লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
ভাস্কর ভট্টচার্য
মোট লেখা:১৯
লেখা সম্পর্কিত
জনগণের দোরগোড়ায় ই-সেবা
এক সময় আইটি ছিল একশ্রেণীর মানুষের দখলে। যেটি মূলত ছিল প্রযুক্তিনির্ভর ও উচ্চশিক্ষিত মানুষের জন্য প্রয়োজনের মাধ্যম। যখন থেকে আই এবং টি-এর মাঝখানে সি যুক্ত হলো অর্থাৎ ‘তথ্য’ ও ‘প্রযুক্তির’ মাঝখানে ‘যোগাযোগ’ শব্দটি আইসিটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলো অনেকগুণে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হতে থাকল আপামর জনসাধারণের জন্য। আর এক্ষেত্রে মিডিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে কমপিউটার জগৎ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের গতি সঞ্চার করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় ই-সেবা পৌঁছে দেয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বাস্তবেও তার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। যার কিছু কিছু দিক আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
বর্তমানে প্রচলিত কিছু ই-সেবা কার্যক্রম
ই-পুর্জি :
যারা চিনিকলের সাথে সম্পৃক্ত তারা সবাই জানেন কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আখ নিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তেন। দিনের পর দিন তাদের অপেক্ষা করতে হতো আখ সরবরাহের জন্য। এতে করে তাদের আখের মান কমে যেত এবং চিনির উৎপাদন কমে যেত।
ই-পুর্জি মুক্তি দিয়েছে কৃষককে এই ভোগান্তি থেকে। এখন একটি এসএমএসের মাধ্যমে কৃষক জানতে পারেন কখন কত পরিমাণ আখ নিয়ে চিনিকলে যেতে হবে। এই ই-পুর্জি শেষ করেছে কৃষকের সব ভোগান্তি। তবে টেক্সট এসএমএসের পাশাপাশি যদি ভয়েস এসএমএস পাঠানো হতো, তাহলে লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষও উপকৃত হতো।
মোবাইল ফোনে ট্রেনের টিকেট :
এখন যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থান থেকে মোবাইলে ট্রেনের টিকেট করতে পারে। এজন্য আপনাকে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হবে না। আপনার ঘরে বসে পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের টিকেট। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও কিছু মোবাইল সেবাদান প্রতিষ্ঠান এ মোবাইল টিকেট সেবা কর্মসূচি চালু করেছে।
শিক্ষা ই-সেবা :
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাবোর্ড ইতোমধ্যে চালু করেছে ই-সেবা কার্যক্রম। পরীক্ষার ফল কিংবা ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য ঘরে বসে জেনে যেতে পারেন মোবাইল কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
ই-বিল সেবা :
আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি মাস শেষে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিল পরিশোধ করার ভোগান্তি। এখন আপনার পাশের যে কোনো দোকানেই জমা দিতে পারেন বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিল। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই সেবা আপনার জীবনকে করেছে অনেকটা ঝামেলামুক্ত।
জেলা বাতায়ন :
আপনার জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে জেলা বাতায়ন বা জেলা তথ্য ওয়েবসাইট। একবার আপনার জেলা বাতায়নে প্রবেশ করে দেখুন পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। বাংলাভাষার এই ই-তথ্যকোষ হচ্ছে মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কিত তথ্য ও জ্ঞানভান্ডার। এই তথ্যকোষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অকৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, কর্মসংস্থান, নাগরিক সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক তথ্য বাংলাভাষায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তথ্যকোষে একটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে সব তথ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র
গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে তথ্যের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সে এলাকার জনসাধারণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোর। এ উদ্দেশ্যেই জীবন-জীবিকাভিত্তিক তথ্য সহজে একটি স্থান থেকে প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে জাতীয় ই-তথ্যকোষটি তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়নে চালু হওয়া তথ্য ও সেবাকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই নিজেদের জীবন-মান উন্নয়নে ই-তথ্যকোষের সহায়তা নিতে পারবে।
জাতীয় ই-তথ্যকোষটি অফলাইন ও অনলাইন দুটি সংস্করণে প্রস্ত্তত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে ইন্টারনেট স্পিড খুব ভালো না থাকায় অফলাইন সংস্করণ করা হয়েছে। অফলাইন সংস্করণটি খুব সহজে তথ্যকেন্দ্রের কমপিউটারে ইনস্টল করা যাবে। কনটেন্ট ব্যবহারের এই সুযোগটি স্থানীয় জনগণ বিনা পয়সায় পাবেন। প্রতি তিন মাস পর পর অফলাইন সংস্করণটি হালনাগাদ করে তথ্যকেন্দ্রে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে অনলাইন সংস্করণটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ কার্যক্রমের ফলে ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য অতি সহজে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে।
তথ্যসূত্র : জাতীয় ই-কোষ বিশেষ ক্রোড়পত্র - www.infokosh.bangladesh.gov.bd
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : vashkar79@hotmail.com