স্ট্র্যাটেজি গেমগুলোর মধ্যে ওয়ারক্রাফট হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় গেম। গেমটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে ওয়ারক্রাফট- ওর্ক অ্যান্ড হিউম্যান গেমটি দিয়ে। এরপর একে একে বের হয় ওয়ারক্রাফট ২ টিল্ড অব ডার্কনেস এবং এর এক্সপানশন বিয়ন্ড দ্য ডার্ক পোর্টাল, ওয়ারক্রাফট ৩ রাইজিং অব ক্যাওস। ২০০১ সালে বের হয় এই সিরিজের সর্বশেষ গেম ওয়ারক্রাফট ৩ দ্য ফ্রোজেন থর্ন। তবে এটি আগের মূল গেম ওয়ারক্রাফট ৩-এর এক্সপানশন। এই গেমের পরে গেমাররা অধীর আগ্রহে বসেছিলো ওয়ারক্রাফট ৪ বের হওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু গেম সিরিজটির পাবলিশার ব্লিজার্ড এন্টারটেইনমেন্ট ওয়ারক্রাফট ৪ বের না করে ওয়ার্ল্ড অব ওয়ারক্রাফট নামে নতুন অনলাইন গেম চালু করে। নতুন অনলাইন সিরিজটি স্ট্র্যাটেজি গেমের পরিবর্তে রোল প্লেয়িং গেম হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৪ সালে ওয়ার্ল্ড অব ওয়ারক্রাফট অবমুক্ত হয়, তবে গেমটিতে পুরনো গেমগুলোর কাহিনীর ধারাবাহিকতার ছোঁয়া রয়েছে। যদিও গেমটি অনলাইনে খেলতে হয় তবুও গেমারদের কাছে গেমটির গ্রহণযোগ্যতা ছিল অসাধারণ। তাই এখন পর্যন্ত প্রায় তিনটি এক্সপানশন বের হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দ্য বার্নিং ক্রুসেড, রেথ অব দ্য লিচ কিং, ক্যাটাসাইলাম।
গেমের শুরুতে ক্যারেক্টার বাছাই করে নিতে হবে মোট আটটি জাতি থেকে নিজের পছন্দমতো। জাতিগুলো হচ্ছে- ডোয়ার্ফ, জিনোম, হিউম্যান, ওর্ক, টাওরেন, ট্রল, নাইট এলফ এবং আনডেড। গেমার ইচ্ছে করলে যেকোনো একটি জাতি থেকে পুরুষ বা নারী চরিত্র নিয়ে গেমটি শুরু করতে পারবেন। প্রতিটি আলাদা জাতির মধ্যে আবার বিভিন্ন শ্রেণী বা ভাগ আছে, যেমন- যোদ্ধা, তীরন্দাজ, শিকারি, জাদুকর, পুরোহিত, গুপ্তঘাতক ইত্যাদি। প্রতিটি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা ভিন্ন ধরনের, তাই গেমটি স্বভাবত খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। গেমার যদি ওর্ক জাতি নিয়ে খেলা শুরু করেন তাহলে মূল ম্যাপের ওর্কদের জন্য নির্দিষ্ট করা শহর থেকে শুরু করতে হবে, আবার আনডেড জাতি নিয়ে খেলা শুরু করলে ম্যাপের অন্য অংশ থেকে গেম শুরু করতে হবে। এভাবে আটটি জাতি আটটি আলাদা জায়গা থেকে খেলা শুরু করবে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে একজন গেমার ইচ্ছে করলে তার একটি অনলাইন অ্যাকাউন্ট দিয়ে যত ইচ্ছে তত ক্যারেক্টার বানিয়ে গেমটি খেলতে পারবেন। এছাড়া গেমার তার ক্যারেক্টার বাছাই করার সময় তাদের গায়ের রঙ, চুল, চেহারার ধরন, দাড়ি ও গোঁফ ইত্যাদি নিজের পছন্দমতো পরিবর্তন করে নিতে পারবেন এবং প্রতিটি চরিত্রের নাম দিয়ে তাদের সংরক্ষণ করতে পারবেন। যখন গেমার তার অ্যাকাউন্ট দিয়ে অনলাইনে প্রবেশ করবেন, তখন তার তৈরি করা সব ক্যারেক্টার দেখাবে। সেখান থেকে গেমার যাকে ইচ্ছে তাকে নিয়ে খেলতে পারবেন। খেলা শেষ করে লগ-আউট করলে গেমের অগ্রগতি ইন্টারনেটেই গেমারের অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকবে। তাই একজন গেমার অন্য কোনো পিসি থেকেও যদি সাইন-ইন করেন তবে তার আগে সংরক্ষিত করা গেম অনায়াসে খেলতে পারবেন।
গেমটি মূলত অনলাইন রোল প্লেয়িং ধাঁচের এবং গেমারকে তার ক্যারেক্টারকে নিয়ে থার্ড পারসন ভিউতে খেলতে হবে, তবে ইচ্ছে করলে ফার্স্ট পারসন ভিউতেও গেমটি খেলতে পারবেন। যেকোনো একটি চরিত্র নিয়ে খেলা শুরু করার পর, শহরের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন কাজ বা মিশন নিয়ে সেগুলো সমাধান করতে হবে। তাহলে গেমার টাকা ও এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করতে পারবেন। প্রথম দিকের বিভিন্ন মিশনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্দিষ্টসংখ্যক বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার শিকার করা,গাছ সংগ্রহ করা, বিভিন্ন মূল্যবান ও দুর্লভ বস্তু সংগ্রহ করা, অন্য জাতির কোনো সর্দারকে যুদ্ধে হারানো ইত্যাদি। গেমার ইচ্ছে করলে একসাথে অনেক মিশন নিয়ে একেক করে সব মিশন পুরো করতে পারবেন। আবার একটি করে মিশন নিয়ে তা শেষ করে নতুন মিশন নিতে পারবেন। গেমে বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করতে পারলে পুরস্কার হিসেবে অনেক কিছু পাওয়া যায়। যেমন- গ্লভস, তলোয়ার, কুঠার, ছুরি, বর্ম, ঢাল, নতুন পোশাক, হেলমেট ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহার করলে ক্যারেক্টারের মারপিট করার জোর, চলাচল করার গতি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি বাড়বে। মজার ব্যাপার হচ্ছে একসাথে অনেক গেমার গেমটি খেলে থাকেন, তাই একজন গেমার যখন গেম খেলবেন তখন তার ক্যারেক্টারের আশপাশে অন্য গেমারদের ক্যারেক্টারগুলোকেও দেখতে পাবেন। ইচ্ছে করলে সেই সব ক্যারেক্টারের মালিক অর্থাৎ অন্য গেমারদের সাথে কথা বলা যাবে চ্যাট বক্সের মাধ্যমে। ইচ্ছে করলে এক গেমার অন্য গেমারের ক্যারেক্টারের সাথে ডুয়াল ফাইট করে নিজের শক্তি ও যুদ্ধকৌশল যাচাই করে নিতে পারবেন। এছাড়া ইচ্ছে করলে অনেক গেমার মিলে গ্রুপ বানিয়ে বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করতে পারবেন, ফলে গেমারদের মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়বে। মূলত এটি অনেকটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের মতো, যা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির গেমারদের মিলনমেলা হিসেবে ধরা যায়।
গেমের গ্রাফিক্স কোয়ালিটি খুবই নজরকাড়ার মতো, বিশেষ করে আলাদা আলাদা জাতির শহর আলাদা রকম এবং রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, সাধারণ লোকজনদের বেশ-ভূষা প্রভৃতি খুবই নিখুঁতভাবে গ্রাফিক্স করা হয়েছে। গেমে প্রতিটি ক্যারেক্টারের একজন করে প্রশিক্ষক রয়েছে, তার কাছ থেকে মুদ্রার বিনিময়ে বিভিন্ন যুদ্ধকৌশল, জাদুবিদ্যা, কিছু বিশেষ ক্ষমতা শেখা যাবে। এছাড়া অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্ষমতার অস্ত্র কিনে নিয়ে মারামারি করার ক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়া যাবে। এছাড়া এক্সট্রা লাইফ, পোশাক, জুতো, পানীয় ইত্যাদিও কিনে নেয়া যাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। বিভিন্ন মিশনে পাওয়া আইটেম যখন প্রয়োজনের তুলনায় অধিক হয়ে যাবে, তখন সেগুলো সেই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে নগদ অর্থ উপার্জন করা যাবে।
ডেভেলপার : ব্লিজার্ড এন্টারটেইনমেন্ট
পাবলিশার : ব্লিজার্ড এন্টারটেইনমেন্ট
সিরিজ : ওয়ারক্রাফট
ক্যাটাগরি : রোল প্লেয়িং
মোড : ম্যাসিভলি মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন
সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট
প্রসেসর : ১.৩ গিগাহার্টজ ইন্টেল পেন্টিয়াম ৪
র্যা ম : ৫১২ মেগাবাইট
গ্রাফিক্স কার্ড : ৬৪ মেগাবাইট
হার্ডডিস্ক স্পেস : ১৭ গিগাবাইট
ইন্টারনেট স্পিড : ১৬ কিলোবাইট/সেকেন্ড
কজ ওয়েব