ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয়া পাঠকের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে ‘কমপিউটার জগৎ’-এ ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে দুটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। গত এক বছরে আপনাদের কাছ থেকে আরো কয়েক শ’ ই-মেইল পেয়েছি। সময় স্বল্পতার কারণে সব ই-মেইলের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ই-মেইলের বিষয়বস্তু প্রায় একই ধরনের। এগুলো থেকে নির্বাচিত কয়েকটি ই-মেইল নিয়ে এবারের লেখা। আশা করি, এতে সবাই উপকৃত হবেন।
আতিক, রাজশাহী
৩ জানুয়ারি, ২০১০
মানিবুকার্স নিয়ে আমি একটু সমস্যায় রয়েছি। আমি ১৫ দিন আগে মানিবুকার্স থেকে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (প্রাইম ব্যাংক, রাজশাহী) টাকা পাঠানোর আবেদন করেছি, কিন্তু এখনও টাকা আসেনি। এক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি?
জাকারিয়া :
সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মানিবুকার্স থেকে ব্যাংকে টাকা চলে আসে। আপনি আর কয়েক দিন অপেক্ষা করে ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন। আশা করছি, আপনি টাকা পেয়ে যাবেন। আর না পেলে মানিবুকার্সের সাথে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। মানিবুকার্সের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে- merchantservices@moneybookers.com।
আবু কাইসার
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আপনার অবদানের জন্য ধন্যবাদ। আপনি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে অনেক সাহায্য করছেন, তাদেরকে আয়ের বিভিন্ন উপায় দেখিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন- ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স এবং দেশে টাকা আনার বিভিন্ন পদ্ধতির ওপর লিখছেন। আপনি যা করছেন, তা সত্যি চমৎকার ও অসাধারণ। এখন আমি মনে করি, আপনি যদি oDesk.com সাইটে একটি গ্রুপ তৈরি করেন এবং আমরা সেই গ্রুপে যোগ দিয়ে কাজ করি, তাহলে একা একা কাজ করার চাইতে তা অনেক ভালো হয়।
জাকারিয়া :
আপনার পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রথমত, আমি oDesk সাইটে কাজ করি না। দ্বিতীয়ত, আমি সিলেটে ‘ওয়েবক্রাফট বাংলাদেশ’ নামে একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং ‘সিলেট আইটি একাডেমি’ নামে একটি কমপিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছি। তাই এর বাইরে অনলাইনে গ্রুপ তৈরি করে তা ব্যবস্থাপনা করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। oDesk-এ অনেকেই এখন গ্রুপ তৈরি করে কাজ করছেন এবং সফল হচ্ছেন। ইচ্ছে করলে আপনি সেরকম একটি গ্রুপে যোগ দিতে পারেন অথবা নিজেও একটি গ্রুপ তৈরি করে অন্যদের নিয়ে কাজ করতে পারেন।
ফারিহা আলম
১১ মার্চ, ২০১০
আপনার freelancerstory.blogspot.com সাইটে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমি এইচএসসি শেষ করেছি, এখনো কোথায়ও ভর্তি হইনি। এক রকম ফ্রি আছি ৩ মাসের জন্য। আমি গত প্রায় দুই বছর যাবৎ ব্লগিং করছি। তাই বলতে পারেন ইন্টারনেট ও অনলাইনে আয় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে। বর্তমানে আমি আপনার ওয়েবসাইট পড়ে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছি। আমি মনে করি কোনো কিছু করার আগে সেই বিষয়ে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমি প্রোগ্রামিং কিংবা গ্রাফিক্সের কাজ পারি না। তাই আমি যেকোনো একটা শিখে তারপর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাই। নতুন হিসেবে কি ধরনের কাজ দিয়ে আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারি? এক্ষেত্রে কম সময়ে কি গ্রাফিক্স শেখা বেশি সুবিধাজনক হবে নাকি প্রোগ্রামিং শেখা বেশি সুবিধাজনক হবে? এক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রয়োজন আছে কি?
জাকারিয়া :
প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করতে অনেক সময় এবং প্রচুর অনুশীলনের প্রয়োজন। আর গ্রাফিক্সের কাজগুলো কয়েক মাসের অনুশীলনের মাধ্যমে শেখা সম্ভব। চেষ্টা করলে নিজে নিজেই ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন টিউটরিয়াল দেখে শিখতে পারবেন। গ্রাফিক্সের কাজের সাথে সাথে এইচটিএমএল, সিএসএস ও জাভাস্ক্রিপ্ট শিখতে পারলে ইন্টারনেট থেকে ভালো আয় করা সম্ভব। প্রোগ্রামিং এবং গ্রাফিক্স হচ্ছে দুটি বিপরীতধর্মী কাজ। একটি সম্পূর্ণ যুক্তিনির্ভর আর অপরটি কল্পনাপ্রসূত। তবে দুটিতেই নিজের সৃজনশীলতাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাজে লাগানো যায়। প্রোগ্রামিংয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং গ্রাফিক্সের মাধ্যমে এই দুটি সাইটের মাধ্যমে আয় করা যায়- www.graphicriver.net, www.themeforest.net। শেখার জন্য নিচের কয়েকটি আদর্শ সাইট হচ্ছে- net.tutsplus.com, psd.tutsplus.com, www.w3schools.com।
সানি, বকশি
৩০ মার্চ, ২০১০
আপনি কি আমাকে কয়েকটি বিশ্বস্ত ফ্রিল্যান্সিং সাইটের ঠিকানা দিতে পারেন?
জাকারিয়া :
ইন্টারনেট থেকে ভালো পরিমাণে আয় করা যায় এরকম কয়েকটি সাইট হচ্ছে- odesk.com, freelancer.com, vworker.com, scriptlance.com, elance.com, getacoder.com, joomlancers.com, microworkers.com, activeden.net, themeforest.net, graphicriver.net, audiojungle.net ইত্যাদি, যাদের বেশিরভাগ সাইট নিয়ে ‘কমপিউটার জগৎ’ ম্যাগাজিনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ফেরদৌস রহমান
২ এপ্রিল, ২০১০
আমি ‘কমপিউটার জগৎ’-এ আপনার ফ্রিল্যান্স বিষয়ে লেখাগুলো নিয়মিত পড়ি। আমি এই বিষয়ে মাঝে মাঝে খুব আগ্রহ বোধ করি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে আমাকে ব্যর্থ হতে হয়, কারণ আমি ঠিক বুঝতে পারি না কী করা উচিত। তার ওপর বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের এখানকার তেমন কেউ নেই, যার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারি। আর সব থেকে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হই, তা হচ্ছে কোনো কোনো সাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে Paypal অ্যাকাউন্ট চায়। অনেকদিন হলো freelancer.com-এ অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। ২-৩ বার বিড করে দেখেছি কোনো কাজ পাইনি। আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে এমন কোনো সহজ পথ বলে দিন যাতে আমি অন্তত আমার মোবাইল আর ইন্টারনেটের বিল পরিশোধ করার ন্যূনতম আয় করতে পারি।
জাকারিয়া :
বর্তমানে প্রায় সব জনপ্রিয় সাইটে Paypal-এর বিকল্প হিসেবে Payoneer Debit Mastercard, Moneybookers, Alertpay ইত্যাদি পদ্ধতি চালু আছে। হতাশ না হয়ে নিয়মিত বিড করতে থাকুন। মাত্র ২-৩ বার বিড করে কখনও কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিদিন বিড করতে থাকুন। চেষ্টা করবেন সবচেয়ে কম রেটে বিড করার। আপনি যদি বিড না করে কাজ করতে চান, তাহলে Microworkers.com সাইটে কাজ করতে পারেন। তবে সূদূরপ্রসারী এবং ভালো আয়ের জন্য oDesk.com একটি চমৎকার সাইট। এখানে ঘণ্টা হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
প্রিন্স আহমেদ
৮ এপ্রিল, ২০১০
আমি কমপিউটার বিজ্ঞানের ৩য় বর্ষের ছাত্র। আপনি কি আমাকে পরামর্শ দেবেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রথমে কি করা উচিৎ।
জাকারিয়া :
বর্তমানে অনলাইনে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আমি তাই আপনাকে শুরুতে PHP, MySQL, HTML, CSS, Javascript শেখার পরামর্শ দিচ্ছি। পরে বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক যেমন CakePHP, CodeIgniter, Wordpress ইত্যাদি শিখতে পারেন।
সেতু আহমেদ
২৬ জুন, ২০১০
আমি আপনার কাছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানতে চাই। ইন্টারনেট থেকে টাকা তোলার জন্য কি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে? কোন কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে? আর টাকা তোলার বিষয়ে যদি বিস্তারিত তুলে ধরেন তাহলে খুব সুবিধা হয়।
জাকারিয়া :
ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে টাকা দেশে আনা যায়, যা নিয়ে এর আগে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেওনার ডেবিট মাস্টারকার্ড, মানিবুকার্স এবং অ্যালার্টপে। মাস্টারকার্ড থেকে টাকা তোলার জন্য কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই, যেকোনো ব্যাংকের ATM (যেগুলো মাস্টারকার্ড সাপোর্ট করে) থেকে যেকোনো সময় টাকা তোলা যায়। অন্য পদ্ধতিগুলোর জন্য যেকোনো ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
মারুফ হোসেন
২৬ জুন, ২০১০
মাইক্রোওয়ার্কার্স সাইটের ব্যাপারে আমার সাহায্য প্রয়োজন। সাইটটি থেকে ১৫ দিন আগে আমার ঠিকানায় পিন নাম্বারের চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও চিঠিটি হাতে পাইনি। এক্ষেত্রে কতদিন সময় লাগে?
জাকারিয়া :
এটি ডাক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। কারো কারো ক্ষেত্রে ১৫ দিন আর কারো কারো ক্ষেত্রে এক মাসের ওপরও লাগতে পারে। অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত কিছু দেখছি না।
সোহাগ মিয়া
২১ জুলাই, ২০১০
পেওনার কার্ড কোন সাইট থেকে পাবো? ওই সাইটগুলোতে কোনো কাজ না করলেও কি তারা আমাকে কার্ড পাঠাবে?
জাকারিয়া :
প্রায় সব জনপ্রিয় আউটসোর্সিং সাইট থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে odesk.com, freelancer.com, vworker.com। এক্ষেত্রে ওই সাইটে কোনো কাজ না করলে অথবা সাইটের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না থাকলেও আপনাকে একটি কার্ড পাঠানো হবে। এরপর একই কার্ড দিয়ে অন্য সাইট থেকেও টাকা তুলতে পারবেন। প্রথমবার টাকা পাবার পর তা থেকে কার্ডের একটি চার্জ কেটে রাখা হবে।
মো: মাকসুদ
৯ আগস্ট, ২০১০
মাইক্রোওয়ার্কার্সে আমি ক্রেইগলিস্টের কাজ করতে চাই। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডার ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করতে হয়। এর সমাধান কিভাবে করতে পারি?
জাকারিয়া :
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার নাগরিক ছাড়া ক্রেইগলিস্টের কাজ করা যায় না।
মো: রাশেদুজ্জামান খান
১৭ আগস্ট, ২০১০
আমি অনেকবার চেষ্টা করে ‘আলফা ডিজিটাল’ টিমে যোগ দিতে চেয়েছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। এখন কী করতে পারি।
জাকারিয়া :
আমি যতটুকু জানি, ‘আলফা ডিজিটাল’ টিমে আর কোনো নতুন সদস্য নেয়া হচ্ছে না। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে এই গ্রুপে যোগ দিতে পারেন- groups.google.com/group/odesk-bangladesh
কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আমার সব লেখা এবং সাথে আরো বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন আমার ব্যক্তিগত ব্লগ থেকে। সাইটটির ঠিকানা- www.FreelancerStory.blogspot.com ।
এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের জন্য BdOSN Outsourcing নামে একটি সক্রিয় গুগল গ্রুপ রয়েছে। এখানে যোগ দিয়ে অন্যান্য সফল ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে দ্রুত সাহায্য পাবেন। গ্রুপটির ঠিকানা- groups. google.com/group/bdosn_outsourcing।
em>কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : zakari.cse@gmail.com