• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মানবদেহ টাচস্ক্রিন আর বিদ্যুতের আধার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইলেক্টনিক্স অ্যাণ্ড কমপিউটার সায়েন্স
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মানবদেহ টাচস্ক্রিন আর বিদ্যুতের আধার

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির সাফল্য ধরা দিয়েছে আগেই। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র কিংবা উপন্যাসে হরহামেশাই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির কার্যকলাপ এক সময় চাঞ্চল্য ফেলেছিল। এখন বাস্তবে এটা মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমপিউটার ছাড়িয়ে মোবাইল ফোন জগতেও আধিপত্য ছড়িয়ে পড়েছে ওই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির। কোনো বাটন বা বোতাম চাপাচাপি নেই। আলতো করে স্পর্শ করলেই ভেসে আসে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি। এই অবস্থা থেকে আরো এগিয়ে যাওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন। তারা কোনো যন্ত্র নয়, মানবদেহকেই বেছে নিয়েছেন টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির জন্য। কমপিউটার কিংবা মোবাইল ফোনে যেমন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর স্পর্শ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে বিষয়টি অ্যাকটিভেট হয়, তেমনি মানবদেহের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ করেও সংশ্লিষ্ট কাজটি করা যাবে। এ বিষয়ে গবেষণাটি অবশ্য এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। চূড়ান্ত সাফল্য এলে নিঃসন্দেহে এটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে। গবেষকরা মানবদেহে এই প্রযুক্তিটি যুক্ত করার পর্যায়টিকে বলছেন ‘স্কিনপুট’। পরবর্তী প্রজন্মের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটি মানবদেহে ব্যবহারের সময় দেহই হবে এর ইন্টারফেস বা সাধারণ তল।



বিশ্বখ্যাত কমপিউটার সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট এবং কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্কিনপুট প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করছেন। গবেষকরা বলেন, স্কিনপুট ভিন্ন ধারার এক অসাধারণ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবদেহের স্পন্দন শোনা যাবে। এই কাজটি নিখুঁতভাবে করতে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কিছু সেন্সর। মানবদেহের শব্দ বা স্পন্দন শুনতে সেন্সরগুলোকে সহায়তা করবে একটি আর্মব্যান্ড এবং মানুষের বোধশক্তি।

গবেষকরা বলেন, মানুষের শরীরে টোকা দিলে যে স্পন্দন তৈরি হয়, তা দেহের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আর টোকা খাওয়ার পর কেমন স্পন্দন তৈরি হবে, তা নির্ভর করে শরীরের সেই অংশের হাড়, পেশি, শিরা, শিরার আকৃতি ও গঠন কেমন তার ওপর।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান কমপিউটার ইন্টারঅ্যাকশন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানান, মানবদেহের স্পন্দন শুনতে আর্মব্যান্ডটি এখন পর্যন্ত ভালোই কাজ করে চলেছে। যদিও ওই আর্মব্যান্ডটি এখনো রয়েছে খুবই প্রাথমিক সংস্করণে। যেভাবে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, তাতে শিগগিরই হয়তো সেটিকে পরিবর্তিত সংস্করণের মাধ্যমে একটি হাতঘড়িতে সহজেই স্থাপন করা সম্ভব হবে।

প্রযুক্তিটি চূড়ান্ত সাফল্য পেলে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ধরনই পাল্টে দেয়া যাবে। গবেষকরা প্রাথমিকভাবে ভিডিও গেমসের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করবেন বলে মনস্থির করেছেন। তারা বলছেন, স্কিনপুট প্রযুক্তি দিয়ে নিজের দেহকে ব্যবহার করেই যেকোনো কমপিউটার গেম খেলা যাবে। এজন্য বাড়তি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন অতি পাতলা বিশেষ ধরনের ফিল্ম, যা গতি থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারে। এর আপাতত নাম দেয়া হয়েছে পিয়েজো রাবার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের চলাচল, শ্বাসপ্রশ্বাস ওঠানামা এবং দেহের অন্যান্য স্বাভাবিক নড়াচড়া থেকে ওই ফিল্ম বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে মোবাইল ফোন, পেসমেকার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র সক্রিয় রাখতে সক্ষম হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এসিএস ন্যানো লেটার্স-এ। বিজ্ঞানীরা বলেন, ওই ফিল্ম মূলত রাবারের তৈরি, তাই নমনীয়। এতে যুক্ত করা হয়েছে গতি থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের প্রযুক্তি। তাই যখনই এটি গতি পাবে, তখনই সে বিদ্যুৎ পাবে এবং কোনো যন্ত্রকে সক্রিয় করে তুলবে।

এখন হৃদযন্ত্রে বসানো পেসমেকারে যে ব্যাটারি বানানো হয়, তা কয়েক বছর পর পর পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শল্যচিকিৎসা করতে হয়। কিন্তু পেসমেকারে যদি ওই ফিল্ম অর্থাৎ পিয়েজো রাবার বাসানো থাকে তাহলে শ্বাসপ্রশ্বাস চলার সময় ফুসফুসের ওঠানামা থেকে সে বিদ্যুৎ পাবে। তাই হৃদরোগীকে কয়েক বছর পর পর পেসমেকারের ব্যাটারি পাল্টাতে হবে না। বহনযোগ্য চার্জের প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাটারিটিই পাল্টে যাবে। সেখানে স্থান করে নেবে পিয়েজো রাবার। কেউ যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে কিংবা ঘরে বা অফিসে বসেই হাত-পা নাড়াবে বা ইতস্তত ঘোরাঘুরি করবে, তখন যে গতিশক্তির সৃষ্টি হবে সেখান থেকেই বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে জমা হবে পিয়েজো রাবারে। তারপর সারাক্ষণ অ্যাকটিভেট থাকবে বহন করা যন্ত্রটি।

মাইকেল ম্যাক-আলপাইন এবং তার সহকর্মীরা বলেছেন, বহনযোগ্য যেসব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মানুষের সাথেই সবসময় থাকে, সেগুলোতে খুব কম বিদ্যুতেরই প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ খুব অল্প বিদ্যুতেই সক্রিয় থাকে মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। তাই দেহের নড়াচড়া থেকে যদি কোনো ডিভাইস বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারে সেটা হবে নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। আর এ কাজটি করতে সক্ষম এখন পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে পিয়েজো রাবার। কোনো কোনো গবেষক একে পিয়েজো ইলেকট্রিক বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এই ফিল্মটি চাপে থেকে বা গতিশীল অবস্থা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এজন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের প্রযুক্তি। ১ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি তাপমাত্রায় তৈরি করতে হয় ওই পিয়েজো ইলেকট্রিক উপাদান। কাজটি খুবই জটিল। এতো বেশি তাপমাত্রাযুক্ত ফিল্মটি রাবারে যুক্ত করে দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্য প্রচুর গবেষণাকাজ করে যেতে হয়েছে দিনের পর দিন। শেষ পর্যন্ত নতুন পণ্য-উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ওই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ কাজে তারা ব্যবহার করেছেন ন্যানোটেকনোলজি। উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লেড জারকোনেট টাইটানেট (পিজেডটি)। এর প্রতিটি রিবন বা আঁশের ব্যস মানুষের চুলের ৫০ হাজার ভাগের এক ভাগ। আজ পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে পিজেডটি একটি অন্যতম কার্যক্ষম পিয়েজো ইলেকট্রিক উপাদান। এটি ৮০ শতাংশ মেকানিক্যাল এনার্জিকে বিদ্যুতে পরিণত করতে পারে। তাই দেহের চলাচল বা গতি থেকে যদি বিদ্যুৎ সংগ্রহের চিন্তা করা হয়, তাহলে সবার আগে ভাবতে হবে ওই পিয়েজো রাবারের কথা।

ভবিষ্যতে যেসব ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রীর আবির্ভাব ঘটবে সেগুলোতে হয়তো প্রচলিত ব্যাটারির জায়গায় শোভা পাবে ওই পিয়েজো রাবার। আর যদি তাই হয়, তাহলে মানুষের সাথে থাকা ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম প্রচলিত ব্যবস্থায় চার্জারের মাধ্যমে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না। দেহের নড়াচড়া থেকেই প্রয়োজনীয় চার্জ পেয়ে যাবে ওই ডিভাইস। পিয়েজো রাবার গবেষণা অবশ্য এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ অব্যাহত থাকলে শিগগিরই হয়তো সেটি ব্যবহার করা যাবে মোবইল ফোন, পেসমেকার কিংবা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রে। তখন বাইরের বিদ্যুতের ওপর যন্ত্রের চার্জ দেয়া নির্ভরশীল থাকবে না। বিদ্যুতের লোডশেডিং বিঘ্ন ঘটাবে না ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র চালাতে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা