• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ক্যাড ডিজাইনারদের জন্য সাইকাস
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মর্তুজা আশীষ আহমেদ
মোট লেখা:৭৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
লিনআক্স
তথ্যসূত্র:
লিনআক্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ক্যাড ডিজাইনারদের জন্য সাইকাস




সফটওয়্যার ডেভেলপাররা প্রায় প্রতি বছরই তাদের সফটওয়্যারের নতুন ভার্সন বাজারে ছাড়ে, যা তাদের আগের ভার্সনের চেয়ে অধিকতর কার্যকর, ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে এটাই সবাই প্রত্যাশা করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সবসময় ব্যবহারকারীদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয় না। কেননা কোনো কোনো কোম্পানি বাজারে যেসব টুল অবমুক্ত করে সেগুলোতে অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ফাংশন যুক্ত করে। এ ফাংশনগুলো দিয়ে মূলত প্রোগ্রামকে আপগ্রেড করার জন্য প্ররোচিত করে ব্যবহারকারীদেরকে, যাতে করে এসব ফাংশন দেখে প্রোগ্রাম আপগ্রেড করতে উৎসাহিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যদি এসব ফাংশন ব্যবহারকারীর কাজে না লাগে বা দরকার না হয়, তাহলে এসব ফাংশন বা ফিচার ব্যবহারকারীর কাজের দক্ষতাকে কমিয়ে দেয়া ছাড়া তেমন কোনো কাজ করে না। অপ্রয়োজনীয় ফাংশনসহ এসব সফটওয়্যারকে বলা হয় ব্লটওয়্যার (Bloatware)। ব্লটওয়্যার সফটওয়্যারগুলো সচরাচর হয়ে থাকে অস্পষ্ট বা অস্বচ্ছ, বিভ্রান্তিকর এবং ধীরগতিসম্পন্ন। এসব প্রোগ্রামের জন্য দরকার হয় বিপুল পরিমাণের স্টোরেজ স্পেস এবং শক্তিশালী হার্ডওয়্যার। ব্লটওয়্যার ব্যবহারকারীর কাজের গতি ও দক্ষতাকে কিভাবে প্রভাবিত করে এবং এসব ব্লটওয়্যারকে এড়িয়ে যাবার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে এবারে ব্যবহারকারীর পাতায়।

স্টেরেজ স্পেস নষ্ট করে

অনেক প্রোগ্রাম আছে যেগুলো কারণ ছাড়াই হার্ডডিস্কের প্রচুর স্পেস ব্যবহার করে। ইদানীং ড্রাইভগুলোর ফাইলের জন্য দরকার প্রচুর স্পেস, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। ফলে খুব সহজে আমাদের অজান্তেই ৫০০ গি.বা.-এর হার্ডডিস্কের স্পেসও পুঞ্জীভূত হয়ে যায় ফটো, ভিডিও এবং মিউজিক দিয়ে। যদিও এই টুলগুলো স্পেসের ব্যাপারে বেশ সচেতন।



সফটওয়্যার ডেভেলপারদের থভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। খুবই ছোট প্রোগ্রাম অ্যাক্রোব্যাট রিডার ২ জিপ অবস্থায় মাত্র ১.৪ মে.বা. স্পেস ব্যবহার করে। অ্যাডোবি রিডার বর্তমান ভার্সনের সেটআপ ফাইলের সাইজ ২৬ মে.বা.-এর চেয়ে বেশি। প্রাথমিক অবস্থায় খুব বেশি মনে হবে না। কিন্তু অ্যাডোবি রিডারের প্রকৃত সাইজ যখন উন্মোচিত হয়, তখন বিস্ময়ে অভিভূত হওয়া ছাড়া কিছু থাকে না। কেননা, অ্যাডোবি রিডার ইনস্টলেশনের পর সাইজ হয়ে দাঁড়ায় ২৩০ মে.বা.। অ্যাডোবি রিডারের বর্তমান ভার্সনে হয়েছে প্রচুর ফাংশন। এসব ফাংশনের মধ্যে অন্যতম হলো Multilingual User Interface, যা ব্যবহার করে বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে সুইচ করা যায়। কিন্তু এ ফাংশনটি কতজন ব্যবহারকারীর দরকার তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। আবার কতজন ব্যবহারকারীর দরকার ফ্ল্যাশ কনটেন্টকে পিডিএফ ফাইলে ডিসপ্লে করা। এসব ফাংশন সীমিতসংখ্যক ব্যবহারকারীরই দরকার হতে পারে। কিন্তু, অ্যাডোবি ব্যবহারকারীর জন্য সে ধরনের কোনো অপশন রাখেনি। ফলে এ সফটওয়্যারটি হোম ইউজারদের জন্য হয়ে উঠেছে এক বাড়তি সাইজের সফটওয়্যার, বিশেষ করে যারা রিডারকে শুধু পিডিএফ ফাইলকে ভিউ ও প্রিন্ট করার জন্য ব্যবহার করেন তাদের কাছে।

সুতরাং এসব ব্যবহারকারীর জন্য সহজ এবং সাধারণ স্পেসসাশ্রয়ী বিকল্প সফটওয়্যার হলো ফক্সইট রিডার (Foxit Reader), যার সাইজ মাত্র ৩.২ মে.বা.। চমৎকার এ স্যুটটি শুধু পিডিএফ ফাইল রিড করার জন্য নয় বরং এটি মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টও সাপোর্ট করে। উপরোল্লিখিত এটি আল্টিমিডিয়া কনটেন্টকে এডিট ও ডিলিট করতে পারে। ফক্সইট রিডার অফার করে ফায়ারফক্স প্ল্যাগইন, যা পিডিএফ ডকুমেন্ট সরাসরি ব্রাউজারে ওপেন করতে পারে। এ প্রোগ্রামটি এসব কাজে যেমনি পারদর্শী তেমনি আকারেও ছোট।

আমাদের চারপাশে অসংখ্য মিডিয়া প্লেয়ার রয়েছে যেগুলোও ব্যাপকভাবে স্পেস নষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ডিআইভিএক্স-এর (DivX) কথা। স্বাভাবিকভাবে এ কোম্পানি প্লেয়ার অ্যাপ্লিকেশনের সাথে কোডেক অফার করে বান্ডেল আকারে। সাথে থাকে ওয়েব প্লেয়ার এবং ডিআইভিএক্সের কনভার্টারের ডেমো ভার্সন। ফলে সব মিলিয়ে ৫০ মে. বা. স্পেস ব্যবহার করে। কিন্তু, বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এই সফটওয়্যার ডাউনলোড করার পর উপলব্ধি করেন যে তাদের দরকার শুধু কোডেক, যার সাইজ মাত্র ১.৪ মে.বা যা ইনস্টল করার পর সব মিডিয়া প্লেয়ার ব্যবহার করা যায়।



আরেক জনপ্রিয় মিডিয়া প্লেয়ার আইটিউন হার্ডডিস্কে ১০০ মে.বা. স্পেস ব্যবহার করে এবং ব্যবহারকারীকে বাধ্য করায় ক্যুইকটাইম ইনস্টল করাতে, যা আবার ৭৫ মে.বা. স্পেস ব্যবহার করে। যদি আপনি আইটিউন স্টোরের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে থাকেন, তাহলে খুব সহজেই এই ব্লটওয়্যারকে এড়িয়ে যেতে পারেন। এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সংবার্ড (Songbird) নামের টুলকে, যা অনেকটা আইটিউনের মতো কাজ করে। এটি একই ওপেনসোর্স আর্কিটেকাচার ভিত্তিক ফায়ারফক্সে ব্যবহার করা যাবে। সংবার্ডকে পছন্দমতো কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।

অপ্রয়োজনীয় ফাংশন

কিছু কিছু প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় ফাংশন দিয়ে পরিপূর্ণ। এগুলোর জন্য ডিস্ক স্পেস বাড়ানোর প্রয়োজন হতেও পারে নাও পারে। এসব ফাংশন যুক্ত করা হয় মূলত নতুন ভার্সনের সফটওয়্যার বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো নিরো-র বর্তমান ভার্সন।

নিরো সফটওয়্যারের ভার্সন ৩-এ সিডি বার্নিংয়ের জন্য চমৎকারভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ফাংশনগুলো রয়েছে। কিন্তু নিরোর পরবর্তী ভার্সনে যুক্ত করা হয়েছে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় ফাংশন, যেমন- ভিডিও এডিটর, মিডিয়া প্লেয়ার, টিভি স্ট্রিমার, ডিজে মিক্সিং অ্যাপ, ফটো ম্যানেজার। এছাড়াও এতে অন্যান্য স্ট্যান্ড অ্যালোন প্রোগ্রাম বান্ডেল আকারে যুক্ত করা হয়েছে। ডাউনলোডের পর এসব ফাংশন ইনস্টলেশনের জন্য দরকার ৩০ গুণ বেশি ডিস্ক স্পেস। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর জন্য বিকল্প কোনো অপশন নেই। নিরো স্যুটের কোনো কোনো প্রোগ্রাম হয়তো কোনো কোনো ব্যবহারকারীর জন্য দরকার হতে পারে, কিন্তু সব প্রোগ্রাম কখনোই কোনো ব্যবহারকারীর জন্য দরকারি মনে হতে পারে এটা অবিশ্বাস্য। সুতরাং যেসব ব্যবহারকারী শুধু মুভি ও মিউজিক প্লে করেন, তাদের জন্য নিরোর বর্তমান অ্যাপ্লিকেশন বেছে নেয়াটা হবে বোকামির শামিল। নিরো স্যুটে যুক্ত প্রোগ্রাগুলো হার্ডডিস্কে ১.৫ গি.বা. স্পেস ব্যবহার করে। এ স্যুটের সাথে যুক্ত স্টার্টস্মার্ট লাঞ্চার প্রোগ্রাম আরএসএস (RSS Reader) ব্যাপকভাবে স্ক্রিনস্পেস নষ্ট করাসহ বাইডিফল্ট প্রদান করে প্রস্ত্ততকারক কোম্পানির তথ্য। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে বার্নিং প্রোগ্রামের সাথে এসব ইউটিলিটির যুক্ত করার যৌক্তিকতা কী তা আমাদের অজানা। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এখানে ব্যবহারকারীর জন্য কোনো অপশন যুক্ত করা হয়নি। ফলে এটি একটি ব্লটেড স্যুট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কেননা, আপনি যদি শুধু সিডি বার্ন করতে চান, সেক্ষেত্রে বার্নিং সফটওয়্যার ছাড়া অন্য কোনো টুলের প্রয়োজন থাকতে পারে না। উইন্ডোজ এক্সপি এবং ভিসতায় এ কাজগুলো কনটেক্সট মেনুতে রাইট ক্লিকের মাধ্যমে করা যায়। আরো বিস্তৃত কাজের জন্য ‘সিডি বার্ন এক্সপি’ ইউটিলিটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই টুলে বার্নিং প্রোগ্রামের সব স্ট্যান্ডার্ড ফিচারই যুক্ত করা হয়েছে। এটি ব্লু-রে ডিস্ক এবং এইচডি ডিভিডি সাপোর্ট করে। ডাউনলোড করতে মাত্র ৩ মে.বা. স্পেস দরকার।

মিডিয়া প্লেব্যাক প্রোগ্রামে বাড়তি কিছু ফাংশন যুক্ত করে ক্রেতাসাধারণকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা চলছে। পাওয়ার ডিভিডি এবং উইনডিভিডি অপারেট করা সহজ, যদিও এতে কিছু অপ্রয়োজনীয় ফাংশন যুক্ত করা হয়েছে। পাওয়ার ডিভিডির সাথে ‘মুভি রিমিক্স’ ব্যবহার করে আপনি এডিট, পুনঃকম্পোজ এবং মুভির দৃশ্য আপলোড করতে পারবেন। জনপ্রিয়তা লাভের এ কৌশলটি অনেকের কাছে মজার মনে হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

যদি ফেন্সিলুকের ইন্টারফেস পছন্দ না করেন, তাহলে ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার ব্যবহার করতে পারেন। বেশিরভাগ মিডিয়া প্লেব্যাক প্রোগ্রাম দিয়ে এই হালকা ও সহজ মিডিয়া প্লেয়ারকে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। বর্তমান ভার্সনে ব্লু-রে এবং এইচডি ডিভিডি সাপোর্ট করে না।

ছোটখাটো প্রোগ্রাম যেমন- স্কাইপে, আইসিকিউ, উইন্ডোজ লাইভ মেসেঞ্জার প্রভৃতিসহ অতিরিক্ত ফাংশন যেমন- মিনি গেম, অ্যানিমেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড, অন্যান্য সার্ভিসের জন্য অ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্রভৃতি ব্যাপকভাবে স্পেস ব্যবহার করে। পিডজিন (Pidgin) স্পেস সেভিং এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি টুল। এ টুল যেমন- ইয়াহু, এমএসএন, এআইএম, আইসিকিউ এবং আইআরসি নেটওয়ার্ক প্রটোকল সাপোর্ট করে। ফলে এই টুল ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন ব্লটেড টুল ইনস্টল না করে।

অযৌক্তিক রিকোয়ারমেন্ট

নতুন সফটওয়্যার কমপিউটারের কাছ থেকে পিছু আশা করবে- এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে গেম সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। পিসির ক্ষমতার জন্য দরকার সর্বশেষ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার। যাই হোক, অফিস টুল এবং অন্যান্য সাধারণ প্রোগ্রামও নতুন নতুন ভার্সনের সাথে সাথে বাড়তি শক্তি ব্যবহার করে। তবে কোনো কোনো প্রোগ্রাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি স্পেস ও শক্তি ব্যবহার করে। যেমন- অ্যাডোবি ফটোশপ সিএস৪ কমপিউটারে রান করাতে চাইলে দরকার ন্যূনতম ১.৮ গি.হা. প্রসেসর এবং ৫১২ মে.বা. র্যা ম। তারপরও এই ন্যূনতম চাহিদায় কমপিউটারের গতি কমে যায়। এই সফটওয়্যার কমপিউটারে ভালোভাবে চালাতে হলে দরকার ন্যূনতম ১ গি.বা. র্যা ম। পক্ষান্তরে সিএস২ ভার্সন যা তিন বছর আগে রিলিজ পেয়েছিল তার জন্য দরকার মাত্র ৩২০ মে.বা. র্যা ম এবং সিপিইউর চাহিদা তেমন ছিল না। পুরনো ভার্সনে প্রফেশনাল সব ফিচারই বিদ্যমান। এ সফটওয়্যার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে পেইন্ট ডট নেট এবং গিম্পস। এগুলো ফ্রি পাওয়া যায় ইন্টারনেট থেকে। বিশেষ করে যাদের কমপিউটার পুরনো এবং যারা শৌখিন ফটোগ্রাফার তাদের জন্য এ দুটি সফটওয়্যার অ্যাডোবি ফটোশপের সিএস৪-এর বিকল্প হিসেবে চমৎকারভাবে কাজ করবে।

নতুন এবং আপডেটেড সফটওয়্যার মানেই সর্বক্ষেত্রে ভালো এবং শ্রেয়তর তা অনেক ক্ষেত্রে সত্য হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং আপডেটেড সফটওয়্যার ইনস্টল করার আগে এ সফটওয়্যারের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্য যেমন কতটুকু স্পেস ব্যবহার করে, এর সাথে বান্ডেল আকারে আর কি সফটওয়্যার বা টুল আছে, হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট কেমন এবং আপনার কাজের ধরনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা ইত্যাদি। মনে রাখবেন, আপডেট মানেই সেরা সর্বতোভাবে সত্য নয়।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস