• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বেছে নিন নেটবুকের উপযোগী অপারেটিং সিস্টেম
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অপারেটিং সিস্টেম
তথ্যসূত্র:
সফটওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বেছে নিন নেটবুকের উপযোগী অপারেটিং সিস্টেম

নেটবুক হচ্ছে আকারে ছোট, হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য ল্যাপটপ, যা পূর্ণাঙ্গ ল্যাপটপের চেয়ে সস্তা ও তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন। মূলত ই-মেইল, ওয়েব ব্রাউজিং ইত্যাদি ও ক্লাউড কমপিউটিং ব্যবহারকারী এবং ছোট অ্যাপ্লিকেশন চালানোর কথা বিবেচনা করেই এটি উদ্ভাবন করা হয়। একথা সত্য, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নেটবুকের ব্যবহারের প্রসার দিন দিন বাড়ছে। এটি আধুনিক জীবনের কর্মধারায় এক বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। ব্যবসায়ী, ভ্রমণকারী এবং যেসব ব্যবহারকারী খুব বড় মানের কাজ করেন না, তাদের কাছে নেটবুক খুবই প্রয়োজনীয় বস্ত্ততে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে এর আকার ও দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ কাজের পরিসরকে আরো বিস্তৃত করেছে।

কিন্তু এই কাজের পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তা হলো এর অপারেটিং সিস্টেম। প্রতিটি কমপিউটার চালানোর জন্য অপারেটিং সিস্টেম হার্ডওয়্যারের কার্যক্ষমতাকে সমন্বয় করে পুরো যন্ত্রটিকে কাজের উপযোগী করে তোলে। যেহেতু নেটবুকের কার্যক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম, তাই এর অপারেটিং সিস্টেমকেও হতে হয় কিছুটা আলাদা। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, নেটবুকের প্রসেসর ইন্টেল অ্যাটম জাতীয় প্রসেসর- যার কার্যক্ষমতা কম, অল্প র্যাাম, তুলনামূলক ছোট আকৃতির কীবোর্ড, অপটিক্যাল ড্রাইভবিহীন, ১০-১১.৬ ইঞ্চির পর্দা। এর জন্য দরকার ভিন্নমানের কম শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। প্রতিটি ওএস প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান বড় মাপের এই বাজার নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য ভিন্নমানের অপারেটিং সিস্টেম বাজারজাত করে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে যে অপারেটিং সিস্টেমগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে সেগুলো হলো- মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এক্সপি ও সেভেন, ওপেন সোর্স উবুন্তু, জলিক্লাউড, মিগো, গুগলের অ্যাড্রয়িড, ক্রম এবং অ্যাপলের ওএসএক্স প্রভৃতি।

নেটবুকের জন্য কোন অপারেটিং সিস্টেমটি উপযোগী ও ব্যবহারকারীদের কাছে কোনটি ব্যবহারবান্ধব এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা হয়েছে। সম্প্রতি lifehacker.com-এর এক জরিপে দেখা গেছে, উইন্ডোজ সেভেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এবং এর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০ ভাগ বেশি সমর্থন পেয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে উবুন্তু, অ্যাপলের ওএসএক্স, চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে লিনআক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম জলিক্লাউড এবং পঞ্চম অবস্থানে রয়েছ লিনআক্স মিন্ট। জরিপে উইন্ডোজ এক্সপির নাম না থাকায় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সমালোচনাও করেছেন। জরিপে দেখা যায়, জনপ্রিয়তার দিক থেকে উইন্ডোজ সেভেন পায় শতকরা ৩৬ ভাগ ভোট, উবুন্তু ২৭ ভাগ, অ্যাপলের ওএসএক্স ও জলিক্লাউড ১২ ভাগ এবং লিনআক্স মিন্ট ৮ ভাগ। এখানে গুগলের দুটি অপারেটিং সিস্টেম অ্যাড্রয়িড ও ক্রমের অবস্থান খুবই দুর্বল।

উইন্ডোজ :



একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, উইন্ডোজ এখন পর্যন্ত অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। যদিও ভিস্তা বাজারে আসার পর আগের সংস্করণগুলোর মতো ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু ২০০৯ সালে উইন্ডোজ সেভেন বাজারে আসে এবং ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। অনেকে বলে থাকেন উইন্ডোজ সেভেন এক্সপির অবস্থানকেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। এতে কিছু নতুন আকর্ষণীয় ফিচার ও জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এসব কিছু চলার জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারির শক্তি খরচ হয় না। সব মিলিয়ে উইন্ডোজ সেভেন নেটবুকের জন্য একটি উপযুক্ত অপারেটিং সিস্টেম। তবে অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও উইন্ডোজ সেভেনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ব্যবহারকারীদের দেয়া তথ্যমতে, নেটবুকের জন্য উপযোগী উইন্ডোজ সেভেনের স্টার্টার ভার্সন ৩২ বিট হওয়ায় অনেক নতুন অ্যাপ্লিকেশন ঠিকমতো চলে না। কারণ, নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম সহায়ক। এছাড়াও এটি এক্সটার্নাল ডিভিডি ড্রাইভ শনাক্ত করতে পারে না এবং মাল্টিমিডিয়ার উপযোগী নয়।

ওএসএক্স :



উইন্ডোজের পর দ্বিতীয় জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপলের ওএসএক্স হতে পারে আপনার নেটবুকের উপযোগী। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এটি অ্যাপলভিত্তিক হার্ডওয়্যার ছাড়া অন্য কোনো নেটবুকে ব্যবহার করা যায় না। এ জন্য এই অপারেটিং সিস্টেম ‘Hackintosh’ নামে পরিচিত। তবে যেসব ব্যবহারকারী অ্যাপল কমপিউটার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকতে পারে। ওএসএক্স তথা অ্যাপলভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তার সূচক বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ২ ভাগ বেড়েছে। এক্ষেত্রে নেটবুকের অবদান খুবই কম।

বাজার মাত করা অপারেটিং সিস্টেমেরও কিছু সমস্যা রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। নেটবুকের ক্ষেত্রে এর ইনস্টলেশন পদ্ধতি উইন্ডোজ ও লিনআক্সের মতো সহজ নয়। এমনকি ইনস্টলেশন শেষ হওয়ার পর একথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, আপনার ওয়াইফাই ও ওয়েবক্যাম সঠিকভাবে কাজ করবে।

উবুন্তু :



জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে উবুন্তু অপারেটিং সিস্টেম তৃতীয় এবং ওপেনসোর্স ওএসগুলোর মধ্যে এর অবস্থান শীর্ষে। বর্তমানে অনেক ল্যাপটপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উবুন্তুকে প্রিলোডেড ওএস হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ডেল ও তোশিবার নাম উল্লেখযোগ্য। উবুন্তুর জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও কম কনফিগারেশন নেটবুকে কোনো রকম সমস্যা ছাড়া চলতে পারে। এই ওএস ইনস্টল হওয়ার সাথে সাথেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপস যেমন- ওপেন অফিস, ফায়ারফক্স, অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট, স্কাইপি ও জাভা ইনস্টল হয়। এসব অ্যাপস সহজে একজন ব্যবহারকারীর সাধারণ কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।

জলিক্লাউড :



জলিক্লাউড লিনআক্সভিত্তিক একটি ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম। নেটবুক কমপিউটারের বিশাল বাজারকে লক্ষ্য করে ২০০৮ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। জলিওএস নামে এর প্রথম সংস্করণ বাজারে ছাড়া হয় এবং এর সর্বশেষ সংস্করণ ১.২ বাজারে আসে ৯ মার্চ ২০১১। অত্যন্ত ব্যবহারবান্ধব এই অপারেটিং সিস্টেম কম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর ও কম বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে চমৎকার কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। জলিক্লাউড এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যার সাহায্যে আপনার নেটবুকে যেসব সুবিধা রয়েছে তার পরিপূর্ণ ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, থ্রিজি মডেমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসগুলো সহজে ইনস্টল করা সম্ভব।

এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জলিক্লাউড অপারেটিং সিস্টেমের যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এটি একই সাথে একাধিক অ্যাপ্লিকেশন চালাতে প্রায় অক্ষম।

দিন দিন হয়ত ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার বাড়বে। একই সাথে উইন্ডোজ, ওএসএক্স তাদের নতুন নতুন সুবিধা সংযোজন করবে। ওএস নির্মাতাদের এই প্রতিযোগিতা ব্যবহারকারীদের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ ফিচার ও সুবিধা দিতে বাজারে আসবে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : animesh@letbd.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
সুন্দর কিছু মিখলাম
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস