মিথোলজিক্যাল কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে নানারকমের গেম বের করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ জুড়েই আছে রোল পে¬য়িং ও স্ট্র্যাটেজি গেমের জয়জয়কার। মিথোলজিক্যাল কাহিনী নিয়ে বানানো গেমগুলোর মধ্যে এইজ অব মিথোলজি, ট্রয়, রাইজ অব দ্য আর্গোনাটস, গড অব ওয়ার, জিউস-মাস্টার অব অলিম্পাস, হিরোস অব মাইট অ্যান্ড ম্যাজিক ইত্যাদি প্রধান। গ্রিক পুরাণ, রোমান, বারবারিয়ান, মিসরীয় সব ধরনের মিথোলজি নিয়েই তৈরি হয়েছে নানা গেম। কোনো কোনো গেমে দেবতা হিসেবে আবার কোনো কোনো গেমে সাধারণ মানুষের চরিত্রে গেমারকে গেমিং জগতে পা রাখতে হয়েছে। কিন্তু একবার ভাবুন তো অর্ধদেবতা ও অর্ধমানুষ নিয়ে কেউ কখনো গেম খেলার কথা ভেবেছেন। অর্ধদেবতার কথা এলেই সবার আগে মনে পড়ে গ্রিক পুরাণের হারকিউলিসের কথা।
হারকিউলিসকে নিয়েও গেমের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেরকমই অর্ধদেবতাদের নিয়ে বানানো একটি গেম হচ্ছে ডেমিগড।
ডেমিগড গেমটি রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি ও রোল পে¬য়িং ধাঁচের। এটির গেমপে¬ মূলত ওয়ারক্রাফট ৩ আর সাথে দেয়া ডিওটিএ (DOTA) বা ডিফেন্স অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট গেমটির মতো করে বানানো। ডিওটিএ গেমটি সম্পর্কে আগে পুরনো গেম বিভাগে আলোচনা করা হয়েছে, তবুও নতুন পাঠকদের জন্য একেবারে কিছু না বললেই নয়। ডিওটিএ বা ডিফেন্স অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট গেমটি Warcraft III : Reign of Chaos গেমটির সাথে দেয়া আছে। ডিওটিএ গেমটিতে একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। গেমটিতে দুটি দল বিদ্যমান তাদের একটি হচ্ছে সেন্টিনেল ও অন্যটি সোর্জ। উভয় পক্ষে অনেকগুলো হিরো রয়েছে, গেমারকে যেকোনো একটি হিরো সিলেক্ট করে খেলা শুরু করতে হয়। উভয় পক্ষে নিজ নিজ বেজ রয়েছে। গেমারকে নিয়ে বিপরীত পক্ষে বেজ ভেঙ্গে ফেলতে পারলেই জয় পাওয়া যায়। গেমে হিরোকে সাহায্য করতে বেজ থেকে কিছুক্ষণ পর পর সৈন্য উৎপন্ন হয়ে বিপরীত পক্ষে সাথে যুদ্ধ করবে, তেমনিভাবে বিপরীত পক্ষেও হিরো থাকবে এবং হিরোকে সাহায্য করার জন্য বেজ থেকে সৈন্য উৎপন্ন হবে। গেমারের কাজ হবে হিরোকে নিয়ে বিপরীত পরে হিরো ও সৈন্যদের মারা এবং বিপরীত পরে সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে নিজের দলের সৈন্যদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। গেমে শত্রু সৈন্য ও হিরোকে মারতে পারলে সোনার মোহর পাওয়া যাবে, সেই সোনা দিয়ে হিরোর জন্য বিভিন্ন পাওয়ার কিনে হিরোকে আরো শক্তিশালী করা যাবে। এছাড়া হিরোকে নিয়ে খেলতে থাকলে হিরোর লেভেল আপডেট হবে, যার ফলে হিরোর আঘাত করার ক্ষমতা ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পাবে। গেমটির সবচেয়ে মজার দিক হচ্ছে হিরোদের পাওয়ার বা অ্যাবিলিটির ভিন্নতা, কারণ এক এক হিরোর ক্ষমতা ও যুদ্ধকৌশল অন্য হিরোদের সাথে মেলে না। তাই একেকবার খেলার সময় হিরো পরিবর্তন করে খেললে একঘেয়ে লাগার কোনো কারণ নেই। ডেমিগড গেমটিও অনেকটা ডিওটিএ’র মতো হিরোনির্ভর গেম, যেখানে গেমারকে যেকোনো একটি হিরো নিয়ে খেলতে হবে। ডেমিগড গেমটি পাবলিশ করেছে বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি স্টারডক এবং গেমটি ডেভেলপ করেছে গ্যাস পাওয়ারড গেম। স্টারডক সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি হিসেবে নামকরা হলেও এটি গেমারদের বেশ কিছু ভালো স্ট্র্যাটেজি গেম উপহার দিয়েছে, তার মধ্যে গ্যালাক্টিক সিভিলাইজেশন ১, ২ ও সিনস অব আ সোলার এম্পায়ার অন্যতম।
গেমের শুরুতেই গেমারকে একজন ডেমিগড ও খেলার লোকেশন বা এরিনা সিলেক্ট করে নিতে হবে। ডেমিগড গেমটিতে মোট হিরো বা ডেমিগডের সংখ্যা হচ্ছে আট ও যুদ্ধের জন্য আটটি এরিনা দেয়া হয়েছে। ডেমিগডদের নাম হচ্ছে রুক, আনকিয়ার বিস্ট, টর্চবেয়ারার, ভ্যাম্পায়ার লর্ড, রেগুলাস, সেডনা, ওর্ক ও কুইন অব থর্ন। গেমটি দুইভাবে খেলা যায়-অ্যাসাসিন্স ও জেনারেল মুডে। জেনারেল মুডে হিরোর সাথে সৈন্য উৎপন্ন করে যুদ্ধ করতে হবে এবং অ্যাসাসিন্স মুডে হিরোকে নিয়ে একা একাই বিপরীত পক্ষে সৈন্যদল ও হিরোর সাথে মোকাবেলা করতে হবে। গেমে এক এক হিরোর বৈশিষ্ট্য এক এক রকম। কেউ সামনাসামনি লড়াইয়ে বেশ পটু, আবার কেউ দূর থেকে ভালো লড়াই করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ গেমটির আলোচিত চরিত্র রুক হচ্ছে ৫০ ফুট লম্বা বিশালাকার পাথরের দানব, রকের হাতে বিশাল আকারের হাতুড়ি রয়েছে, যা দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে তার জুড়ি নেই। রুককে নিয়ে খেললে সামনাসামনি লড়াইয়ে এক এক আঘাতে বিপরীত পক্ষে ডেমিগডের অবস্থা কাহিল করে দিতে পারবেন। কিন্তু বিশাল দেহের কারণে নড়াচড়ার ব্যাপারে রুক অন্য হিরোদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। কারণ হাতুড়ি তুলে এক বাড়ি মারার পূর্বেই বিপরীত পরে ডেমিগড বা হিরো তার অবস্থান পরিবর্তন করে মারের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যেতে পারে অনায়াসে। আবার সামনাসামনি লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন হচ্ছে আনকিয়ার বিস্ট। এছাড়া বিস্টকে দিয়ে বিপরীত পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে মহামারী সৃষ্টি করা যায়, যার ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই সব সৈন্যের জীবনীশক্তি সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকবে। এছাড়া দূর থেকে যুদ্ধ করে এমন হিরোদের মধ্যে সবার আগে আসে রেগুলাসের নাম। বিশাল তীর-ধনুক হাতের সুদর্শন হিরো খুব দ্রুত তীর ছুড়তে পারে ও তার প্রতি আঘাতে প্রতিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতিও হয় ব্যাপক। এছাড়া অন্য হিরোদেরও যুদ্ধ করার কৌশল ও পাওয়ারের ভিন্নতা চোখে পড়ার মতো। গেমে খেলতে খেলতে অর্জিত অর্থ দিয়ে নানারকম উপকরণ কিনে হিরোর পাওয়ার ও লেভেল বৃদ্ধি করে নেয়া যাবে। অনলাইনে গেমটি খেলার সুব্যবস্থা রয়েছে। তবে গেমটির কোনো মেইন স্টোরি লাইন ক্যাম্পেইন মোড নেই। শুধু স্কিরমিশ ও মাল্টিপে¬য়ার মোড আছে।
গেমটির গ্রাফিক্স কোয়ালিটি অসাধারণ। এছাড়া শব্দশৈলীও চমৎকার ও প্রাণবন্ত। দৈত্যাকার ডেমিগডরা যখন পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করবে, তখন গেমে মাটিতে যে কম্পন অনুভূত হবে তার শব্দ বেশ বাস্তবসম্মত করে তৈরি করা হয়েছে। ভলিউম বাড়িয়ে শুনলে মনে হবে আপনার পায়ের তলার মাটিই বুঝি কাঁপছে।
গেমটি খেলার জন্য এক্সপি সার্ভিস প্যাক ৩ বা ভিসতা সার্ভিস প্যাক ১-এর প্রয়োজন হবে। এছাড়া গেমটি খেলতে ২.৪ গিগাহার্টজের প্রসেসর, ৫১২ মেগাবাইট র্যােম, ১২৮ মেগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড (ন্যূনতম এনভিডিয়া জিফোর্স ৬৮০০ বা এটিআই রাডেওন এক্স ১৬০০) এবং ৮ গিগাবাইট ফাঁকা হার্ডডিস্ক।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com