সংখ্যাচিত্র : গণিতের খুচরো মজা
নাম্বার প্যাটার্ন। বাংলায় এর নাম দেয়া যায় সংখ্যাচিত্র। যখন কোনো গাণিতিক কাজ করার সময় দেখা যায় সুনির্দিষ্ট একটা ধারা বা পথ মেনে চলে, তখন সেখানে একটা নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র পাই। নিচের আলোচনা থেকে সংখ্যাচিত্রের একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাব।
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ সংখ্যাটিকে ১৭ কিংবা এর গুণিতক দিয়ে গুণ করার সময় আমরা একটা মজার সম্পর্ক দেখতে পাই। নিচে সেই মজার সম্পর্কটি উল্লেখ করা হলো :
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ /০১ X ১৭ = ১১১,১১১,১১১,১১১,১১১,১
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ /০২ X ১৭ = ২২২,২২২,২২২,২২২,২২২,২
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৩ X ১৭ = ৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৪ X ১৭ = ৪৪৪,৪৪৪,৪৪৪,৪৪৪,৪৪৪,৪
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৫ X ১৭ = ৫৫৫,৫৫৫,৫৫৫,৫৫৫,৫৫৫,৫
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৬ X ১৭ = ৬৬৬,৬৬৬,৬৬৬,৬৬৬,৬৬৬,৬
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৭ X ১৭ = ৭৭৭,৭৭৭,৭৭৭,৭৭৭,৭৭৭,৭
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৮ X ১৭ = ৮৮৮,৮৮৮,৮৮৮,৮৮৮,৮৮৮,৮
৬৫৩৫৯৪৭৭১২৪১৮৩ / ০৯ X ১৭ = ৯৯৯,৯৯৯,৯৯৯,৯৯৯,৯৯৯,৯
আবার লক্ষ করি, ১৭X ৯ = ১৫৩। এখন দেখা যাক, এই ১৭ এবং ১৫৩ আবার আমাদের কী মজার সম্পর্ক হাজির করে। নিচের সম্পর্কটি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করি :
(১ / ১৫৩) X ০১ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X০১ X ১৭ = ১ / ৯ = ০. ১১১১১১১১১১১....
(১ / ১৫৩) X ০২ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০২ X১৭ = ২ / ৯ = ০. ২২২২২২২২২২...
(১ / ১৫৩) X ০৩ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৩ X ১৭ = ৩ / ৯ = ০.৩৩৩৩৩৩৩৩৩...
(১ / ১৫৩) X ০৪ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৪ X ১৭ = ৪ / ৯ = ০.৪৪৪৪৪৪৪৪৪৪...
(১ / ১৫৩) X ০৫ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৫ X ১৭ = ৫ / ৯ = ০.৫৫৫৫৫৫৫৫৫....
(১ / ১৫৩) X ০৬ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৬ X ১৭ = ৬ / ৯ = ০.৬৬৬৬৬৬৬৬৬৬....
(১ / ১৫৩) X ০৭ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৭ X ১৭ = ৭ / ৯ = ০.৭৭৭৭৭৭৭৭৭৭.....
(১ / ১৫৩) X ০৮ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৮ X ১৭ = ৮ / ৯ = ০.৮৮৮৮৮৮৮৮৮....
(১ / ১৫৩) X ০৯ X ১৭ = ১ / (৯ X ১৭) X ০৮ X ১৭ = ৮ / ৯ = ০.৯৯৯৯৯৯৯৯৯.....
উপরে দেয়া সংখ্যাচিত্র দুটির দিকে নজর দিলেই এখানে গণিতের যে মজার বিষয়টি রয়েছে, তা সহজেই যেকেউ বুঝে নিতে পারেন। আর সে বিষয়টি বুঝতে পারলে একটি নির্দিষ্ট ধরনের কয়েকটি গাণিতিক কাজ বিস্তারিতভাবে না করেই ফল জেনে নিতে পারি।
নিচে এবার আরেকটি নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র উল্লেখ করছি। মজার ব্যাপার হলো যেকোনো সংখ্যাচিত্রে গণিতের যে মজা থাকে, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয় না। সংখ্যাচিত্রটিতে চোখ রাখলেই সে মজাটুকু বুঝে নেয়া যায়। চলুন দেখে নিই আরো কয়েকটি সংখ্যাচিত্র।
১ X ৯ + ২ = ১১
১২ X ৯ + ৩ = ১১১
১২৩ X ৯ + ৪ = ১১১১
১২৩৪ X ৯ + ৫ = ১১১১১
১২৩৪৫ X ৯ + ৬ = ১১১১১১
১২৩৪৫৬ X ৯ + ৭ = ১১১১১১১
১২৩৪৫৬৭ X ৯ + ৮ = ১১১১১১১১
১২৩৪৫৬৭৮ X ৯ + ৯ = ১১১১১১১১১
আবার,
৯ X ৯ + ৭ = ৮৮
৯৮ X ৯ + ৬ = ৮৮৮
৯৮৭ X ৯ + ৫ = ৮৮৮৮
৯৮৭৬ X ৯ + ৪ = ৮৮৮৮৮
৯৮৭৬৫ X ৯ + ৩ = ৮৮৮৮৮৮
৯৮৭৬৫৪ X ৯ +২ = ৮৮৮৮৮৮৮
৯৮৭৬৫৪৩ X ৯ +১ = ৮৮৮৮৮৮৮৮
এবার দেখা যাক আরেকটি মজার নাম্বার প্যাটার্ন :
৯ X ৯ = ৮১
৯৯ X ৯৯ = ৯৮০১
৯৯৯ X ৯৯৯ = ৯৯৮০০১
৯৯৯৯ X ৯৯৯৯ = ৯৯৯৮০০০১
৯৯৯৯৯ X ৯৯৯৯৯ = ৯৯৯৯৮ ০০০০১
৯৯৯৯৯৯ X ৯৯৯৯৯৯ = ৯৯৯৯৯৮০০০০০১
............................................................................................................
লক্ষণীয়, প্রথমে আমরা ৯ কে ৯ দিয়ে গুণ করে গুণফল পেয়েছিলাম ৮১। এরপর আমরা যতই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন এই ৮১ সংখ্যাটির ১-এর বামে একটি করে শূন্য (০) এবং ৮-এর বামে একটি করে ৯ বেড়ে যেতে থাকে।
এবার দেখা যাক আরেকটি মজার নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র। আমরা জানি ৬ কে ৭ দিয়ে গুণ করলে গুণফল হয় ৪২। এখন আমরা দেখব এই ৬ আর ৭-এর বামে একটি করে ৬ বেড়ে গেলে যেসব সংখ্যা হয়, সেগুলোর গুণফল কী ধরনের নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র তৈরি করে।
৬ X ৭ = ৪২
৬৬ X ৬৭ = ৪৪২২
৬৬৬ X ৬৬৭ = ৪৪৪২২২
৬৬৬৬ X ৬৬৬৭ = ৪৪৪৪২২২২
৬৬৬৬৬ X ৬৬৬৬৭ = ৪৪৪৪৪২২২২
৬৬৬৬৬৬ X ৬৬৬৬৬৭ = ৪৪৪৪৪৪২২২২২২
............................................................................................................
এবার প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যার একটি সংখ্যাচিত্র সম্পর্কে জানব। আমরা জানি, যে সংখ্যাকে শুধু ১ অথবা ওই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না, তাকে মৌলিক সংখ্যা বা প্রাইম নাম্বার বলা হয়। যেমন- ৩, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ২৩ ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যা ।
আমরা সহজেই বলতে পারি ৩১ একটি মৌলিক সংখ্যা। কারণ, এই সংখ্যাটিকে ৩১ ও ১ ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না। এই মৌলিক সংখ্যা ৩১ দিয়ে আঠারোতম শতকের মানুষ জানতে পারে নিচের সংখ্যাচিত্রটি। মজার ব্যাপার হলো এ সংখ্যাচিত্রের প্রতিটি সংখ্যাই মৌলিক।
৩১
৩৩১
৩৩৩১
৩৩৩৩১
৩৩৩৩৩১
৩৩৩৩৩৩১
৩৩৩৩৩৩৩১
লক্ষণীয়, এ সংখ্যাচিত্রটিতে সাতটি লাইন আছে। আরেকটি লাইন বাড়ালে পরবর্তী সংখ্যাটি পাব ৩৩৩৩৩৩৩৩১, যা মৌলিক সংখ্যা নয়। কারণ, এ সংখ্যাটিকে ১৭ দিয়ে আমরা সহজেই নিঃশেষে ভাগ করতে পারি, কেননা ৩৩৩৩৩৩৩৩১ = ১৭ X ১৯৬০৭৮৪৩ ।
প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে অনুসন্ধানী গণিতবিদদের অনেক মজার মজার পর্যবেক্ষণ রয়েছে। প্রাইম নাম্বার বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করে আমরা জানতে পারি। এখানে প্রাইম নাম্বার সম্পর্কে আরেকটি পর্যবেক্ষণের কথা জানব। ৭৩,৩৯৩,১৩৩ সংখ্যাটি একটি মৌলিক সংখ্যা। কারণ, ১ অথবা ওই সংখ্যা ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়েই ৭৩,৩৯৩,১৩৩-কে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না। এখন এই ৭৩,৩৯৩,১৩৩ সংখ্যাটির ভেতরে একটি মজার গাণিতিক সম্পর্ক আমরা জানতে পেরেছি। এ সংখ্যার একদম ডানের অঙ্ক ৩ বাদ দিলে আমরা পাব নতুন সংখ্যা ৭৩,৩৯৩,১৩, যা একটি মৌলিক সংখ্যা। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ৭৩,৩৯৩,১৩৩ সংখ্যাটি থেকে একটি একটি করে অঙ্ক বাদ দিলে আমরা আরো সাতটি নতুন সংখ্যা পাব। আর এই সাতটি নতুন সংখ্যার প্রতিটিই মূল সংখ্যা ৭৩,৩৯৩,১৩৩-এর মতোই মৌলিক সংখ্যা। নতুন যে সাতটি সংখ্যা পাব সেগুলো হবে : ৭৩৩৯৩১৩, ৭৩৩৯৩১, ৭৩৩৯৩, ৭৩৩৯, ৭৩৩, ৭৩ এবং ৭। জানিয়ে রাখি, মজার এ সম্পর্কটি মানুষকে প্রথম জানিয়েছেন টবি হাওয়ার্ড নামের এক গণিতবিদ। তার প্রশংসা করতেই হয়।
এ লেখায় সবশেষে গণিতের খুচরো মজার যে বিষয়টি জানব, সেটি ২৫১৯ সংখ্যা সম্পর্কিত। আর তা জানতে গণিতের একটি পদবাচ্য বা টার্ম সম্পর্কে পরিচিত হওয়া দরকার। ভয় নেই, সেটুকু জানা কঠিন কিছু নয়। সহজেই বুঝে নেয়ার মতো বিষয়। এ পদবাচ্যটি হলো ‘মডুলার’। সংক্ষেপে বলা হয় ‘মড’। ভাগ অঙ্ক করার সময় আমরা অনেক ক্ষেত্রেই একটা ভাগশেষ পাই। এই ভাগশেষের সাথে যাদের পরিচয় আছে, তাদের পক্ষে মডুলার বিষয়টি না বোঝার কিছুই নেই।
আমরা জানি, ২১ সংখ্যাটিকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে ১। এই কথাটিই মডুলার শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ করি এভাবে : ‘২১ মডুলার ৪ = ১’। কিংবা সংক্ষেপে ‘২১ মড ৪ = ১’। আবার আমরা এ-ও প্রকাশ করতে লিখি ‘২৫১৯ মডুলার ৭ = ৬’। কিংবা সংক্ষেপে ‘২৫১৯ মড ৭ = ৬’। এ বিষয়টি যদি আমাদের বুঝে এসে থাকে, তবে ২৫১৯ সংখ্যাটির বেলায় আমরা সহজেই লিখতে পারি :
২৫১৯ মডুলার ০২ = ১
২৫১৯ মডুলার ০৩ = ২
২৫১৯ মডুলার ০৪ = ৩
২৫১৯ মডুলার ০৫ = ৪
২৫১৯ মডুলার ০৬ = ৫
২৫১৯ মডুলার ০৭ = ৬
২৫১৯ মডুলার ০৮ = ৭
২৫১৯ মডুলার ০৯ = ৮
২৫১৯ মডুলার ১০ = ৯
এ মডুলার চিত্র থেকে সহজেই অনুমেয়, আমরা ২৫১৯ সংখ্যাটিকে ২ থেকে ৯ পর্যন্ত যে সংখ্যা দিয়েই ভাগ দিই, সব ক্ষেত্রেই ভাগশেষ হবে ভাজকের চেয়ে ১ কম।
আবার লক্ষণীয়, ২৫১৯-কে ২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ১২৫৯ এবং ভাগশেষ ১। তাহলে আমরা লিখতে পারি, ১২৫৯ / ২ + ১ = ২৫১৯। আবার ২৫১৯-কে ৩ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ৮৩৯ এবং ভাগশেষ ২। তা হলে আমরা লিখতে পারি : ৮৩৯ X ৩ + ২ = ২৫১৯। এভাবে ধারাবাহিক লিখলে পাব :
২৫১৯ = ১ + ০২ X ১২৫৯
২৫১৯ = ২ + ০৩ X ৮৩৯
২৫১৯ = ৩ +০ ৪ X ৬২৯
২৫১৯ = ৪ + ০৫ X ৫০৩
২৫১৯ = ৫ + ০৬ X ৪১৯
২৫১৯ = ৬ + ০৭ X ৩৫৯
২৫১৯ = ৭ + ০৮ X ৩১৪
২৫১৯ = ৮ + ০ ৯ X ২৭৯
২৫১৯ = ৯ + ১০ X২৫১
সবশেষে আরো কয়েকটি মজার গাণিতিক সম্পর্ক উল্লেখ করে আজকের এ পর্বের লেখার ইতি টানতে চাই।
দেখুন তো এসব মজার সম্পর্কগুলো এর আগে আপনার জানা ছিল কি না।
১৫৩ = ১৩ + ৫৩ + ৩৩
৩৭০ = ৩৩ + ৭৩ + ০৩
৩৭১ = ৩৩ + ৭৩ + ১৩
৪০৭ = ৪৩ + ০৩ + ৭৩
১,৭৪১,৭২৫ = ১৭ + ৭৭ + ৪৭ + ১৭ + ৭৭ + ২৭ + ৫৭
এভাবে রয়েছে আরো অসংখ্য মজার মজার গাণিতিক সম্পর্ক। তা জানতে হলে ঢুকতে হবে গণিতের রাজ্যে।
কজ ওয়েব