ফিউশন বা হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে। এটি ছিল হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত বোমার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী।
১৯৫৩ : প্রথম MASER (Microwave Amplification by Stiumulated Emission of Radiation) তৈরি হয় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি তৈরি করতো মাইক্রোওয়েভ রশ্মি। তবে এটি অবাস্তব অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়।
১৯৬০ : প্রথম LASER (Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation) প্রদর্শিত হয়। এটি তৈরি করে লোহিত আলোকরশ্মি।
১৯৬০-২০০০ : সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি করে নানা ধরনের টর্পেডো।
১৯৭৪ : নাসার গবেষক জ্যাক কভার পাঁচ বছর গবেষণা করে তৈরি করেন প্রথম Taser।
১৯৭৭ : যুক্তরাষ্ট্র প্রথম অ্যান্টি-স্যাটেলাইট লেজারের পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
১৯৯৯ : তেজস্ক্রিয় হাফনিয়াম নিয়ে পরীক্ষা চলে। একটি সচল যন্ত্র থেকে গামারশ্মি বের করা হয়, তা পারমাণবিক বোমার মতোই ধ্বংসকর।
২০০১ : প্রথমবারের মতো ব্যবহার হয় হাই-এনার্জি-লেজার। আর্টিলারি গোলা ভূপাতিত করার কাজে এটি ব্যবহার হয়। PEP (Pulsed Energy Projectile) নামে লেজার অস্ত্রের উদ্ভাবন করা হয়।
২০০৭ : অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র উৎপাদক কোম্পানি ‘মেটাল স্টর্ম’ এর বন্দুকের জন্য প্যাটেন্ট ফাইল করে। এই বন্দুক মিনিটে কয়েক লাখ গুলি ছুড়তে সক্ষম।
২০০৮ : প্রথমবারের মতো ‘এয়ারবোর্ন লেজার’ নামের হাই-এনার্জি-লেজার ফায়ার করা হয় বিমান থেকে। হাই-এনার্জি-লেজার অস্ত্রের ক্ষেত্রে ছিল আরো একটি মাইলফলক।
২০০৯ : মার্কিন সরকারের এক রিপোর্টে সৈন্যদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিউরোসায়েন্স ব্যবহারের তাগিদ দেয়া হয়।
বলা দরকার
প্রযুক্তি মানুষের জন্য দু’টি পথ খোলা রেখেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ কি মানবসমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করবে, না নিরাপত্তার অজুহাতে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র তৈরি করে মানুষ হত্যার ও মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টির পথকেই সুপ্রসারিত করবে? মানুষকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে রাজনীতিবিদ কিংবা রাষ্ট্রনায়করা কখনোই অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসেনি। আগামী দিনেও আসবে না। তাই বিশ্ব মানবসমাজকেই প্রবল জনমত গড়ে তুলে রাষ্ট্রনায়কদের বাধ্য করতে হবে প্রযুক্তির ধ্বংসকর পথ পরিহার করে কল্যাণময় পথে হাঁটতে। নইলে পরাশক্তিগুলো নিজেরা একদিকে পারমাণবিকসহ অন্যান্য মারণাস্ত্রের ভান্ডার বাড়িয়ে যাবে, অপরদিকে অন্যদের বলবে অস্ত্রনিরোধ মেনে চলতে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষই একমাত্র ভারসা। যাদের সম্মিলিত প্রয়াসই পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পারে যাবতীয় মারণাস্ত্র। বিশ্ববাসী তখন সুযোগ পাবে শান্তিতে-নিরাপদে বসবাসের।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com