থাইল্যান্ড থেকে ফিরে
১৮ থেকে ২০ মে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগবিষয়ক ফোরাম। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) উদ্যোগে আয়োজিত ফোরামটি ব্যাঙ্ককের ইউএন ন্যাশন্স কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের সহযোগী ছিল জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকাপ) ও থাইল্যান্ডের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ ফোরাম আয়োজনের ক্ষেত্রে ২০১০ সালে ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা আহরণ করা এবং অর্থনৈতিক গতিধারায় আইটিইও, জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত পণ্যসমূহের বিষয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সফল প্রয়োগ উপস্থাপন করা। বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮টি রাষ্ট্র, জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এপনিক ও মোবাইল সেট প্রস্ত্ততকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ১০০ প্রতিনিধি তিনদিনব্যাপী এ গুরুত্বপূর্ণ আইটিইউ ইভেন্টে যোগদান করেন।
ফোরামের পাশাপাশি ইউনাইটেড ন্যাশনন্স কনফারেন্স সেন্টারে ১৯-২৫ মে অনুষ্ঠিত হয় এসকাপের ৬৭তম সেশন। তাছাড়া ফোরামে থাইল্যান্ডের আইসিটি মন্ত্রণালয় ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস ২০১১’ উদযাপন করে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী প্রধান অতিথি, এসকাপের নির্বাহী সেক্রেটারি ড. নওলিন হেইজার বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং আইটিইউ এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ড. ইনজু কিম বক্তৃতা করেন। থাইল্যান্ডের আইসিটিমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিভিন্ন প্রদেশে কমিউনিটি টেলিসেন্টারের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। ড. ইনজুকিম তার শুভেচ্ছা বক্তৃতায় ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিষয়টি অবহিত করেন। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল : ‘Better Life in Rural Communities with ICTs’। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটিতে প্রতিবছর ১৭ মে বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নভেম্বর ২০০৬ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত আইটিইউ পেরিপটেনশিয়ারি কনফারেন্সে প্রতিবছর ১৭ মে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা এবং অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডিজিটালে বৈষম্য কমানো এর লক্ষ্য।
১৮ মে এ ফোরাম উদ্বোধন করেন থাইল্যান্ডের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মি. চুটি। স্বাগত বক্তৃতা দেন এসকাপের পরিচালক ড. জুয়ান এবং আইটিইউর আঞ্চলিক পরিচালক ড. ইন জু কিম। Impact of Broadband on Information Economy শীর্ষক বিশেষ বক্তৃতা দেন আঙ্কটাডের সেক্রেটারি জেনারেল ড. সুতাপাই ও কোরিয়ার সাবেক তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ড. ইয়াং। ড. সুতাপাই মূলত ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-অ্যাগ্রিকালচার ও ই-কমার্সেও প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রভাব তৈরিতে সরকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কোরিয়ার প্রাক্তন মন্ত্রী তার বক্তৃতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে কোরিয়ার উত্থান ও অভিজ্ঞতা আলোকপাত করেন। জাতিসংঘের সূচক অনুযায়ী ই-গভর্নেন্সে কোরিয়ার বর্তমান অবস্থান প্রথম, যা ২০০১ সালে ছিল পনেরতম।
তিনদিনব্যাপী ফোরামে মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশোমন, কমিউনিটি ই-সেন্টার, ই-এডুকেশন, ই-অ্যাগ্রিকালচার, ই-হেলথ, ই-গভর্নমেন্ট, মোবাইল ব্রডব্যান্ডে আইসিটির প্রয়োগ বিষয়ে সর্বমোট ৭টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত তথ্যবহুল সেশনসমূহে আন্তর্জাতিক পরামর্শক, প্রাক্তন মন্ত্রী, তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষজ্ঞেরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
ইউনেস্কো, ফাও, এসকাপ, টেলিসেন্টার ফাউন্ডেশন, হু, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, নোকিয়ার খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞেরা তাদের পরীক্ষামূলক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তাছাড়া আইটিইউর উদ্যোগে ‘স্ট্রাটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক অন আইসিটি ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘আইসিটি অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ বিষয়ক দুটি আলাদা অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয়। আইটিইউ মূলত RADIO (ITU-R), Standardization (ITU-D), Development (ITU-D) খাতে কাজ করছে এবং আইসিটির নিচে উল্লিখিত ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
A National e-Health Roadmap Development Toolkit.
Trusted transactions for mobile government services.
Best prcticesim-government services.
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস, ২০১১ উদযাপন ও ফোরামকে ঘিরে থাইল্যান্ডের আইসিটি মন্ত্রণালয় কনফারেন্স সেন্টারে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কিত প্রদর্শনী এবং আঞ্চলিক নৃত্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে।
ফোরাম শেষে ২১ মে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে থাইল্যান্ডের দুটি টেলিসেন্টারে সরেজমিন পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়। Bangkeaw এবং Jompluak গ্রামাঞ্চলের জনগণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন জীবন তথা ব্যবসায়-বাণিজ্য, লেখাপড়ায় যে প্রভূত উন্নত সাধিত হয়েছে সে বিষয়ে অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। মূলত কমিউনিটি টেলিসেন্টারগুলো অঞ্চলভিত্তিক একেক ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক জীবনধারায় পরিবর্তন এনেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য (প্লাস্টিক ম্যাট, ব্যাগ, লবণ, কৃত্রিম ফুল ইত্যাদি) ই-শপ, ই-কমিউনিটি, ই-কমার্সের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে থাইল্যান্ডের ১৮৭৯টি টেলিসেন্টার আছে। অথচ ২০০৭ সালে ছিল মাত্র ২০টি। থাইল্যান্ডের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও অঞ্চলভিত্তিক স্থানীয় কমিউনিটিসমূহের নিজস্ব আগ্রহের কারণে বিগত ৪ বছরে টেলিসেন্টার কার্যক্রমের সাফল্যের শুরু। সব বয়সের নাগরিকই প্রতিদিন কর্মকান্ড শুরু করেন টেলিসেন্টারে প্রবেশের মাধ্যমে।
উক্ত ফোরামে অংশ নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান সরকারের গৃহীত কার্যক্রম, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করা হয় এবং ই-পার্লামেন্ট বিষয়ে আইটিইউ ভবিষ্যতে কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আইটিইউর সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ৪ বছরের জন্য আইটিইউ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mizan010168@yahoo.com