• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কৃত্রিম মানব মস্তিষ্ক আসছে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কৃত্রিম মানব মস্তিষ্ক আসছে

আর্টিফিসিয়াল ব্রেইন তথা কৃত্রিম মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। ইতোমধ্যেই এর কিছু সফল প্রয়োগও দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, তারা এই কৃত্রিম মস্তিষ্ক গবেষণা বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আগামী ১০ বছরের মধ্যেই হয়ত তৈরি করা সম্ভব হবে পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর কৃত্রিম মানব মস্তিষ্ক। মানুষের মস্তিষ্ক যেভাবে কাজ করে ওই কৃত্রিম মানব মস্তিষ্কের কার্যক্রমও হবে একই ধরনের। ফলে পার্কিনসন, আলঝেইমার্সসহ নানাবিধ রোগাক্রান্ত মস্তিষ্ক চিকিৎসায় ওই কৃত্রিম মস্তিষ্ক ব্যবহারে সুফল পাওয়া যেতে পারে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে ওই কৃত্রিম মস্তিষ্ক ব্যবহার করে।

ব্লু ব্রেইন প্রজেক্টের পরিচালক হেনরি মার্করাম কৃত্রিম মানব মস্তিষ্ক নিয়ে তাদের গবেষণার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ইঁদুরের কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে টিইডি গ্লোবাল কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, মানসিক যেকোনো অসুস্থতা কিংবা বলা যায় মনোবৈকল্যের চিকিৎসায় সিনথেটিক মানব মস্তিষ্ক হতে পারে আদর্শ। বিশ্বের অন্তত ২০০ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মস্তিষ্কের জটিলতায় ভুগছেন বলে তিনি জানান। এ পর্যায়ে মার্করাম বলেন, কৃত্রিম মানব মস্তিষ্ক তৈরি করা অসম্ভব বিষয় নয়। আমরা আগামী ১০ বছরের মধ্যেই হয়ত তৈরি করে ফেলতে পারব এ ধরনের কিছু। এ ব্যাপারে সফলতা এলে পৃথিবীতে ঘটে যাবে বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন, যার সুফল ভোগ করবে মানুষ।



ব্লু ব্রেইন প্রজেক্ট শুরু হয় ২০০৫ সালে। এই প্রজেক্টের লক্ষ্যই হলো ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্ক তৈরি করা। এ কাজে সবচেয়ে বেশি জরুরি উপাদানটি হলো নিউরন বা স্নায়ু। তাই মার্করামের গবেষণা দলের সদস্যরা এই স্নায়ুর ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন। তারা প্রথমে লক্ষ করেছেন, ঠিক কিভাবে মানব মস্তিষ্কের স্নায়ু কাজ করে। তারপর ল্যাবরেটরিতে তা বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের ধরন ও কার্যক্রম ভিন্ন। কারণ এরা বংশ বৃদ্ধি এবং সামাজিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও বহুবিধ জটিল কাজে নিজেদের জড়িয়ে রাখে। এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মস্তিষ্ক দিয়ে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের সংকেতেরভিত্তিতেই এরা সাধারণত পরিচালিত হয়।

হেনরি মার্করাম বলেন, প্রাণীভেদে মস্তিষ্কের বিবর্তন ঘটে থাকে। ইঁদুরের মস্তিষ্কের যত নিউরন বা স্নায়ু রয়েছে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি স্নায়ু রয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের। তাই ইঁদুর নিয়ে গবেষণা যতটা সহজ, মানুষের ক্ষেত্রে ততটা নয়। তবে প্রথম সাফল্যের পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া যাবে বহুদূর তা নিশ্চিত। এটা সবাই স্বীকার করবেন, মস্তিষ্ক হচ্ছে দেহের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং জটিল স্থান। তাই তার পূর্ণাঙ্গ রহস্যভেদ খুব সহজ কাজ নয়। মনে রাখা দরকার, মস্তিষ্কের এই বিবর্তন কিন্তু অব্যাহত রয়েছে এবং এটি ঘটছে অতি দ্রুততার সঙ্গে।

প্রফেসর মার্করাম এবং তার দলের সদস্যরা গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে মস্তিষ্কের স্নায়ু কলাম বা স্তম্ভের কাঠামো ব্যবচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছেন। মার্করামের বর্ণনায় এ কাজটি করতে হয়েছে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে। অনেকটা একটি বনে প্রবেশ করে সেখানে কতগুলো গাছ আছে, সেগুলোর আকৃতি কি রকম, একই ধরনের কতগুলো গাছ আছে, গাছগুলোর অবস্থান কি ইত্যাদি নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করার মতো।

তবে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে কাজটি আরো জটিল, গাছ গোনা বা বিশ্লেষণের মতো নয়। কারণ মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ুর চরিত্র বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে। দেখতে হচ্ছে স্নায়ুর যোগাযোগ পদ্ধতি এবং কানেক্টিভিটি। তাই প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে সফটওয়্যার মডেল, যেখানে হাজার হাজার স্নায়ু থেকে প্রতিটি স্নায়ুর ভিন্নতা বের করা সম্ভব হবে। আর এই পৃথকীকরণের মধ্যদিয়ে প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতেই তৈরি হবে কৃত্রিম নিওকর্টিয়াল কলাম।

মার্করাম বলেন, প্রতিটি স্নায়ু পৃথক সত্তার হওয়া সত্ত্বেও তারা দেখতে পেয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন মস্তিষ্কের একটি অভিন্ন প্যাটার্ন রয়েছে। আপনার মস্তিষ্ক হতে পারে ছোট, বড় কিংবা স্নায়ুর রূপ বা রকমফেরে ভিন্নতা থাকতে পারে, যদিও এসব তৈরি একই বস্ত্ত দিয়ে। রহস্যজনক বিষয়টি হলো, প্রাণীদের মস্তিষ্কের ধরন-ধারণ প্রায় একই হওয়া সত্ত্বেও এক প্রজাতি অন্য প্রজাতির সাথে অথবা মানুষ অন্য কোনো প্রজাতির প্রাণীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না কেনো সে বিষয়টি বের করা।

প্রফেসর মার্করাম বলেছেন, একটি নিউরন বা স্নায়ুর যাবতীয় কার্যক্রম বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন ১টি ল্যাপটপ কমপিউটার। তাই হাজার হাজার স্নায়ু পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন হবে হাজার হাজার ল্যাপটপ। তবে তাদের গবেষণায় ল্যাপটপের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ১০ হাজার প্রসেসরের আইবিএম ব্লু জিন মেশিন। তাদের সিমুলেশন মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করবে সে ব্যাপারে গবেষকদের ক্লু দিতে শুরু করেছে। কমপিউটারের পর্দায় যখন মস্তিষ্কের ছবি ভেসে ওঠে এবং সেখান থেকে বিচ্ছুরণ ঘটতে দেখা যায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকটিভিটি তখন এই সিস্টেমটি চাঞ্চল্য জাগিয়ে তোলে। এই প্রকল্প থেকে একটি বিষয় গবেষকদের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগছে। আর সেটি হচ্ছে কমপিউটার স্ক্রিনে তারা দেখতে পাচ্ছেন মস্তিষ্কের কার্যক্রম। এ বিষয়টি মস্তিষ্ক গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের বহুদূর এগিয়ে নেবে।

শুধু স্নায়ু বিজ্ঞান এবং দর্শনের ক্ষেত্রে অগ্রগতিই নয়, ব্লু ব্রেইন প্রজেক্টের আরো বাস্তব কিছু প্রতিযোগিতার সাফল্য রয়েছে। মার্করাম বলেন, আমরা সব সময় প্রাণীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে যেতে পারি না। সময় এসেছে মানবদেহকে পরীক্ষার স্থলে পরিণত করার। মস্তিষ্ক নিয়ে যে কাজ চলছে তার সাফল্যের ওপর চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি দিকের এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে। মস্তিষ্কবিষয়ক যেকোনো ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাবে কৃত্রিম মস্তিষ্ক দিয়ে। আগেই বলা হয়েছে, বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ মনোবৈকল্যের শিকার।

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়টি এখন শেষ হয়েছে। গবেষকরা এর ভিত্তিতে তৈরি করেছেন নিউরোকরটিক্যাল কলাম। কার্যক্রম এবং চিন্তা-চেতনা মস্তিষ্কের যে অংশটি করে থাকে ওই কলামটি সেই অংশের। নিওকরটেক্স নামে মস্তিষ্কের ওই অঞ্চলটি পরিচিত। প্রথমে মস্তিষ্কের একটি অংশ নিয়েই কাজের সূচনা করা হয়। এক পর্যায়ে পুরো মস্তিষ্ক নিয়েই গবেষণা হবে এবং তৈরি হবে কৃত্রিম মস্তিষ্ক। প্রফেসর মার্করাম মনে করেন, মানব মস্তিষ্কের সিমুলেশন করা এখন কেবল টাকার ওপরই নির্ভর করছে। টাকা পেলেই কাজটি করা যাবে। ইতোমধ্যেই মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র ওই অংশের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। একটি ভার্চুয়াল দেহে ব্লু ব্রেইন নামের ওই মস্তিষ্ক স্থাপন করা হয়েছে এবং কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে।

প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হবে আইবিএমের অত্যাধুনিক ব্লু জিন সুপার কমপিউটার দিয়ে। তখন হয়ত আমরা পৌঁছে যাবো কৃত্রিম মানব মস্তিষ্কের আরো কাছাকাছি।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস