গুণ করার একটি মজার নিয়ম
ধরা যাক, প্রথমে আমরা কোনো এক অঙ্কের একটি সংখ্যাকে অন্য একটি এক অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে চাই। শুরুতেই ধরি, জানতে চাই ৮X৭ = কত? প্রথমে সংখ্যা দুটিকে উপর-নিচে বসাই এভাবে :
৮
৭
এবার ৮-এর সাথে যত যোগ করলে ১০ হয়, তা ৮-এর ডানে বসাই। একইভাবে ৭-এর সাথে যত যোগ করলে ১০ হয়, তা ৭-এর ডানে বসাই। তাহলে আমরা নিম্নরূপ পাব।
৮ ২
৭ ৩
এবার ৮ ও ৭-এর গুণফল পেতে, বাম পাশে বসাবো উপরের কোণাকুণি সংখ্যা দুটির পার্থক্য ৫। এখানে ৮ - ৩ = ৫, ৭ - ২ = ৫। আর গুণফলের ডান দিকে বসাবো ডানে থাকা সংখ্যা দুটির গুণ (২ X ৩) বা ৬, অতএব আমাদের কাঙ্ক্ষিত গুণফল = ৫৬। অর্থাৎ ৮ ৭ = ৫৬। অবশ্য মনে রাখতে হবে ডান দিকের সংখ্যা দুটি গুণ করে গুণফল ১০ কিংবা ১০-এর বেশি হলে তবে ডানের অঙ্কটি বসিয়ে বামের অঙ্কটি হাতে রেখে তা বাম পাশের সংখ্যাটির সাথে যোগ হবে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরা যাক, জানতে চাই ৭ X ৬ = কত? আগের মতো সংখ্যা দুটিকে উপরে-নিচে বসাই :
৭
৬
এবার সংখ্যা দুটির সাথে আলাদা আলাদা যত যোগ করলে ১০ হয়, তা সংখ্যা দুটির ডান পাশে বসাই :
৭ ৩
৬ ৪
লক্ষ করি, ডানের ৩ ও ৪-এর গুণফল ১২। ১২-এর ২ কাঙ্ক্ষিত গুণফলের সবার ডান দিকে বসিয়ে হাতে রাখি ১। এই ১ কে কোণাকুণি সংখ্যার পার্থক্যসংখ্যা (৭ - ৪ = ৩ কিংবা ৬ - ৩ = ৩) ৩-এর সাথে যোগ করে পাই ৪। এই ৪ বাম দিকে বসালে কাঙ্ক্ষিত গুণফল দাঁড়ায় ৪২। অর্থাৎ ৭ X ৬ = ৪২।
এভাবে ৮ ও ৯ গুণফল = ৭২, তা পেতে পারি নিম্নরূপে একইভাবে :
৮ ২
৯ ১
এখানে গুণফলের বামের অঙ্ক ৭ = ৮ - ১ কিংবা ৯ - ২ = ৭, অর্থাৎ কোণাকুণি অবস্থান থাকা সংখ্যা দুটির বিয়োগফল। আর ডানের অঙ্ক ২ = ১ X ২, অর্থাৎ ডান দিকের সংখ্যা দুটির গুণফল। উপরে ৮-এর ডানে ২ বসানোর কারণ, ৮ সংখ্যাটি ১০ থেকে ২ কম। আর ৯-এর ডানে ১ বসানো হয়েছে, কারণ ৯ সংখ্যাটি ১০ থেকে ১ কম।
এভাবে যেকোনো এক অঙ্কের সংখ্যাকে অন্য আরেকটি এক অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে পারি। অনুশীলন করে দেখুন না এ নিয়মে বের করতে পারেন কি না ৬ X ৯ = কত এবং ৭ X ৭ = কত। তবে মনে রাখবেন, এক্ষেত্রে যে সংখ্যা দুইটির গুণফল বের করব তো যেনো কোনো মতেই ৫-এর চেয়ে কম না হয়।
এভাবে যেসব দুই অঙ্কের সংখ্যা ১০০-এর কাছাকাছি, সেগুলোর গুণফল আমরা বের করতে পারব। তবে এক্ষেত্রে যে সংখ্যা দুটির গুণফল বের করতে হবে, তা নিচে নিচে বসিয়ে সংখ্যা দুটির ডানে বসাবো, ১০০ থেকে তা যত কম। ধরা যাক, আমরা পেতে চাই ৮৮ X ৯৮ = কত? প্রথমে সংখ্যা দুটি নিচে নিচে বসাই
৮৮
৯৮
এবার ৮৮ সংখ্যাটি ১০০ থেকে ১২ এবং ৯৮ সংখ্যাটি ১০০ থেকে ২ কম। অতএব ৮৮-র ডানে ১২ বসাই এবং ৯৮-র ডানে ২ বসাই
৮৮ ১২
৯৮ ২
এবার গুণফলের সর্বডানে বসবে ১২ ও ২-এর গুণফল ২৪। এবং বামে বসবে কোণাকোণি সংখ্যা দুটির বিয়োগ ফল ৮৬। এখানে ৮৮ - ২ = ৮৬ = ৯৮ - ১২।
নির্ণেয় গুণফল = ৮৬২৪। সোজা কথায় ৮৮ X ৯৮ = ৮৬২৪।
১০০-এর কাছাকাছি আর দুইটি সংখ্যার গুণফল এখানে করে দেখানো হলো। ধরা যাক, ৯৩ X ৯৬ = কত? প্রথমে সংখ্যা দুটি উপর-নিচ করে বসাই
৯৩
৯৬
এবং সংখ্যা দুটি যথাক্রমে ১০০ থেকে যত কম সংশ্লিষ্ট সংখ্যার ডান পাশে তত বসাই। লক্ষ করি ৯৩ সংখ্যাটি ১০০ থেকে ৭ কম। আর ৯৬ সংখ্যাটি ১০০ থেকে ৪ কম। অতএব ৯৩-এর ডানে বসবে ৭ এবং ৯৬-এর ডানে বসবে ৪।
৯৩ ৭
৯৬ ৪
এবার গুণফলের ডান দিকে বসাই ৪ ও ৭-এর গুণফল ২৮। এবং বাম পাশে বসাই কোণাকুণি থাকা যেকোনো সংখ্যা দুইটির বিয়োগফল ৮৯। এখানে ৮৯ = ৯৩-৪ কিংবা ৯৬-৭। অতএব আমরা গুণফল পাই ৮৯২৮।
অর্থাৎ ৯৩ X ৯৬ = ৮৯২৮।
এভাবে এই নিয়মে ৯৪ X ৯২ = কত, তা বের করতে চেষ্টা করে দেখুন না। পারলে মজা হবে। না পারলে নিয়মটা বোঝার জন্য লেখাটি আবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সে যা-ই হোক, এবার যদি বলি, ১০০-এর চেয়ে সামান্য কিছু বেশি মানের তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে এ নিয়মে কী গুণফল বের করা যাবে। এর উত্তর হবে হ্যাঁ, করা হবে। ধরা যাক, আমরা বের করতে চাই ১০৩ X ১০৪ = কত? কীভাবে তা করতে হবে লক্ষ করুন। আমরা আমাদের স্কুলে শেখা সাধারণ গুণের পদ্ধতি ব্যবহার করে গুণ করে দেখতে পাব ১০৩ X ১০৪ = ১০৭১২। আমরা এ গুণফল পাওয়ার জন্য গুণফলটাকে ঠিক দুই ভাগে ভাগ করে নিতে পারি।
প্রথমে থাকবে ১০৭ এবং শেষে থাকবে ১২।
প্রথমে থাকা ১০৭ = ১০৩ + ৪ কিংবা ১০৪ + ৩ । আর
শেষে থাকা ১২ = ৩ X ৪।
এভাবে সহজেই পাওয়া দুটি ফল একত্রে বসিয়ে আমরা পেতে পারি কাঙ্ক্ষিত ফল ১০৭১২।
অর্থাৎ ১০৩ X ১০৪ = ১০৭১২।
একইভাবে ১০৭ X ১০৬ = কত, তা বের করতে প্রথমে থাকবে ১০৭ + ৬ = ১১৩, কিংবা ১০৬ + ৭ = ১১৩।
আর শেষে থাকবে ৬ X ৭ = ৪২
নির্ণেয় গুণফল = ১১৩৪২।
গুণফলটি অনেকটা মনে মনে করে ফেলার মতোই। একটু চর্চা করলে সহজে ও দ্রুত এ ধরনের গুণফল বের করে যেমনি সময় বাচানো যায়, তেমনি গণিত যে মজার বিষয়, তাও উপলব্ধি করা যায়।
সহজে ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ
আমরা স্কুলের গণিত ক্লাসে ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ করার সাধারণ নিয়মটা জেনেছি। এখানে আমরা জানব ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ কিভাবে সহজে, দ্রুত ও সংক্ষেপে করা যায়। নিচের সমাধানগুলো লক্ষ করলেই নিয়মটা আয়ত্ত করা যাবে।
২ ১ ১০ + ৩ ১৩
৩ + ৫ = ১৫ = ১৫
নিয়মটা হচ্ছে : কোণাকুণি গুণকরে পাওয়া গুণফল দুটির সমষ্টি উপরে বসবে। যেমন ২ X ৫ = ১০ এবং ৩ X ১ = ৩। অতএব উপরে বসেছে ১০ + ৩। আর নিচে বসবে নিচে থাকা দুইটি সংখ্যা গুণফল। এখানে বসেছে ৩ ও ৫-এর গুণফল ১৫। অতএব ভগ্নাংশ দুটির গুণফল দাঁড়িয়ে । একইভাবে
৫ ৩ ২০ + ২১ ৪১
৭ + ৪ = ২৮ = ২৮
এখানে উপরে বসেছে কোণাকুণি থাকা ৫ ও ৪-এর গুণফল ২০ এবং ৭ ও ৩-এর গুণফল ২১-এর সমষ্টি ৪১। আর নিচে বসেছে ভগ্নাংশ দুটির নিচে থাকা ৭ ও ৪-এর গুণফল ২৮।
বিয়োগফল বের করতে হবে একই নিয়মে। তবে উপরে কোণাকুণি থাকা সংখ্যাগুলোর গুণফলের অন্তর বসাতে হবে। আর নিচে থাকবে যথারীতি নিচের সংখ্যা দুটির গুণফল। যেমন-
৬ ২ ১৮ - ১৪ ৪
৭ - ৩ = ২১ = ২১
কী নিয়মটি সহজ নয় কী?
কজ ওয়েব